আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাবীর সাথে আমার সম্পর্ক (আমার নারীবাদী হয়ে ওঠা!)

একসময় দেখলাম, সবই কল্পনা, বাস্তবতায় শূন্য পৃথিবী। আমার ভাই আমার থেকে ৪ বছরের বড়। তাই বড় ভাইয়ের সাথে দূরত্বটা সবসময় একটু বেশিই ছিল। বড় ভাইকে আমি আপনি করে সম্বোধন করতাম। ভাই আগে ভালোই মিশুক ছিল।

একই রুমে থাকতাম আমরা। সব কিছুই শেয়ার করার মত একটা পরিস্থিতি ছিল। কিন্তু ভাইয়ের ইন্ট্রোভার্টনেস আমাকে কখনই সেভাবে তার কাছে কিছু শেয়ার করতে দেয়নি। সেও আমার কাছে অনেক কিছুই শেয়ার করত না। আমার ভাই হঠাৎ করেই দাড়ি রেখে দিল।

আমার চোখের সামনেই তার পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছিলাম। দাড়ি রেখেছেন, কিন্তু নামাজ পড়েন না। আমি একটু অবাক হতাম। ভাই তখন ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। খেয়াল করলাম, নামাজের সময় সে বাইরে থাকে, অর্থাৎ মসজিদে থাকে।

ধীরে ধীরে পাঞ্জাবী পড়া শুরু করল। তারপরে ভাইকে আর চেনাই যায় না, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ একদম টাইমলি পড়ে যাচ্ছেন মসজিদে। আমি সবে, ইন্টার মিডিয়াট পড়তাম তখন। কোন এক অজানা কারণে ভাইয়া বাবা মা কে বলে আমাকে রুম থেকে বের করে দিলেন। আমার ঠাই হলো, স্টোর রুমের পাশে একটা রুমে।

রুমটা ছোট হলেও নিজের শুধু নিজের ভেবে ভালো লাগত। ভাইয়ার রুমের দিকে তখন কমই যেতাম, মাঝে মাঝে গেলে "আল্লাহু, আল্লাহু" শব্দ খুব আস্তে করে শুনতে পেতাম। এই হলো ভাইয়ার বিবর্তন। আমি যখন ইউনিভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি তখন ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হলো। পাত্রী তারই ইউনিভার্সিটিতে পড়া একজন, ভাইয়ার সাথেই মাস্টার্স করেছে মেয়েটি।

মেয়েটির নাম অনন্যা(কাল্পণিক)। বিয়ের পরে ভাইয়া আমাদের ছ'তলা বাড়ির পাঁচ তলায় উঠে পড়ল। বাবা মা আর আমি রয়ে গেলাম দোতলায়। ভাইয়া অনন্যা ভাবিকে নিয়ে আমাদের দোতলায় খুবই কম আসত। বিয়ের পর ভাইয়া একেবারেই আলাদা হয়ে গেল।

তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি দিব্যি নিজের মত করে জীবন যাপন করতে লাগলাম। বিয়ের প্রায় ২ মাস পর একদিন আমার চোখে পড়ল অনন্যা ভাবি। তিনি একটি শেলোয়ার কামিজ পড়ে, তার কর্মক্ষেত্রে (স্কুলের টিচার) যাচ্ছেন। ভাবী বোরখা কেন পড়লেন না তা ভেবে আমি অবাকই হলাম।

আমি বিন্ডিং এর নিচেই ছিলাম। ভাবীকে দেখে কাছে গেলাম। ভাবী আমাকে দেখে মিষ্টি একটু হাসলো। তারপরে বলল, কেমন আছিস? আমি কথা বলছিলাম না। ভাবীর দিকে তাকিয়ে ছিলাম বিস্ময়ে।

ভাবী হয়তো লজ্জা পেয়ে নিচে চোখ নামিয়ে ফেলল। আমি বললাম, ভাবী, তোমার চোখে কি হয়েছে? ভাবী চোখ নামিয়েই উত্তর দিলো, কিছু না তো। -আমার দিকে তাকাও ভাবী। ভাবী খানিকের জন্য তাকাতে আমি আঁৎকে উঠলাম। ভাবীর চোখ প্রচন্ড লাল।

চোখের পাশে জোড়ে আঘাত করলে এরকমটি হয়। ভাবী সেদিন চলে গেছিলো কিছু না বলে। কিন্তু আমার বুঝতে বাকি নেই, ঘটনা কি হয়েছে। অনন্যা ভাবীকে আমার ভাই মেরেছে। তাও এত নিষ্ঠুর ভাবে? ভাবী এমন কি করেছিল? ভাবীর জন্য আমার খারাপ লাগলো।

আমি অবাক হলাম খুব। তারপরে একদিন ভাবির সাথে রাস্তায় আবার দেখা। এদিন ভাবী বোরখা পড়ে কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছিলেন। ইচ্ছে করেই ভাবীর পথ আগলে দাড়ালাম। ভাবী ঘন বোরখার আড়াল থেকে আমার দিকে তাকালো।

আমি ভাবীকে বললাম, তোমাকে আমার ভাই মারে? -না কই! -ভাবী, আমি খুব সূক্ষ্মভাবে তোমাকে দেখছি কিছুদিন ধরে। নেকাবটা উঠাও তো। -না! স্বামীর নিষেধ আছে, ভাই। -তুমি নেকাব উঠাও, নাহলে আমি তোমাকে যেতে দিবো না। ভাবী অসহায় হয়ে কিছুক্ষণ ভাবে, তারপরে বোরখা উঠায়।

কপালের উপরের অংশে আঘাতের চিহ্ন, কপালের পাশে লাল দাগ। ভাবী আমার দিকে তাকিয়ে বলে, হইছে? -ভাইয়া তোমাকে কেন মারে ভাবী? আমাকে বলো! -তুমি এর মধ্যে এসো না ভাইয়া, আমাকে যেতে দাও। কিছুদিন পর পর, ভাইয়া ভাবীর গায়ে হাত তুলছে। ব্যাপারটা আমার কাছে খুব অস্বাভাবিক লাগল। আমি বাবা আর মা'কে বললাম।

মা বলল, তোর ভাইয়ার যে কি হইছে, তোর বাবাকে উপরে যেতে দেয় না, শুধু আমি যাই। বউমাকে একদম আটকে রাখতে চায়। বউকে প্রেসার দিচ্ছে চাকরি ছাড়ার জন্য। কিন্তু বউ রাজি হচ্ছে না। এইজন্য তাকে মারধর করে।

আমি অবাক হয়ে বললাম, এ কি কথা মা? একজনকে চাকরি করতে না দেবার ভাইয়া কে? আর তুমি কিছু বলছো না? আমি কি বলব। আমি বউকে বললাম, তুমি পারলে চাকরি ছেড়ে দাও। বউ রাজি না। তার ছোট ভাই ও বোনের পড়াশোনার জন্য টাকার দরকার। এইটাকা তো আর তোর ভাই দিবে না।

তাই সে অত্যাচার সহ্য করে চাকরি চালিয়ে যাচ্ছে। -তুমি ভাইয়ের সাথে কথা বলছিলা? -তোর ভাই বলছে এটা তাদের ব্যাপার! আমি যেন নাক না গলাই। সেদিন রাতে আমি ছ'তলায় আমার ভাইয়া ভাবীর বাসায় গেলাম। ভাইয়া সবে এশার নামায শেষ করে উঠল। ভাবী চা নিয়ে এলো।

ঘরের মধ্যেও বোরখা পড়ে আছে সে। আমি ভাইয়াকে বললাম, ভাইয়া তুমি তোমার বউয়ের গায়ে হাত তুলো কেন? ভাইয়া খুব গম্ভীরভাবে বলে, সে জবাবদিহি কি তোকে করতে হবে? -অবশ্যই...এ কেমন কথা, তুমি তোমার বউকে কেন অত্যাচার করবা, তোমার কাছে তো এটা আশা করা যায় না ভাইয়া। -চুপ থাকো, আমার বউকে আমি মারব না আদর করব, এটা আমার ব্যাপার। সে চাকরি করবে কেন? আমি মানা করছি যেটা সেটা সে কেন করবে? কেন সে বোরখা না পড়ে বাইরে যাবে? -এই যুগে এসে তুমি এইসব বলছো ভাইয়া? তুমি এত হীন, এত নীচ? তুমি বাবাকে পর্যন্ত্ সন্দেহ কর? ছি! ভাইয়া ছি! ভাইয়া এবার প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হলো। বলল, আমার বউয়ের সাথে আমি যা খুশি তাই করব, তুই কে রে শুয়োরের বাচ্চা...আমার বউকে আমি শাসন করব, তোর কি? এতটা সময় ভাবী বুঝি নিজের ঘরে বসেই কাঁদছিলেন।

আমি বের হয়ে আসলাম ঠিকই। একজন অসহায় নারী এইভাবে অত্যাচারিত হবে, এ আমি মানতে পারছিলাম না। সেদিন রাতে, ধাপ করে একটা শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। শব্দটা উপর থেকে আসছে বলেই আমার মনে হলো। আমি সে রাতে (৩টা বাজে) উপরে উঠে গেলাম।

ছ'তলার দরজার সামনে গিয়ে কিছুক্ষণ দাড়ালাম। তারপর, দরজায় কান রাখলাম। ভাবী কাদছে, সে শব্দ স্পষ্ট শুনতে পেলাম। ভাইয়া বলছে, তোর রূপ আমার ভাইরে দেখাইছোস, আমার ভাইরে দিওয়ানা বানাইছোস, তোর মুখ আমি বদলায় দিমু, হারাম জাদি! এতগুলো দিন ধরে ভাইয়া কি এভাবেই নিজের মধ্যে পশু লালন করেছে? আমি অবাক হয়ে গেলাম। সেদিন রাতে ঘুমালাম না।

মনে মনে ভাইয়ার প্রতি ঘৃণায় অন্ধ হয়ে যেতে লাগলাম। আমার বাবা মা কোনদিন ভাইয়াকে কিছু বলে নাই। তারা এখনও কিছু বলছে না। এ কেমন কথা! পরেরদিন ভাইয়া অফিসে যাবার আগে আমাদের বাসায় আসলো। আমার নামে বাবার কাছে যা তা বলে গেল।

আমি কিছু বললাম না। ভাইয়া অফিসে যাবা মাত্রই আমি উপরে চলে গেলাম। দরজা ধাক্কালাম। ভাবী কোনমতেই দরজা খুলবে না। শেষে আমি বললাম, ভাবী, তোমার কসম, আমি দরজা ভেঙ্গে ফেলব, দরজা খুলো।

ভাবী দরজা খুলল। বোরখা পড়া ভাবী, দরজা খুলে, আমাকে বলল, কেন আসছো ভাই, আমার অবস্থা খুব খারাপ, কাল রাতে... আমি হাত উঠিয়ে বললাম, আমি জানি ভাবী, তুমি এখন চলো আমার সাথে। -কোথায়? -তোমার বাবার বাসায়, তোমাকে এখানে থাকতে হবে না। -না ভাই এসব বলো না, আমার বাবা মা অসুস্থ হয়ে পড়বে। -ভাবী, অনেক হইছে, এই দোজখে তোমাকে আমি থাকতে দিবো না।

-কেন এরকম করতেছিস ভাই আমার, লক্ষ্মী না তুই। -চুপ থাকো ভাবী, বলে আমি ভাবীর হাত ধরে টান দিয়ে নামাতে লাগলাম। নামাতে নামাতে দো'তলা পর্যন্ত আনতেই দেখলাম আমার বাবা মা দাঁড়িয়ে আছেন। আমি বাবাকে বললাম, বাবা, আর না এর একটা বিহীত হওয়া উচিৎ। বাবা বলল, খবরদার, ওকে ছেড়ে দেয়, তুই কি তোর ভাইয়ের সংসারে আগুন দিবি? আমি মার দিকে তাকালাম।

মা বলল, কোথায় নিয়ে যাবি ওকে? বললাম, ভাবীকে আপাতত বাপের বাড়ি রেখে আসতেছি। তারপরেরটা পরে। বাবা বলল, এগুলো করিস না, খবরদার, খুব খারাপ হবে। এর মধ্যে ভাবী আবার হাত হালকা করার চেষ্টা করছিল। শক্ত করে টান দিলাম।

একটানে একতলায়। তারপরের রাস্তায়। পেছনে ফিরেও চাইলাম না। ভাবী অঝোরে কাঁদছে, আমি বললাম, ভাবী, এভাবে মার খাওয়ার কোন মানে হয় না। বিয়ের ছ'মাস পর তোমার এই অবস্থা, কারও সাথে দেখা কর না, কারও বাসায় যাও না, নিজের বাপের বাড়িতেও যাও না, এভাবে একজন মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না।

ভাবী ধরা গলায় বলল, আমার কি হবে ভাই...আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেল। আমি বললাম, ভাবী, আমি কি তোমার থেকে অনেক ছোট? ভাবী স্তম্ভিত হয়ে আমার দিকে তাকালো। কেন? -তুমি ভাইয়াকে আজকেই ডিভোর্স দিবা। -মানে, মানে বুঝানোর সময় নাই, তুমি উকিল দেখো, ডিভোর্স দাও, তোমার কিচ্ছু হবে না। -তারপর, আমার কি কোনদিন বিয়ে হবে? -হবে, এই আমি (ভাবীর হাত ধরে বললাম) কথা দিচ্ছি, আমি তোমাকে বিয়ে করব।

বাপের বাড়িতে ভাবীকে নামিয়ে দিয়ে, ভাবীর মোবাইল নাম্বর নিয়ে এলাম। সেদিন বাসায় গেলাম না। বন্ধুর বাসায় রাত কাটালাম। ২৭ বার ভাইয়া আমাকে কল করল। একবারও ধরলাম না।

প্রায় এক সপ্তাহ আমি ইচ্ছে করেই বন্ধুর বাসায় থাকলাম। মোবাইলে ভাবীর সাথে কথা বলে বলে, শেষ পর্যন্ত তালৈ সাহেবের সম্মতি আদায় করে, ভাবী ডিভোর্স লেটার পাঠালো ভাইকে। ঝামেলা শেষ হলো না সহজে। ভাইয়া ভাবীর বাড়িতে গিয়ে ভাবীর পায়ে ধরে অনেক কান্নাকাটি করল। সেখানে সেদিন আবার আমি উপস্থিত ছিলাম।

ভাইয়া ভাবীকে বলছে, বিশ্বাস করো, তোমাকে দিয়ে আর পা টিপাবো না, আর তোমাকে আমি মারবো না। স্বামীর কান্না দেখে ভাবীর মন গলে গলে অবস্থা। কিন্তু সেদিন রাতে দুই ঘন্টা ধরে ভাবীকে ফোনে বুঝালাম। বললাম, আমি তোমাকে বিয়ে করব ভাবী, তুমি ভাইয়ার কাছে ভুলেও যেও না, এধরণের লোক কখনই ভালো হয় না। কাজ হলো অবশেষে।

আমার ভরসায় ভাবী ভাইয়াকে ডিভোর্স দিলো। ডিভোর্স হওয়ার একমাস পরে, আমাকে ভাবী ফোনে বলল, আমাকে বিয়ে করবা না? -না! -কি বলছো এসব, আমি তোমার ভরসায়... -ভাবী, কারও ভরসার আশা করা অনর্থক এই দুনিয়ায়। তোমার ভরসা তুমি নিজেই। তুমি একটা স্বনাম ধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। বিয়ে সাদীর কথা না ভেবে নিজের কেরিয়ার কর।

আর আমি তোমাকে মিথ্যা কথা বলে ভাইয়ার সাথে ডিভোর্স করাইছি। আফটার অল, তুমি আমার ভাইয়ার বউ ছিলা, তোমাকে বিয়ে করাটা অনেক অন্যায় হবে। তারপর কেটে গেছে অনেকদিন। প্রায় ১ বছর পর, গতকাল খবর পেলাম, অনন্যা ভাবীর বিয়ে ঠিক হয়েছে। বাংলাদেশের সর্বোবৃহৎ গ্রুপ অফ কোম্পানিজ এর সিইওর ছেলের সাথে বিয়ে হচ্ছে অনন্যা ভাবীর।

ছেলে সব জানে, তবুও বিয়ে করছে। ৬ মাসের সম্পর্ক তাদের। আমার ভাই ডিভোর্সের তিন মাস পরেই আরেকজনকে বিয়ে করে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। আবার যদি আমি তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাই! পাত্রী উচ্চশিক্ষিত হলেও, খেলার পুতুল! যেমনটা ভাইয়া চেয়েছিলেন। (এটি একটি সত্য ঘটনা) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.