নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হওয়ার সময় জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রের কিছু ধারা সংবিধান পরিপন্থী এবং সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল। ২০০৮ সালের নভেম্বরে দলটিকে এই শর্তে নিবন্ধন দেওয়া হয়, নবম জাতীয় সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ার পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে গঠনতন্ত্রে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনতে হবে। কিন্তু তার পরও ওই গঠনতন্ত্র যথাযথভাবে সংশোধন করা হয়নি। জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দাখিল করা রিট মামলায় আদালতের রুলের জবাবে এ তথ্য জানিয়েছে
নির্বাচন কমিশন।
এ বিষয়ে কমিশনের একটি লিখিত জবাব গত রবিবার অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমানের কাছে পাঠানো হয়েছে আদালতে দাখিল করার জন্য।
কমিশনের ওই লিখিত জবাবে কিভাবে, কোন শর্তে জামায়াতকে সে সময় নিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল এবং পরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সে শর্ত যথাযথভাবে পূরণ হয়েছিল কি না, সেসব তথ্য রয়েছে। ২০০৯ সালের পর জামায়াতের গঠনতন্ত্র সংশোধন বিষয়ে কমিশনের অন্যান্য পদক্ষেপের তথ্য জানানো হয়নি।
জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯০বি(১), (বি)(২) ও ৯০(সি) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন ঘোষণা করা হবে না, তা নির্বাচন কমিশনের কাছে জানতে চান আদালত।
কমিশনের লিখিত জবাবে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালের ২০ অক্টোবর জামায়াত নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করে। ওই সময় আবেদনকারী রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য কমিশনের শর্ত ছিল, নিবন্ধন পেতে হলে দলের গঠনতন্ত্র সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হতে হবে।
প্রয়োজনে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে অস্থায়ীভাবে সংশোধিত গঠনতন্ত্রও জমা দেওয়া যাবে। কিন্তু নির্বাচনের পর নবম জাতীয় সংসদ অধিবেশন শুরুর পরের ছয় মাসের মধ্যে স্থায়ীভাবে সংশোধিত গঠনতন্ত্র জমা দিতে হবে। অন্যান্য দলের মতো জামায়াতও তাদের অস্থায়ীভাবে সংশোধিত গঠনতন্ত্র জমা দেয়। দলের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন সরকার জামায়াতের গঠনতন্ত্রের কিছু অংশ নিজ হাতে লাল কালিতে কেটে দেন এবং এই প্রতিশ্রুতি দেন যে, এগুলো দলের পরবর্তী কাউন্সিলে স্থায়ীভাবে সংশোধন করা হবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের গঠন করা একটি কমিটির পরীক্ষায় দেখা গেছে, জামায়াতের ওই গঠনতন্ত্রের ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ ধারা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এ ছাড়া গঠনতন্ত্রের ৫ ধারাসহ আরো কয়েকটি ধারা সংবিধান পরিপন্থী।
ইসির জবাবে আরো বলা হয়, জামায়াতকে নিবন্ধন দেওয়ায় কারো কোনো আপত্তি রয়েছে কি না, তা জানতে চেয়ে নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের ২৬ ও ২৭ অক্টোবর সংবাদপত্রের মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। আপত্তি জানায় ৯টি সংগঠন। এগুলো হচ্ছে আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও ওয়্যার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি। নির্বাচন কমিশন ওই আপত্তির বিষয়ে সে বছরের ১ নভেম্বর শুনানি গ্রহণ করে এবং সে সময়ের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ বিবেচনায় নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামীকে নিবন্ধন দেয়।
তথ্যসূত্র: কালেরকণ্ঠ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।