কুশল সমুদ্রের লোনা জলে ডুবে গেছে। স্রোতের টানে ভেসে যাচ্ছে অচেনা নীল জগতে। কুশলের বড় ভয় করছে। হারিয়ে যাওয়া কুশল চারপাশে তাকায়। দম বন্ধ হয়ে আসে কুশলের সাথে আমারও মনে হয় কি হবে কুশলের।
জলের গভীরে গড়িয়ে যেতে যেতে। হঠাৎ কুশলের পাশে এসে দাঁড়ায় এক বুড়ো। একাকী জলের গভীরে ডুবতে থাকা কুশলকে সাথে করে অচেনা জগতের পরিচয় দিতে দিতে এগিয়ে যায় তারা। গভীর আগ্রহে জমে যাই কালো হরফের পাতায়। মায়ের ডাক, খাবারের ইচ্ছা কিছুই বই থেকে উঠাতে পারে না।
এতদিন পরেও ঠিক মনে পরে সেই অনুভুতি। কুশল বুড়োর সাথে যেতে যেতে পৌঁছে যায়, না ফেরার জগতে। তবু জলের গভীরে একাকী ছোট কুশলের ভয়ধরা মনের পাশে এসে দাঁড়ানো মৃত্যু বুড়োকে বড় আপন মনে হয়। কুশলও মৃত্যু বুড়োর গল্প, পড়ে গলার কাছে একদলা কান্না আটকে থাকে। সাথে এক গল্পকারের নাম জানা হয় সৈয়দ ইকবাল।
জীবনের অনেক বাঁক পেরিয়ে চলে আসি শীত প্রধান উত্তর মেরুতে মায়াবী ছয় ঋতুর দেশ থেকে। তবু বুকের মাঝে ছয় ঋতুর শ্যামল দেশ ঝংকার তুলে। ভাষা দিবসের লেখা চাই এই পরবাসে আহ্বান আসে বাংলা পত্রিকা থেকে। সে লেখা পৌঁছে দিতে পত্রিকা অফিসে গেলে পরিচয় হয় সৈয়দ ইকবালের সাথে। ছোট একটি গল্প জীবনের টানপোড়েনের বিদেশের জীবনে থেকেও দেশে ঘুরে বেড়ানোর মানসিক গল্প, লেখাটি পাঠ করি সেখানে।
সবাই ভালো বলেন। সৈয়দ ইকবাল, যার লেখার ভক্ত আমি তিনি অসম্ভব প্রশংসা করেন লেখাটির।
এভাবেই শুরু হয় চেনা জানা। মেয়ের জীবন সুন্দর করে গড়ে দেযার জন্য নিজের স্বপ্ন রেখে বেছে নিয়েছেন বিদেশ জীবন। একদিন আরো জানা হয় কুশলের গল্প লেখার পিছনের কথা।
চেনা হয় কুশলের পরিচয় মুনীর চৌধুরীর বোনের কিশোর ছেলে কুশল বঙ্গোপসাগরে ঢেউয়ের টানে ভেসে যায়। যারা বাবার কাছে সৈয়দ ইকবাল ছবি আঁকা শিখতেন। তার এই চলে যাওয়া হৃদয়ের অবগহণে কষ্টের রেনু মেলেছিল তার বিন্দু বিন্দু জল ছড়িয়ে দিয়েছেন শত পাঠকের বুকের মাঝে। তখন পরিচয় হয়েছে কুশলের ভাই অতল, মিশুক মুনীর সবার সাথে। কত আগে থেকে জানা গল্পের মানুষ কেমন কাছের আপনজন হয়ে গেছে।
সৈয়দ ইকবালের জন্মদিন। তার মেয়ে অগ্নিলা কেমন করে যেন মিল হয়েছে আমার মেয়ের নামের সাথে। সে আজ বাবার সাথে তার ছবি টানিয়ে দিয়েছে মানুষকে দেখানোর জন্য। অগ্নিলা নামের ঐ মেয়েটি বাবাকে কখনই দূরে রাখতে পারেনা। বাবার কথা অনেক গর্ব করে বলতে পারে কারণ তার বাবা মেয়ের ভালোর জন্য নিজের সাজান ব্যবসাপাতি ছেড়ে মেয়েকে নিয়ে একা থেকেছেন বিদেশে।
দেশে থাকলে তার মেয়ের সুন্দর একটা সময় অনেক কারণে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছিল সে জন্য। মেয়ের মা চাকরির জন্য দেশে ছিলেন সে সময়। একটা কিশোরী মেয়ের প্রতিটি মান অভিমান বেড়ে উঠার সময় অনেক যত্নে ধৈর্যধারণ করে আগলে রেখেছেন বাবা। নিজের কতরকম ইচ্ছার জলাঞ্জলি দিয়ে মেয়ের জন্য রান্না করা থেকে স্কুলে পৌঁছে দেয়ার সব কাজ হাসি মুখে শত প্রতিকুলতায় করে গেছেন। একজন সার্থক পিতা হয়ে।
শ্রদ্ধা অবনত হই একজন পিতার ভালোবাসার কাছে। মেয়ের জীবন গড়ে দেয়ার পাশাপাশি নিজের শিল্পকলার বিন্যাশ ও ছড়িয়ে দিয়েছের মূলধারার কাছে। তাঁর অনেকগুলো প্রর্দশনিতে আন্তরিক আহ্বান করেছেন। যেখানে এমপি, মন্ত্রী এসে তার ছবি কিনে নিয়ে গেছেন সেখানে আমাকেও ডেকেছেন কতটা সম্মান দিয়ে। আন্তরিকতা, ভালবাসার, সম্মানের সুদৃঢ় বন্ধনে বেঁধেছেন।
ছবি আঁকার কলাকৌশল জানার জন্য কতবার বিরক্ত করেছি। উদারতায় বলেছেন । চিনিয়েছেন ছবি আঁকার সরঞ্জাম কেনার জায়গা। আজ মেয়েসহ দেশে ফিরে আবার নিজের জায়গায় হাত পা ছড়িয়ে বসেছেন।
প্রতিটি মানুষের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেন ইকবাল ভাই।
যার কাছে অবলীলায় নিজের ভালোলাগা মন্দ লাগা ব্যক্ত করা যায়। আন্তরিকতায় সাধ্যি মতন সাহায্যে এগিয়ে আসেন। আমার মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক আলোর যাত্রা উপন্যাসের প্রচ্ছদ করে দিয়েছেন টেলিফোনে একটি বার্তা পেয়ে কত অল্প সময়ে। দেশে যখন তিনি শিল্প প্রর্দশনি ও নিজের প্রকাশিতব্য দুটি বইয়ের লেখা নিয়ে ব্যস্ত সে স্বল্প সময়েও বেঁধেছেন কৃতজ্ঞতা পাশে আমাকে। শুভ হোক জন্মদিন।
অনেক ভালো থাকেন ইকবাল ভাই। প্রাণ ঢালা শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।