আট মাস আগে তাণ্ডবের পর শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশ নিয়ে সরকার কঠোর অবস্থান নিলে হেফাজতের ঢাকায় অবস্থানরত নেতারা তাদের মঙ্গলবারের কর্মসূচি স্থগিতের কথা জানান।
সোমবার দুপুরে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ঢাকার আহ্বায়ক নূর হুছাইন কাসেমী এই ঘোষণা দেয়ার পর তাতে দ্বিমত জানান চট্টগ্রামে অবস্থানরত বাবুনগরী।
দুপুর ১টার দিকে তিনি টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি ঢাকায় মহাসমাবেশ হবে। ”
তবে হাটহাজারী মাদ্রাসার এই শিক্ষক আধা ঘণ্টার মধ্যে তার মাদ্রাসায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা চাইলে করতে পারি, কিন্তু সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে যেতে চাই না। ”
গত মাসে চট্টগ্রামেও সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে সরকারের কঠোর অবস্থানে পিছু হটতে হয়েছিল গণজাগরণবিরোধী এই সংগঠনটিকে।
শাপলা চত্বরে সমাবেশ করতে না পারলে রাজধানীর অন্য জায়গায় তা করার চেষ্টা করবেন জানিয়ে বাবুনগরী বলেন, “ঢাকায় কোথায়, কিভাবে সমাবেশ হবে, তা ঢাকা মহানগরের নেতারা ঠিক করবেন। ”
ঢাকার নেতা কাসেমীকে সোমবার র্যাব কার্যালয়ে ধরে নেয়া হয়েছিল বলে হেফাজতকর্মীদের অভিযোগ। তবে র্যাবের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করে বলা হয়, হেফাজত নেতা নিজেই গিয়েছিলেন।
‘নারীবিরোধী’ আট দফা দাবিতে আট মাস আগে মতিঝিলে সমাবেশ ডেকে তাণ্ডবের পর এবারো একই দাবিতে ২৪ ডিসেম্বর শাপলা চত্বরে সমাবেশের ঘোষণা দেয় চট্টগ্রামভিত্তিক সংগঠনটি।
রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে হেফাজত এই সমাবেশ ডেকে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে দাবি করে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম রোববার বলেন, তাদের সমাবেশ করতে দেয়া হবে না।
বাবুনগরী বলেন, “সরকার আমাদের অনুমতি না দিলে আমরা যুদ্ধ করব না। আইন শৃঙ্খলা হাতে তুলে নেব না। তবে জনগণ আইনশৃঙ্খলা হাতে তুলে নিতে বাধ্য হবে।
শেষ পর্যন্ত সমাবেশ করতে না পারলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের নেতারা হেফাজত আমির হাটহাজারী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শাহ আমদ শফীর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে বলে মহাসচিব জানান।
সমাবেশে যোগ দিতে সকালে শফী ও বাবুনগরীসহ হেফাজত নেতারা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যেতে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হলেও বাধার মুখে ফিরে আসেন।
বাবুনগরী বলেন, “পুলিশ মাদ্রাসা গেইটের বাইরে গাড়ি থামিয়ে দেয়। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করব বলেছিলাম। তারা আমাদের কথা শুনেনি। তারা আমাদের মাদ্রাসায় ঢুকিয়ে দেয়। বাইরে প্রচুর পুলিশ ছিল।
”
ফাইল ছবি ঢাকায় বিভিন্ন মাদ্রাসায় তল্লাশি চলছে বলে অভিযোগ করলেও সমাবেশ স্থগিতের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে নারাজ তিনি।
ফাইল ছবি
“আমরা সমাবেশ স্থগিত ঘোষণা করিনি। আমরা এখনো সমাবেশের জন্য আশাবাদী,” বলার সময় বাবুনগরীর সঙ্গে ছিলেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাঈনুদ্দিন রূহী এবং আমিরের প্রেস সচিব মাওলানা মুনির আহাম্মদ।
তবে কাসেমী ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “সরকার বলছে, তারা কোনোভাবেই অনুমতি দেবে না। আমরা অশান্তি চাই না।
সরকারের বাধার কারণে আপাতত কালকের (মঙ্গলবার) সমাবেশ হচ্ছে না। ”
বাবুনগরী এই মাসের শুরুতে চট্টগ্রামে তাদের অনুষ্ঠান করতে অনুমতি না পাওয়ার কথাও বলেন। গত ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ মাঠে রেসালাত সম্মেলনের ডাক দিয়েছিল হেফাজত।
“সরকার আমাদের কঠোর বাধা দিয়েছে। তার কারণে চট্টগ্রামেও আমরা রেসালাত সম্মেলন করতে পারিনি।
”
জামায়াত সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার
হেফাজতের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর ঘনিষ্ঠতার যে অভিযোগ রয়েছে, তা আবারো অস্বীকার করেছেন বাবুনগরী।
“হেফাজতে ইসলাম নির্বাচন করবে না। আল্লাহর কসম, জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য আমরা সমাবেশ করছি না। ”
গত ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গণজাগরণ আন্দোলন শুরু হলে ‘নাস্তিক ব্লগারদের’ শাস্তি দাবি নিয়ে মাঠে নামে হেফাজত। তাদের বিভিন্ন মিছিল থেকে যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিতদের মুক্তির দাবিতে স্লোগানও দেয়া হয়।
হেফাজতের আন্দোলন ‘নাস্তিক মুরতাদ ও আল্লাহর অবমাননাকারীদের’ বিরুদ্ধে- এই দাবি করে এই বিষয়ে সরকারের অবস্থানের সমালোচনাও করেন বাবুনগরী।
এটাসহ আট দাবিতে গত ৫ মে তারা মতিঝিলে সমাবেশ ডেকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডব চালায় হেফাজতকর্মীরা, যাতে সংঘাতে নিহত হন বেশ কয়েকজন। তখন ঢাকায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বাবুনগরী, পরে জামিনে ছাড়া পান।
গত ৫ মের তাণ্ডবের জন্য হেফাজতের নেতাকর্মীরা জড়িত ছিল না বলে দাবি করেন ওই ঘটনায় করা কয়েকটি মামলার আসামি বাবুনগরী।
হেফাজত মহাসচিব বলেন, “সরকার পতন আমাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য নয়।
কিন্ত বামদের কারণে সরকার যা শুরু করেছে, এজন্য তৌহিদী জনতা যদি ক্ষুব্ধ হয় তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।