আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বন্ধুদের আমলনামা-১১ : : যুক্তিবাদী পীরসাহেব রিয়াজুল হক শিকদার ।। রেজা ঘটক

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা... মানুষের জীবন কতো না বিচিত্র! ছোটবেলায় যে ছেলেটি ছিল লাজুক, চুপচাপ, শান্তশিষ্ট বড় হয়ে সেই ছেলেই যুক্তিবাদী, চঞ্চল আর কিছুটা বেপড়োয়া। যার কথা বলছি সে রিয়াজুল জক শিকদার। বয়সে আমার চেয়ে মাত্র ১৫ দিনের ছোট। রিয়াজের মা আর আমার মা মামাতো ফুফাতো বোন। সেই হিসেবে রিয়াজ আমার খালোতো ভাই।

আমার চাচাতো, ফুফাতো, খালাতো ভাইদের মধ্যে কেবল রিয়াজের সঙ্গেই আমার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্বে টক-ঝাল-মিষ্টি সবই আছে। টক-ঝালের কথা বলার সময় আমার নেই। তাই আমি মিষ্টি কথাগুলোই বলতে চাই। তাতে যদি পৃথিবীতে কারো উপকার হয় ক্ষতি তো নেই!! ১৯৭০ সালের ৭ মে রিয়াজুল হক শিকদারের জন্ম।

বাবার পুলিশের বদলির চাকরির কারণে রিয়াজকে ঘনঘন স্কুল বদল করতে হয়েছে। ১৯৮৪-৮৫ সালে রিয়াজ প্রায় এক বছর দীঘিরজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে নবম শ্রেণীতে সহপাঠী ছিল। ১৯৮৭ সালে চাঁপুরের শাহরাস্তি এনএম পাইলট হাই স্কুল থেকে রিয়াজ প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করে। ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রামের সরকারি কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি (কমার্স) পাস করে। এইচএসসিতে রিয়াজ চট্টগ্রাম বোর্ডে স্ট্যান্ড করেছিল।

পরে ঢাকায় ওসমানী মিলনায়তনে তৎকালীন ফার্স্ট লেডি রওশন এরশাদের কাছ থেকে গোল্ড মেডেল গ্রহণ করেছিল। এরপর রিয়াজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ (ম্যানেজমেন্ট) ভর্তি হয়। সেখান থেকেই পরে ম্যানেজমেন্টে এমবিএ শেষ করে। আরো পরে রিয়াজ চার্টার্ড সেক্রেটারি পাস করেছে। পড়াশুনায় বরাবরই রিয়াজ ছিল ভারী একনিষ্ঠ।

পরীক্ষা এলে মেয়েদের মতো সারাক্ষণই বই নিয়ে থাকতে পারে রিয়াজ। আবার পরীক্ষা না থাকলে রিয়াজ সারা দেশ ঘুরে বেড়ায় ফড়িংয়ের মতো। রিয়াজের হাঁটার স্টাইল যোঙ্গা নাওয়ের মতো। ধাই ধাই করে এলে বেলে এগিয়ে যায়। আমাদের বন্ধু জাফর আহমদ রাশেদ রিয়াজের হাঁটার স্টাইলকে ডিঙ্গি নৌকার চলার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

রিয়াজ মঞ্চ নাটকে গ্রামবাসীর চরিত্রে অভিনয়ও করেছে। ইংরেজিতে ভীষণ দক্ষ রিয়াজ ইংরেজি নিউজপেপার পড়তেই বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করে। নিউজপেপারের ইংরেজি বাক্য গঠনের নানান খুটি নাটি বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে মুগ্ধকর আলোচনা হতো। ইংরেজি শব্দ নিয়ে খেলতে রিয়াজ ভারী পছন্দ করে। আমার বড়ি খাওয়ায় হাতেখড়ি খালাতো ভাই রিয়াজের হাতেই।

রিয়াজের মাধ্যমে রিয়াজের বন্ধু ও কলিগদের অনেকেই পরবর্তীতে আমারও বন্ধুতে পরিনত হয়েছে। যেমন আমিনুর রহমান মুকুল, মইনুল বিপ্লব, মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ নাহিদ, পুলক বিশ্বাস, উত্তম দে, বলরাম সেনগুপ্তা বাবু, দীপশর্মা, রেজাউল কবির মাহমুদ, রিজভী আহমেদ জনি, তুহিন, জায়েদউদ্দিন, শিবলী আহমেদ, মিজান, নেজাম, ছোট জনিসহ অনেকে। রিয়াজের সবচেয়ে বড় গুন হল সে খুব বন্ধু বৎসল। বন্ধুদের সাঙ্গপাঙ্গ রিয়াজের ভারী পছন্দ। রিয়াজ বিয়ে করেছে চট্টগ্রামে।

রিয়াজ এক ছেলের বাবা। অটবি লিমিটেড-এ কর্মজীবন শুরু। দীর্ঘদিন নিতুন কুণ্ডু বাবু'র অডিট অ্যান্ড একাউন্টস দেখাশুনা করেছে রিয়াজ। পরে চাকরি ছেড়ে দিয়ে চার্টার্ড সেক্রটারি সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে ফ্রি-ল্যান্স ট্যাক্স অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করে।

রিয়াজ একজন রাজনীতি সচেতন ব্যক্তি কিন্তু নিজের প্রতি চরম উদাসীন। উড়ুনচণ্ডী ভাব রিয়াজের স্বভাবজাত। চরিত্রের নেগেটিভ জিনিসগুলো বাদদিলে রিয়াজ বেশ পরোপকারী এবং সহযোগিতামূলক। রিয়াজের আরেকটা বড় গুন হল চট করেই আসল পয়েন্টটা ধরতে পারার মতো দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এবং মেধা আছে। কিন্তু সেই মেধা যখন কোনো নেগেটিভ ইস্যুতে সে ব্যবহার করে তার পরিণামও হয় ভয়াবহ।

রিয়াজ বই পড়তে আর গান শুনতে ভারী পছন্দ করে। একবার ১৯৮৮ সালে রিয়াজ আর আমি চট্টগ্রামের চৌমুহনী থেকে আমাদের পছন্দের ক্যাসেট কিনেছিলাম। আরেকবার চট্টগ্রাম মুসলিম হলের বই মেলা থেকে আমরা একসঙ্গে অনেক পছন্দের বই কিনেছিলাম। রিয়াজের সঙ্গে চট্টগ্রামের নানান অলিতে গলিতে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ঢাকার অনেক কানাগলিতে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আছে আমার। রিয়াজের সঙ্গে যার বন্ধুত্ব হবে না কিংম্বা বিরোধীতা হবে, তার জন্য বড়ই দুর্ভাগ্য।

আর যার সঙ্গে বন্ধুত্ব হবে এবং একই নায়ে পারাবে তার জন্য বড়ই আনন্দের। যা দেবী, সর্ব ভূতেষু, বিদ্যা রূপেনঃ সংস্থিতা...দুষ্টুনং ঘরনং পুড়া কায়স্থনং সংস্থিতা...নমোঃ তৈস্ব্যই, নমোঃ তৈস্ব্যই, নমোঃ তস্ব্যই...নমোঃ নমোঃ.... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.