আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফেনীর বাগেরহাট সেতু ॥ কেউ কথা রাখেনি ॥ ৩ উপজেলার ৩০ হাজার মানুষের দূর্ভোগ

mamun.press@gmail.com

আবদুল্লাহ আল-মামুন, ফেনী >>> একটি সেতুর অভাবে ৩ উপজেলার ৩০ হাজার মানুষের দূর্ভোগের অন্ত নেই। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার সঙ্গে সোনাগাজী ও ফেনী সদর উপজেলার। তাই শিা, চিকিৎসা ও ব্যবসা সহ সব েেত্র পিছিয়ে পড়েছে ওই এলাকার মানুষেরা। ফেনীর দণি-পশ্চিমাঞ্চলের হাজার হাজার অধিবাসীর দীর্ঘ দিনের প্রাণের দাবী। ছোট ফেনী নদীর উপর ‘বাগেরহাট সেতু’।

কিন্তু স্বাধীনতার ৩৯ বছর পরও এ দাবী প্রতিশ্র“তিতের ফুলঝুরি থেকে বের হতে পারেনি। বিভিন্ন নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা সেতুর প্রতিশ্র“তি দিলেও নির্বাচিত হওয়ার পর কেউ কথা রাখেনি। দাগনভূঞার বেকের বাজার থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে বাগেরহাট তৎসংলগ্ন ছোট ফেনী নদীর পূর্ব তীরে ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও এবং দণি পূর্ব দিকে সোনাগাজীর চর মজলিশপুর ইউনিয়ন। ফলে ৩ উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার লোকের যাতায়াতের পথ এটি। বর্তমানে নৌকা দিয়েই প্রতিদিন পার হয় উভয় পাড়ের নারী পুরুষ।

বাগেরহাট সংলগ্ন নৌকা পারাপারের এই স্থানটি ওরবানের ঘাট হিসেবেই পরিচিত। ফেনী জেলা পরিষদ এই ঘাট থেকে ইজারা আদায় করে। স্থানীয় সূত্র জানায়, ছোট ফেনী নদীর পূর্বে রয়েছে বালিগাঁও, হকদি, চর হুজুরী, চান্দলা, আফতাব বিবি, কুরুচিয়া, চরগোপাল পশ্চিম দিকের আলীপুর গ্রামে রয়েছে আলীপুর উচ্চ বিদ্যালয়, আমিন উল্লা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা, বাগেরহাট সাঈদিয়া সুলতান উলুম মাদ্রাসা, লক্ষ্মীপুর শহীদ খুরশিদ বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও আর ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেকের বাজারে সানরাইজ ইনস্টিটিউট এবং দাগনভূঞার ইকবাল মেমোরিয়াল কলেজ। পূর্বে আছে হকদি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, হকদি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৩/৪টি প্রাথিমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা। এসব গ্রামের শিার্থীদের নদী পার হয়ে দাগনভূঞায় আসতে হয় অথবা ফেনী সদর ও সোনাগাজীতে যেতে হয়।

এ কারণে অন্তত ১০টি গ্রামের শিার্থী সহ লোকজনের সহজ যাতায়াতের জন্য সেতুটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখন বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে তাদের খরস্রোতা ছোট ফেনী নদী নৌকায় পার হতে হচ্ছে। উঃ আলীপুরের মোঃ সিরাজ মিয়া জানান, নৌকায় নদী পারাপারের সময় কয়েকবার নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। সৌভাগ্যবশত সাঁতার জানায় তারা প্রাণে বেঁচে গেছে। বর্ষাকালে প্রচন্ড ঢেউ স্কুলগামী শিশুরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হয়।

চর হুজুরী গ্রামের আলী আহমদ জানায়, মুমূর্ষ রোগীদের হাসপাতালে নেয়াও কষ্ট সাধ্য। একটি মাত্র নৌকা হওয়ায় যাতায়াতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। সবজি সহ অন্যান্য কৃষি পণ্য উৎপাদনের জন্য এই এলাকার খ্যাতি রয়েছে। কৃষি পর্ণ বিক্রির জন্য তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। চর হুজুরী কৃষক আবুল হাশেম (৭০) জানায়, কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে কৃষকদের দূর্ভোগ সবচেয়ে বেশি।

একদিকে সময় বেশি ও অপরদিকে ভাড়া বেশি লাগে। তিনি আপে করে বলেন, ‘‘বা’জি মনে অয় বিরিজ দেখি যাইতাম হাইত্তাম’ন’’। শহীদ খুরশিদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক জানান, সেতুর জন্য শিশুদের যাতায়াতে বেশি অসুবিধা হয়। এই সেতুর জন্য এই এলাকা সামগ্রিক উন্নয়নে পিছিয়ে আছে। সেতুটি নির্মিত হলে দূরত্ব কমে যাবে এবং সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে ৩ উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার লোকের।

স্থানীয় ইউপি মেম্বার মোঃ ইস্রাফিল জানান, এক সময় সাঁকো দিয়ে উভয় পাড়ের লোকজন যাতায়াত করত। কিন্তু স্বাধীনতার পর বেশিদিন সেই সাঁকোটি টেকেনি। সকল নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা বলেন, নির্বাচিত হলে তাদের উল্লেখযোগ্য। কাজ হবে বাগেরহাট সেতু নির্মাণ। কিন্তু সে কথা ইথারে ভাসে বাস্তবায়ন হয় না।

বেকের বাজার থেকে বাগেরহাট পর্যন্ত সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তার ৩ কিলোমিটার ইতিমধ্যে পাকাকরণ করা হয়েছে। নদীর পূর্ব পাড়েও রয়েছে এলজিইডির পাকা রাস্তা কিন্তু সেতু না থাকায় তা কাজে আসছে না। স্থানীয় মাতুভূঞা ইউপি চেয়ারম্যান মাঈন উদ্দিন খাজু বলেন, বিষয়টি উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় একাধিক বার তুলেছেন। চরমজলিশপুর ইউপি চেয়ারম্যান একেএম তকি কালাচাঁন জানিয়েছেন, ইতিপূর্বে বাগেরহাট সেতু নির্মাণের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর নিকট লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে দাগনভূঞা উপজেলা প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন জানান, বাগেরহাট সেতু নিয়ে অফিসিয়াল কোন কাজ অদ্যবধি হয়নি।

এমতাবস্থায় এলাকাবাসীর প্রশ্ন এটি কি কেবল প্রতিশ্র“তিতেই থেকে যাবে ?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.