বর্তমানের বহুল আলোচিত আর তার চেয়েও সমালোচিত কার্টুন Doraemon। একে কেউ বলে ডোরেমন কেউ ডোরিমন। দুটোই ভুল। এর সঠিক উচ্চারন ডোরাএমন। এটি দুটি জাপানী শব্দ ডোরা(সাহসী বিড়াল) এমন(পুরুষবাচক শব্দ)।
জাপানী আর ইংলিশ দুই ভাষাতেই এর উচ্চারন ডোরাএমন। আবার আসি এর ইতিহাস আর অন্যান্য বিষয়ে।
ফুজিকো ফুজিও,জাপানের বিখ্যাত কমিক (জাপানী ভাসায় যাকে মাঙ্গা বলে) লেখক। ১৯৬৯ এর ডিসেম্বর এ একসাথে ৬টি ম্যাগাজিন এ এর প্রকাশনা শুরু হয়। এর মূল সিরিজে মত ১৩৪৪ টি গল্প আছে যাদের ৪৫টি ভলিউমে প্রকাশ করে Shogakukan আর এগুল রাখা আছে Takaoka Central Library,Toyama যা ফুজিকোর জন্মস্থান।
এটি মূলত একটি শিক্ষামূলক কমিকস যাতে বড়দের সম্মান, সময়ের সদ্ব্যবহার, পরিবেশ দূষণ রোধ এসবের শিক্ষা দেয়া হয়। ১৯৭৩ থেকে আরও দুইটি ম্যাগজিনে এর প্রকাশনা শুরু হয়। ১৯৭৩ এই প্রথম কমিকস থেকে আনিমেশন এ উঠে আসে এই সিরিজ, পড়ে ১৯৯৬ আর ২০০৫ এ নতুন করে আবার বানান হয়। এটি জাপানে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি কার্টুন যেটি ৪টি বড় পুরুস্কার পেয়েছে। আর ২০০৮ এ জাপান পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ডোরেমনকে প্রথম “Anime Ambassador” হিসেবে নিয়োগ দেয়।
২০০২ সালে Time Asia ডোরেমনকে(যেহেতু এটাই প্রচলিত তাই এটাই লিখছি) এশিয়ান হিরোদের একজন নির্বাচিত করে। জাপানে ডোরেমন এর বেশ প্রভাব আছে। কেউ যখন বেশি খবরদারী করে তখন তাকে তারা জিয়ান বলে। আবার কেউ যখন অসম্ভব কাজ কে সম্ভব করে তাকে ডোরেমন এর সাথে তুলনা করা হয়। ডোরেমন এর লেখক যদিও এর কোন সমাপ্তি টানেননি(মারা যান) কিছু ম্যাগাজিন এর সমাপ্তি টেনেছে।
তবে এর জনপ্রিয়তা জাপানসহ এর আস্পাসের দেশগুলোতে সবসময় আছে। এটা ছোট একটা ইতিহাস। এবার আসি এর কাহিনিতে।
এর মূল চরিত্র নোবিতা নোবি যে একজন অলস ছেলে আর তার অলসতার কারণে তাকে প্রতিদিন নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। পরীক্ষায় খারাপ করে খাতা লুকিয়ে ফেলে আরও অনেক বদমাইশি করে।
তার দুই বন্ধু জিয়ান(যার নাম তাকেসি, তার বিশাল দেহের কারণে তাকে giant বলা হয় যার সংক্ষেপ রুপ Gian) আর সোনিও সব সময় তার পিছনে লেগে থাকে। আর নোবিতা ডোরেমনএর কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে করে থাকে কিন্তু সব সময় ডোরেমন এর দেয়া গেজেট এর অপব্যবহার করে। আর তার ফল ও সে, কখনো তার বন্ধু, পরিবারকেও ভোগ করতে হয়। ডোরেমনকে নোবিতার কাছে পাঠায় তার নাতি সেওয়াসি নোবি যাতে তার দাদার জীবন সহজ হয়। ডোরেমন একটি আধুনিক রোবট যে তার একটি পকেট থেকে অনেক কিছু বের করতে পারে, যাকে গেজেট বলা হয়েছে এই কমিক্সে।
ডোরেমন নোবিতাকে সবসময় তার অলসতা, করমবিমুখতা বাদ দিয়ে কর্মঠ জীবন যাপন করতে বলে।
ডোরেমন এর সমালোচনার ২টি কারণ আছে। এক হল এটি হিন্দি ভাষায় প্রচারিত হয় আর দুই নোবিতার বদমাইশি গুলা বাচ্চারা অনুকরন করছে। ১ম কারনেই বেশি সমালোচনা হয়। কিন্তু এতে ডোরেমন বা বাচ্চাদের কতটা দোষ তা আগে দেখতে হবে।
আগে টিভিতে অনেক কার্টুন হত বাংলায় ডাবিং করে। এখন সেভাবে আর হয় না, বলতে গেলে একদমি হয় না। BTV তে সিসিমপুর হয় কিন্তু মানুষ BTV বিমুখ বলে সে বিষয়ে তেমন জানেও না। । আর বাংলা চ্যানেলে যা হয় বেশিরভাগ তরুন প্রজন্মের প্রেম কাহিনিতে ভরা।
এখন একটা বিজ্ঞাপন হবে তাতেও একটা প্রেমকাহিনি থাকবে, বিশেষ করে মোবাইল এর বিজ্ঞাপন এ। আর মেয়েদের যে পোশাক তা কবে বাঙ্গালীর সংস্কৃতিতে ছিল তা গবেষণার দাবি রাখে। বাচ্চাদের মনে হয় না এসবের একটাও আকর্ষণ করে। এখনকার বেশিরভাগ বাবা মা কাজ করেন ফলে রাতে সময় দিতে পারলেও দিনে পারেন না। তাই বাচ্চাদের সময় কাটানোর মাধ্যম টিভি বা কম্পিউটার।
আর বাচ্চারা কার্টুন এর ভক্ত। স্যাটেলাইট এর কারণে তারা বিশ্বের নানা ভাষার চ্যানেল দেখতে পায়। আর যেহেতু বাংলার মতই হিন্দির উৎস সংস্কৃত ভাষা তাই দুটার শব্দ মতা মুত একই রকম। আর বাচ্চারা তাই হিন্দির প্রতি ঝুকে যাচ্ছে। যেহেতু নিজের ভাষার মতই আরেকটা ভাষা শুনছে তাই সেটাই শিখে যাচ্ছে।
ইংলিশ বা অন্য ভাষা কিন্তু সে এতটা বুঝবে না যতটা সে হিন্দি বা উর্দু বুঝবে। তাই বাচ্চাদের দেশীয় ভাষায় বিনোদনের ব্যাবস্থা না করলে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাবে। শুধু বসে বসে হিন্দি চ্যানেলকে গালি গালাজ করে লাভ হবে না।
আর দ্বিতীয় কারণটা দুই দেশের সংস্কৃতির পার্থক্যের কারণে। জাপান আমাদের দেশ থেকে অনেক দূরে।
তাদের সাথে আমাদের সংস্কৃতির বিস্তর ফারাক থাকাটাই স্বাভাবিক। আর আমাদের একটা স্বভাব মানুষের খারাপটা নেয়া। ১৯০ বছরে আমরা ব্রিটিশদের খারাপ গুলাই বেশি নিয়েছি। আর তাই ডোরেমন দেখে বাচ্চারা ডোরেমনের উপদেশের চেয়ে নোবিতা বা অন্যদের খারাপটাই নিচ্ছে বেশি।
আমাদের দেশে অনেক প্রতিভাবান লেখক আছেন।
তারা চাইলেই বাচ্চাদের জন্য গল্প, কমিকস লিখতে পারেন। এত গুলো টিভি চ্যানেল দিনে অন্তত এক ঘণ্টা বাচ্চাদের জন্য কার্টুন বা অন্য কিছু প্রচার করতে পারে। নিজেরা কার্টুন বানাতে না পারলে বিদেশি ভাল কার্টুন বাংলায় ডাবিং করতে পারে। ভারতীয় চ্যানেলগুলো যদি পারে আমরা পারব না কেন??? আমরা তো এততা পিছিয়ে নেই। মিনা কার্টুন এর নতুন পর্ব বানানো যেতে পারে, ২০০১ এ ইটিভি তে মন্টু মিয়ার অভিযান নামে একটা কার্টুন হত।
নিজেদের বাঁচাতে, নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি বাঁচাতে নিজেদের এগিয়ে আস্তে হবে। শুধু ফেসবুক এ পেজ খুলে বা ব্লগ লিখে গালাগালি করে কিছু হবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।