আমার সম্পর্কে কিছু বলার স্পর্ধা এখনও আমার হয়নি…. আজকে আমার আম্মুর জন্মদিন। গত চার বছর বাসার বাইরে আছি পড়ালেখার জন্যে। এই দিনটায় কোনভাবেই কেন জানি ঢাকাতে থাকা হতো না। আমি গত দুই বছর আম্মুকে চিঠি লেখা শুরু করলাম এই দিনে। আমার আম্মুর আনন্দ দেখে কে? ফোনে চিঠি পাবার কথা যখন বলতো, স্পস্ট বোঝা যেত আম্মুর চোখ ভেজা।
গত বছর যে চিঠিটা পাঠালাম, কুরিয়ারের কি সমস্যার জন্যে যেন চিঠিটা পৌছালো না। আম্মুর মন খারাপ হয়েছিলো। আমার কেমন যেন অন্য একটা অনুভুতি হলো। আমার আম্মুকে লেখা একান্ত কিছু কথা শত সহস্র চিঠির সাথে থেকে যাবে। কেউ হয়ত কোনদিন কুড়িয়ে পাবে অথবা এতোদিনে তা জন্জালে পরিনত হয়েছে।
সে যাই হোক, কিছু কথা আম্মুর কাছে পেছৈায় নি।
পৌছানোর প্রয়োজন ছিলো কি? মায়েরা তো সবই জানে।
এবার পড়ালেখা শেষ হয়েছে, ভেবেছিলাম এবারের আম্মুর জন্মদিনটা একসাথেই থাকবো। হুটহাট অহেতুক সমস্যার কারনে সেটাও হলো না। এবার চিঠি লেখাও হলো না।
আবার একটা বছর আমার আম্মু আমার চিঠির জন্যে অপেক্ষা করবে।
কি অদ্ভুত ব্যাপার! প্রতিদিন ফোনে কথা হয়, একটু আগেও হলো। কিন্তু ছেলের হাতে লেখা চিঠি পেয়ে আমার আম্মু এতো খুশি হয়, নিজেকে এতো স্পেশাল ভাবে যে তা বর্ণনাতীত। আমি কোনবারেই আগেভাগে বলিনা যে চিঠি পাঠাচ্ছি। আগেরদিন কুরিয়ার করি।
আম্মু পরের দিন সারপ্রাইজ গিফট হিসেবে ওটা পায়।
আম্মু হয়তো আজকেও মনে মনে অপেক্ষা করবে কালকের চিঠিটার জন্যে। কিন্তু চিঠিতো আসবে না। আম্মু কে সে কথা বলতেও পাছিনা।
এক অপদার্থের জন্যে একসাগর ভালোবাসা নিয়ে এই মানুষটা বসে আছে।
আর আমি সামান্য কোন কিছুই তাকে দিতে পারিনা।
কোনদিন এমন কোন কাজ করেতে পারিনি যাতে আমার আম্মু আমাকে নিয়ে গর্ব করে। বরং এমন প্রচুর কাজ করেছি যার জন্যে আম্মুকে অন্যের সামনে বিব্রত হতে হয়েছে।
হয়ত এসবের জন্যে ক্ষমাও চাইনি। কিন্তু আম্মু মাফ করে দিয়েছে।
মানুষের ছেলেমেয়েরা কত কিছু করে, আর এই আমি এক তৃতীয় শ্রেণীর সন্তানে পরিনত হয়েছি। তবুও এই পৃথিবীতে এক আম্মই আমার উপর এখনও বিশ্বাস রাখে, একমাত্র আম্মুই ভাবে আমি কিছু করতে পারবো। না করতে পারলেও বোধ করি তার কোন সমস্যা নেই।
সে বরাবরের মতো আমাকে ভালোবেসেই যাবে। এই অকালকুষ্মান্ডকে ভালোবাসাটা আম্মুর বদঅভ্যাসে পরিনত হয়েছে।
এই অসাধারন ভালোমানুষটাকে সৃষ্টিকর্তা ব্যাপকভাবে বঞ্চিত করেছেন আমার মতো সন্তান দিয়ে। হয়তো মৃত্যুর পরের জীবনে এই ক্ষতি পুষিয়ে দিবেন।
তবে আজকের দিনে আম্মুকে শুধুই জন্মদিনের শুভেচ্ছা, শুভ জন্মদিন মা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।