সাপের শরীর হয়ে আঁধারের গাছ/ কুয়াশার বন্যায় ডুবো দেবী মাছ!
রাহার খুব মেজাজ খারাপ! নাক ঘামছে। বিদ্যুত্ নেই। বিকেলে একগাদা নোটপাত্তি ফটোকপি করতে বেরিয়েছিলো। শুভ থাকলে সব কাজই খুব সহজে হয়ে যায়। কিভাবে কিভাবে যেন কিছুতেই কোন কাজ ঠিকমত হচ্ছেনা।
প্রতিমুহূর্তে মনে হচ্ছে এরকম কেন হবে। শুভ তার বন্ধু। এক কথায় ভাল বন্ধু একমাত্র কাছের বন্ধু যাকে নির্দ্বিধায় যা খুশি বলতে পারে রাহা। কাল সন্ধ্যায় একসাথেই ছিলো। হলে পৌঁছে দিয়ে যাবার আগে এমন একটা কথা বললো।
সব পাল্টে গেলো। কিন্তু ইচ্ছে করে প্রিয় কোন মানুষ থেকে দূরে সরে থাকা মমির জন্য ডালভাত হতে পারে তার জন্য না! মমি তার কাজিন। একসাথেই ছোটবেলা থেকে কাটিয়েছে। আর এখন তো রুমমেট। খুব কঠিন স্বভাব মমির।
একবার যদি তার মনে হয় ঠিক হয়নি তবে তা আর কোন অনুরোধই তাকে করাতে পারবেনা। সজিব ভাই কত দিন ধরে যে মিট করার চেষ্টা করছে! মাঝে মাঝে কষ্টে নাকি গরমে রাহার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। একটু আগে শুভ সরি লিখে পাঠিয়েছে। তারপর তো আর চুপ থাকা যায়না। কিন্তু তেমন কিছু লিখতেও মন চায়নি।
শুভ হঠাত্ করে প্রপোজ করে বসবে এরকম আহামরি সুন্দরতো রাহা নয়! তাহলে কেন এমন করলো শুভ? সারাদিন কত কিছু হয়ে যাচ্ছে। অবশ্য শুভকে প্রত্যেক মুহূর্তের আপডেট না দিলে তার দমবন্ধ লাগবে এটাই স্বাভাবিক। হাতে একটা কাপড়ের পুতুল নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে আছে রাহা। আড়ং থেকে কিনে শুভ গিফট করেছিলো গতবার। জন্মদিনে ভেংচি দিয়ে বলেছিলো, তুই হইলি বাচ্চা মানুষ তরে আন্টি কেমনে ছাড়সে ক দেখি? ঢাকায় পাঠায়া বইয়া রইচে।
তরতো এখন কোলে থাকনের কতা! শুভ এরকমই। চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলে। রাহা কিছুতেই তার সাথে কথায় পেরে ওঠেনা। অথচ শুভর সাথে বকবক করতেই তার ভাল লাগে। সারাদিন ধরেই হাঁদাটা মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে।
হলের বারান্দায় আরো অনেকে আছে। মমি বেশ কবার জিজ্ঞেস করেছে কি হয়েছে? উত্তর দিতে ইচ্ছে করেনি রাহার। বিরক্তিতে নাক ঘামছে খুব। আজ নির্লজ্জের মত চাঁদটাও। এত আলোর দরকার ছিলোনাতো! আবার মেসেজ।
এটা কি ঠিক হচ্ছে? রাহার কিছুই ভাল লাগছেনা। সামনে ঈদের ছুটি দীর্ঘদিন দেখা হবেনা শুভর সাথে!
অথবা গল্পটা এমন ও হতে পারতো.....
...................
রাহার খুব মেজাজ খারাপ। নাক ঘামছে। মেজাজ খারাপ হবার যথেষ্ট কারন আছে। চারপাশে পাপোশের মত পড়ে আছে মেজাজ খারাপেরা এ এসে সে এসে পা মুছে যাচ্ছে।
অসহ্য! এর সাথে যুক্ত হয়েছে শুভ। সকাল থেকে মেসেজের পর মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে বিরক্তির এক শেষ। আরে বাবা বলেছিসতো স্যরি। আর এত কি? ভাল্লাগেনা। আরেকজন তো আছেই।
পেইন বাক্স। খুললেই ভুরভুর করে পেইন ছড়ায়। আহ কি সুগন্ধী। বাপে ফোন দিলেও কয় ওয়েটিং কেন? রাহা বলেছিল খারাপতো কিছুনা ওয়েটিং রুমে যখন এসেই পড়েছো বসবা পানি খাবা রেস্ট নিবা। টাইম মত রেলগাড়ি তো আসবেই।
গত ছয়টা বছর ধরে তিতু লাইফটারে তিতা বানায়া ফেলছে। সে হিসেবে শুভ জেন্টেল, সবচে বড় কথা রাহার ধারাবাহিক এফ এম রেডিওর নিয়মিত এবং একনিষ্ঠ শ্রোতা। একটু পর পর মেসেজ আসছে আর হুস করে কানের কাছ দিয়ে একেকটা নিঃশব্দ হুইসেল। তিতু সারাদিন ধরেই বাইরে ডাকছে। হল থেকে বেরুতে ইচ্ছে করছে না।
ভাগ্যভাল এই সেই বলে কাটানো গেছে এত মেসেজ আসা দেখলে প্রশ্ন বানে জর্জরিত হয়ে ক্রশফায়ারেও পড়তে পারতো রাহা। আজকের দিনের সাতান্ন তম টেক্সট টা সযত্নে মুছে দিয়ে রাহা টেবিলে গিয়ে বসলো। একটা মেসেজ ও রাখা যাবেনা তিতুর শকুনী নজরে পড়লে বেকায়দা অবস্থা হবে। আগামীকাল টার্ম পেপার জমা দেবার লাস্ট ডেট। সারাদিন ধরেই শেষ করার চেষ্টা করছে হচ্ছেনা।
নাক ঘামছে খুব। ছোট বেলা থেকেই রাগ বিরক্তিতে তার নাক ঘামে। এ নিয়ে বড় এক কাজিনতো রীতিমত খেপাতো। ঘরের যা তা অবস্থা! চারপাশে এলোমেলো পড়ে আছে বই খাতা কাগজ পত্র । বাসি কেকের টুকরা চায়ের শেষটা শুকিয়ে কালচে ধরা কাপ।
এসবে ভ্রুক্ষেপ করার মেয়ে নয় রাহা। ভাল্লাগছেনা মানে আজ কোন কাজ হবেনা। নাক মুখ গুঁজে লাস্ট পেজে ফিনিশিং টানার চেষ্টা করতেই ফোনটা বেজে উঠলো। শুভ! নিশ্চিন্তে বাম হাতে ফোন নিয়ে ভাবলো কেটে দিলেই হবে। শুভর ছটফটানী স্পষ্ট টের পাচ্ছে রাহা।
বেশ মজাও লাগছে। বাইরে থেকে মুমু নক করছে। পাশের রুমে থাকে। নির্ঘাত বিড়ি নিয়া আসছে। একটু আগে মুখের পানি ফেলতে বারান্দায় যেতেই রাহা দেখেছে এতবড় একটা নান সাইজের চাঁদ।
আর এসব চাঁদ ফাঁদের দিনেই মুমুর অস্থির অবস্থা হয়। বাইরে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখা নইলে ঘরে বসে বিড়ি টানা তাও নিজের ঘরে না রাহার ঘরে। ভেতরে আয় বলেই রাহা লাস্ট লাইনটা লিখলো।
আবার ফোন। এবার ও শুভ।
হুম এখন বিড়ি টানতে টানতে শুভর সাথে কথা বলা যায় অবশ্য! ঈদের ছুটিতে শুভর প্ল্যান কি সেইটা এখনো শোনা হয় নাই। এখন শোনা যেতে পারে।
গল্পটা যেমন ই হোক পরিশিষ্টে শুভর সাথে রাহার আসলে প্রেম ট্রেম টাইপের কিছু একটা হয়। সে গল্পটা আরেকদিন না হয় বলবো!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।