আমি পড়তে চাই এস এম সামছুর রহমান, বাগেরহাট
প্রায় ২০ লক্ষ লোক অধ্যুষিত বাগেরহাট জেলার একমাত্র সদর হাসপাতালে নানা সমস্যায় জর্জারিত। দীর্ঘদিন যাবৎ নজির বিহীন চিকিৎসকের পদ শূন্যতায় প্রায় হাসপাতালটি অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বর্হির বিভাগে রুগীদের উপচে পড়া ভীড় থাকলেও চিকিৎসা সেবা দেবার লোকের অভাবের কারণে সেখানে রুগী ভর্তি করা যাচ্ছে না। পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে অন্যত্র। ফলে অসহায়, দরিদ্র-পিড়ীত, অসুস্থ মানুষদের সীমাহীন দূর্ভোগের পাশাপাশি অনাকাঙ্খিত মৃত্যু ও ভোগান্তির হার ক্রমেয় বেড়ে চলছে।
জেলার প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্রের এই দুরাবস্থায় এখানে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ক্রমশ ক্ষোভ বাড়ছে।
নারী বান্ধব, শিশু বান্ধব, আধুনিক নানা উপাধিতে চিহ্নিত বাগেরহাট সদর হাসপাতালটি দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যায় জর্জরিত। এখানকার হরেক সংকটের কথা সংশি¬ষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে আলোচিত হলেও প্রতিকার মেলেনি। স¤প্রতি এই দুরাবস্থা আরও বেড়েছে। হাসপাতালটি এখন আর রুগী ধারণের অবস্থায় নেই।
জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা গুরুতর রুগীদের সদর হাসপাতাল থেকে খুলনা, বরিশালসহ অন্যান্য জেলার হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় রোগীরা না জেনে এখানে এসে পড়ায় তারা পড়ছে সীমাহীন ভোগান্তিতে। বাড়ছে তাদের ব্যয় । সময় ক্ষেপনের কারণে কখনও কখনও জীবনের ঝুঁকিও বাড়ছে। সব থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন দূর্ঘটনাসহ বিভিন্ন অপারেশনের জন্য আসা রুগীরা।
ফলে অনাকাঙ্খিত মৃত্যু ও ভোগাšতীর হার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সংশি¬ষ্ট সূত্রে জানা গেছে,১৯৬৭ সালে বাগেরহাট সদর হাসপাতালের নির্মান কাজ শুরু হয়। ৩ বছরের মাথায় ১৯৭০ সালে ৫০ টি শয্যা নিয়ে হাসপাতালের যাত্রা শুরু করে। এরপর ১৯৯২ সালে আধুনিক হাসপাতাল হিসেবে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার কথা থাকলেও ’৯৭ সালে ১০০ শয্যায় রূপান্তরিত হয়। আগের জনবল নিয়েই চলছে সদর হাসপাতালের কার্যক্রম।
জোট সরকারের আমলে বাগেরহাটের এই আধুনিক সদর হাসপাতালটি ২৫০ শয্যা হাসপাতাল হিসেবে ঘোষনা করা হলেও বাস্তবে তা এখনও রূপাšতরিত হয়নি। ৫০ শয্যা হাসপাতালের লোকবল নিয়ে ১০০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে কোনমতে। দিন দিন দুরাবস্থায় পড়ছে চিকিৎসা সেবা।
সদর হাসপাতাল সুত্রে জানাগেছে, এখানে সাধারন চিকিৎসকের ২৯টি পদের ১৬টি শূন্য। কনসালট্যান্টের ৮ টি পদের মধ্যে ৫ টিই শূন্য।
অর্থোপেডিক্স, গাইনী, সার্জারী, এ্যানেস্থেশিয়া, রেডিওলজি, ইউনানী,ডেন্টাল ও প্যাথলজির কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। জরুরী বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। চতুর্থ শ্রেণীর ৬৫ টি পদের ৪৪ টি খালি। অন্যান্য পদের প্রায় একই অবস্থা।
বাগেরহাট সদর হাসপাতালের কোন নিরাপত্তা রক্ষী নেই।
প্রতিদিনই বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হয়। এখানে ছিনতাই, শ¬ীলতাহানীর ঘটনাও হামেশাই ঘটছে। চিকিৎসা নিতে আসা আফরোজা খাতুন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে নানা বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়। এদিকে ভর্তি রোগীদের সরকারী বরাদ্দকৃত খাবার পরিবেশনে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে কতৃপক্ষ অপ্রতুল খবার সরবরাহ করার অভিযোগ করেছেন অনেক রোগিরা। এমনকি নিুমানের খাবার পরিবেশন করার অপকটে বললেন পুরুষ ওর্য়াডের ভর্তি রোগী জাহিদুল ইসলাম (৩৮)।
প্রায় একযুগ আগের গভীর নলকূপ বসাবার পরিকল্পনা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ধরা পড়ার পর একমাত্র টিউবওয়েলটি বন্ধ রয়েছে বেশ কয়েক বছর। অর্ধকোটি টাকা মূল্যের জেনারেটরটি তেলের অভাবে বন্ধ রয়েছে। জ্বালানী তেলের বরাদ্ধ নেই। ৪ টি এ্যাম্বুলেন্সের ৩ টি নষ্ট।
এতোকিছুর পরেও দালাল তৎপরতা ব্যপক ভাবে লক্ষনীয়। তাদের খপ্পরে পড়ে সর্বসান্ত হচ্ছে অনেক সাধারন রোগী।
বাগেরহাট সদর হাসপাতালের দুরাবস্থা দ্রুত না কাটাতে পারলে বাগেরহাটের সাধারণ মানুষের মাঝে এর ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক দল, জনপ্রতিনিধি এমনকি খোদ সরকারী দলের ভুক্তভোগীরা হাসপাতালের এই দূরাবস্থায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এ ব্যাপারে বাগেরহাট সিভিল সার্জন ডাঃ তাপস কুমার তফাদার সদর হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটসহ নানা সমস্যার কথা উলে¬খ করে তিনি বলেন, এ কারনেই স্বাস্থ্য সেবা ব্যহত হচ্ছে।
সংশি¬ষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন সময়ে অবহিত করা হয়েছে বলে তিনি উলে¬খ করেন।
এস এম সামছুর রহমান
বাগেরহাট
০১৯১৭৭৬৩০৭৭
০১৭১৮৪৫৫০২৬
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।