আহমদ শরীফ শাহবাগ থেকে এক সরকার আরেক সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন ২৬ শে মার্চের মধ্যে জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে হবে ।
২৬ শে মার্চ পার হয়ে গেছে আজ প্রায় কয়েক সপ্তাহ পার হতে চলল । যদি ও আওয়ামিলীগ ও মহাজোটের নেতারা হাজারবার বলে ফেলেছেন জামাত- শিবিরকে নিষিদ্ধের ব্যাপারে ।
অন্যান্য ইসলামী দল যেমন হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধের ব্যাপারে সরকার যতটা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন , জামাত শিবিরের নিষিদ্ধের ব্যাপারে তারা এইরকম সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যাচ্ছে না ।
কিন্তু আসলে মূল ঘটনা টা কি ? তারা কেন এই সিদ্ধান্ত নিতে এত এত দেরি করছেন ? আওয়ামিলীগের আসল উদ্দেশ্যই বা কি এখানে ?
পয়েন্ট ১-
প্রথমেই আমরা বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলকে দুই ভাগে ভাগ করে ফেলি ।
এই দুই দলের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থগত দ্বন্দ্ব, ভাগ উপভাগ রয়েছে । কিন্তু এই দ্বন্দ্ব কখনই প্রধান নয় ।
১.যারা গনতন্ত্রে বিশ্বাস করে
২.যারা গনতন্ত্রে বিশ্বাস করে না
এটা আমেরিকা দৃষ্টিভংজ্ঞি, আমার নয় । যেমন আওয়ামিলীগ এই দেশের রাজনৈতিক দলকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত্তিতে দুই ভাগে ভাগ করতে যায় , কারন ১৯৭১ সালের ভিত্তিতে যদি ভাগ করতে পারে , তবে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিকভাবে স্বার্থ হাসিল করতে পারে ।
১. কে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি
২.কে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি
আমার দৃষ্টিতে এই ফ্যক্টরটাই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে এখানে ।
প্রথমত আমেরিকার প্রয়োজন ঐ ধরনের ইসলামিক দল যারা গনতন্ত্রে বিশ্বাস করে, এক্ষেত্রে তাদের প্রথম পছন্দ জামাত-শিবির । যাদেরকে তারা সবসময় শেল্টার দিয়ে যাবে । কারন আমেরিকা চয় না ইসলাম রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রতিষ্টিত হোক । কট্টরপন্থী ইসলামী দলগুলো যেটাকে ইসলামী শরীয়াহ দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে ।
জামাতে ইসলামী যতটা সহজে ইসলামী শরীয়াহার ব্যাপারে সমজোতা বা ছাড় দেয় অন্যান্য কট্টরপন্থী ইসলামী দলগুলোকে
ততটা ছাড় দেয় না ।
এরা ইসলামী শরীয়াহ এর ব্যাপারে অনড় । যেমন হিযবুত তাহরীর । যে কারনে সরকার এবং আওয়ামিলীগ হিযবুত তাহরীরের নিষিদ্ধের ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।
জামাত নিষিদ্ধের ব্যাপারে এখানে একমাত্র প্রধান বাধা আমেরিকা । এবং দিন শেষে আওয়ামিলীগ-জামাত বিএনপি আমেরিকার পরামর্শ নিয়েই চলে ।
আপনি জামাতকে পছন্দ করেন না , মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতার কারনে , এটা আপনার আবেগ , এইসব ব্যাপারে আমেরিকা আবেগ দিয়ে চলে না । ৭১ এ আমেরিকার ভূমিকা কি ছিল , সেটা না হয় নাই বললাম ।
দুনিয়ার এত কিছু থাকতে এখানে ইসলাম , গনতন্ত্র , ইসলামী শরীয়াহ এইসব উপাদান দিয়ে কেন এই বিষয়টা বিশ্লেষন করলাম ?
আপনি যদি গত ১০ বছরের বিশ্ব রাজনৈতিক পরিস্তিতির দিকে খেয়াল রাখেন , এবং বিশ্ব রাজনীতি সম্পর্কে নূন্যতম ধারনা রাখেন তাহলে পরে বুঝতে পারবেন , ভূরাজনৈতিক বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ন মুসলিম দেশগুলোতে আমেরিকার ভূমিকা । এবং আমেরিকা যে কোন একটা সিদ্ধান্তের পেছেনে যেসব বিষয়গুলো প্রাধান্য পায় , সেগুলো হল ইসলামী শরীয়াহ , খিলাফত , গনতন্ত্রের প্রতি ঐ ইসলামী দলের দৃষ্টিভংগি ,গনতন্ত্রের ব্যপারে সমজোতা .............ইত্যাদি ইত্যাদি । মূল কথা যেটা আওয়ামিলীগ নিজেদের রিভার্স ভোট ব্যাংকে হিসাবে জামাতকে নিষিদ্ধ করবে না , আর আমেরিকা জামাতকে কুফর গনতন্ত্র বাস্তবায়ানের সহায়ক শক্তি হিসাবে সমর্থন দিয়ে যাবে ।
পয়েন্ট ২
আওয়ামিলীগ শিবিরকে নিষিদ্ধ করবেনা সেটা হলো ----- কারন আওয়ামেলীগ নিজেদেরকে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি বলার জন্যে একটা স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তির অস্তিত্ব অত্যাবশ্যক। আর তাঁদের কাছে সেটা হচ্ছে- জামাত শিবির ।
রাজনীতিতে স্থায়ী শত্রু বলতে কিছু নাই । যারা জামাত-শিবিরকে আওয়ামিলীগের চিরশত্রু বলে দাবি করেন , তারা মূলত আবেগ দিয়ে Judge করেন ,তাদের সম্পর্কে আমার কিছু বলার নাই ।
আজ যে শত্রু কাল সে মিত্র ।
আগামী দিনে জামাত আওয়ামিলীগের সংজ্ঞী হলে অবাক হওয়ার কিছু আমি দেখি না । এর উদাহরন আওয়ামিলীগ নব্বই এর দশকেই দিয়ে দেয়েছে । ঐসময়ে হাসিনা-এবং খালেদা দুজনই দুজনই গোলাম আযমের কাছে সালাম চাইতে গিয়েছিলেন , বিভিন্ন ইস্যুতে ।
প্রমান স্বরূপ আনু মুহাম্মদের মন্তব্য প্রতিবেদনের কিছু অংশ যা প্রথম আলোতে ছাপা হয়েছিল ০৭-০১-২০১৩ তারিখে । তারিখে ।
"আশির দশকে রাজনীতিতে এভাবে পুনর্বাসিত হয়ে এবং পরে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপি সরকার গঠনে সমর্থন দিয়ে নাগরিকত্ব হারানো গোলাম আযমকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমির ঘোষণার সাহস সঞ্চার করে জামায়াত। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই তাদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর জন্য গোলাম আযমের দোয়া চাইতে গেলে দেশব্যাপী ক্ষোভ ও হতাশা বেড়ে যায়। "
১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে জামাত - আওয়ামিলীগের সম্পর্ক কি ছিল , সেটা ঐ আমালের পত্র-পত্রিকা পরে জেনে নিন । শুধু মাত্র জেনে রাখুন , তত্ত্বাবধয়ক সরকারের ফরমূলার জন্মদাতা গোলাম আযম ।
বটম লাইন : আওয়ামিলীগ যতই জামাত শিবিরকে গালিগালাজ করুক না কেন , আওয়ামিলীগের নিজেদের প্রয়োজনেই তারা জামাতের অস্তিত্ব রক্ষায় সাহায্য করবে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।