তুমি ক্ষমাশীল হও, সৎ কাজের আদেশ কর, আহাম্মকদের থেকে দূরে থাকো. -সুরা আরাফ, আয়াত.১৯৯
১
বান্দরবন ইষ্টিসনে নেমে আমার কিছুটা একালাগে।
পিছনে ফেলে আসা ঢাকা নগরের কথা মনে পরে আমার। নাগরিক কোলাহল ছেড়ে এখানে আসার পর একটু জেন, কেমন লাগে আমার। আলসেমি করে এদিকওদিক তাকাই। কাউকে কোথাও দেখা যাচ্ছেনা।
মামার গাড়ি নিয়ে আসার কথা। কিন্ত ছোট একটা সমস্যা হয়েছে। আমি যে মামার বাসায় এসেছি তারা আমাকে কখনো দেখেনি। আমিও দেখিনি তাদের কোনদিন। অনেকটা হুটকরেই চলে আসতে হয়েছে আমার।
সম্পুর্ন ব্যাপারটা করতে হেয়ছে মায়ের কারনে। কিছুটা সমস্যা আমারওছিল। আমি যাকে ভালো বাসতাম তার হুট করে বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আমার খানিকটা মাথা খারাপের মতন হয়ে গিয়েছে। মা বহু ডাক্তার দেখালেন। এক ডাক্তার বললেন, আমাকে কিছু দিনের জন্য ঢাকার বাইরে যাবার জন্য।
মা খুব ভাবনায় পরে গেলেন কোথায় পাঠানো যায় তাই নিয়ে। ওদিকে আমি জেধ ধরেছি আমি তাকে ছেড়ে যাবনা। পারবনা ছেড়ে থাকতে। তবুও মা ব্যাবস্থা করে ফেললেন, বান্দরবন আসার। মায়ের এক ভাই থাকেন এখানে, ওনার নাম ছোটন।
তিনি আবার এখানকার ‘বন বিভাগে’ চাকুরি করেন। ছোটবেলায় ওনার ওনেক গল্প শুনেছি মায়ের মুখে, দেখিনি কোন দিন। খুব নাকি রসিক মানুষ। মা বললেন, ‘যা না বান্দরবন, খুব ভালো লাগবে তোর। ’ আমি রাজি নাহয়ে পারলামনা মায়ের কথায়, সামান্য বিরক্তি নিয়েই রাজি হয়ে গেলাম।
“নুপুর” চলে যাবার পর থেকেই আমাকে Compromise করতে সিখতে হচ্ছে, করলাম না হয় আর একটু Compromise, মায়ের জন্যইত করছি। মা আমার সব কিছু, মা আমার সবকিছুজানে, সবকিছু। ‘নুপুর’ যখন আমাকে ছেড়ে চলেগেল তখন থেকে মা আমাকে বুঝেয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু আমি ভুলতে পারছিনা নুপুর কে। কিছুতেই পারছিনা। শত চিন্তার মাঝেও নুপুর এসে আমার সামনে হাজির হয়।
আমাকে পাগল করে দিচ্ছে ওর ওস্তিত্ব। ওর কথা মনে পরলেই বুকের ভিতর কষ্টের বৃষ্টি পরে। আমি এখনও ওকে পাগলের মতন ভাল বাসি। ওর চোখের সেই প্রগাড় চাহুনি অথবা ওর সেই মসৃন ক্লান্তিমাখা হাসি মনে পড়লেই আমার মনে হচ্ছে, কি দরকার এই জীবনের এই বেচেথাকার। নুপুর হীন আমি বেচে কিরবো, টুপ করে মরেগেলে হয়না? কিন্তু পারছিনা।
মায়ের মুখটা মনে হলে আর মরতে ইচ্ছে করেনা, আর বাবা উনিতো দুঃখে-দুঃখে মরেই যবেন। ভাবি থাক আমার একটা কষ্টের জন্য এতগুল মানুষের কষ্টের কারন হয়ে লাভ কি?
আমি ভাবনার খেই হারাই। এক জন ভদ্রলোক আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি বুঝিনা উনিই কি ছোটন মামা কিনা? উনি কাছে এসে জানতে চান,
-‘কি ভাগিনা, কি খবর? দেরি করেফেল্লাম নাকি?’
‘না মানে আমি নিলু। ’
-‘আরে ব্যাটা তুই যে নিলু এইটা আমি আগেই বুঝছি।
তোর মা কেমন আছে? আচ্ছা আগে তোর বাবার খবর বল। ব্যাটা কি এখনো আগের মতন খায়? আমার অবস্থা দেখ- খেতে খেতে এমন বিশাল পেট হয়েছে, আমি কোথাও যাবার আগেই আমার পেট চলে যায়। ’ হা হা...।
আমি সামান্য হেসে বলি, ‘মামা আপনি আমাকে চিনলেন কিভাবে?’
-‘আরে ব্যাটা তুই হয়েছিসতো একেবারে তোর বাবার মতন, পুরা ফটোকপি। ’
-‘আয় চল।
’
দূরে মামার জিপ গাড়ি দ্বাড়িয়ে আছে, মামা নিজেই এসেছেন গাড়ি নিয়ে। আমরা ওটাতে করেই মামার বাংলোতে এসে পৌছলাম।
২
এখন প্রায় দু-টা বাজে। মামি আমাকে খাবার জন্য ডাকছেন। উনি এখান কার একটা এঞ্জিওতে কাজ করেন, শ্রেফ সখ করে কিসব মহিলা বিসয়ক ব্যাপার নিয়ে, আদিবাসি মহিলাদের জীবনের উন্নতি না কিসব।
খুব সল্পভাষি মানুষ, তবে খুব মিসুকও। আমি খাবার টেবিলে যাচ্ছি। মামা বসে আছেন গেঞ্জিগায়ে দিয়ে। উনি আমাকে বসতে বললেন তার পাশের চেরটায়। মামি ও দাঁড়িয়ে আছেন তার আর এক পাসে।
আমি বসি, মামা আমার পিঠে হাত রাখেন পরম মমতায়। তারপর বলেন, ‘কিরে ব্যাটা মন খারাপ, ধুর ব্যাটা প্রেমে ছেঁকা খেয়ে কেউ তোর মত বেকা হয় বা এত কষ্ট পায় তোকে না দেখলে বুঝতাম না। আজকাল এসব কোন ব্যাপারনাকিরে। এগুল আগে ছিল আমাদের সময়। এখন আর প্রেমে ছেকা খেয়ে কেউ দেবদাস হয়না বুঝলি।
’ মামি ফোড়ন কাটে, ‘কিছুদিন আগেও কিন্তু দেবদস ছবি হিট করেছে। ’ মামা বলে, ‘আরে ধুর্,
মাধুরি না নাচলে ওই ছবি কেউ দেখত নাকি। ’ মামি আর কিছু বলেনা। মামা আমর দিকে তাকিয়ে বলে, ‘আমার ঘটনা সোন ব্যাটা, আমি প্রেম করতাম তোমার মামির এক বান্ধবির সাথে। ওর নাম ছিল “রেবা”।
আহারে কি প্রেম, রেবার ফ্যামিলি ছিল খুব টাইট। তাই তোর মামিদের বাড়িতেই ও আসত আমার সাথে দেখা করতে, আমিও যেতাম তোর মামিদের ওখানে রেবার সাথে দেখা করতে। তোর মামিই আমাদের বসার ব্যাবস্থা করে দিত। ওদের বাড়ির ছাদে আমরা কথা বলতাম ওর সাথে কত যে টুকরো টুকরো কথা বলেছি। কি মোহন ছিল সেই সময় গুল, তুলো তুলো মেঘের মতন প্রেম, ও বললে আমি ছাদথেকে লাফ ও দিতে পারতাম, রেবা মাঝে মাঝে না আসতে পারলে তোর মামির সাথেই টুক-টাক কথা বলতাম।
একদিন হলোকি মেয়েটার টুপ করে বিয়ে হয়েগেল। বলতে পারিস বিয়ে করে ফেল্ল। ও আমাকে জানালোও না বিয়ের আগে। আমি একা হয়ে গেলাম। ইচ্ছে হচ্ছিল দুঃখে অপমানে আমি মারে যাই।
আমি তখন মেসে থাকি। পুর পুরি দেবদাস হয়ে গেলাম, দাড়িগোফ রেখে একাকার অবস্থা। মেস থেকে বের হইনা, কারো সাথে কথা বলিনা, ক্লাসে যাইনা, কি বিরহ। ঘরে বসে বসে রেবাকে নিয়ে একশ লাইনের একটা কবিতা লিখে ফেল্লাম। ’ মামি এবার কথাবলেন,
-কি কবিতাই না ছিল।
বাপরে, বিদঘুটে সব গালিগালাজ। আমার প্রথম কয়েক লাইন মনে আছে। বলবো। ’ বলে মামার দিকে তাকায়, মামা সায় দেয়, মামি বলতে থাকেন কবিতা
‘তুমি বেইমান প্রতারক প্রেমিকা আমার,
তুমি ব্যাদব লাইলি, হবোনা মজনু তোমার।
আমি খুজছি চন্দ্রমুখি, হবনা দেবদাস তোমার।
আরো কতকি,’ এর পর মামি হেসে উঠলেন খিল খিল করে। মামা বললেন,‘তোর মামি আর আমি ক্লাসমেইট। এই রকম এক ভয়াবহ সময়ে একদিন তোর মামি এসে আমার মেসে হাজির। সে এক দুর্গা মুর্তি। হাতে একটা ব্যাগ।
আমি দেখি তার মধ্যে একটা লাল পাঞ্জাবী, রেজার, টুপি আরো কতোকি, আমি তো অবাক, ঢুকেই কি তোড় জোড় কোমরে আঁচল পেচিয়ে রুম সাফ করতে আরম্ভ করলো, আমি ভেবে পাচ্ছিনা মেয়েটা করছে কি? তোর মামি কিছুখন পর আমার পাসে এসে বসলো কিছুটা সংকোচ নিয়ে,’ তারপর বলল।
-‘কিহয়েছে তোমার? তুমি কেন ভাবতে পারছনা তোমাকে আরো কেউ ভাল বাসতে পারে। কেন ভাবতে পারছনা, আমরা জীবনটাকে যতটা ছোট ভাবি, জীবনটা এত ছোটনা। কারো জন্য কিছু থেমে থাকেনা। কেন শেষ করছ নিজেকে? কেন ভাবতে পারছনা? তোমাকে নিয়েও কেউ রাত জেগে জেগে স্বপ্নের বুনট বুনতে পারে, লিখতে পারে কবিতা অথবা গল্প।
কেন তুমি তোমার হাত ধরার অনুমতি আর কাউকে দিতে পারছনা। তোমার কষ্টের বৃষ্টিতে আমাকে ভিজতে দাও আজ। দেখ আমি প্রান পনে ভিজতে চাইছি। ’
এর পর ও কেঁদে কেঁটে অস্থির। আমি ততোখনে বুঝতে পারি ও কেন লাল পাঞ্জাবি এনেছে।
আমরা সেদিনই বিয়ে করি। এর পর তো দেখতেই পাচ্ছিস আমরা কেমন আছি। ’ আমি হালকা ভাবে বলি, ‘মামি কি আপনার একশ লাইনের কবিতার “চন্দ্রমুখি”। ’ মামি সামান্য হাসেন, মামাবলেন, ‘আরে যা বেটা আমার একটু হিসাবে ভুল ছিল আমার জীবনে প্রথমেই চন্দ্রমুখি এসে গিয়ে ছিলো। পরে এসেছে “পার্বতি”।
দেবদাস যেমন পার্বতিকে “পারু” বলে ডাকতো, আমিও কিন্তু তোর মামিকে পারুই ডাকি। ’
মামি কপট অভিমান নিয়ে বলেন। ‘ আরে ছেলেটাকে খেতে দাওতো। ’ মামা এবার ম্যানেজড হয়। এর পর মামা খেতে খেতে বললেন, ‘আসছিস বান্দরবন দেখতে, এখানে কেবল পাহাড় আর পাহাড়।
পাহাড় আবার একটা দেখার জিনিস হলো নাকি ব্যাটা। পনের বছর ধরে পাহাড় দেখতে দেখতে চোখ পঁচে গেছে। তোর মামিকে বললাম চাকরিটা আর ভাল লাগছেনা চলো ভেগে যাই। কিন্তু সে রাজিই হয়না। মামি আবারো কপট অভিমান নিয়ে বলেন, ‘যাওনা ভেগে, তোমার যে পুলিশ ভাইরা আছেনা তারা তোমাকে শ্বশুরালয়ে পাঠানোর ব্যাবস্থা করে দিবে।
’ মামা হাসতে হাসতে বললেন,‘তা তো ভালই, তাহলে তুমিওতো বিনা খরচে তোমার বাপের বাড়ি থাকতে পারবা আমার সাথে। ’ এবার আমার একটু হাসি আসে এরা কত ভাল আছে। কত সুখ। কি হতো? নুপুর যদি থাকত আমার পাসে কত সুন্দর হয়ে যেত সময় গুলো। কৃষ্টালের মতন মসৃন হয়ে যেত এক একটা বিকেল, সকাল, রাত।
কেন চলে গেল, ও আমাকে ছেড়ে? সব স্মৃতি পিছনে ফেলে ও কিভবে চলেগেল? আমার আবার খারাপ লাগতে থাকে। আমার মাথার মধ্যে কেমন যেন করে, খুব ব্যাথা করছে মাথায়। আমি উঠে যাই খাবার টেবিল থেকে। মামা জানতে চায়, ‘কিরে কি হল?’ আমি কিছু বলিনা। আমার কাছে সব কিছু ঝাপসা লাগে।
আমি গিয়ে শুয়ে পড়ি মামাদের গেষ্ট রুমে। রুমটা কিছুটা অদ্ভুত ভাবে সাজানো। রুমটার দেয়ালে সব নায়কদের ছবি আমার কেনো যেন মনে হয় এখানে কোন মেয়ে থাকে, নাহলে নায়কের ছবি কে লাগাবে?
৩
রাত আট টার দিকে গাড়ীর শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। চারিদিকে খুব অন্ধকার। আমি শুন্তে পাই গাড়ি থেকে একটা মেয়ে বেরিয়ে মামিকে মা, মা বলে খুজছে।
মামি একবার এসেছিল আমাকে জাগাতে, রাতের খাবারের জন্য। আমি বলেছি, ‘খাবনা। ’ মামি আর ঘাটে নি আমাকে। মামা বোধহয় আসেনি এখনও, আমি মামির কথা শুন্তে পাই, সে মেয়ে টাকে বলছে,
‘কিরে এত দেরি করলি যে,-’
‘আর বলনা এক গাদা ক্লাস, তার উপর রুনু বল্ল ওর বাসায় যেতে, ওর ছোট ভাইয়ের আবার আজকে জন্ম দিন ছিল। ’
‘একটা ফোন করলেও তো পারতি।
’
‘তা পারতাম, ওহ্ মা আমার মোবাইলে ব্যলেন্স নাই। ’
‘তোর বাবানা কালকে কতগুল টাকা ফ্লাক্সি করল তোকে। ’
‘শেষ হয়ে গেছে। ’
‘কার সাথে, এত কথা বলিস?’
‘আরে আছে আছে সময় হলেই দেখবা।
‘দেখ প্রেম টেম করলে বুঝে টুঝে করিস।
ছ্যাকা খেয়ে আবার তোর বাবার মতোন ১০০ লাইনের কবিতা লেখিস না বুঝে ছিস।
‘আরে না, প্রেমটেম না। ’
‘তাইলে কি?’
‘আরে কিছুনা এমনি বললাম। ’
মামি এত খনে তারা লাগায়,
‘যা হাত মুখ ধুয়ে আয় খাবি। ’
আমার আবার ঘুম এসে যায়, নিঝুম রাত আমাকে ধিরে ধিরে ঘিড়ে ধরে, আমি তলিয়ে যেতে থাকি অঘোর ঘুমে।
তখন রাত কটাবাজে মনে নেই বিকট এক চিৎকারে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমি হকচকিয়ে উঠে বসি দেখি আমার ঘরের দরজায়, অপূর্ব সুন্দর এক স্বপ্ন নারি দাড়িয়ে আছে, আমার দিকে বড় বড় চোখ করে, আর তার পাশে মামা-মামি। আমার ঘুমের ঘোর কেটে যায়, আমি সামান্য অবাক হই। এর অর্থ কি?
মামি জানতে চায়, ‘কিরে “রুপা” কি হয়েছে?’
‘দেখোনা মা, আমার ঘরে কে জেন ঘুমিয়ে আছে?’
‘ওহ্ তোকে তো বলাই হয়নি, ও তোর ফুপাত ভাই। ’
‘আমি পরার রুম থেকে- আমার রুমে এসে দেখি উনি ঘুমিয়ে আছেন, তাই ভয় পেয়েছি।
’
‘তাই বল। গেষ্টরুমের ফ্যানটা নষ্ট হয়ে আছে তাই তোর ঘরটা ওকে দিয়েছি থাকবার জন্য। ’
আমি সামান্য কুন্ঠা নিয়ে বলি, ‘মামি এটা কি ঠিক হল? উনার রুমটা আমকে দিলেন, আমি গেষ্ট রুমেই চলে যাচ্ছি। ’
মামা এবার মুখখোলেন, ‘আরে তুই ঘুমা বেটা, ও ওর স্টাডিতেই থাকে। মাঝে মাঝে এসে এখানে ঘুমায়।
’ আমি এত খনে মেয়েটার দিকেতাকাই। ওর মুখটা আমার কাছে অনেক পবিত্র লাগে। খোদা কিভাবে এত সুন্দর করে তৈরি করেন, মানুষ কে? এ কোন সুন্দর? এই মেয়ে এত সুন্দর কোথাথেকে পেল? আমি পলক হিন চেয়ে থাকি নিরবে।
রুপা ছোট করে বলে,
‘sorry’
আমি, “It’s ok” বলে শুয়ে পরি।
৪
প্রচুর পাখি ডাকেঘুম ভঙ্গে আমার ।
দেয়ালে টানানো ঘড়ি টার দিকে তাকাই, ১১টা বাজে, শুন্তে পাই মামি খুব বকা দিচ্ছে রুপাকে,
‘তোর কবে একটু বুদ্ধি হবে বলতো, ছেলেটা রাতে নাখেয়ে ঘুমিয়েছে। তার উপর তুই এই কান্ড টা ঘটালি। ওকে খেতে ডাকবিনা ! যা এখন ডেকে নিয়ে আয়।
আমি বসে আছি খাবার টেবিলে, মামি বসে আছেন আমার পাসের চেয়ারটা তে। মামি ও খাচ্ছেন আমার সাথে, খেতে খেতে মামি রুপাকে ডেকে বললেন,
‘শোন আমি একটু অফিসে যাব, তুইওকে নিয়ে ঘুরে আয়।
দেখবি হারিয়ে না যায়। তোরা বাবার জিপ-টা নিয়ে যাস। ’
রুপা সামান্য কপট চোখে আমার দিকে তাকায়। আমি নাস্তা শেষ করি। এর পর ও আমাকে তাড়া লাগায় বলে, ‘চলো বেরিয়ে আসি।
ও তুমি কি গাড়ি চালাতে পারো?’ আমি ছোট্ট করে বলি, ‘না। ’ ‘ওহ্ তাহলে ঘুরব কি ভাবে? এনিওয়ে পায়ে হেটেই যেতে হবে। তোমার কাছে কেডস্ আছে?’ বলে আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘আরে তুমিতো কেডস্ পরেই আছো। আমিও কেডস্ পরে আসি। ’ বলে ভেতরে চলে যায়।
আমি বাংলোর বারান্দায় এসে দাড়াই। অপুর্ব সুন্দরে আমার চোখ ভেসে যায়। অসাধারন লাগে সবকিছু আমর কাছে। এখন কি করছে নুপুর? ওকি ঘুমিয়ে আছে নাকি সকালের সোনা রোদ গায়ে মেখে গরম জ্বলে গোসল সেরে ওর স্বামির জন্যে চা বানাচ্ছে। ইস্ এখন যদি নুপুর থাকত পাশে, তাহলে কতো ভাল লাগত আমার।
ওকে মনে পরলে আমার কাছে সব রঙ ফিকে লাগে, পাখির ডাক কোলাহলের মতন লাগে। স্তব্ধ এই পাহাড় অরন্যর চেয়ে ওকি কোন নির্জনতা আছে? যদি থাকে তবে আমি যেতে চাই সেই নির্জনতায়। নুপুর কেন বুঝলনা? আমিওকে পাগলের মতন ভালো বাসতাম। ওর জন্য আমি রাত জগে জেগে কত কবিতা লিখেছি। কোন সুখে পালিয়ে গেল নুপুর।
ওর বিয়ের পর ওর সাথে আমার আর দেখা হয়নি। কিন্তু কেনো ওকে আমি ভুলতে পারছিনা? আমি বুঝতে পারি ওর স্মৃতি আমাকে ধিরে ধিরে পাগল বানিয়ে দিচ্ছে। এসব চিন্তার মাঝে রুপা এসে আমার পাসে দ্বাড়ায় কিছেটা ফাকা রেখে। জানতে চায়, ‘কি হলো?’ আমার ঘোর কাটে,
আমি কিছু না বলে বাংলো থেকে নেমে আসি। রুপাও এসে আমার পাশে দ্বাড়ায় বলে, ‘কি দেখতে চাও বলো।
’ নুপুর হলে বলতাম, ‘তোমাকে দেখব। ’ কিন্তু ওকে কিছু বলা হয়না। রুপা বলে, ‘চলো তোমাকে আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গাটায় নিয়ে যাই। ’ বলে ও পা বাড়ায়। আমিও হাটি ওর পিছু পিছু।
এবার ও ঘাড় ঘুড়িয়ে বলে, ‘বাই দা ওয়ে আমি “রুপা”। তুমি?’ বলে আমার দিকে ব্রু নাচায়। আমি ছোট করে বলি “নিলু”। ও খিল খিল করে হেসে বলে, ‘আরে এটাতো মেয়েদের নাম। ’ আমি কিছু বলিনা কেবল ভাবতে থাকি, নুপুরও আমাকে প্রথম দিন আমার নাম শুনে এই কথাই বলে ছিল।
এমন সময় আমার মোবাইলে মা কল করেন। আমি ফোন ধরি, মা জানতে চায়,
-কিরে কি খবর?
আছি মোটা মুটি।
-পাহাড় কেমন লাগছে?
ভালই।
-কোন ঝামেলা হলে আমাকে ফোন দিস।
আচ্ছা।
-ও ভাল কথা ছোটনের একটা মেয়ে আছে না?
হ্যা।
-দেখতে কেমন হয়েছে রে?
জানিনা।
-দেখেছিস ওকে?
হ্যা
আমার পাশেই আছে।
-তাই নাকি? বলে মা সামান্য হাসে। আমি এ হাসির অর্থ বুঝি কিন্তু কিছু বলিনা।
মা বলে, ‘দে তো ওকে। ’
আমি রুপাকে মোবাইলটা দেই। ও কিছু খন কথা বলার পর আড়ালে চলে যায়, আমি বুঝতে পারি মা এখন হয়তো ওকে আমার ঘটনা বলবে, মাকে নিয়ে আর পারছিনা।
ও ফিরে এসে আমাকে বলে, ‘চলো। ’ আমরা পা বাড়াই।
ও জানতে চায় আমি হাটতে পারব কিনা? আমি কিছু বলিনা আমার সামান্য বিরক্ত লাগে, ও আমার হাত ধরে। আমি কিছু বলিনা কিন্তু নিজেকে আমার কেমন রোগি রোগি লাগে। ও আমাকে ওর শরিরের উপর ভর দিয়ে পাহাড়ের টিলার উপর উঠাতে চেষ্টা করে।
আমার একটূ রাগ লাগে, আমি বলি, ‘এমন করছো কেন? আমি তো অসুস্থনা। ’
ও আমার দিকে ঘুরে তাকায়, বলে
-তানা, আমার তোমার জন্য খুব মায়া লাগছে।
মানে?
-মানে কিছুনা, বলা যাবেনা।
বলা যাবেনা মানে?
-বলা যাবেনা মানে বলা যাবেনা।
তুমি আমার হাত ছাড়।
-তুমি রেগে যাচ্ছ কেন?
কোন কারন নেই অকারন, তুমি আমার হাত ছাড়, আমার এসব ভাল লাগেনা।
-এসব ভাল লাগেনা মানে? শুনুন বিখ্যাত ব্যক্তি আমি অন্য কোন কিছু মনে করে তোমার হাত ধরিনি।
ভাবলাম তুমি অসুস্থ তাই।
আমি অসুস্থ, তোমাকে কে বলল?
-বলা যাবেনা।
আমার মায়ের উপর একটু রাগ হয়, এর কোন মানে হয়, সবাইকে বলে বেরাতে হবে সব কথা।
‘কি বলেছে মা তোমাকে তখন, মোবাইলে?’
‘তুমি যা এক বছরেও বলতানা, ফুপি তা বলেছে পাঁচ মিনেটে। ফুপি চায় তুমি সব ভুলে আবার সব আরম্ভ কর।
সত্যি বলছি আমিও চাই তুমি সুস্থ হয়ে ওঠ। “Get well soon” । ’
আমি আর কিছু বলিনা। ও আমার হাত ছেড়ে দিয়ে পাহাড়ে উঠতে থাকে। আমার একটু খারাপ লাগে মেয়েটার জন্য।
যে আমাকে কোন দিনও দেখেনি, সে কতটা আবেগ নিয়ে বলছে, “Get well soon”। আর নুপুর! সে ভাবলোও না আমাকে নিয়ে। সে এখন সুখের মহামারিতে আছে। নুপুর কি একবারো ওর নিজের কাছে জানতে চেয়েছে কতটা সুখে আছে ও আমাকে ঠকিয়ে। হয়তো সেরকম সময়-ই ওর নেই।
কিন্তু আমার হাতে কতো সময়, ওকে ভাবতে ভাবতে আমার মাথা খারাপের মতন হয়ে যাচ্ছে। কিভাবে ছেড়ে যায় মানুষ, প্রথম প্রেম? রুপা আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে,তাড়া লাগায়।
‘কৈ কি হলো, চলো।
আমি পাহাড়ে ওঠার সময় হোচট খাই, ও আবার আমার হাত ধরে, বলে-
‘আহ্ পরে যাবে তো। ’
কিছুদুর ওঠার পর ও বলে, ‘এবার চোখ বন্ধ করো।
আমি চোখ বন্ধ করিনা। ও একটু বিরক্ত হয়ে ওর দু-হাত দিয়ে আমর চোখ চেপে ধরে, এভাবে কিছু দূর ওঠার পর ও আমার চোখ ছেড়ে দেয়।
আমি দেখি আমার সামনে বিস্তৃন্য জলরাশি দূরে দারিয়ে আছে ছোট বড় কত পাহাড়, বিস্তৃত সবুজ, উপরে নীল আকাশ, চারিদিকে পাহাড়ের দেয়াল। ও বলে, ‘এটা আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা, আমি এখানে আসলে সব দুঃখ চলে যায়। ’
‘দুঃখ চলে যায় মানে? আমারে পাগল পাইছ।
না?’
ও মৃদু হেসে বলে, ‘তাইতো বলল ফুপি। ’ আমি ক্ষেপে যাই। বলি, ‘এখানে আসলেই যদি দুঃখ চলে যেত তাহলে দেখাতা, এখানে বিশাল লাইন মানুষের। লাইন দিয়ে দিয়ে মানুষ এখানে আসছে আর এখানে দাঁড়িয়ে বলছে ওহো আমার দুঃখ চলে যাচ্ছে। আহ্ আমি কত সুখি।
’ একথা বলতেই ও হেসে উঠলো খিল খিল করে। আমার মাথার চুল হাত দিয়ে এলোমেলো করে দিয়ে বলে, ‘আরে আমার পাগলের মাথায় তো অনেক বুদ্বি। ’ আমি ব্রু কুচকে তাকাই ওর দিকে। জানতে চাই, ‘তোমার পাগল মানে? আর তুমি আমাকে তুমি তুমি করে বলছ কেন?’
‘তুমি ওত আমাকে তুমি তুমি করেই বলছ। ’
আমি একটু ম্যানেজড হই।
বলি, ‘তুমিতো আমার চেয়ে অনেক ছোট তাই। ’
ও বলে, ‘আমি তুমি করে বলছি কারন তুমি আমার চেয়ে অনেক বড় তাই। ’
‘মানে?’
‘এত মানে মানে করবানা। আর শোন আমি তোমাকে আমার পাগল বলেছি তার কারন হচ্ছে আমার ইচ্ছা হয়েছে। ’
‘সবকিছু ইচ্ছা হলেই বলতে হয়।
’
‘আমি এখানে আসলে সব পারি। শোন এখন থেকে আমারা ফ্রেণ্ড, পরে ভালো লাগলে অন্য কিছু। ’
‘অন্য কিছু মানে?’
‘আরে তোমাকে বলেছিনা মানে, মানে করবানা। ’
আমি আনমনে বলি, ‘এতো মহাপাগল। ’
‘ও বলে ঠিকই বলছ, রতনে রতন চেনে।
’
আমি আবার ওরদিকে ব্রু কুঁচকে তাকাই। দেখে ও খিল খিল করে হেসে ওঠে, ‘তুমি বার বার আমাকে পাগল বলছ কেন?’ ‘তুমি যে আমাকে বললা’ বলে ও হাসতে থাকে। আমি ওর দিকে এবার ঠিক ভাবে তাকাই এই প্রথম বারের মতন ওর হাসির শব্দ আমার কাছে ঝর্নার শব্দের মতন লাগে। হালাকা বাতাসে ওর চুল গুল উরছে মাঝে মাঝে ওগুল ও মূখ ঢেকে দিচ্ছে। সেই চুলের ফাঁকদিয়ে আমি ওর মুখের মসৃনতা দেখি।
আমি ওরদিকে হাত বাড়িয়ে বলি, ‘ফ্রেণ্ড?’ ও আমার হাত ধরে আমার মুখের কাছে মুখ এনে বলে, ‘ওকে ফ্রেণ্ড। ’ এরপর আবার একি রকম ভাবে হাসতে থাকে। ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে-থাকতে আমিও হাসতে আরম্ভ করি। অনেক দিন পর আমি হাসলাম, সত্যিই অনেক দিন পর..................।
কিছুদিন পরঃ
রুপা বসে আছে আমার থেকে কিছুটা দূরে, মামার পা ঘেসে।
আমাদের সামনে কাঠ পুরিয়ে আগুন ধরানো হয়েছে। অনেকটা ক্যাম্প ফায়ারের মতন করে। সেই অসচ্ছ ঘোলাটে আলোতে
ছেলে, মেয়েরা নাচ্ছে লাইনবেধে, একে অপরের কোমরে হাত রেখে। তার পাসেই এক চাকমা মেয়ে চিকোন সুরে ওদের ভাষায় গান গাচ্ছে,
‘হুচপানা হরে হয়?
যে হুচপায় তে বুঝে।
জুবে জুবে মোরে হয়
হুচপানা হরে হয়?’
আমরা এসেছি চাকমাদের উৎসবে।
রুপা আমার দিকে তাকিয়ে হাসে। আমি গানের অর্থ বোঝার চেষ্টা করছি, খুব একটা লাভ হচ্ছেনা। রুপা এবার আমার কাছে এসে বসে। আমি জানতে চাই, ‘মামি আজকে বকা লাগালো কেন?’
‘দেরি করে ফিরলাম তাই। ’
‘কেনোই বা দেরি করে ফেরো? কি করো, কোথায় যাও?’
‘যাই কোথাও।
’
‘কোথাও যাই মানে?’
‘বলেছিনা সব কথার অত মানে মানে করবানা, বাদ দাও। ’
ও আমার কানের কাছে মূখে এনে বলে, “হুচপনা” মানে জান? আমি না বোধোক মাথা নাড়ি, ও বলে “ভালোবাসা”
‘তাই নাকি?’
‘তুমিওদের ভাষা বোঝ?’
‘না তবে এই গানটার অর্থ জানি। ’
‘হুচপানা হরে হয়? মানে হচ্ছে, ভালবাসা কাকে বলে? আর,যে হুচপায় তে বুঝে। মানে হচ্ছে, যে ভালবাসে সে বুঝে। ’
আমি ভাবি সত্যই ভালোবাসা যে কি ব্যাপার তা কেবল যে ভালবাসে সেই বোঝে।
আর ভালোবাসে দুঃখ পাওয়া যে কতটা কষ্টের তাও কেবল যে ভাল বাসে সেই বোঝে।
এভাবেই বয়ে যেতে থাকে সময়। রুপা আর আমার বন্ধুত্ব বাড়তে থাকে ক্রমে, ক্রমে। আমি মুছে ফেলতে থাকি আমার অতিত। নুপুরের প্রগার শান্ত চাহুনির সামনে রুপার অশান্ত চোখ আমাকে ভাবায়, নুপুরে ক্লান্তি মাখা হাসি রুপার উচ্ছল হাসির সামনে ফিকে হয়ে যেতে থাকে।
দুইমাস পরঃ
আমরা বসে আছি সাংগু নদীর পাড়ে, এখান থেকে কিছু দূর দেখাযায় রিজুকের ঝরনা। আমি বসে আছি রুপার কাছ থেকে কিছুটা ফাঁকা রেখে। রুপা একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে, মৃদু বাতাসে ওর চুল উড়ছে। আজ সকাল থেকে রুপা কথা বলছে না। কেবল এখানে আসার আগে বলে ছিল চলো ঘুরে আসি, রুপা এবার আমার গা ঘেসে বসে বলে, ‘আমি কি তোমার কাধে মাথা রাখতে পারি?’ আমার একটু সংকচ হয়।
তবুও বলি, ‘রাখো। ’ ও আমার কাধে মাথা রাখে। কিছুখন পর আমি বুঝতে পারি ও কাঁদছে, আমি ওর দিকে তাকায়ে বলি, ‘এই রুপা কিহয়েছে?’ যে চোখের জোস্নার রঙ দেখে আমি ভুলে যাচ্ছি আমার নুপুর কে, সেই চোখে বৃষ্টির ধারা আমাকে কাঁপিয়ে তোলে। আমি জানতে চাই কি হয়েছে তোমার? রুপা আমার দিকে ঘুরে তাকায়, আমি তখন ওর ঘারের কাছে চুলের নিচে কামরের দাগ দেখি, আমার ভেতরটা কেঁপে ওঠে। আমি জানতে চাই, ‘তোমার ঘাড়ে কি হয়েছে?’ ও গুমরে কেঁদে ওঠে, আমাকে জড়িয়ে ধড়ে আমার বুকে মুখ লুকায়।
আমি ওর উস্নতায় ভিজে একাকার হই। আমি পরম মমতায় ওকে আকরে ধরে বলি, ‘এই বোকা মেয়ে বলনা কি হয়েছে তোর, তুইনা বলতি এ দিল মাঙ্গে মোর। ’
রুপা মুখতুলে তকায় বলে,
‘নিলু আমি প্রেগ্নেন্ট। ’
‘মানে?’
‘আমি এতদিন তোমার কোন মানের উওর দেইনি, আজকে দিব। ’
‘মোবাইলে আমার সাথে একটা ছেলের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছিল।
ওর নাম সিজান, ও ওর এক বন্ধুর কাছেএখানে বেরাতে এসেছিল। আমি যে রোজ দেরি করে আসতাম, তার কারন হচ্ছে আমি ওর ওখানেই যেতাম। প্রথম আমারা বন্ধু ছিলাম। ও একদিন আমাকে চুমু খেলো। কি যে হল আমার? সেদিন সারারাত ঘুমহয়নি শরিরের ভেতরে কামনা বাসনার আগুন জ্বলেছিল সারা রাত দাউ, দাউ করে।
এভাবে একসময় আমরা খুব কাছের হয়ে গেলাম, একদিন ও আমাকে একটা হোটেলে নিয়ে গিয়ে ছিল। সন্ধ্যার নিভু নিভু আলোতে আমি দেখেছিলাম কতটা আগুনে এই মন জ্বলে? কিসের টানে মানুষ ঘর বাঁধে? অথবা পালিয়ে যায় ঘর ছেড়ে? এভাবে বহু বার গেছি আমর ওই হোটেলে। কি মোহময় ছিল? এক একোটা সন্ধ্যা, আমি বুঝাতে পারবনা। কিন্তু একদিন বুঝতে পারলাম আমার শরিরের ভেতরে কেউ বেড়ে উঠছে। আমি গিয়ে ছিলাম ওর কাছে কথাটা জানাতে ওকে পাইনি।
ও যে ঠিকানাটা আমাকে দিয়ে ছিল সেটাও ঠিক না। এখানে ওর কোন বন্ধুও থাকতনা। আমি ওর মোবাইলে কল করে ছিলাম, ও ফোন ধরেওছিল। ও কি বলেছে যানো?’
‘কি?
‘ও বলেছে ও আমাকে সব মিথ্যা বলেছে, ও আসলে কি একটা দলের সাথে জড়িত, এখানে এসেছিল পালিয়ে থাকার জন্য, ও আমাকে একটুও ভালোবাসেনি, আর তা ছাড়া ও নাকি
আমার শরির টাকে ভিডিও করে রখেছে আমাকে না জানিয়ে, আমি ঝামেলা করলে নালি ও সেই ভিডিও নেটে ছেড়ে দেবে। আমি আর পারছিনা, বাবা শুনলে মরে যাবে হার্ট এটাক করে, আর মা ঝুলে যাবে গলায় দড়ি দিয়ে ফ্যানের সাথে।
আমি এখন কি করবো, অনুপ? বলো কি করব?’
আমি কি বলব ভেবে পাইনা। আমি ওর কাধে হাত রাখি। ও কান্যা ভেজা চোখে আমার দিকে তাকায়। আমি আলতো করে বলি, ‘আমি তোমার বন্ধুনা। আমি আছি তোমার পাশে।
’ আঠের বছর বয়সের এই মেয়ে টাকে এখন আমার অনেক বড়ো মনে হয়। এই ধুলি পানির পৃথিবির অনেক জটিলতা ও এখন শিখে ফেলেছে। ও শিখে গেছে প্রেমকি? দেহের যৈবিক চাহিদা কি? অথবা মা হওয়া কি ব্যাপার।
পরের দিনঃ
আমি মাকে ফোন করি, মা নিরবে সব শোনে, এর পর বলে, ‘আমি ছোটনকে বলে মেয়েটাকে ঢাকা আনবার ব্যাবস্থা করছি। ’
‘তুমি আবার মামাকে এসব বলোনা।
’
‘ধুর বোকা আমি কি তোর মতন পাগল নাকি?’
‘না মা আমি আর পাগল নেই। আমাকে রুপা সারিয়ে তুলেছে। আমি ক্রমে ক্রমে ভুলে গেছি আমার অতিত কে। আমি এখন ভবিষৎ এর স্বপ্ন দেখতে শিখে গেছি। ’
‘ভালোতো এবার তোর পালা তুই ও এবার রুপাকে সারিয়ে তোল।
’
‘তুমি কেবল ওকে ঢাকা নেবার ব্যাস্থা কর। ’
মা ব্যাবস্থা করে ফেলে রুপাকে ঢাকা নেবার।
ঢাকাঃ
নার্সিং হোমের সামনে দ্বাড়িয়ে রুপা আমার হাত ধরে বলে, ‘যদি আমি মরে যাই তাহলে কি তুমি দুঃখ পাবে?’
‘জানিনা। ’
ও আহাত কন্ঠে বলে, ‘আমি মরে গেলে তুমি দুঃখ পাবে না ? নিলু!’
‘বুঝতে পারছিনা। ’
‘নিলু।
’
‘উঃ। ’
‘তোমাকে কিছু কথা বলি। ’
‘বলো। ’
‘আমি জানিনা অপারেশনের টেবিলে যদি আমি মারা যাই, হোয়তো আর কনোদিন তোমাকে এই কথা গুলি বলা হবেনা। আমি কিন্তু তোমাকে ভালো বাসে ফেলেছি।
আমি তোমার কাছে জানতে চাইনা, তুমি আমাকে ভালোবাস কিনা? সে সাহস আমার নেই। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি তোমাকে কিছুটা ঝামেলায় ফেলে দিলাম, না?’
আমি কিছু বলিনা কেবল অপলক চেয়ে থাকি ওরদিকে। আমাকে চুপ দেখে ও আবার বলতে থাকে,
‘আমার পেটে যার সন্তান, সে আমার জীবনে একটা ভুল হয়ে এসেছিল। ও আমাকে ব্যাবহার করে ছিল।
“just he use me”ও আমাকে ঠকাতে পারেনি আমি বুঝতে পারছি মাতৃত্ব কি? আমার পেটের ভেতর একটা মানুষ সে বড় হচ্ছে। ভাবতে পারো? তাকে বাঁচাতে পারলে হয়তো সেও এই জগৎ-এর আলো দেখতো। সেটা হলোনা। তাতে কি? আমিতো কিছু খনের জন্য নিজেকে কারো মা ভাবতে পারছি। ’ বলে ও কাঁদতে থাকে।
আমি ওর কাধে হাত রাখি। বলি, ‘রুপা চলো আমরা বাচ্চা টাকে রেখেদেই। ’ রুপা ভেজা চোখে আমার দিকে তাকায়। বলে, ‘না নিলু এবার প্রতিশোধের পালা। আমি পারবনা সিজানকে ক্ষমা করে দিতে, ওর পাপের জন্য ছিন্ন ভিন্ন হবে ওর ভ্রুন, রক্তাক্ত হবে ওর সন্তান।
এটাই ওর জন্য বিচার। সুখে থাকুক সিজান, কিন্তু ওর প্রজন্ম নষ্ট হোক ড্রেনের পানিতে একদলা পচা রক্ত হয়ে। বলে ও অঝরে কাঁদতে থাকে। ও কাঁদতে কাঁদতে বলে নিলু আমি আমার সন্তান কে বাঁচাতে পারছি না। ওকে আমি হত্যা করছি, নিলু।
আমি ওকে জড়িয়ে ধরি। আমার চোখ ভিজে স্নহ, মায়া, মমতা ও ভালবাসার জলে। ওর ভেতর কার মাতৃত্ব আর প্রতিষোধের নেষার লড়াই চলতে থাকে আরো কিছুখন। এমন সময় নার্স এসে বলে, ‘আপনারা ভেতরে আসুন, ডক্তার ম্যাডাম আপনাদের ডাকছে। ’
আমি রুপার দিকে তাকাই, ও চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায়।
নার্স চলে যাবার পরে রুপা বলে, ‘নিলু আমি তোমার হাতটা একটু ধরতে পারি। আমি আমার হাতটা ওর দিকে বাড়িয়ে দেই ও আলতোভাবে আমার হাতটা ছুয়ে দিয়ে বলে thanaks। ’
আমি বলি, ‘চল, দেরি হয়ে যাচ্ছে। ’
আমরা পর্দা সরিয়ে ডাক্তারের রুমে ডুকে যাই, তিনি আমাদের বসতে ইসারা করেন।
এরপর বলেন, ‘দেখুন আপনাদের বয়স কম।
আমার ব্যাক্তিগত মত হল প্রথম ইস্যুকে রেখে দিন। এর পর থেকে কনসাস হবেন। ’
‘আমার পক্ষে সম্ভব না। ’ নিচু গলায় বলে রুপা।
‘সেটা বুঝতে পারছি, তবুও বলছিলাম।
আপনারা দুজনেই যদি Aabrasion চান তাহলে তো আর কিছুই বলার নেই। ঠিক আছে এই র্ফমটা ফিলাপ করে দিন। ’ আমরা চেম্বার থেকে বের হয়ে আশি। আমি লিখতে থাকি, র্ফমে রুপার নাম, ঠিকানা, বয়স ইত্যাদি লেখার পর একেবারে নুচে লিখতে হবে স্বামি বা গার্জেনের নাম সই করতে হবে তার নিচে। আমি রুপার দিকে তাকাই, রুপা এর মধ্যে পড়েছে র্ফমটা।
বলল, ‘চল। ’
কী হলো করাবেনা?’
‘তোমাকে আমি কি ভাবে সই করতে বলি? তুমি কেন অন্যের দায় নিজের কাধে তুলে নিবে? বলে ও উঠে দ্বাড়ায়, আমি হাত ধরে ওকে বসাই। সম্পর্কের যায়গায় লিখেদেই স্বামি, আর সই করে দেই তার নিচে। রুপা অপলক চেয়ে থাকে আমার দিকে। ওর গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জ্বল।
এর পর একজন র্নাস এসে রুপাকে নিয়ে যায় অপারেসনের রুমে।
অপারেশনের পরঃ
আমি সাদা পর্দা সরিয়ে রুপার রুমে ঢুকি। ও খাটের উপর দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে, নার্সিং হোমের দেয়া গাউন পরে। এই প্রথম আমি ওর মুখে নুপুরের মুখের মতন ক্লান্তি দেখি। আমি ওর পাশে গিয়ে বলি, ‘রুপা মামা মানে তোমার বাবা আমাকে একদিন ওনার জীবনের একটা গল্প বলে ছিল।
রুপা আমার দিকে ক্লান্তি নিয়ে তাকায়। বলে, ‘কোনটা? মা কে বিয়ে করার ঘটনা। ’ আমি হ্যা সুচক মাথা নাড়ি।
‘সেখানে মামা বলেছিলেন সে তার পার্বতিকে পেয়ে ছিলেন চন্দ্র মুখিকে পাবার পর। ওনার কাছে মামিই পার্বতি।
মামা তাই মামি কে আদর করে ডাকে পারু। তুমি কি জানো তুমি আমার জীবনের পার্বতি। নুপুর ছিল আমার জীবনের চন্দ্রমুখি। আর তাছাড়া তোমার নাম যে “রুপা” ওটা উলটে বললে কিন্তু পারু-ই হয়। রুপা ক্লান্ত মুখে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে, ওর নাকের নিচে ক্লান্তির ঘাম জমে আছে।
আমি আলতো হাতে ওর ঘাম মুছে দেই। ও জানতে চায়,
‘তাহলে অপারেশনের আগে কেনো কিছু বললে না?’
‘কারন আমি জানি তুমি আমাকে ফেলে রেখে চলে যেতে পারবেনা, তুমি মরতে পার না, আমাকে একারেখে। ’
রুপা ফুপরে কেঁদে ওঠে, আমি ওকে জড়িয়ে ধড়ি পড়ম মমতায় এবং ভালবাসায়।
পরিশিষ্টঃ
এর কিছুদিন পর ওদের বিয়ে হয়। তার পর কোন এক সন্ধ্যায়, এক বিয়ের অনুষ্ঠানে নুপুরের সাথে দেখা হয় নিলু আর পারুর মানে রুপার।
নিলু খুব সহজ ভাবে নুপুরের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় রুপাকে। এমন সময় নুপুরের হাসবেন্ড নুপুরের পাসে এসে দাঁড়ায়। নুপুর নিলুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় ওর স্বামিকে- নিলু হাত মেলানোর জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে নিলু আহসান, ও পাস থেকে নুপুরের স্বামি হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে সিজান রহমান, নাম আর গলার শব্দ সুনে নিলুর পাশে দাড়িয়ে থাকা রুপা চমকে লোকটার দিকে তাকায়। ওর মনেপরে যায় সেই সময় গুলর কথা, যেদিন এই সিজানের সাথে প্রথম ও হোটেলে গিয়েছিল, যেদিন এই সিজান ওকে কামনা বাসনার এক চুরান্ত পর্যেয়ে পৌছে ওর শরিরে বুনে দিয়ে ছিল, কামনার কিট। অথবা ভুলে যায়নি নার্সং হোমে সেই কিটের হত্যা অথবা একটি সুপ্ত জীবনের মৃত্যু।
সব মনে আছে রুপার। ওর কেবল কষ্ট হয় নুপুরের জন্য। ও জানেনা ও কি পেয়েছে জীবনে? নিলুর মতন একজন কে ফেলে রেখে ও ঘর বেধেছে কেমন এক অন্ধকারে? রুপা নিলুর কোমড় জড়িয়ে ধড়ে সিজানের দিকে তাকিয়ে ঘৃনার ব্রু নাচায়। নুপুর ওর স্বামির হাত ধরে দেখা হবে বলে মিশে যায় মানুষের ভিড়ে। নিলু চেয়ে থাকে নুপুরের চলে যাবার দিকে।
নুপুর যেদিন ওকে ছেড়ে চলে গিয়ে ছিল সেদিনও বলে ছিল, ‘দেখা হবে। ’ আর কি কখন দেখা হবে নুপুরের সাথে নিলুর?
নিলুর সাথে আর কোনদিন দেখা হয়না নুপুরের। এর কিছুদিন পর নুপুর মারা যায় গায়ে আগুন দিয়ে। পুলিশের জেরার মুখে ওর স্বামি বলেছে নুপুর নাকি সুইসাইড করেছে, তবে পুলিশের ধারনা এটা সুইসাইড না, খুন!
মুখ বন্ধঃ
লেখা টির আসল নাম পারু। ঘটনা টি বহু প্রতারীত নারীর জীবনের ছায়া অবল ম্বনে, তবে নিদৃষ্ট কারো জীবনের সাথে মিলে যাওয়া টা কাক তালিয় টিয়া তালিয়, যে যেটা খুশি ভাবতে পারেন।
পরিমলরা আমাদের চার পশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, এদের কাছ থেকে আমাদের এড়িয়ে বাচতে হবে। তবে যারা প্রগতিশিলতার ভেক ধরে সো কল্ড নারী স্বাধীনতার নামে নারী কে পন্য বানায় তাদের হাত থেকে আমাদের মা বোন কে বাচাতে হবে তাহলেই নীল ছবির বাজার সমৃদ্ব হবেনা, লেখাটা একটু বড় হয়ে গেলো, দুই ভাগে দিতে পারতাম, দিলাম না কারন যার পড়বেন তারা জেন এক সাথেই পুর বিষয়টা জানতে পারেন, আপনাদের একটু কষ্ট করে পড়তে হবে, অনিচ্ছা কৃত কষ্ট দেবার জন্য আমি দুঃখিত। বরা বরের মতন ছবি গুলা ভিজু্যা লাইজেসনের সুবিধার জন্য দেয়া হয়েছে। আর এই লেখার প্রথম পার্টের লিংক এটা চাইলে দেখতে পারেন, ব্লু ফ্লিম বাংলায় যেটাকে বলি (নীল ছবি) ১৮+ ধন্যবাদ।
এ ধরনের আমার আরো ৯ টি পোষ্ট দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যানঃ
View this link
ফেইস বুকে আমাকে আমার পেইজ দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যানঃ
View this link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।