আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পয়লা বৈশাখ হোক সবার

খবরে ধান্দাবাজি ভোরে যে সূর্যটা উঠবে, তা অন্য দিনের চেয়ে আলাদা নয়। নদী, মাঠ, ফুল, পাখি একই রকম দেখাবে। শহরের রাস্তা, রাস্তার পাশের বৃক্ষ, উঁচু উঁচু ভবন একই দৃশ্য দেখাবে। বৃষ্টি হলেও হতে পারে। আবার নাও হতে পারে।

আজকের জন্য আলাদা কোনো আবহাওয়ার বার্তা নেই। পৃথিবীর প্রায় সব প্রান্তের মানুষই সূর্য ওঠার পর কর্মব্যস্ত হয়ে পড়বে। কেবল বঙ্গোপসাগর ঘেরা ব-দ্বীপের মানুষদের আজ কোনো কাজ নেই। কারণ, ব-দ্বীপ তথা বাংলাদেশে আজ পয়লা বৈশাখ। ১৪১৯ সালের প্রথম দিন।

জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, দলের ভেদাভেদ ভুলে এদিন সমস্ত বাঙালির বড় একটা অংশ আনন্দে মেতে উঠবে। রমনা, চারুকলা, টিএসসি, শাহবাগ, সোহরাওয়ার্দি উদ্যানসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলা, কনসার্ট, গান, নাচ, নাটক, যাত্রা, পুতুল নাচ এবং নাগরদোলার মতো আনন্দযজ্ঞে মেতে উঠবে দেশবাসী। এ যেন ঘর থেকে বের হয়ে আসার এক মহাউৎসব। জয় বাঙালির। জয় বৈশাখের।

পয়লা বৈশাখের আনন্দ হোক সবার। শুভ নববর্ষ ১৪১৯। আজ ভোরে যে ফুলটি ফুটবে, আজ যে পাখি প্রথম গান গাইবে, আজ যে শিশুর মুখে প্রথম কথা শোনা যাবে, আজ যে মায়ের পেটে প্রথম ভ্রুণ ধারণ হবে, আজ যে শিশু জন্ম নিবে, আজ যে প্রথম প্রেমে পড়বে তাদের সুখময় অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ুক সবার মাঝে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো পয়লা বৈশাখেরও আছে ঐতিহ্য। এদিন নতুন পোষাক পড়ে মানুষ প্রিয়জনদের হাত ধরে বেরিয়ে পড়বে।

আনন্দ শোভাযাত্রা অংশ নেবে অনেকে। নতুন বউ নাইওরে যাবে বাপের বাড়ি। যারা সারা বছর দূরে দূরে থাকে তারাও ছুটিতে প্রিয়জনদের সঙ্গে দেখা করতে যাবে। ব্যবসায়ীরা নতুন খাতায় হিসাব শুরু করবেন। ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করাবেন।

একেই বলা হয় হালখাতা। পাহাড়ে পাহাড়ে চলছে বর্ষবরণকে ঘিরে আনন্দ উৎসব। পাহাড়ি-বাঙালি মিলনের এ এক মাহেন্দ্রক্ষণ। পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী নাচ-গান-পানি ছিটানোসহ নানা অনুষ্ঠান আমাদের হৃদয়ে আনন্দের ঢেউ তোলে। এদিন দেশের পর্যটন কেন্দ্র ও দর্শনীয় স্থানগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভীর চোখে পড়ার মতো।

আমরা জানি, এদেশের সব মানুষের পয়লা বৈশাখে নতুন জামা গায় দেওয়ার সামর্থ্য নেই। কেউ কেউ ছেঁড়া জামার লজ্জায় এইদিন বাইরেই বের হবে না। পান্তা-ইলিশে যখন রমনা-শাহবাগ বা অভিজাত হোটেল-রেস্তরাঁয় ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ গান বাজবে, তখনও অনেক মানুষ থাকবে ভুখা। খাবারের অন্বেষণে অনেককেই বেরোতে হবে কাজের সন্ধানে। রাস্তার পাশে বসে যে চর্মকার জুতা সেলাই করেন, যে মিন্তি বাজার বহন করেন, যে মাটি কাটা শ্রমিক কোদাল চালান, যে কামার কয়লা-লোহা পোড়ান, যিনি ঠেলা চালান, যিনি রিক্সা চালান, যে রাখাল গরুর যত্ন নেন তাদের জন্য পয়লা বৈশাখ আলাদা আনন্দ আনতে পারে নি।

অনেক শিশু ছেঁড়া জামা বা উদোম গায় হাত পেতে এটা-ওটা চেয়ে খাবে। অনেকে চৈত্র সংক্রান্তির রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন, পয়লা বৈশাখ তার জন্য খাবার এনে দিতে পারবে কি? বৈশাখের এই প্রথম দিনেও যে দিনমজুর কাজ না পেয়ে ভুখা থাকবে তার জন্য নববর্ষের আনন্দ নয়। এদের প্রত্যেকের জন্য আমাদের আলাদাভাবে ভাবতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে, দেশকে ভালোবাসতে হলে, দেশের জন্য কিছু করতে হলে এদের ভুলে গেলে চলবে না। তারপরও পয়লা বৈশাখে আনন্দ হবে।

রেডিও, এফএম রেডিও, টিভি, সংবাদপত্র, ফেসবুক ও ব্লগগুলোতে পয়লা বৈশাখ নিয়ে বিশেষ আলোচনা-বিতর্ক হবে। এ আলোচনায় দেশের সাম্প্রতিক রাজনীতিও চলে আসবে। ঢাকায় মেয়র নির্বাচন, পরবর্তী তত্ত্বাবধায় সরকার, তত্ত্বাবধায়ক বাতিলকারী সুরঞ্জিত বাবুর কালো বিড়াল (যদিও অন্য মন্ত্রীরা তার চেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত নয়)- এ সময়ের আলোচিত বিষয়। আশার কথা, এরই মধ্যে আমাদের প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দলের দুই সভানেত্রী পরষ্পরের মধ্যে পয়লা বৈশাখের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। আমেরিকা থেকে হিলারী ক্লিনটন দেশবাসীকে বৈশাখের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

আমরা চাই, দুই নেত্রীর মধ্যে শুভবোধের উদয় হোক। এদেশের মানুষের কল্যাণের জন্য তারা কিছু করুন। সাধারণ মানুষের ক্ষতি হয় এমন কাজ থেকে তারা বিরত থাকুন। পয়লা বৈশাখের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক সবার মাঝে সমানভাবে, এই কামনায় শুভ নববর্ষ ১৪১৯। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।