আসুন বৌদ্ধ ধর্মে নবী মুহাম্মদ সম্পর্কে কি ভবিষ্যদ্বানী করা আছে তাহা একটু জেনে নেই।
প্রায় সব বৌদ্ধ ধর্ম গন্থে আছে ভবিষ্যতে একজন মায়িত্রি আসবেন, আর চিপকমতি সিংঘনাথ সুকান্তার "ডি ১১১৭৬' বলা হেয়েছে, "আরেকজন বুদ্ধ আসবেন তার নাম 'মায়িত্রী' যিনি পবিত্র, যিনি সবার উপরে, যিনি আলোকপ্রাপ্ত, খুব জ্ঞানী আর বিনয়ী, যিনি মঙ্গল জনক, যার রয়েছে বিশ্ব জগতের জ্ঞান। তিনি অলৌকিক ভাবে যে জ্ঞান আরোহন করবেন সেটা পুরা পৃথিবীতে প্রচার করবেন। তিনি একটা ধর্ম প্রচার করবেন, যে ধর্মটা শুরুতে গৌরবময় থাকবে, চরম সময়ে গৌরবময় থাকবে এবং শেষেও গৌরবময় থাকবে। তিনি একটা জীবন দর্শন প্রচার করবেন যেটা হবে সত্য এবং পুরাপুরি সঠিক।
তাঁর সাথে কয়েক হাজার সন্নাসী থাকবে যেখানে আমার সাথে কয়েকশ সন্নাসী থাকে। এই কথাটা আরো বলা হয়েছে সেকেন্ড বুক অব ইস্টে ৩৫ নম্বর খন্ডে ২৩৫ পৃষ্ঠায়, একজন মায়িত্রী আসবেন যার কিছু বৈশিষ্ট আর গুন থাকবে, তিনি হাজার হাজার মানুষকে নেতৃত্ব দিবেন যেখানে আমি নেতৃত্ব দিয়েছি মাত্র কয়েকশো মানুষকে। এর পর আরো আছে গস্তল অব বুদ্ধায় ২১৭ ও ২১৮ নম্বর পৃষ্ঠায়, আনন্দ বুদ্ধকে প্রশ্ন করলেন, 'হে আশীর্বাদ প্রাপ্ত আপনি যখন চলে যাবেন কে আমাদের পথ দেখাবেন?' গৌতম বুদ্ধ উত্তরে বললেন, 'আমি এই পৃথিবীতে প্রথম বুদ্ধ নই, এমন কি শেষ বুদ্ধ নই, ভবিষ্যতে এই পৃথিবীতে আরএকজন বুদ্ধ আসবেন যিনি পবিত্র, সবার উপরে, যিনি আলোকপ্রাপ্ত, যিনি মঙ্গল জনক, যার রয়েছে বিশ্ব জগতের জ্ঞান, তিনি প্রচার করবেন একটা ভালা ধর্ম, তিনি যে ধর্ম প্রচার করবেন তার শুরুতে গৌরবময় থাকবে, চরম সময়ে গৌরবময় থাকবে এবং শেষ সময়েও গৌরবময় থাকবে। তিনি যে ধর্ম প্রচার করবেন তার ভিত্তি হবে সত্য আর সেঠাই হবে সঠিক জীবনদর্শন আর তার থাকবে হাজার হাজার শিষ্য যেখানে আমার রয়েছে মাত্র কয়েকশ শিষ্য। বুদ্ধের প্রধান শিষ্য আনন্দ তাঁকে প্রশ্ন করল, আমরা তাঁকে চিনব কিভাবে? বুদ্ধ উত্তর দিলেন, 'সেই লোকের নাম হবে 'মায়িত্রী' ।
মায়িত্রী অর্থৎ 'ক্ষমাশীল, স্নেহময়, দয়ালু, করুনাময় এই শব্দটার আরবী করলে হবে 'রাহমা'। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, 'সূরা আম্বিয়ার ১০৭ নং আয়াতে, "অমা আরসালনাকা ইল্লা রমতুল্লিল আলামিন" অর্থ- আমিতো তোমাকে শুধুমাত্র পাঠিয়েছি বিশ্ব জগতের প্রতি রহমত হিসাবে, জীবজগতের প্রতি রহমত হিসাবে পুরো মানুষ জাতীর প্রতি রহমত হিসাবে। " এই 'রহমত' এর সমর্থক শব্দ "ক্ষমা" যা পবিত্র কোরআনে আছে সব মিলিয়ে ৪০৯ বার। আর কোরআনের প্রত্যেক সূরা শুধুমাত্র সূরা তওবা বাদে প্রত্যেক সূরার শুরুতেই আছে "বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম" দয়াময় পরম দয়াময় আল্লাহর নামে শুরু করছি। তাহলে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থ সমূহে মায়িত্রী নামে একজনের ভবিষ্যত বানী করা হয়েছে , তিনি হলেন আমাদের নবী মুহাম্মদ (সঃ), তিনি ছিলেন আলোকপ্রাপ্ত (যখন ওহী নাযিল হত তখন তিনি উজ্জল হতেন) হয়তো প্রশ্ন করবেন ওহী কি? ওহী হচ্ছে আল্লাহর দূত জীবরাঈল (আঃ) যখন নবীর কাছে আসতেন তখন তিনি উজ্জল হতেন।
বৌদ্ধ ধর্মে নবীর সম্পর্কে আরো ভবিষ্যদ্বানী আছে, সেক্রেট বুক অব দ্যা ইস্টের ১১নং খন্ডের ৩৬ নং পৃষ্ঠায়, মহাপার নির্বার সুত্তা ২নং অধ্যায়ের ৩২ নং অনুচ্ছেদে, বলা হয়েছে যে গৌতম বুদ্ধের ক্ষেত্রে তাঁর কোন গুপ্ত অথবা প্রকাশ্য শিক্ষা ছিল না, হে আনন্দ তথাগতরা অথবা শিক্ষকরা মুঠোবন্ধ করে রাখবে না জ্ঞানটা তাদের নিজের কাছে রাখবে না এটা প্রচার করতে হবে। আমরা জানি মুহাম্মদ (সঃ) ওহী হিসাবে যা পেয়েছিলেন তাহা সংগে সংগে সবার কাছে প্রচার করেছেন আর সাহাবা গণকে বলেছেন এগুলো মানুষের কাছ থেকে লুকিয়ে রেখো না, এগুলো প্রচার করো। এই ভবিষ্যদ্বানীতে বলা হয়েছে এখানে প্রকাশ্য বা গুপ্ত কিছুই নেই এখানে সব কিছুই প্রকাশ করতে হবে।
বৌদ্ধধর্মগন্থে আরো আছে, সেক্রেট বুক অব দ্যা ইস্টে ১১নং খন্ডে ৯৭ নং পৃষ্ঠায়, 'মাহপরিনির্বান সুত্তা ৫নং অধ্যায়ের ৩৬ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, গৌতম বুদ্ধের যেমন এক পরিচারক ছিল অর্থাৎ প্রধান শির্ষ আনন্দ একই ভাবে মায়িত্রীরও এক পরিচারক থাকবে, ইতিহাস থেকে আমরা জানি যে অর্থাৎ মাহ নবীর সীরাত থেকে আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সঃ) এর ও একজন পরিচারক ছিল যার নাম হযরত আনাস (রাঃ)। তিনি ছিলেন মালিকের পুত্র আর হযরত আনাস (রাঃ) বলেছেন, আমার বাবা মা ৮ বছর বয়সে আমাকে নবীর হাতে তুলে দেন, আমার বাবা মা বলেছিনে, 'হে আল্লাহর রাসূল আপনি আমার ছেলেকে আপনার পরিচারক হিসাবে গ্রহণ করুন।
' আর হযরত আনাস (রাঃ) বলেছেন নবীজী তাকে দেখতেন তাঁর নিজের ছেলের মতোই। আর আমরা জানি হযরত আনাস (রাঃ) সব সময় হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর সংগেই থাকতেন। শান্তির সময়ও থাকতেন যুদ্ধের সময়ও থাকতেন। নিরাপত্তার সময় থাকতেন বিপদের সময়ও থাকতেন। এভাবে আনাস (রাঃ) কে আনন্দের সাথে তুলনা করা যায়, যখন একটা পাগলা হাতি গৌতম বুদ্ধের দিকে তেড়ে আসছিল আনন্দ তখন বুদ্ধের সামনে গিয়ে দাড়িয়েছিলেন।
আমরা জানি একই ভাবে হযরত আনাস (রাঃ) উহুদের যুদ্ধের সময় যখন তার বয়স ১১ বছর সেই যুদ্ধে যখন শত্রুরা নবীজীকে ঘিরে ফেলল তখন হযরত আনাস (রাঃ) নবীজীর পাশেই ছিলেন, এরপর হুনাইনের যুদ্ধে তার বয়স যখন ১৬ বছর শত্রু পক্ষের তীরন্দাজরা নবীজীকে ঘিরে ফেলল তখনও হযরত আনাস (রাঃ) নবীজীর পাশেই ছিলেন। এভাবে তাকে আনন্দের সাথে তুলনা করা যায়, বুদ্ধের দিকে পাগলা হাতি তেড়ে এলে আনন্দ গিয়ে বুদ্ধের সামনে দাড়িয়ে গেলেন। তাহলে এই ভবিষ্যত বাণীটাও সত্য হয়েছে যে মায়িত্রীর এক পরিচারক থাকবে। এর পর আরো আছে গস্তুল অব বুদ্ধাতে ২১৪ নং পৃষ্ঠায়, "এই যে মায়িত্রী আসবেন বা যে বুদ্ধ আসবেন তাঁর ছয়টা গুন থাকবে" ০১) তিনি আলোকপ্রাপ্ত হবেন রাতের বেলায়, ০২) আলোকপ্রাপ্ত হওয়ার পর তিনি উজ্জ্বল হবেন, ০৩) তিনি স্বাভাবিক ভাবে মারা যাবেন, ০৪) তিনি রাতের বেলায় মারা যাবেন, ০৫) মারা যাবার সময় তিনি উজ্জ্বল হবেন, ০৬) তিনি মারা যাবার পরে এই পৃথিবীতে তাঁকে আর স্বশরীরে দেখা যাবে না।
এই ছয়টা গুণাবলী পাওয়া যায় শুধু মাত্র আমাদের নবীজী মুহাম্মদ (সঃ) এর মধ্যে।
আমরা জানি যে নবীজী প্রথম ওহী পেয়েছিলেন রাতের বেলায়. পবিত্র কোরআনের সূরা দুখানের দুই ও তিন নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে এছাড়াও সূরা ক্কদরের এক নম্বর আয়াতে বলা আছে যে, "কোরআন নাযীল হয়েছিল মহিমম্বিত রাতে"
এরপরে আছে তিনি উজ্জ্বল হবেন, আমরা জানি যে এসময় আমাদের নবী উজ্জ্বল হয়েছিলেন বা আলোকিত হয়েছিলেন।
এর পরে আছে তিনি স্বাভাবিক ভাবে মারা যাবেন আমরাও জানি নবীজী স্বাভাবিক ভাবেই মারা গিয়েছিলেন।
চার নম্বরে আছে, তিনি রাতের বেলা মারা যাবেন, আর আয়েশার (রাঃ) এর বলার হাদীস থেকে আমরা জানি যে, ঐ রাতে তাদের ঘরে প্রদীপে কোন তেল ছিল না, আর আয়েশা (রাঃ) তেল আনতে পাশের বাড়িতে গিয়েছিলেন, অর্থাৎ নবীজী মারা যাবার সময় তখন রাত ছিল।
এর পর বলা হয়েছে তিনি মারা যাবার সময় উজ্জ্বল হবেন, আর হযরত আনাস (রাঃ) বলেছেন, "নবীজী মারা যাবার সময় খুব উজ্জ্বল ছিলেন"
এর পরেরটা হলো মারা যাবার পরে তাঁকে আর স্বশরীরে দেখা যাবে না, আমরাও জানি যে নবীজী (সঃ) স্বশরীরে আর কোনদিন ফিরে আসবেন না। মদীনায় তাঁর রওজা রয়েছে, তাঁকে স্বশরীরে আর কখনো দেখা যাবে না।
বৌদ্ধ ধর্মে উল্লেখ করা এসকল কথা শুধুমাত্র নবীজী মুহাম্মদ (সঃ) এর বেলাতেই খাটে।
বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থে এছাড়াও বলা হয়েছে, দ্যা সেক্রেটবুক অব্ দ্যা ইস্টের ১০ নং খন্ডের ৬৮ নং পৃষ্ঠায়, বলা হয়েছে, "তথাগতরা তারা শুধু প্রচার করবে অর্থাৎ যে বুদ্ধরা আসবেন তাঁরা শুধু প্রচার করবেন, আর আল্লাহ বলেছেন, সূরা গাশিয়াহ এর ২১ নম্বর আয়াতে, বলা হয়েছে, "ফাযাক্কির ইন্না মা আনতা মুযাক্কির" অর্থাৎ আল্লাহ নবীজীকে বলছেন "তোমার কাজ ধর্ম প্রচার করা হেদায়েত করার মালিক আল্লাহ তা'আলা"
এছাড়াও আছে সেক্রেট বুক অব দ্যা ইষ্টের ১০ নং খন্ডের ৬৭ নং পৃষ্ঠায়, বলা হয়েছে যে স্বর্গে যেতে হলে তোমার ভালকাজ গুলোর প্রয়োজন হবে।
আল্লাহ কোরআনে বলছেন, সূরা আছরের এক থেকে তিন নম্বর আয়াতে, "ওয়াল আসর, ইন্নাল ইনসানা লাফি খুসর, ইল্লালাজিনা আমানু ওয়া আমেলুছসলেহাত, ওয়া তাওয়া সওবেল হাক্ক, ওয়া তাওয়া সওবেস সবর"
অর্থাৎ দুর্ভোগ তাদের যারা সামনে ও পেছনে লোকের নিন্দা করে তারা বাদে যাদে বিশ্বাস আছে ন্যায় নিষ্ঠতা আছে, যারা মানুষকে সত্যের পথে আনে, যারা মানুষকে ধর্য আর অধ্যাবসায়ের পথে আনে। বেহেশতে যাওয়ার একটা শর্ত হলো "ন্যায় নিষ্ঠতা" যে কথা বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থেও আছে।
এছাড়াও ধম্মপটে উল্লেখ করা আছে, "মাত্তারসুক্তা ১৫১" এখানে সর্বশেষ বুদ্ধ বা মায়িত্রীর বর্ণনা দেওয়া আছে, "তিনি হবেন মানুষ জাতির প্রতি করুনা, তিনি হবেন ভদ্র, তিনি হবেন মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত, তিনি হবেন দয়ালু আর তিনি হবেন সত্যবাদী" আর এসকল কথা শুধু মাত্র খাটে সর্বশেষ ও চুড়ান্ত নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর বেলায়।
এই হল বৌদ্ধ ধর্মে নবীজী সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা।
এভাবে খৃষ্টান ধর্ম, ফারসি ধর্ম এবং হিন্দু ধর্মেও ইসলাম সম্পর্কে, নবীজী সম্পর্কে বিস্তারিত বলা আছে। আজ হাতে সময় নাই তাই ঐ সব নিয়ে আলোচনা করতে চাচ্ছি না।
প্রথমে লেখাটা লিখেছিলাম এক নাস্তিক ভাইয়ের প্রশ্নের জবাব দেবার জন্য। পরবর্তীতে ভাবলাম পোষ্ট আকারে দিলে সবাই জানতে পারবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।