জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব নিয়ে থাকা খুব বোকা একজন ....। উমেশ মজুমদারের একাদশ বৎসরের পুত্র নিতেশ মজুমদারের অদ্য ভীষন মন খারাপ । পুকুর পাড়ের পেয়েরা গাছটার মগডালে ছিপ হাতে বসিয়া রহিয়াছে । তাহার বিক্ষিপ্ত মন বারংবার বরশি হইতে ছুটিয়া বনে বাদাড়ে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে । কিছুতেই তাহার অশান্ত মন খানাকে কব্জা করিতে পারিতেছে না, টাকি মাছের মত কাদার মধ্য হইতে উঁকি মারিয়াই আবার হারাইয়া যাইতেছে ।
পাঠশালা নামক কারাগার খানি কে আবিষ্কার করিয়াছে ভাবিয়া তাহাকে শত সহস্র গালি মিশ্রিত অভিশাপ বর্ষন করিতেছে । একেতো কল্য প্রভাতে উঠিয়াই পাঠশালায় যাইতে হইবে, তাহার উপর পন্ডিতমশাই তাহকে ত্রিশখানা সুদকষা করিতে দিয়াছেন । সে ছুটির সারাটাদিন খাটিয়াও সুদকষা আয়ত্তে আনিতে পারে নাই । পন্ডিতমশাই প্রতি রবিবার তাহার বেতখানা ত্যাগ করিয়া নতুন একখানা বেত কাটিয়া রাখেন পরের সপ্তাহে ব্যবহার করিবার নিমিত্তে । সেই নতুন বেতখানা যে কল্য নিতেশের পিঠে পড়িয়াই পুরনো হইবে ইহা সে চক্ষু মুদিলেই দেখিতে পাইতেছে ।
অপরদিকে তাহার পিতৃদেব পড়াশোনাই তেমন উন্নতি করিতে না পারিলেও পাঠশালা পালাইবার ব্যাপারে অগাধ জ্ঞান রাখিয়া থাকেন । এখন পর্যন্ত কোন ফন্দি করিয়াই নিতেশ তাহার পিতৃদেবকে হারাইতে পারে নাই । কেমন করিয়া জানি ধরা খাইয়া যায় । তাই নিতেশ নিরুপায় হইয়া রবিঠাকুরের ইচ্ছেপুরন গল্পের ইচ্ছে ঠাক্রুঙ্কে একমনে ডাকিতে লাগিল । কিন্তু হায় ! ইচ্ছে ঠাকরুন তখন ওবামা সাহেবের ইচ্ছেপুরন পুর্বক তাহার দেয়া পার্টিতে আকন্ঠ মদ্যপান করিয়া গভীর ঘুমে নাক ডাকিতেছিল ।
কোথাকার কোন নিতেশ মজুমদারের ডাকে তাহার ঘুম ভাঙ্গিল না ।
হঠাত কিসের শব্দে নিতেশের ধ্যান ভাঙ্গিয়া গেল । চক্ষু খুলিয়া সে ইচ্ছে ঠাক্রুনের পরিবর্তে দেখিল একখানা রেলগাড়ি কুউউউ ঝিক ঝিক করিয়া ছুটিয়া যাইতেছে । ইহা দেখিয়া সে কিছুতেই তাহার অশ্রু সংবরন করিতে পারিল না । দুই ফোঁটা অশ্রু তাহার গন্ডদেশ বাহিয়া পুকুরের জলে পড়িল ।
এইদিকে বিদ্যার দেবী স্বরস্বতী পাশ দিয়াই যাইতেছিলেন । নিতেশ বাবুকে এরুপে কাঁদিতে দেখিয়া তাহার মনে দয়া হইল । তিনি নিতেশের মনের কষ্ট বুঝিতে পারিয়া তাহার জ্ঞানচক্ষু খুলিয়া দিলেন । নিতেশ বিদ্যার দেবীর কাছএ হইতে এরুপ বর পাইয়া খুশিতে লাফাইতে লাফাইতে বাড়ির দিকে ছুটিয়া গেল । বাড়িতে প্রবেশ করিয়াই নিতেশ দেখিতে পাইলো তাহার মা কাঠ কয়লা জোগাড় করিয়া রান্নার বন্দবস্ত করিতেছে ।
সে তাহার মাকে ডাকিয়া কহিল, “মা, আমাকে কয়লা খাইতে দাও, আমি একটা রেলগাড়ি । কুউউউউউ ঝিক ঝিক ঝিক ঝিক ঝিক ঝিক ।
দিন দিন নিতেশের এই আজব রোগ বারিতেই লাগিল । কোন ডাক্তারের ঔষধেই কাজ হইল না । ক্রমে তাহার পড়াশোনা টাকে উঠিল ।
উমেশ মজুমদার একের পর এক ডাক্তার বদলাইতে লাগিলেন, কিন্তু কিছুতেই কিছু হইল না । নিতেশের গোলগাল চেহারা ক্রমশ রেলাকৃতি ধারন করিতে লাগিল ।
উমেশ বাবু যখন চিন্তায় যায় যায়, তখন এক দূরসম্পর্কীয় আত্নীয়ের কাছে কবিরাজ গুপ্ত বাবুর খোঁজ পাইলেন । কবিরাজ গুপ্ত ইতিপূর্বেই অনেক রোগী সাড়িয়া তুলিয়াছেন । তবে নিন্দুকেরা বলে তাহার ভুল চিকিৎসার জন্যেই নাকি জমিদার বাড়ির ছোট বউটা সেবার মরিতে বসিয়াছিল ।
ইহার পর হইতে গুপ্ত বাবুর আয়ের পথ প্রায় বন্ধ হইয়া গিয়াছে । তাহার গিন্নি তাহাকে উঠিতে বসিতে অকর্মা বলিয়া খোঁটা দেয় । এরুপ শোচনীয় মুহুর্তে উমেশ মজুমদারের ডাক পাইয়া গুপ্তবাবু যেন স্বর্গের চাঁদ হাতে পাইলেন । নিতেশের চক্ষু, কর্ণ, হস্তরেখা পর্যবেক্ষন করিয়া কিয়তক্ষন চক্ষু মুদিয়া বিড়বিড় করিলেন । তারপর হঠাত চক্ষু খুলিয়া মুখ খানা বেজার করিয়া কহিলেন, বড় কঠিন ব্যামো ।
পদেবতা আছড় করিয়াছে । শুনিয়া উমেশ বাবুর মুখ খানা শুকিয়া গেল । গুপ্তবাবু উমেশ বাবুর গিন্নিকে ডাকিয়া কহিলেন, বাড়িতে কি কোন কাল বিড়াল রহিয়াছে ?? অপদেবতা কাল বিড়ালের ছদ্মবেশে আসিয়া নিতেশএর উপর ভর করিয়াছে । উমেশ বাবুর গিন্নি মুখ শুকাইয়া না সূচক মাথা নাড়িলেন । গুপ্তবাবু অভয় দিয়া বলিলেন, চিন্তা নাই, উহা কোথায় লুকিয়া বসিয়া রহিয়াছে তাহা আমি শীঘ্রই খুঁজিয়া বাহির করিব ।
এখন ঘৃত দিয়া পোলাও কর্মা রাধিয়া আমাদের খাইতে দেন । আমি নিতেশের সহিত খাইব আর মন্ত্র পাঠ করিবো । ইহাতে সে ধীরে ধীরে সুস্থ হইয়া উঠিবে । তাহারপর গুপ্ত বাবু বহুদিন পর পেট পুরিয়া সুখাদ্য খাইয়া, দক্ষিনা লইয়া বিদায় লইলেন ।
এরুপে প্রত্যহ নিতেশের চিকিৎসা চলিতে লাগিল ।
প্রতিদিন ভাল ভাল খাইয়াই হোক আর গুপ্ত বাবুর মন্ত্র গুণেই হোক নিতেশের রেলাকৃতির চেহারা আবারও পুর্বের ন্যায় গোলগাল হইতে লাগিল । উমেশ বাবু খুশি হইয়া কবিরাজের দক্ষিনা বারাইয়া দিলেন । অপরদিকে গুপ্তবাবুর আয়-রোজগারের কল্যানে তাহার গিন্নির বাঁজখাই গলা ক্রমশ নরম হইতে লাগিল ।
একদিন মধ্যাহ্নের পর গুপ্ত বাবু হুক্কা টানিতে টানিতে একটু দিবানিদ্রার আয়জন করিতেছিলেন । এমন সময় তাহার গিন্নি আসিয়া পাশে বসিয়া সোহাগ করিয়া একখিলি পান সাজাইয়া দিলেন ।
ইনিয়ে বিনিয়ে এই কথা সেই কথা বলিবার পর গিন্নি তাহার মনের ইচ্ছার কথা পাড়িলেন । তাহার বহুদিনের শখ একখানা সীতাহার কিনিবার, কিন্তু এই টানাটানির সংসারে সেই শখ সেই কবেই মরে গেছে । এখন তাহাদের সুদিন আসিয়াছে । তাই তার সেই শখ আবার জাগিয়া উঠিয়াছে । এইবার তাহাকে যদি একখানা সীতাহার বানাইয়া না দিলে যেন তার মাথা খায় ।
গুপ্তবাবু তাহার গিন্নির কথা হাসি মুখেই মানিয়া লইলেন । গিন্নি আবেগে আপ্লুত হইয়া আরেক খানা পান সাজাইয়া দিয়া বলিলেন, এই লও, আরেক খানা পান খাও । গুপ্তবাবু হাসিয়া বলিলেন, “গিন্নি, পান খাইবো না, কয়লা খাইব । কুউউউউউউউ ঝিক ঝিক ঝিক ঝিক” ।
পরদিন গ্রামময় রটিয়া গেল, কবিরাজ গুপ্তবাবু নিতেশের রোগ সারাইতে গিয়ে নিজেই এই রোগে আক্রান্ত হইয়াছেন ।
[বিঃ দ্রঃ এই রচনার প্রত্যেকটি চরিত্র কাল্পনিক । কাহার সহিত মিলিয়া গেলে তাহা নিতান্ত অনিচ্ছাকৃত এবং কাকতালীয় ]
সেফ হবার পর এটা আমার প্রথম পোস্ট । সবার দোয়া প্রার্থী । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।