বলুনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল। [১৭:৮১-পবিত্র কুরআন] কয়েকদিন আগে একটি চ্যানেলের ইসলামিক অনুষ্ঠানে, একজন দর্শক আলেম সাহেবকে রাসূলুল্লাহ্ -র বিরুদ্ধে কটূক্তিকারীদের বিষয়ে প্রশ্ন করলে আলেম সাহেব জবাবে সূরা কাওসারের শেষ আয়াতটির প্রতি ইঙ্গিত করেন, যা আমাকেও ভাবিয়ে তোলে। প্রায় প্রত্যেক সালাতেই তো এই সূরাটি পড়ি, এটার অর্থও আমার জানা, কিন্ত্ত এভাবে তো কখনো ভেবে দেখিনি।
ঘটনার শুরু এভাবে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) -র ছেলে কাসেম অথবা ইবরাহীম যখন শৈশবেই মারা গেলেন, তখন অবিশ্বাসীরা তাকে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রূপ করতে লাগলো।
রাসূলুল্লাহ্ -কে নির্বংশ বলে উপহাস করতে লাগলো। অবিশ্বাসীরা বলতে লাগলো, রাসূলের মৃত্যুর পর তার নাম উচ্চারণ করার মত কেউ থাকবে না। এদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল কুখ্যাত আস ইবনে ওয়ায়েল। এইসব অবিশ্বাসীদের কটূক্তীর জবাবেই এই সূরা অবতীর্ণ হয়।
অবিশ্বাসী, ধর্মদ্রোহী, নাস্তিকদের সেই আশা দূরাশায় পরিণত।
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে রাসূলের আধ্যাত্নিক সন্তানের (রাসূলের উম্মত) সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলছে। এমনকি রাসূলের আদরের কন্যা ফাতেমা (রা) -র মাধ্যমে তার বংশগত সন্তান সন্ততির ধারাও অব্যাহত রয়েছে। আমি মাঝে মাঝে ভাবি, এমন কি কোন মুহুর্ত আছে যখন তার নাম উচ্চারিত হয় না? সম্ভবত নেই।
প্রায় তিন বছর আগে বৃটেনে পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, সেখানে ছেলে শিশুদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম মুহাম্মাদ। অথচ বৃটেনে মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫-৬ শতাংশ মুসলিম।
বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন এখানে ।
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যেসব মসজিদ আছে সেখান থেকে প্রতিদিন পাঁচবার করে ধ্বনিত হয়, اشهد ان محمدا رسول الله, অর্থ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহ্ - র রাসূল। প্রতি সালাতের শেষ বৈঠকে ঈমানদার মুসলিমরা রাসূলের উপর দরুদ পড়েন যেখানে রাসূলের উপর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক এই কামনা করে আল্লাহ্ - র কাছে দোআ করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ১.৮ বিলিয়ন উম্মত যখন যে মুহুর্তে সালাত আদায় করে তখনই শেষ বৈঠকে দরুদ পড়ে দরদ দিয়ে। এছাড়া বিভিন্ন দোআ মাহফিলের আসরেও তার নাম উচ্চারিত হয়, তার প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করা হয়।
পবিত্র কুরআনে সরাসরি নির্দেশ রয়েছে তার প্রতি দরুদ পাঠ করার জন্য, "আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি রহমত প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর জন্যে রহমতের তরে দোয়া কর এবং তাঁর প্রতি সালাম প্রেরণ কর। " পবিত্র কুরআনের ৩৩ নং সূরা, আয়াত নং ৫৬
যে বা যারাই রাসূলের সমালোচনা করেন তাদের বলছি, আপনি জানেন মুহাম্মাদ (সা) কে? উনি ইতিহাসের গতি পরিবর্তনকারী, উনার কারণেই ইতিহাসকে লিখতে হয়েছে নতুনভাবে। উনি সেই মহামানব যারা মাধ্যমে ইসলাম পরিপূর্ণতা পেয়েছে, উনার প্রচারিত আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আরবরা পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথমবারের মত ঐক্যবদ্ধ হয়ে অবদান রেখেছে, তৈরী করেছে পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম সমৃদ্ধ এক সভ্যতা। শুধু আরবরাই নন, স্পেন, বাগদাদ, সমরখন্দ, ইস্তামবুল সহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অনারবরাও তার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে সমৃদ্ধ সভ্যতা গড়ে তুলেছে।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য আজ প্রায় দেড় হাজার বছর পরও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে তার অনুসারীরা মুহাম্মাদ (সা) -এর প্রচারিত আদর্শ প্রতিষ্ঠায় সংগ্রামরত। কোন কোন জায়গায় তারা আংশিকভাবে সফলও হয়েছে, যেমন তুর্কী, মিশর, ইরান।
প্রিয় পাঠক, একটু ভালো করে লক্ষ্য করলে আপনি দেখবেন, যারা বাম ঘরানার তারাই মুহাম্মাদ (সা) ও তার প্রচারিত আদর্শ ইসলাম সম্পর্কে কুৎসা রটনা করে। তারা ধর্মদ্রোহীতায় বেশী লিপ্ত থাকে। এই নষ্ট সমাজ বিচ্যুত বামেরা তাদের অতীত ইতিহাস এখনো ভুলতে পারেনি।
মুহাম্মাদ (সা) ও তার প্রচারিত আদর্শ ইসলামে উজ্জীবিত আরব অনারব মুজাহিদদের সম্মিলিত আক্রমণেই আফগানিস্তানে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পায় এই নষ্ট বামেরা। পতন হয় ভ্রান্ত বাম দর্শনের, পতন হয় বাম সোভিয়েত সাম্রাজ্যবাদের।
মুহাম্মাদ (সা) ও তার প্রচারিত আদর্শ সম্পর্কে কুৎসা রটনা করা, গালি গালাজ করা কোনভাবেই মুক্তমনা বা প্রগতিশীলতা হতে পারে না। এটা একটা জঘন্য নিন্দনীয় কাজ। এ ধরণের কুৎসা রটনাকারীরা আবু জাহেল, আবু লাহাবের মত নির্বংশ হয়ে যাবে।
এ সব কুৎসা রটনাকারীদের যারা সমর্থন দেয়, হতে পারে তা প্রত্যক্ষভাবে অথবা পরোক্ষভাবে, তারাও সমান দোষে দুষ্ট। আশা করি, এধরণের ঘৃণ্য কাজ থেকে আমরা আমাদের বিরত রাখবো। আমরা পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ এই মহামানবের জীবণী ও তার প্রচারিত আদর্শ থেকে শিক্ষা নিব। এতেই আমাদের মঙ্গল ও কল্যাণ নিহিত।
তথ্যসূত্রঃ
www.quraanshareef.org/tafseer/index.php?page=1478
Mohammed is now the most popular name for baby boys ahead of Jack and Harry
Islam in the United Kingdom ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।