একজন নির্বোধের বয়ান কিসের মধ্যে কি, পান্তা ভাতে ঘি। সত্যিই ইদানিং আমাদের অবস্থা দেখলে পান্তা ভাতে ঘি খাওয়ার কথা মনে পড়ে যায়। পান্তা ভাত যেমন ঘি দিয়ে খাওয়া যায় না, তেমনি রং মেখে সঙ সেজে পহেলা বৈশাখে একদিনের বাঙালি সাজলেই বাঙালি হওয়া যায় না। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই কাজটাই আমরা পাল্লা দিয়ে করছি। পহেলা বৈশাখ এলেই, আমরা যে বাঙালি তা দেখানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ি।
বিষয়টা নির্বোধ মিয়ার কাছে শুনে আরো বেশি নিশ্চিত হলাম। পরশু দিন ফরিদের চায়ের দোকানে বসে চা খেতে খেতে নির্বোধ মিয়াকে বললাম, কী মিয়া বউকে নিয়ে পহেলা বৈশাখে রমনা পার্কে যাবা না? আমার কথা শুনে একটু কড়কড়ে স্বরে বলল, ‘ভাইজান রমনা পার্কের খ্যাতা পুড়ি। কান ধরছি, ওইহানে আমি আর যাচ্ছি নে। ’ ‘কেন কী হয়েছে? বল শুনি। ’ একটু জোর করতেই গতবারের পহেলা বৈশাখের অভিজ্ঞতা বলার জন্য মনে মনে তৈরি হতেই নির্বোধ মিয়া আরো এককাপ চা খাওয়ার কথা বলল।
পহেলা বৈশাখের দিন সকালবেলা নির্বোধ মিয়া তার নতুন বউকে নিয়ে রমনার বটমূলে উপস্থিত হল। কিন্তু উপস্থিত হতে ঐ দম্পত্তিকে অনেক হ্যাপা পোহাতে হয়েছে। নির্বোধ মিয়া সব সময়ই লুঙ্গি পরে থাকে কিন্তু আজকে একটা বিশেষ দিন বলে তার বউ তাকে পাজামা-পাঞ্জাবী পড়ে যেতে বলল। ‘বউ আমি মগ মুল্লুকে যাচ্ছিনে, যে আমারে পাজামা-পাঞ্জাবী পইরে যাতি হবে। আমি লুঙ্গি পইরেই যাব, তুমি কি আমারে নিয়ে যাবা, না যাবা না?’ রেগে গিয়ে কথাটা বলল বউকে।
শেষে বউকে খুশি করতেই বউয়ের কথা মেনে নিল। কিন্তু একটু পর পর নির্বোধ মিয়া পাঞ্জাবী নিচ থেকে তুলে ধরে পাজামার ফিতা একবার খোলে, একবার বাঁধে। বউ জানতে চাইল, ‘এই তুমি কি করতিছো? ছিঃ ছিঃ লজ্জায় মইরে যাচ্ছি। ’ নির্বোধ মিয়া বউয়ের কথায় তেমন গুরুত্ব না দিয়ে বলল, ‘বউ, মনে হচ্ছে পাজামা খুইলে পইরে যাচ্ছে। ’
রমনায় এসে দেখে সবাই পান্তাভাত আর ইলিশ মাছ খাওয়ার জন্য লাইন দিয়েছে।
নির্বোধ মিয়ার বউ গ্রামের মেয়ে বলে বিষয়টা ধরতে পারেনি। সেও স্বামীকে নিয়ে পান্তা ইলিশ খাওয়ার জন্য বসে গেল। সানকিতে পান্তা ভাত দেখে নিবোর্ধ মিয়া বলে উঠল, ‘বউ ভাত দিছে না ফ্যান দিছে খাতি, বুঝতিছি না। ’ বউ তাকে চোখ টিপে চুপ করতে বলল। বউয়ের কথা মেনে নিয়ে পান্তা ইলিশ খাওয়ার জন্য মনটা চুলবুল করতে লাগল ভিতরে ভিতরে।
প্রথমবার মুখে দিয়ে নির্বোধ মিয়া ওয়াক থু, ওয়াক থু করে বমি করতে লাগল। বউ স্বামীর বমি করা দেখে ঘাবড়ে গেল। ‘ও বউ তুমি আমারে এ কোনে আনিছো? পান্তা ভাতের কথা বইলে, পঁচা ভাতের ফ্যান খাওয়াতি আনিছো?’ শেষে বউ তাকে নিয়ে উঠে দাঁড়াল, ‘চল আর খাওয়া লাগবি না। ’ পান্তা ইলিশের দাম দিতে গিয়ে মাথায় বারি পড়ল নির্বোধ মিয়ার। কত টাকা গচ্চা দিয়েছে, তা আর সে কাউকে বলেনি।
কিছু সময় পর শান্ত হয়ে বউকে বলল, ‘বউ পান্তা ভাত কী আমাগে ঘরে নাই? পঁচা পান্তা খাতি এই বাগানের মধ্যি আসা লাগবি ক্যান?’ কথাশুনে বউয়ের চোখ অশ্র“ টলোমলো।
সে সময় নির্বোধ মিয়ার পাশের বাসার রহমান সাহেবের বিয়ে না হওয়া মেয়ে মিথিলা হেঁটে গেল। মিথিলাকে চেনাই যাচ্ছে না, মেয়েটা শাড়ি পড়েছে। মনে হচ্ছে শাড়িটা এখনই খুলে পড়বে। বউ ফিসফিস করে বলল, ‘ওগো দেহিছো মেয়েডা কিরাম কইরে শাড়ি পড়িছে? সারাদিন তো জিন্সের প্যান্ট পইরে থাহে।
ঢং কইরে তোরে শাড়ি পড়তি কেডা বলিছে?’ বউয়ের কথা শুনে নির্বোধ মিয়া হো হো করে হাসতে হাসতে বউয়ের ঘাড়ের উপর মাথা রাখল। লজ্জা পেয়ে বউ এদিক ওদিক তাকিয়ে স্বামীর মাথা সরিয়ে দিল। তারা আবার সামনের দিকে হাঁটতে লাগল। এখানে পহেলা বৈশাখের গান হচ্ছে। ছোট বড় মেয়েরা এসো হে বৈশাখ, এসো হে.. সুর মিলিয়ে এক সাথে গাইছে।
হঠাৎ নির্বোধ মিয়ার বউয়ের চোখ গেল মিথিলার উপর। সেও হেলেদুলে গান গাইছে। আবারো কানে মুখে ফিসফাসফিস। ‘এই দেহিছো মিথিলা মেয়েডারে কোনদিনও এই গানডা শুনতিও দেহিনি, গাতিও দেহিনি। সারাদিন হিন্দি গান শোনে টিভির মধ্যি।
এই আমার এহিনি আর ভালো লাগতিছে না। আমারে বাড়ি নিয়ে চল। ’ শেষে বউকে নিয়ে বাসায় ফেরার জন্য পা বাড়াল। সে সময় নির্বোধ মিয়ার মনে পড়ে, বউ তার কাছে একদিন চাইনিজ কীভাবে খাই, তা জানতে চেয়েছিল। তখন বউকে বলল, ‘বউ বাসায় না যাইয়ে চাইনিজ খাতি যাই।
তুমি না খাতি চাইছিলা?’ শুনে বউ বলল, ‘চাইনিজ কী জিনিস তা আমি জানিছি। কাটা চামুচ দিয়ে ভাত খাতি আমি চাইনিজে যাতি চাইনে। চাইনিজ ফাইনিজ আমি খাইনে বুঝিছো? আমারে নিয়ে চল তুমি। ’
রাতে নির্বোধ মিয়া বউকে নিয়ে টিভির অনুষ্ঠান দেখার জন্য বসেছে। সে সময় টিভিতে পাশের বাসার বড়লোক রহমান সাহেবকে দেখা গেল।
পাঞ্জাবী গায়। হাতে তালপাখা দিয়ে বাতাস করতে করতে বলছে, ‘আমি খাঁটি বাঙালি। পাঞ্জাবী পড়তেই আমার বেশি ভাল লাগে। ’ একটু পর রহমান সাহেবের স্ত্রীকেও কথা বলতে দেখা গেল, ‘আমি তো বিদেশী টিভি চ্যানেল দেখিই না। দেশি পণ্য ব্যবহার করি।
’ আরো নানান গীতের বর্ণনা করছেন দেখে নির্বোধ মিয়ার বউ বলে উঠল, ‘ওগো দেহিছো কিরাম কইরে মিত্যে কতা কচ্ছে। ’ এবারও নির্বোধ মিয়া বউয়ের কথা শুনে ঘর কাঁপানো হাসি হাসতে লাগল। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।