আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অলিম্পিক শিখা কি? কি এর ইতিহাস?

দেখিয়া শুনিয়া চরম বিরক্ত অলিম্পিকের মশাল কি? প্রতি অলিম্পিকের আগে একটি মশালের মাথায় জ্বলতে থাকা অগ্নিশিখা নানা জায়গা ঘুরে উপস্থিত হয় - যে শহরে অলিম্পিক হবে সেখানে। অলিম্পিকের অমর চেতনার প্রতীক এই শিখার যাত্রা শেষ হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, স্টেডিয়ামের চুড়ায় অলিম্পিক মশাল প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে। এর পর ১৪ দিন ধরে তা জ্বলতে থাকে। নেভানো হয় অলিম্পিকের শেষ দিন। চার বছর পর পর এই জাঁকালো অনুষ্ঠান এখন আমরা পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে টিভিতে সরাসরি দেখি, অলিম্পিক শিখার পৃথিবী পরিভ্রমণের খবরও পড়ি।

কোথায় এর শুরু? উত্তর জানতে যেতে হবে পশ্চিম গ্রীসের অলিম্পিয়া নামে একটি জায়গায়, যেখানে প্রায় তিন হাজার বছর আগে প্রাচীন অলিম্পিকের সূচনা হয়েছিল। এখানেই ঘন্টাখানেকের একটি অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে সূর্যের আলো থেকে জ্বালানো হয় সেই অগ্নিশিখা, যা ক্রীড়ানুষ্ঠান শেষ হবার আগে পর্যন্ত কখনোই নেভে না। এই অলিম্পিয়াতেই ৭৭৬ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে শুরু হয়েছিল প্রাচীন যুগের অলিম্পিক - যা অনুষ্ঠিত হতো প্রতি চার বছর পর পর। সেখানে ছিল গ্রীক দেবতাদের রাজা জিউসের মন্দির, এবং তার সম্মানেই অনুষ্ঠিত হতো ক্রীড়ানুষ্ঠান। আজ সে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ ছাড়া আর কিছুই নেই।

এখানেই অলিম্পিকের কয়েক মাস আগে অনুষ্ঠিত হয় শিখা প্রজ্জ্বলনের অনুষ্ঠান। উপস্থিত থাকেন অলিম্পিক আয়োজক কর্মকর্তারা, ক্রীড়াবিদ এবং কিছু দর্শক। কবে থেকে শুরু? ১৯২৮ সালের আমস্টার্ডাম অলিম্পিক থেকে এই অলিম্পিক মশাল জ্বালানোর প্রথা শুরু হয়। তবে এ যুগে যেভাবে গ্রীস থেকে এই অগ্নিশিখা দীর্ঘ পথ ঘুরে হাত বদল হতে হতে অলিম্পিক স্টেডিয়াম পর্যন্ত পৌঁছায় - এই 'টর্চ রিলে' প্রথা অবশ্য শুরু হয় ১৯৩৬ সালের বার্লিন অলিম্পিক থেকে। চলার পথে মশালের আগুন যে কখনোই নেভে না তা পুরোপুরি ঠিক নয়।

কখনো কখনো তা নিভে যায় ঠিকই, কিন্তু মশালবাহীরা সঙ্গে রাখেন ওই একই আগুনে জ্বালানো একটি ছোট্ট লণ্ঠন - যা থেকে আবার মশাল জ্বালিয়ে নেয়া হয়। মশাল কিভাবে জ্বালানো হয়? আগুন জ্বালানো হয় মাটিতে রাখা একটি অবতল আয়না থেকে । এতে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে এমন তাপের সৃষ্টি করা হয় যা থেকে মশাল জ্বালানো যায়। এগারোজন মহিলার মধ্যে থেকে একজন শিখা প্রজ্জ্বলন করেন। এরপর তা থেকে জ্বালানো হয় আরেকটি অলিম্পিক মশাল - যা তুলে দেয়া হয় একজন ক্রীড়াবিদের হাতে।

এ ছাড়াও তুলে দেয়া হয় একটি জলপাই গাছের শাখা। আরেকজন উড়িয়ে দেন একটি সাদা পায়রা, যা শান্তির প্রতীক। প্রাচীনকালের অলিম্পিকে ইভেন্টের মধ্যে থাকতো দৌড়, মুষ্টিযুদ্ধ, কুস্তি, রথচালনা ইত্যাদি। প্রতিযোগিতার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জ্বলতো একটি আগুনের শিখা, যা ছিল দেবতাদের রাজা জিউসের কাছ থেকে প্রমিথিউসের আগুন চুরি করে মানুষকে দিয়ে দেবার কাহিনীর স্মারক। বর্তমানের অলিম্পিক মশাল সেই ঐতিহ্যেরই এক ধারাবাহিকতা।

কেমন ছিল অলিম্পিয়া? অলিম্পিকের উৎসভূমি অলিম্পিয়ার ওই প্রাচীন জায়গাটি এক সময় আট মিটার মাটির নিচে চাপা পড়ে গিয়েছিল। ১৭৬৬ সালে ইংরেজ ইতিহাসবিদ রিচার্ড শ্যান্ডলার খুঁজে বের করেন এই অলিম্পিয়া। ১৮২৯ সালে প্রথম খনন কাজ শুরু হয়, আর তার পর একে একে উদঘাটিত হয়েছে প্রাচীন অলিম্পিয়ার একাধিক ভবনের ধ্বংসাবশেষ। ১৯৯০-এর দশকেও এখানে খননকাজ হয়েছে। জায়গাটি এখন ইউনেস্কোর একটি অন্যতম ওয়ার্লড হেরিটেজ সাইট।

সবশেষে, এবার কোথায় জ্বলবে এই শিখা ? ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকের শিখা প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানটি হবে আগামি ১০ই মে এই অলিম্পিয়াতেই - দেবতা জিউসের স্ত্রী হেরার মন্দিরের সামনে। এক সপ্তাহ ধরে ওই শিখাটি গ্রীসের নানা স্থানে পরিভ্রমণ করবে। তার পরে এথেন্সে যে স্টেডিয়ামে ১৮৯৬ সালে আধুনিক যুগের প্রথম অলিম্পিক হয়েছিল সেখানে এক অনুষ্ঠানে তা তুলে দেয়া হবে লন্ডন অলিম্পিকের আয়োজকদের হাতে। এক বিশেষ বিমানে করে তা নিয়ে আসা হবে ইংল্যান্ডের কর্ণওয়ালে। ৭০ দিন ধরে তা হাতে হাতে ঘুরে ৮ হাজার মাইল পথ পাড়ি দেবে, যাবে ব্রিটেনের নানা জায়গায়।

তার পর অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিন তা প্রবেশ করবে লন্ডনে। এই পুরো প্রক্রিয়াটির সূচনা হবে অলিম্পিয়ায় শিখা প্রজ্জ্বলনের মধ্যে দিয়ে, যা সম্পাদন করবেন প্রাচীন রোমান রীতির সাদা পোশাক পরা এগারো জন গ্রীক মহিলা সূ্ত্র:  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.