আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং বৌদ্ধ ধর্মপ্রচারক শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্করের মৃত্যুবার্ষিকী (অনুমিত) আজঃ জ্ঞাণ তাপস অতীশ দিপঙ্করের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

আমি সত্য জানতে চাই (অতীশ দীপঙ্করের প্রতিকৃতি) বৌদ্ধধর্মপ্রচারক শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর ৯৮২ খ্রিস্টাব্দে বিক্রমপুর পরগনার বজ্রযোগিনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এটি বর্তমানে বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত। ছোটবেলায় তাঁর নাম ছিল আদিনাথ চন্দ্রগর্ভ। তিন ভাইয়ের মধ্যে অতীশ ছিলেন দ্বিতীয়। তার অপর দুই ভাইয়ের নাম ছিল পদ্মগর্ভ ও শ্রীগর্ভ।

অতীশ দীপঙ্কর গৌড়ীয় রাজ পরিবারে রাজা কল্যাণশ্রী ও প্রভাবতীর মধ্যম সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। অতীশ খুব অল্প বয়সে বিয়ে করেন। কথিত আছে তার পাঁচ স্ত্রীর গর্ভে মোট ৯টি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। তবে পুন্যশ্রী নামে একটি পুত্রের নামই শুধু জানা যায়। অতীশ দীপঙ্কর প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন মায়ের কাছে।

তিন বছর বয়সে সংস্কৃত ভাষায় পড়তে শেখা ও ১০ বছর নাগাদ বৌদ্ধ ও অবৌদ্ধ শাস্ত্রের পার্থক্য বুঝতে পারার বিরল প্রতিভা প্রদর্শন করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে ১০০ জন শিক্ষকের কাছ থেকে মহাযান, হীনযান ও বজ্রযান বৌদ্ধধর্মের বিভিন্ন জ্ঞান কাণ্ড শিক্ষা করেন তিনি। বিখ্যাত বৌদ্ধ পণ্ডিত জেত্রির পরামর্শ অনুযায়ী তিনি উত্তর-পূর্ব ভারতের ‘নালন্দা’য় গিয়ে বহুদিন ধরে শাস্ত্র শিক্ষা করেন। বিজ্ঞানের পাঁচটি শাখায় উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন বিখ্যাত বৌদ্ধ গুরু জেতাবির কাছ থেকে। অতি অল্প সময়েই তিনি হস্তশিল্প, ব্যাকরণ এবং গণিতশাস্ত্রে অসাধারণ পান্ডিত্যের স্বাক্ষর রাখেন।

ধর্মীয় জ্ঞানার্জনের জন্য তিনি পশ্চিম ভারতের কৃষ্ণগিরি বিহারে গমন করেন এবং সেখানে প্রখ্যাত পন্ডিত রাহুল গুপ্তের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। বৌদ্ধ শাস্ত্রের আধ্যাত্নিক গুহ্যাবিদ্যায় শিক্ষা গ্রহণ করে ‘গুহ্যজ্ঞানবজ্র’ উপাধিতে ভূষিত হন। এরপর মগধের ওদন্তপুরী বিহারে মহা সাংঘিক আচার্য শীলরক্ষিতের কাছে দীক্ষা গ্রহণ করলে তাকে দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান উপাধিতে ভূষিত করা হয়। দীপঙ্কর ১০১১ খ্রিস্টাব্দে শতাধিক শিষ্যসহ মালয়দেশের সুবর্ণ দ্বীপে (বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপ) গমন করেন এবং আচার্য চন্দ্রকীর্তির কাছে দীর্ঘ ১২ বছর বৌদ্ধ শাস্ত্রের বিভিন্ন বিষয়ের উপর অধ্যয়ন করেন, তখন তার বয়স ৪৩ বছর। মগধে ফিরে আসার পর তিনি তর্কযুদ্ধে মগধের প্রধান পন্ডিতদের বাগ্নিতা, যুক্তি ও পান্ডিত্য দিয়ে পরাজিত করেন।

অতীশ দীপঙ্কর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নালন্দা এবং বিক্রমশীল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করেন। দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান দুই শতাধিক গ্রন্থ রচনা, অনুবাদ ও সম্পাদনা করেন। তিববতের ধর্ম, রাজনীতি, জীবনী, স্তোত্রনামাসহ তাঞ্জুর নামে বিশাল এক শাস্ত্রগ্রন্থ সংকলন করেন। বৌদ্ধ শাস্ত্র, চিকিৎসা বিদ্যা এবং কারিগরি বিদ্যা বিষয়ে তিববতি ভাষায় অনেক গ্রন্থ রচনা করেন বলে তিববতিরা তাকে অতীশ উপাধীতে ভূষিত করে। অতীশ দীপঙ্কর অনেক সংস্কৃত এবং পালি বই তিববতি ভাষায় অনুবাদ করেন।

বিখ্যাত পন্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এবং ইতালির বিখ্যাত গবেষক টাকি দীপঙ্করের অনেকগুলো বই আবিস্কার করেন। ১০৪০ খ্রিস্টাব্দে তিববতের রাজা চ্যাং চুব (চ্যান-চাব) জ্ঞানপ্রভ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানকে তিববত ভ্রমনের আমন্ত্রন জানান। অতীশ দীপঙ্কর কয়েকজন বিশিষ্ট পন্ডিতসহ বিহারের পথে তিববত যাত্রা করেন। সেখানে পৌছলে তিববতের রাজা চ্যং চুব এক রাজকীয় সংবর্ধনার আয়োজন করেন। সেই রাজকীয় সংবর্ধনার চিত্রটি একটি প্রাচীন মঠের দেয়ালে আজও আঁকা রয়েছে।

এই রাজকীয় সংবর্ধনায় দীপঙ্করকে চা পানের আমন্ত্রণ জানানো হয়। দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানই প্রথম বাঙালি যিনি প্রথম চায়ের স্বাদ নেন। দীপঙ্কর তিববতের বিভিন্ন অংশে ভ্রমণ করেন এবং বৌদ্ধ ধর্মের ব্যাপক সংস্কার সাধন করেন। এই সংস্কারের ফলে তিববতে বিশুদ্ধ বৌদ্ধ ধর্মাচার পন্ডিত প্রতিষ্ঠিত হয়। মহামতি বুদ্ধের পরেই তিববতবাসীরা তাকে শ্রেষ্ঠ গুরু হিসেবে সম্মান ও পূজা করেন এবং মহাপ্রভু হিসেবে মান্য করেন।

তিববতে বৌদ্ধ ধর্মে সংস্কারের মতো শ্রমসাধ্য কাজ করতে করতে দীপঙ্করের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে ৭৩ বছর বয়সে তিববতের লাসা নগরের কাছে লেথান পল্লীতে ১০৫৩ খ্রিস্টব্দের ১৫ নভেম্বর (অনুমিত) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বাংলাদেশে প্রতিবছর বিভিন্ন শাখায় অতীশ দিপাঙ্করের নামে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি নামে বনানীতে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। জ্ঞাণ তাপস অতীশ দিপঙ্করের চিরভাস্বর অবদান এবং মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর অমর আত্মার প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। সূত্রঃ ১।

বিশ্বতারিখঃ মাহবুবুল হক ২। ReoCities Atish Dipankar, Sri-Gyan  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.