ঢাকার মহানগর হাকিম তারেক মইনুল ইসলাম ভূঁইয়া মতিঝিল থানা পুলিশের এই রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন।
জুনাইদ বাবুনগরীর জামিন আবেদনও নাকচ করে দেন তিনি।
মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ মফিজুর রহমান মঙ্গলবার বাবুনগরীকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের হেফাজতের আবেদন করেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, হেফাজতে ইসলামের মূল পরিকল্পনা, অর্থ যোগানদাতা, আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকের উৎস এবং কী ধরনের পরিকল্পনার মাধ্যমে তারা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল তা জানতে জুনাইদ বাবুনগরীকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত এই হেফাজত নেতাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়।
একই বিচারক মতিঝিল থানার অন্য একটি মামলায় ঢাকার বাইরের বিভিন্ন মাদ্রাসার ৫ ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২ দিন হেফাজত মঞ্জুর করেন।
তারা হলেন- মাসুম বিল্লাহ, শাখাওয়াত হোসেন, হাফেজ মাহমুদুল হাসান, আতিকুর রহমান ও হাসান আল রানা।
রোববার মতিঝিলে সমাবেশ চলাকালে হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা পল্টন, বায়তুল মোকাররম ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায়।
পরদিন রাতে ঢাকা থেকে বাবুনগরীকে আটক করে পুলিশ।
তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মুঈনুল আলম মাদ্রাসার মুহাদ্দিস।
ওই মাদ্রাসার মহাপরিচালক আহমদ শফী হেফাজতের আমির।
চেয়ার পেলেন বাবুনগরী
পুলিশ হত্যা মামলায় জুনাইদ বাবুনগরীর জামিন চান বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীরা।
শুনানির শুরুতে পুলিশ বাবুনগরীকে কাঠগড়ায় তুলতে চাইলে আইনজীবীরা চিৎকার করে এর প্রতিবাদ জানান। এতে এজলাসে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
জ্যেষ্ঠ কয়েকজন আইনজীবী হেফাজত নেতাকে চেয়ার দিতে আদালতের অনুমতি চান।
এরপর আদালতের কর্মচারীরা বসার জন্য সাধারণ চেয়ার দিতে গেলে বিচারক তাকে হাতলবিশিষ্ট ভালো চেয়ার দিতে বলেন। এরপর হাতলওয়ালা চেয়ারে বসেন বাবুনগরী।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ইকবাল হোসেন অভিযোগ করেন, পুলিশ বাবুনগরীকে লিফটে না তুলে আট তলার এজলাসে ‘অমানবিকভাবে’ হাঁটিয়ে তুলেছে।
শুনানি
আইনজীবী ইকবাল হোসেন শুনানির শুরুতেই একজন আলেমকে এভাবে গ্রেপ্তারের সমালোচনা করেন।
তিনি জানতে চান, বাবুনগরীকে কতগুলো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে? কয়টিতে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে?
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি শাহ আলম তালুকদার মামলার সংখ্যা না বলে একটিতে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে বলে জানান।
বাবুনগরীর জামিন চেয়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম নেতা সানাউল্লাহ মিয়া হেফাজত নেতার ৭০ বছরের বেশি বয়সের কথা উল্লেখ করেন।
এক পর্যায়ে তিনি গণজাগরণ মঞ্চের সমালোচনা করে বলেন, “গণজাগরণের ওই নাস্তিকরা টুপি পড়ে কুরআন শরিফ পুড়িয়েছে। সরকার নির্বিচারে হাজার হাজার আলেমকে হত্যা করেছে। বিশ্বের সকল মিডিয়ায় এ তথ্য এসেছে। তাই এই গণহত্যার বিরুদ্ধে আমরা আগামীকাল ও পরশু হরতাল দিয়েছি।
এ সরকার মুসলমান নয়, ফ্যাসিস্ট, নাস্তিক। ”
তার এই বক্তব্যে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা হৈ চৈ করে ওঠেন, তারা আইনগত বিষয়ে বক্তব্য রাখতে সানাউল্লাহর প্রতি আহ্বান জানান।
সানাউল্লাহর পর ঢাকা আইনজীবী সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম মিয়া বলেন, বাবুনগরী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। তার রিমান্ড আবেদনের কোনো যৌক্তিকতা নেই।
বিএনপি সমর্থক আইনজীবী মহসীন মিয়া, বোরহান উদ্দিন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, জামায়াত সমর্থক আইনজীবী মো. আব্দুর রাজ্জাকও রিমান্ড বাতিলের শুনানি করেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, বাবুনগরী এজাহার নামীয় ও অন্যান্য অজ্ঞাতনামা আসামিদের হুকুম দিয়ে ও তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে, তার পরিকল্পনায় ৫ মে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে ধ্বংসাত্মক কাজ চালায়।
“পরিকল্পনা, অর্থ জোগানদাতা, আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা ককটেলের উৎস এবং নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের এই অপচেষ্টায় আর কারা জড়িত ছিলো, তা জানার জন্য রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ জরুরি। ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।