আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জামায়াতের ৩ লক্ষ্য

যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা এবং দেশব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোর দাবির কারণে নিষিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকির মুখে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। আর এজন্য নিজেদের জানা একমাত্র কৌশলটিই তারা ব্যবহার করছে- চালাচ্ছে সহিংসতা, আরো সহিংসতা। গত কয়েক দিনের এই সহিংসতাকে সামাজিক ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বা স্বতঃস্ফূর্ত কিছু বলা যাবে না। বরং এর পেছনে দেখা গেছে সতর্ক পরিকল্পনার ছাপ। হামলার লক্ষ্যবস্তুও বাছাই করা হয়েছে খুবই পরিকল্পিতভাবে।

গত বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় হওয়ার পর যে সহিংসতা শুরু করেছে- তাতে তাদের তিনটি লক্ষ্য অত্যন্ত স্পষ্ট। জনজীবন ব্যাহত করা, মনোবল ভেঙে দেয়া এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিই তাদের উদ্দেশ্য। এর প্রথমটিতে সারা দেশে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনকে বিপর্যস্ত করে জেলাগুলোর ওপর ঢাকার নিয়ন্ত্রণ ও চেইন অব কমান্ড ভেঙে দেয়ার চেষ্টা করে জামায়াত। হরতালে রেল যোগাযোগ তেমন একটা ব্যাহত হয় না বলে রেলপথকে বেছে নেয়া হয় হামলার অন্যতম লক্ষ্য হিসাবে। পাশাপাশি সড়কপথেও চলে নাশকতা।

এর পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা; যোগাযোগ কাঠামো ভেঙে দিয়ে জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলা। পরিকল্পনার দ্বিতীয় অংশে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার হাতিয়ার পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর ওপর পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ চালায় জামায়াত। পুলিশ বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে, সদস্যদের হত্যা করে তাদের মনোবল ভেঙে দেয়ার চেষ্টা চলে। এসব ঘটনা যে অনেক সময় প্রাণঘাতী প্রতিরোধের সম্ভাবনাকে উস্কে দেয়, সে বিষয়টিকেও আমলে নেয়নি জামায়াত। ১৯৭০-৭১ সালে পশ্চিমবঙ্গে নকশালরা রাজপথে হামলার লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছিল পুলিশকে।

আর তার সমাপ্তি ঘটেছিল পুলিশের পক্ষ থেকে আরো সহিংস জবাবের মধ্য দিয়ে। এখানে একটি বিষয় হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয়, তখন রাজনৈতিক নেতাদের নির্দেশ তারা আর মানে না। তখন তারা প্রতিশোধ চায়। সম্প্রতি পুলিশের গুলিতে জামায়াত-শিবিরের বহু কর্মী নিহতের ঘটনার একটি ব্যাখ্যা হয়তো এর মধ্যে দিয়ে পাওয়া যায়। তৃতীয়ত, হিন্দু গ্রাম ও মন্দিরে হামলা চালিয়ে জামায়াত আবারো ধর্মীয় উন্মাদনা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে।

শাহবাগের আন্দোলনকর্মী ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার খুন হওয়ার পর তাকে মুরতাদ ও নাস্তিক আখ্যা দিয়ে সেই ‘একই কার্ড’ খেললেও ব্যর্থ হয় জামায়াত। এ ধরনের হামলা যদি প্রতিরোধ করা না যায়, তাহলে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। হিন্দুরা দেশত্যাগের কথা ভাবতে শুরু করে এবং প্রতিবেশী দেশ ভারত উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। জামায়াত আশা করেছিল, এভাবে হিন্দুদের ওপর হামলা চালিয়ে সবার নজর ঘুরিয়ে দিয়ে তারা হয়তো তাদের নেতাদের যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে উত্তাপ এড়াতে পারবে। আর এভাবে জাতীয় পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল তারা।

জনজীবন ব্যাহত করা, মনোবল ভেঙে দেয়া এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি- এই তিন লক্ষ্য পূরণের মধ্য দিয়ে আরেকটি উদ্দেশ্য হাসিল করতে চেয়েছিল জামায়াত। যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি ও জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ থেকে সারা দেশে তারুণ্যের যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, তাকে কক্ষচ্যুৎ করাই ছিল সেই লক্ষ্য। কিন্তু ব্যাপক মাত্রায় সহিংসতা চালিয়ে জামায়াত শুধু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের ভয়াবহ কর্মকাণ্ডের স্মৃতিই ফিরিয়ে আনেনি, সরকারকেও চাপে ফেলতে চেয়েছে। হিসাব কষে জামায়াত হয়তো আশা করেছে, জনজীবনে বিপর্যয় ঘটিয়ে বেসামরিক প্রশাসনকে টলিয়ে দিতে পারলে সেনাবাহিনীর ক্ষমতাগ্রহণের পথ তৈরি হবে। কিন্তু এতে উল্টো ফলও আসতে পারে, যা হবে তাদের জন্য আত্মঘাতী।

এটা একটা কপি/পেস্ট পোস্ট। মূল লেখা এখানে : Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.