বর্তমান দিনগুলোতে আমাদের আলোচনার একটি অন্যতম বিষয়বস্তু হচ্ছে গণতন্ত্র এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামোগতউন্নয়ন। গণতন্ত্র উন্নয়নের ক্ষেত্রে ‘স্বচ্ছতা’ একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ এবং কীভাবে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্বচ্ছতা নিয়ে আসা যায় তা নিয়ে বর্তমান সরকার, জনগণ ওরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আলাপ-আলোচনা জরুরি। তবে গণতন্ত্র উন্নয়নে অন্যান্যদেশ কীভাবে তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করছে এবং কীভাবে আমাদের দেশেও ভূমিকা পালন করতে পারে, তা জানা দরকার।
দু’ভাবে তথ্যপ্রযুক্তি ভূমিকা রাখতে পারে
প্রথমত রাষ্ট্র্র, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, নির্বাচন ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্য জনগণের কাছে দ্রুত পৌঁছানোর জন্য।
দ্বিতীয়ত, সহজে ও দ্রুততার সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাপারে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে এবং জনগণের মতামত সংগ্রহ করা।
দরকার রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্যোগ
রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোও তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে পারে তাদের সাংগঠনিক অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে এবং জনগণের সঙ্গেসম্পৃক্ততা র ক্ষেত্রে। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ওয়েবসাইটে তাদের কর্মসূচিগুলো তুলে ধরতে পারে। এছাড়া তাদের ব্যাপারে জনগণের মতমত ও দৃষ্টিভঙ্গি জানার জন্য ওয়েবসাইটগুলোর ফোরাম, মতামত, পোল ব্যবহার করা যেতে পারে। জনগণের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি জানার জন্য বর্তমানে আমরা নির্ভর করছি সাংবাদিক ও মিডিয়ার ওপর। সংবাদিক ও লেখকরা যা লিখছেন তাই যে জনগণের মতামত তা কিন্তু নয়।
কেননা এই মাধ্যমগুলো রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা চালিত হয়ে থাকে। জনগণ সত্যিকারভাবে কী ভাবছে তা জানার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি বিভিন্নভাবে ভূমিকা রাখতে পারে।
আমেরিকার নির্বাচন নিয়ে বরাবরই খুব হৈচৈ হয় এবং এক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি ওইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো ভূমিকা রাখছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। প্রার্থীরা নিয়মিত অনলাইনেতাদের ব্লগ লিখছেনএবং সেখানে জনগণ সরাসরি তাদের মন্তব্য প্রার্থীদের জানাচ্ছেন। এভাবে রাজনীতিকরা বুঝতে পারছেন জনগণের আকাঙ্ক্ষা।
এছাড়া প্রার্থীরা তাদের ভিডিওগুলো ইউটিউব, গুগল ভিডিও’র মাধ্যমে অনলাইনে প্রচার করে। আমেরিকায় নির্বাচনে সব প্রার্থীরই রয়েছে twitter, googleplus, Facebook, Linkedin, Myspaceএর মতো সোশ্যাল সাইটগুলোতেনিজস্ ব ওয়েবসাইট। এই সাইটগুলো তাদের প্রচারণার জন্য খুবই সাহায্য করে। এছাড়া জনগণের মতমতগুলোও প্রার্থীরা জানতে পারছেন এই সাইটগুলোর মাধ্যমে। বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য তাদের আয়-ব্যয়, সংগৃহীত অর্থ সংক্রান্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য ওয়েবসাইটেই প্রকাশ করে।
বাংলাদেশেও একইভাবে ইন্টারনেটের এই টুলসগুলো ব্যবহার করে জনগণের সঙ্গে আরও সম্পৃক্ত হতে পারেন এবংতাদের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারেন।
আমরাও এগিয়ে যাচ্ছি
বাংলাদেশেও গণতন্ত্র উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করার উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে, যা কিছুটা আশাব্যঞ্জক। উদাহরণস্বরূপপ্র থমেই বলতে হয় গত নির্বাচনের কথা। জাতীয় ও আঞ্চলিক ভোটগুলোতে যেসব প্রার্থী ভোটপ্রার্থীহবেন, তাদের তথ্যগুলো জনগণের কাছে পৌঁছানোর জন্যসুজনসহ কিছু প্রতিষ্ঠান ওয়েবসাইট তৈরি করেছিল। এগুলোর মাধ্যমে খুব সহজেই জনগণের কাছে তথ্যপৌঁছানো সম্ভব।
আমরা যেহেতু একটু ভুলোমনের, তাই আমাদের জন্য সংবাদপত্রগুলোতে প্রকাশিতসংবাদগু লোর আর্কাইভগুলো সাহায্য করে বৈকি। এছাড়া নির্বাচন কমিশনও প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে যা গত নির্বাচনে আমরা দেখেছি।
তথ্যপ্রযুক্তি দ্বারা গঠিতভবিষ্যতের গণতন্ত্র
আমি মনে করি, তথ্যপ্রযুক্তিআমাদের সামনের বিশ্বের গণতন্ত্রকে অনেকখানিই বদলেদেবে। এমন একটি দিন আসবে যখন আর মানুষকে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতেহবে না। এরই মধ্যে ইন্টারনেট বা অনলাইন ভোট, এসএমএস ভোট বিভিন্ন সংগঠনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন দিয়ে নির্বাচনহয়েছে। আর একটু সতর্ক হলে এবং ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারলে সাফল্য সম্ভব।
লাগবে জনগণের সম্পৃক্ততা
সামনে এই প্রযুক্তিগুলো আমাদের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতেভূমিকা রাখতে পারে। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে এখন সরাসরিজনগণের পরিবর্তেজনগণের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাইভ ূমিকা পালন করছে। কিন্তু ভবিষ্যতে জনগণই সরাসরি রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে মতামত রাখতে পারে।
মনে করা যাক, আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের আন্তঃরেল যোগাযোগ সংক্রান্ত কোনো মিটিং রয়েছে। রাষ্ট্রের জনগণ এই তথ্যগুলো তাদের ব্যক্তিগত ই-মেইলে পেয়ে যেতে পারে এবংরাতে বাসায় ফিরে প্রতিটি ভোটার তাদের মতামতরাষ্ট্রের ওয়েবসাইটে লগইন করে জানিয়ে দিতে পারেনযে আন্তঃরেল সংযোগে বাংলাদেশের জনগণ কী ভাবছে। এমনিভাবে বাজেটে শিক্ষা ক্ষেত্রে কত অর্থ ব্যয় করা হবে, তার সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ। ব্যাপারটি যে হুবহু এরকমই হবে তা নয়, তবে কাছাকাছি যে কিছু একটা হবে তা দিব্যদৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছি। বর্তমানের জনগণের প্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত গণতন্ত্রের পরিবর্তে সরাসরি জনগণের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে, সেটিই হয়তোবা প্রকৃত গণতন্ত্র।
আমরা জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গণতন্ত্র চালিয়ে নিচ্ছি কেননা এতদিন পর্যন্ত সরাসরি জনগণের মতামত জানা ওসম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে অনেক প্রযুক্তিগত সমস্যা ছিল। কিন্তু ভবিষ্যতে তথ্যপ্রযুক্তি সেই সমস্যাগুলো সমাধান করে দিতে পারবে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে খুব সহজেই এবং দ্রুত মতামত সংগ্রহ করা যায়।
যদিও বর্তমানে তেমন গণতন্ত্র কোনো দেশেই গড়ে ওঠেনি, কিন্তু কিছুটা প্রয়োগ হচ্ছে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ক্ষেত্রে। উরমম.পড়স বলে একটি সাইটে কোন সংবাদ জনগণ বেশি পছন্দ করছে তা উরমম (সমর্থ বা অসমর্থ) করতে পারে। ফরমম.পড়স/ বষবপঃরড়হং/ এর মাধ্যমে আমেরিকার নির্বাচনের ব্যাপারে জনগণের মতামত নেয়া হয়।
উরমম-এর মতো আউডিয়াগুলো গণতন্ত্র উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।
এ ধরনের আরও তথ্য জানতে-
http://cf914504.linkbucks.com ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।