মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটককৃতদের মুক্তির দাবিতে অবশেষে জামায়াত-শিবির সকল শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে। ছাত্রশিবির জামায়াতের মূল ক্যাডার বাহিনী এটি এবার পরিষ্কার হচ্ছে। এতদিন বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছিল, বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে জামায়াতে ইসলামী ছাত্রশিবির নামক একটি সংগঠনকে রাজনৈতিক ও সামরিক মানসে গড়ে তুলছে যারা আসলে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিধিবিধান মেনে চলছে না, যারা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে উৎখাত করে একটি অগণতান্ত্রিক, তালেবানী রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। আমাদের দেশের অনেকেই বিষয়টিকে এতদিন এ কথা খুব একটা আমলে নিয়েছে বলে মনে হয়নি। এখনও সবাই নিচ্ছে তাও কিন্তু নয়।
তবে ছাত্রশিবির একটি ‘প্রশিক্ষিত ক্যাডার ছাত্র সংগঠন’ এটির প্রমাণ গত শতকের আশি, নব্বই এবং একুশ শককের বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রেখেছে। তারা কতটা প্রশিক্ষিত তথা প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করতে দক্ষতা অর্জনে লিপ্ত তা ছাত্রশিবিরের দখলে থাকা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় তথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাধারণ ছাত্র-শিক্ষকদের কমবেশি জানা আছে। সাধারণ মানুষ কিছুটা অনুমান করলেও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সেভাবে হয়নি। ফলে এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছাত্রশিবিরের রাজনীতিও সাংগঠনিক তৎপরতা নিয়ে সুস্পষ্ট ধারণা ও অবস্থান ছিল না।
সম্প্রতি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কাজ অনেকটা এগিয়ে আসায় জামায়াত নিশ্চিত হয়ে যায় যে, অচিরেই এই রায় ঘোষিত হতে যাচ্ছে।
উক্ত রায় ঘোষণার আগে দেশে একটি সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি করা গেলে হয়ত সম্পূর্ণ বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যেতে পারে। এর আগে জামায়াত আন্তর্জাতিকভাবে লবিং, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারবিরোধী প্রচারণা ইত্যাদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। সেটি বর্তমান বিশ্ব গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ততটা জোরালো ফল না দেয়ায় জামায়াত এখন শক্তি প্রয়োগের সর্বশেষ দরজাটি খুলে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে জামায়াতের সব চাইতে বিশ্বস্ত এবং সংগঠিত শক্তি হচ্ছে ছাত্রশিবির যারা জামায়াতের রাজনীতির আদর্শ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে ধারণ করে দেশব্যাপী তাদের জাল বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। এরা বয়সে তরুণ, জ্ঞানচর্চার নামে তারা এতদিন ধরে কিছু অন্ধ বিশ্বাসকে লালন করেছে, বাংলাদেশ রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতি তারা যুক্তিহীন অন্ধভাবে কিছু ঘৃণাবোধ তিলে তিলে বৃদ্ধি করেছে, তারা একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকে জামায়াতের ব্যাখ্যায় বুঝতে শিখেছে, বিশ্বাস করছে যে, এই দেশটি ভারত এবং আওয়ামী লীগের যৌথ ষড়যন্ত্রে পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়েছে।
একটি দেশের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার বিষয়টি তাদের কাছে অপ্রয়োজনীয় করে তোলা হয়েছে, বিকৃত ইতিহাস ও অপব্যাখ্যায় সেটিকে তারা আত্মস্থ করেছে। ফলে তাদের কাছে বাংলাদেশের অভ্যুদয়, ১৯৭২ -এর সংবিধান, যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের সমস্যার কার্যকরণ, গণতন্ত্রের পথে বাংলা দেশের চলা ইত্যাদি মোটটেও গুরুত্ব পায়নি বরং ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু, চার জাতীয় নেতার হত্যাসহ সামরিক অভ্যুত্থান ইত্যাদিকে একটি অবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় ‘বিশ্বসযোগ্যতা’ দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। রাষ্ট্র, রাজনীতি ইতিহাস বিশ্ব ব্যবস্থার পথ চলা, সভ্যতার এগিয়ে চলা Ñ এ সব নিয়ে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা যাতে কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ জানতে না পারে সে জন্য তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। গোলাম আযমের লেখা কিছু চটি বই, দলীয় নেতাদের রাজনৈতিক বক্তব্য -যা এসব তরুণ ছাত্রছাত্রীর কাছে ধর্মীয় বিশ্বাস ও আবেগের দিক থেকে ‘অদ্বিতীয়’ বলে মনে হয়েছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি চিকিৎসা ও প্রকৌশল শিক্ষায় আগত ছাত্রছাত্রীদের একটি অংশের কাছে এ সবই দারুণ আকর্ষণীয় মনে হতে থাকে।
এমনিতেই গত কয়েক দশকে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় দেশ, জাতি ও আন্তর্জাতিক বিষয়াদি নিয়ে বিজ্ঞান ভিত্তিক পঠন পাঠনে বেশ অধঃগতি চলছে। ফলে বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রী জাতীয় ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কেই তেমন কিছু জানেনা, ব্যাখ্যা করে কিছু বলা অনেকের পক্ষেই কঠিন। আজকাল ছাত্র রাজনীতিতে বই পড়ার অভ্যাস তেমনটি নেই, সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও জাতীয় জীবনের ইতিহাস সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে প্রচ- ঘাটতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেই সুযোগটি ছাত্রশিবির পূরণ করছে জামায়াতের আদর্শভিত্তিক বই পুস্তক দিয়ে। গত শতকে বিপ্লবী রাজনীতির বই পাঠ করে কেউ কেউ উপকৃত হলেও ধারাবাহিক চর্চা ও পঠনপাঠনের অভাবের কারণে অনেকের জন্যই তা খুব একটা সুখকর হয়নি, তারা বরং বিল্পবী হতে গিয়ে প্রতিবিপ্লবী, অতি বিপ্লবী, অনেকে গণতন্ত্র বিরোধীও হয়েছে।
যাদের অনেককেই এখন দেখা যায় সুবিধাবাদী রাজনীতিতে আত্মসম্পর্ক করতে, গণতন্ত্রের কঠিন চ্যালেঞ্জকে গ্রহণের পরিবর্তে প্রক্রিয়াশীলদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজনীতির মাঠে অবস্থান নিতে। ছাত্রশিবিরের মধ্যেও জামায়াত কর্তৃক নির্ধারিত বইপুস্তক পড়ার কারণে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মী ইসলামী বিপ্লবের কাফেলায় মেধায় নয়, অন্ধ বিশ্বাস, আবেগ ও শক্তিতে যুক্ত হয়েছে। এরা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সকল গণতান্ত্রিক অর্জনকে অনৈসলামিক মনে করা থেকে তা ভেঙ্গেচুরে তছনছ করার মানসিকতা পোষণ করছে, এরা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মুক্তিযুদ্ধকে জামায়াতের ১৯৭১-এর ব্যাখ্যা গ্রহণ করেছে। ১৯৭১-এ জনগণের আত্মত্যাগের অবস্থান, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাস্তবতা থেকে নয়। এরা ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বকে শ্রদ্ধা করতে শেখেনি, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘৃণা ও শত্রু হিসেবে কল্পনা করতে শিখেছে, আওয়ামী লীগ নামক সংগঠনকে তাদের কল্পনায় বাংলাদেশ বিরোধী সংগঠন, এই সংগঠনের তৎকালীন বা বর্তমান নেতৃত্বকে তারা মোটেও স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছে না।
আসলে রাজনীতিতে তাদের সংস্কৃতি গড়ে ওঠার মানস ক্রমান্বয়ে আক্রমণাত্মক ও ভয়ঙ্কর হয়েছে। ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে মোটেও উগি¦গ্ন নয়, তাদের রাজনীতি ছাত্র রাজনীতিকে আবর্তিত হয়ে নয়, বরং তারা জাতীয় রাজনীতিকে তাদের গঠিত বিশ্বাস থেকে দেখছে এবং সেভাবেই তাদের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে। ছাত্রশিবির ১৯৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে সংগঠনগতভাবে জামায়াতের অবস্থান থেকে দেখে। জামায়াত যেহেতু ১৯৭১-এ তাদের দলীয় অবস্থানকে এখনও ত্যাগ করেনি, যা ত্যাগ করলে তারা মনে করে যে জামায়াতের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হতে পারে অথবা জামায়াতের প্রয়োজনীয়তা থাকবে না। ১৯৭১-এর মানবতাবিরোধী অপরাধে ধৃত তাদের দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতার বিচারকে জামায়াত তাদের দলের বিরুদ্ধে ‘আক্রমণ’ হিসেবে মনে করছে, নতুন নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক চিন্তাধারায় জামায়াত গড়ার কোন তাগিদ জামায়াতের কোন স্তরের নেতৃত্বই গ্রহণ করেনি (তেমন চেষ্টার কথা দু’একবার শোনা গেলেও উদ্যোগটি সফল হয়নি) ছাত্রশিবির জামায়াতে ইসলামীর তরুণ সংগঠন, তরুণদের মধ্যে সবচাইতে সংগঠিতভাবে এটি কাজ করা একটি সংগঠন।
ফলে সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের ঝাঁকুনি দেয়ার লক্ষ্যেই জামায়াত তাদের ‘রিজার্ভে’ থাকা সব চাইতে সংগঠিত শক্তি ছাত্রশিবিরকে এখন মাঠে নামিয়েছে। ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা তাদের প্রগাঢ় বিশ্বাস থেকেই মাঠে নেমেছে, পুলিশের সঙ্গে সর্বাত্মক সংঘর্ষে নেমেছে। এ সব আক্রমণ থেকে যেটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা হচ্ছে, ছাত্রশিবিরের প্রতিটি কর্মী এক ধরনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যে তা জনসম্মুখে প্রকাশিত হচ্ছে। এমনটি কেবল কোন বিপ্লবী সংগঠনই নিতে চেষ্টা করে থাকে। ছাত্রশিবির চিরায়ত বিপ্লবী আদর্শবাদী দল নয় মোটেও বরং এটি একটি ধর্মান্ধ, লুটেরা কোন বিশেষ শাসক ও শোষক গোষ্ঠীর অর্থে লালিত পালিত সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম যা উগ্র, হঠকারী ধর্মীয়, উন্মাদনায় উজ্জীবিত থাকে।
জামায়াতে ইসলামী পরিচালিত ছাত্রশিবির সে ধরনেরই তরুণদের একটি সংগঠন যারা মূলত আবেগ, বিশ্বাস, অন্ধত্ব, অর্থ ও রাষ্ট্র ক্ষমতার মোহে জীবন বাজি রেখে রাজনীতির মাঠে অংশ নেয়। দলটি তরুণদের ধর্মীয় আবেগ ও বিশ্বাসকে বিপ্লব বাদীদের মতো প্রয়োগ করে। তবে এদের এই চেষ্টাকে হঠাৎ যেমন নস্যাত করে দেয়া যাবে না, তেমনি কার্যকর কোন উদ্যোগ না নিলে রাষ্ট্র-রাজনীতি তাদের করায়ত্তে যাওয়া মোটেও অসম্ভবের কিছু নয়। দুর্বল গণতন্ত্র এবং গঠতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এ ধরনের জঙ্গী মানসিকতার শক্তিকে অবহেলা করে দেখার কোন অবকাশ নেই। কেননা, তারা আশ্রয় ও প্রশ্রয় পাচ্ছে গণতন্ত্রের লেবাসধারী কোন কোন শক্তির কাছে বাংলাদেশে অনেকে বিষয়টিকে সেভাবে বিশ্বাস করতে চাচ্ছে না, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সবচাইতে নির্ভরযোগ্য আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা হচ্ছে বিএনপি।
এখনও বিএনপি নেতৃত্ব জামায়াতকে নিয়ে দ্বিমুখী কথা বলে, বিএনপি আওয়ামীবিরোধী রাজনীতিতে জয়ী হতে জামায়াতকে নির্ভরযোগ্য বন্ধু হিসেবে মনে করে থাকে। ফলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিকাশে বিএনপির নীতি-আদর্শ সাম্প্রদায়িক শক্তি, জঙ্গীবাদী সংগঠন ও শক্তির অবস্থানকে মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে কোনভাবেই সহায়তা করে না। এ মুহূর্তে ১৮ দলীয় জনসভায় জামায়াত-শিবিরের যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দাবি সংবলিত পোস্টার, ব্যানার ও সেøাগান স্থান করে নিচ্ছে, আশ্রয়-প্রশ্রয় পাচ্ছে। অথচ বিএনপি দাবি করে, দলটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা শুধু মুখের কথায় অর্জিত হওয়া সম্ভব নয়, গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির অব্যাহত অপধারাকে প্রতিহত করার লড়াইও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজের অংশ।
সেই কাজটি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতিতে পালন করার উদাহরণ খুব একটা পাওয়া যায় না। অথচ দেশের রাজনীতিতে বিএনপির অবস্থান ও গুরুত্ব প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি। বিএনপির দিক থেকে গণতন্ত্রের বিকাশে যে পরিমাণ দায়িত্ব পালনের রাজনীতি থাকা প্রয়োজন ছিল কিন্তু তা হচ্ছে না। যে সব দল বাংলাদেশকে একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায় না, যাদের আদর্শে তা নেই তেমন দলের সঙ্গেই বিএনপির গাঁটছড়া ভাব ও সখ্য বেশি। জামায়াত তার অন্যতম বড় উদাহরণ।
জামায়াত কি ধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্থা চাচ্ছে তা বিএনপির অজানা কিছু নয়। এক সময় বিএনপি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী দল বলে দাবি করত। কিন্তু ২০০১ সালে ৪ দলীয় জোটের সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিএনপি ‘ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে’র কথা প্রচার করে। জামায়াত শিবিরও তা প্রচার করে। বিএনপির বেশির ভাগ পেশাজীবী সংগঠন এখন জামায়াত-বিএনপিতে একাকার হয়ে আছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে বিএনপি প্রকাশ্যে এক কথা বলে, রাজনৈতিক মঞ্চে কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দাবি প্রচারে সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতন্ত্রের প্রতি এমন দোদুল্যমানতা, রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে আধুনিক গণতান্ত্রিক চরিত্র দানের দায়িত্ব গ্রহণের অবহেলার বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্য দিকে আওয়ামী লীগ, ১৪ দল, নাগরিক সমাজ, ছাত্র-তরুণ সমাজের বৃহত্তর অংশ জামায়াত-শিবিরের উত্থান, তাদের হিংসাত্মক কার্যক্রম, তা-ব, গণতন্ত্রবিরোধী রাজনীতি সম্পর্কে কতটা সমানভাবে সচেতন সে সম্পর্কে সন্দেহমুক্ত হওয়া বেশ কঠিন। এখানে শুধু সচেতন হওয়াটিই যথেষ্ট নয়, বৃহত্তর জনগণের কাছে জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক আদর্শ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ নিয়ে যাওয়ার যে গুরু দায়িত্ব রয়েছে সেটি যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে বলে মনে হয় না। কিছু পথসভা, জনসভা ও বক্তৃতা বিবৃতি দিলেই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি দুর্বল হয়ে পড়বে না।
তরুণ প্রজন্ম, শিশু-কিশোরদের মধ্যে বাংলাদেশের কথা, আধুনিক দুনিয়ার কথা, ধর্মের মূলবাণীর কথা ইত্যাদি যথাযথভাবে তুলে ধরার কাজগুলো যেভাবে হওয়া উচিত ছিল সেভাবে হচ্ছে না। মিডিয়াকে যেভাবে ব্যবহার করা প্রয়োজন ছিল তাও খুব একটা হচ্ছে না। কাজটি বাংলাদেশের সমাজ জীবনে খুব সহজ নয়, বরং বেশ জটিল। বাংলাদেশের মাটি ১৯৭১ সালে উদারতার পলিতে যতটা ভরপুর ছিল এখন ততটা নেই, এখানে সাম্প্রদায়িকতার বিষ যথেষ্ট ছড়ানো হয়েছে, এখনও হচ্ছে। এখানে মিথ্যাচার, অপপ্রচার বেশ সহজে পলি পায়, গণতন্ত্রের কঠিন পাঠ নেয়া, রাজনীতিকে সেভাবে পরিচালিত করা এখন গণতন্ত্র ও আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ, দল, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের জরুরী কাজ হয়ে আছে।
সেই কাজগুলো যত বেশি পালন করা সম্ভব হবে, তত বেশি নতুন প্রজন্ম উগ্র, হঠকারী ভাবাদর্শের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারবে। আমাদের জন্য উদ্বেগের বড় কারণ হচ্ছে, আমাদের তরুণদের একটি অংশ এক সময় উগ্র বিপ্লববাদে আপ্লুত হয়ে হেমিলনের বংশীবাদকের ফাঁদে পা দিয়েছিল, সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে সলিল সমাধিতে শেষ হয়েছিল, আশির দশক-পরবর্তী সময়ে ‘ইসলামী বিপ্লবের জোয়ারে’ আবার একটি উল্লেখয্যেগ্য সংখ্যক তরুণ যুক্ত হয়েছে, তাদের কার্যক্রম এখন আমরা দেখছি বিভিন্ন স্থানে সহিংস আক্রমণে। বৃহত্তর তরুণ সমাজ এই রাজনীতির দর্শনটি আসলে সঠিকভাবে বুঝতে পারছে কিনা, আমাদের তরুণদের জন্য একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার উপায় কিভাবে নিশ্চিত হবে, তাতে সকলে কিভাবে যুক্ত হবে, ভূমিকা রাখবে সেটি নিয়েই ভাবতে হবে, উদ্যোগ নিতে হবে গণতান্ত্রিক ব্যক্তি ও সংগঠনসহ সকলকে। সে কাজগুলো দক্ষতার সঙ্গে না করতে পারলে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যত শঙ্কামুক্ত হবার নয়।
তথ্যসূত্র: জনকণ্ঠ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।