বৌদ্ধ পরিবারে জন্মসূত্রে বিভিন্ন নিয়মকানুন দেখেছি, শুনেছি এবং পালনও করেছি। কিন্তু আস্তে আস্তে জানলাম যা জেনেছি তার কিছু কিছু ভুলে ভরা। আর সামগ্রিকভাবে সঠিক বুদ্ধ-নীতি গুলো দেখে বুঝেছি নীতিগুলো অসাধারণ,অন্তত পৃথিবীতে শান্তি আনয়নের জন্য। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল কিছু কিছু জিনিসকে বৌদ্ধরা অনেক বিকৃত করে ফেলেছে। তন্মধ্যে অন্যতম ৫ টা নিয়ে নিচে আলোচনা করলাম যা আমরা অনেকেই জানিনা-
১-বুদ্ধমূর্তি পুজাঃ
অন্যতম প্রচলিত ভুল।
সিদ্ধার্থ গৌতম চেয়েছিলেন তখনকার সব অন্ধবিশ্বাস, মূর্তিপূজার নিয়ম ভেঙে মানুষদের জ্ঞানচক্ষু উন্মোচন করতে। “সৃষ্টিকর্তা নয়, নিজের করা কর্মই হল মানুষের প্রভু” এটাই ছিল তার মূলকথা। তিনি কখনোই বলেননি তাঁকে মূর্তি বানিয়ে পূজা করতে, একটা মন্দিরে রুমের মাঝে বসিয়ে উনাকে বন্দনা করতে। অথচ আমরা সেটাই করছি। অনেক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী কে দেখেছি বুদ্ধমুর্তির সামনে প্রার্থনা করে বলছে ”বুদ্ধ আমার শত্রুদের ধ্বংস করে দাও।
আমার জন্যে যে গর্ত খুঁড়ছে সেই গর্তে যেন ও নিজে পড়ে। বুদ্ধ আমাকে এটা দাও। বুদ্ধ আমাকে ওটা দাও। বুদ্ধ আমাকে পরীক্ষায় প্রথম বানিয়ে দাও” । শেষের বাক্যটা আমি নিজেও অনেকবার বলেছি।
এসব মূল্যহীন। বুদ্ধ কিছুই করতে পারবেন না। ওটা উনি নিজের মুখেই বলেছেন। তিনি শুধু বলেছিলেন এবং পণ্ডিত ব্যক্তিদের সেবা এবং শ্রদ্ধা করতে। বাকিটুকু সবার নিজের হাতে।
২-সৃষ্টিকর্তাঃ বৌদ্ধধর্মে কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। নেই কোন আদিমাতা বা আদি-পিতা। মানুষ নিজেই নিজের সৃষ্টিকর্তা। নিজের কর্ম গুনেই বেঁচে থাকবে মানুষ পৃথিবীতে। একবার একজন সিদ্ধার্থ গৌতম কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “শাস্তা, সৃষ্টিকর্তা কি কেউ আছেন?” গৌতম বলেছিলেন “না“।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলেছিলেন “হ্যাঁ, কর্ম বা কৃতকাজই হল সৃষ্টিকর্তা। “
৩-ধর্ম নাকি নীতিঃ
অনেক তর্ক আছে এই ব্যাপারটা নিয়ে। বুদ্ধের জীবিতাবস্থায় ছিল নীতি। যারা শিষ্য ছিল তাদেরকে বলা হত বুদ্ধ নীতির অনুসারী। বুদ্ধ নিজে বলে যাননি নীতিগুলোকে ধর্মে রূপ দিতে।
মহাপ্রয়াণের আগে শিষ্যদের বলে গিয়েছিলেন মঙ্গলের জন্য যা যা দরকার হয় করতে। বুদ্ধের মহাপ্রয়াণের কিছুদিনের মধ্যেই দেখা যায় তার নীতিগুলো সবাই বিকৃতভাবে পালন করা শুরু করে দিয়েছে । তখন তাঁর শিষ্যরা সিদ্ধান্ত নেয় মহাসংগীতি করে সবগুলো বাণী এবং নীতি কে একীভূত করার। এই নীতি বা বাণীগুলো একীভূত করে ত্রিপিটক না বানালে এবং বুদ্ধের মহাপ্রয়াণের পর উনার মূর্তি গুলো না বানালে পরবর্তী কয়েকশ বছরের মধ্যেই সব কিছু বিলীন হয়ে যেত। ।
আমার মতে এই জায়গা থেকেই বুদ্ধ প্রচারিত বাণীগুলো ধর্মে রূপ লাভ করে এবং গৌতম বুদ্ধকে ধর্ম প্রচারক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করানো হয়।
৪-প্রার্থনাঃ
বৌদ্ধরা মন্দিরে গিয়ে বুদ্ধের সামনে নতজানু হয়ে পালি ভাষায় প্রার্থনা করে। যদিও এর কোন বাধ্যবাধকতা নেই। গৃহীরা শুধু ৫ টি নিয়ম মানলেই অনেক সুখে এবং শান্তিতে থাকবে। নিয়মগুলো হল - প্রাণীহত্যা , চুরি, ব্যভিচার, মিথ্যা বা কটুবাক্য, নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকা।
শুধু পালন করলেই চলবে। এই ৫ টি নিয়ম পালন করব কথাগুলো বুদ্ধমুর্তির সামনে গিয়ে বললেও কোন লাভ নেই যদি না পালন করি। আর বছরে একবারও যদি প্রার্থনা না করে বরং এই ৫ টি নিয়ম যথাযথ ভাবে পালন করি তবেই বুদ্ধ নীতির সঠিক ব্যাবহার হবে। মোটকথা প্রার্থনা জিনিসটাও আমাদের সৃষ্টি । এবং এটা করা হয়েছে যাতে আমরা প্রতিদিন নতুনভাবে শপথ নেই এই ৫ টি খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে।
৫-বিয়েঃ
একটা ছেলে একটা মেয়ে পরস্পরকে মন থেকে ভালবাসলেই একসাথে থাকতে পারবে। বিয়ের মন্ত্র বা বিয়ের বাধ্যবাধকতা বৌদ্ধধর্মে নেই। একজনকে সামাজিকভাবে বিয়ে করলাম কিন্তু আরেকজনকে ভালোবাসি তখন যাকে বিয়ে করেছি তার সাথে থাকলেই বরং ব্যভিচার হবে। মন্ত্র পড়ে বিয়ের কোন মূল্যই থাকবেনা যদি আমি যাকে বিয়ে করলাম তাকে ভাল না বাসি। এবং যাকে ভালোবাসি তাকে বিয়ে না করে বা তার সাথে মন্ত্র না পড়ে থাকলেও বুদ্ধ-নীতি অনুসারে কোন সমস্যা নেই।
জানি প্রায় সব বৌদ্ধরাই আমার সাথে দ্বিমত পোষণ করবেন। হয়ত আমার জানায় কিছুটা ভুল আছে । কিন্তু সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে আমার মনে হচ্ছে আমি ঠিক পথেই আছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।