আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকা চলো ঠেকাতে সরকার যুদ্ধংদেহী : দেশজুড়ে গণগ্রেফতার ১৮০০ আটক : ৩০ হাজার পুলিশ মোতায়েন

I never knew how to worship until I knew how to love. ১২ মার্চের ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচি ঠেকাতে যুদ্ধংদেহী অবস্থান নিয়েছে সরকার। সারাদেশে গণগ্রেফতার, তল্লাশি, গাড়ি রিকুইজিশনসহ ব্যাপক তত্পরতা শুরু করছে পুলিশ ও গোয়েন্দারা। বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বাসাবাড়ি, কর্মস্থল বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দলীয় কার্যালয়ে দিন-রাত অভিযান ও তল্লাশি চলছে। এরই মধ্যে ঢাকায় পুলিশ ও গোয়েন্দাদের পক্ষ থেকে বেশ কিছু উদ্ভট নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে, ৯ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত ঢাকার আবাসিক হোটেলগুলোতে বাংলাদেশী নাগরিকদের কাছে কক্ষ ভাড়া না দেয়া; আগামী রোব ও সোমবার পল্টন, ফকিরাপুল, বিজয়নগর, আরামবাগ, কাকরাইলসহ আশপাশের এলাকায় খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখা; নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকার দোকানগুলোতে পর্যাপ্ত বোতলজাত খাবার পানি মজুত না করা; নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকার কমিউনিটি সেন্টারগুলো ১১ ও ১২ মার্চ ভাড়া না দেয়া ইত্যাদি।

এছাড়াও গতকাল থেকেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও আশপাশের এলাকায় রণসজ্জিত হয়ে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। থানা পুলিশের পাশাপাশি এপিবিএন, রিজার্ভ পুলিশ, ডিবি পুলিশ, র্যাবসহ পুলিশ গোয়েন্দারা অবস্থান নিয়েছেন। মোতায়েন করা হয়েছে ডগ স্কোয়াড, রায়ট কার ও জলকামান ইউনিট। বিভিন্ন ভবনের ছাদে ও মোড়ে মোড়ে তাদের অবস্থান নগরীতে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সারাদেশেই শ্বাসরোধী পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে।

আরিচা-নগরবাড়ির সঙ্গে ঢাকার ফেরি যোগাযোগ বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাস-মিনিবাস পারাপার একেবারেই বন্ধ হচ্ছে। শুধু ট্রাক পরিবহন চলবে। সড়ক শ্রমিক ফেডারেশন নেতা ও নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন মালিম সমিতি নেতা এনায়েতুল্লাহ বেঠক করেছেন এ লক্ষ্যে। তারা বাস মালিকদের জানিয়ে দিয়েছেন ১১ ও ১২ মার্চ কোনো বাস যেন রাস্তায় নামানো না হয়।

দূরপাল্লার সড়ক চলাচল বন্ধে সব রকম প্রস্তুতি চূড়ান্ত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে হুমকি দিয়ে বলেছেন, পুলিশ প্রস্তুত। তাদের অর্ডার দেয়া হয়েছে। তারা কঠোর ব্যবস্থা নেবে। দেশের বিরোধী দলগুলোর মহাসমাবেশকে কুচক্রি মহলের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা আখ্যা দিয়ে মন্ত্রীর সাফ কথা পাড়া-মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত থাকবে।

পুলিশও প্রস্তুত। অরাজকতা সহ্য করা হবে না। গতকাল সারাদেশে প্রায় ১৮০০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। গতকাল ঢাকায় প্রায় ৫০০, দেশের অন্যান্য স্থানে আরও সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের খবর পাওয়া গেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মনিটরিং সূত্র জানিয়েছে, গতকাল বিকাল পর্যন্ত ঢাকার বাইরে ৫ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় তারা ৩১২ জনকে গ্রেফতার করেছে। এছাড়া রাতেও বিভিন্ন থানা এলাকায় গ্রেফতার অভিযান হয়েছে। সব মিলিয়ে গ্রেফতারের সংখ্যা প্রায় ৫০০। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জানিয়েছে, চলো চলো ঢাকা চলো কর্মসূচি টার্গেট করে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে তাদের প্রায় ৩০০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট ও মহাসমাবেশে সমর্থন দেয়া দল ও অঙ্গদলের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে, কর্মক্ষেত্রে ও রাজনৈতিক কার্যালয়ে অভিযান ও তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।

ঢাকায় পুলিশ প্রশাসনের নেয়া বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। নানা দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন ঢাকামুখী মানুষ। ঢাকামুখী আন্তঃজেলা বাস সার্ভিসগুলোতে পথে পথে পুলিশ ও র্যাবের তল্লাশি চালিয়েছে। বিশেষ করে তরুণ-যুবকদের পড়তে হচ্ছে নানা জিজ্ঞাসাবাদ ও বিড়ম্বনায়। বিশেষ নজরদারিতে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে বিভিন্ন ছাত্রাবাস ও মেসে।

রেটিনা, ফোকাসসহ বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের অফিসে হানা দিয়ে পুলিশ ও ডিবি পুলিশ কয়েকজনকে আটক ও গ্রেফতার করেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, গতকাল সকাল থেকেই পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দারা একরকম অবরুদ্ধ করে রাখে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়। সেখানে দলের কোনো কর্মীকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় নেতারাও কার্যালয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন। বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, তিনি দলীয় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান।

প্রবেশমুখেই পুলিশ তাকে আটকায়। দীর্ঘ সময় তাকে জেরা করার পর প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। গতকাল টিকাটুলি মোড় থেকে মতিঝিল, শাপলা চত্বর, নটরডেম কলেজ, আরামবাগ, ফকিরাপুল, নয়াপল্টন, কাকরাইল, দৈনিক বাংলা, পল্টন, প্রেস ক্লাব, ফকিরাপুল, শান্তিনগর, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী দেখা গেছে। পুরো এলাকায় পুলিশ ছিল যুদ্ধাংদেহী অবস্থায়। সশস্ত্র পুলিশ ও গোয়েন্দারা টহলকালে রায়টকার, জল কামানও মজুত রাখতে দেখা গেছে।

বৃহস্পতিবার রাত থেকেই গাবতলী, সাভার, যাত্রাবাড়ি, কাঁচপুর, শীতলক্ষ্যা দ্বিতীয় ব্রিজ, শ্যামপুর, জুরাইন, বাবুবাজার, আবদুল্লাপুর, টঙ্গী, কমলাপুরসহ নগরীর প্রবেশ মুখগুলোতে যানবাহনে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েছে র্যাব ও পুলিশ। ঢাকার বাইরে থেকে আসা গাড়িগুলোকে রাস্তায় থামিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে তল্লাশি চালানো হয়। যাত্রীদের ব্যাগ ও শরীরেও তল্লাশি চালায় পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা। এ সময় বেশ কিছু গাড়ি রিকুইজিশন করা হয়েছে বলে গাড়িচালক ও মালিকরা অভিযোগ করেছেন। রাজধানীর ভিতরে গুলশান লিংক রোড, গুলশান প্রবেশের সবক’টি পয়েন্ট, পান্থপথ, মত্স্যভবন মোড়, কাকরাইল, শান্তিনগর, রাজারবাগ, শাহজাহানপুর, সাদেয়াদাবাদের জনপথ মোড়, মিরপুর ১০ নম্বর, মিরপুর ১ নম্বর, মিরপুর সাড়ে এগারো, উত্তরার আজমপুর, কুড়িল বিশ্বরোড, অতিশ দীপংকর রোড, বাসাবো, মালিবাগ বাজারসহ বেশ কিছু কিছু স্থানে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছে।

প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসের পাশাপাশি গণপরিবহনেও ব্যাপক তল্লাশি চালানো হয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে অস্থায়ী চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হয়েছে। এ সময় নিরাপত্তাবাহিনীর বিভিন্ন জেরার মুখে পড়ে হয়রানির শিকার হন সাধারণ যাত্রীরা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বহু যাত্রীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবাসিক হোটেলে কক্ষভাড়া দেয়া হচ্ছে না : গতকাল থেকে মগবাজার, ফকিরাপুল, নয়াপল্টন, পুরানা পল্টন, কাকরাইল, তোপখানা রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় অধিকাংশ আবাসিক হোটেলে তালা ঝুলছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে হোটেল কর্তৃপক্ষের প্রতি মৌখিক নির্দেশ—৯ মার্চ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত কোনো দেশি লোককে কক্ষ ভাড়া দেয়া যাবে না। যেসব আবাসিক হোটেল খোলা ছিল সেগুলোতে ছদ্মবেশে গোয়েন্দারা অবস্থান নিয়েছেন। পোশাকধারী ও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা হোটেলের রিসিপশনে বসে ছিলেন। চট্টগ্রাম থেকে ব্যবসায়িক কাজে ঢাকায় আসা আবু তাহের মোহাম্মদ জানান, তিনি সব সময় তোপখানা রোডের নিউইয়র্ক হোটেলে উঠতেন। গতকাল তিনি হোটেলে গেলে রিসিপশন থেকে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়।

তিনি পাশের হোটেল কর্ণফুলী, মেট্রোপলিটন, হোটেল তোপখানাসহ কয়েকটি হোটেলে যান। সিট ফাঁকা থাকার পরও তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, পুলিশের মৌখিক নির্দেশে তারা আগামী ১২ মার্চ পর্যন্ত দেশের কাউকে রুম ভাড়া দিচ্ছেন না। হোটেল ভিক্টরির সামনে দেখা গেছে প্রায় ২০ জন পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। তারা সতর্কভাবে আগন্তুকদের প্রতি দৃষ্টি রাখছে।

খুলনার বাসিন্দা জাকারিয়া ইসলাম জানান, গত সন্ধ্যায় রুম বুকিংয়ের জন্য ঢাকার ফকিরাপুল ও পল্টন এলাকার ৬/৭টি হোটেলে ফোন করলেও কেউ ফোন রিসিভ করেনি। রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখার নির্দেশ : রাজধানীর পল্টনসহ আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন খাবার হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট আগামী রোববার ও সোমবার (১১ ও ১২ মার্চ) বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ফকিরাপুলে গাউসিয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, পুলিশ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কথা বলে তাদের হোটেল বন্ধ রাখার নোটিশ করা হয়েছে। বড়মগবাজারে হোটেল তাজ ও হোটেল থ্রিস্টার, পল্টনে হোটেল সোহাগ, লিজা, ক্যাফে ঝিলসহ অন্যান্য আরও কয়েকটি রেস্তোরাঁও রোববার ও সোমবার বন্ধ রাখতে বলেছে পুলিশ। আদেশ অমান্য করলে এসব হোটেলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ারও ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

বোতলজাত পানি মজুদেও নিষেধাজ্ঞা : পল্টন, মতিঝিল, শাহবাগ এলাকার বিভিন্ন মুদি দোকান, কনফেকশনারিতে বোতলজাত পানি মজুদ করতে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে। ফকিরাপুল মোড়ে একটি কনফেকশনারির মালিক শফিকুল ইসলাম জানান, পল্টন থানা পুলিশের একটি দল তাকে ও আশপাশের দোকানদারকে পানি মজুদ করতে নিষেধ করে গেছেন। আদেশ অমান্য করলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হবে বলেও জানিয়েছে কয়েজন পুলিশ। এছাড়া ফুটপাথ ও রাস্তার পাশে ছোট ছোট চায়ের স্টল ও খাবারের দোকানগুলো আগেই উচ্ছেদ করা হয়েছে। কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া দেয়া যাবে না : পল্টন ও মতিঝিল ও রমনা থানা এলাকার কমিউনিটি সেন্টারগুলো আগামী ১১ ও ১২ মার্চ ভাড়া না দেয়ার জন্য মালিকদের নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ।

মহানগর বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজনকে স্যানিটেশন সুবিধা, হাতমুখ ধোয়া ও সামান্য বিশ্রামের ব্যবস্থা হিসেবে তারা কমিউনিটি সেন্টারগুলো ভাড়া নিতে চেয়েছিলেন। কমিউনিটি সেন্টার কর্তৃপক্ষ ভাড়া দিতে রাজি হলেও পরে তারা নিষেধ করে দেয়। একাধিক কমিউনিটি সেন্টারের মালিক জানিয়েছেন, পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ১১ ও ১২ তারিখ বিরোধী দলের কাছে ভাড়া দিলে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। গত সন্ধ্যায় তোপখানা রোডের আল হাবীব কমিউনিটি সেন্টার ও ভিআইপি রোডে আনন্দ ভবনে যোগাযোগ করা হলে তারা পুলিশের নির্দেশনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। রাজপথে রায়টকার ও জলকামান : গতকাল থেকেই ঢাকার রাজপথে রায়টকার ও জলকামানের টহল দেখা গেছে।

গতকাল জুমার নামাজের আগে ও পরে বাইতুল মোকাররম এলাকায় জলকামান নিয়োজিত রাখতে দেখা গেছে। বিএনপি কার্যালয়ের পাশে কয়েকটি জলকামান ও রায়টকার মোতায়েন ছিল। ডিএমপির রায়ট ফোর্সের একজন কর্মকর্তা বলেন, হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে কে বিশৃঙ্খলাকারী আর কে তা প্রতিহত করবে সেটা শনাক্ত করা কঠিন। আইনশঙ্খলার অবনতি হলে বিপুলসংখ্যক রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস প্রয়োজন হবে। তাই আগেই পুলিশ এর প্রস্তুতি নিয়েছে।

ডিএমপির একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, সমাবেশের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনী ছাড়াও জলকামান, রায়ট কার, গ্যাসগান ও গ্যাস গ্রেনেডসহ বিপুল সংখ্যক রায়ট ফোর্স রাজারবাগ ও শাহবাগ কন্ট্রোলরুমে মজুদ রাখা হবে। যাতে তারা যে কোনো জরুরি মুহূর্তে তারা দ্রুত যে কোনো পয়েন্টে ছুটে গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারে। সমাবেশ পর্যবেক্ষণে সিসিটিভি : গতকাল থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও আশপাশের এলাকায় প্রায় ৩ শতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) লাগিয়েছে পুলিশ। এসব সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে গতরাত থেকেই বিরোধী দলের তত্পরতার ভিডিও চিত্র ধারণ করা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, সমাবেশে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে মনিটরিং করার জন্য তারা সিসিটিভি বসিয়েছেন।

যাতে কোথাও অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে পারে সেজন্য এসব সিসিটিভি বসানো হয়েছে। ভবনের ছাদে ছাদে পুলিশ : নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকার উঁচু ভবনগুলোতে গতকাল থেকেই অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। তাদের সমাবেশ পর্যবেক্ষণের জন্য দেয়া হয়েছে বাইনোকুলার। বিশেষ ওয়্যারলেস ম্যাসেজের মাধ্যমে তারা যে কোনো ঘটনা প্রত্যক্ষ করার সঙ্গে সঙ্গেই কেন্দ্রীয় মনিটরিং রুমকে অবহিত করবে। যাতে তারা তাত্ক্ষনিক ব্যবস্থা নিতে পারে।

গতকাল থেকেই বিভিন্ন ভবনের ছাদে পুলিশ অবস্থান করতে দেখা গেছে। ডগ স্কোয়াড ও বিস্ফোরক ইউনিট মোতায়েন : আগামী কাল থেকে মহাসমাবেশ শেষ হওয়ার পরদিন পর্যন্ত ডগস্কোয়াড মোতায়েন থাকবে। তারা টহলসহ বিস্ফোরক ও অন্যান্য ক্ষতিকর দ্রব্য অনুসন্ধান করবে। এছাড়াও সিআইডি পুলিশ এবং র্যাবের বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ ইউনিট নয়াপল্টনসহ বিভিন্নস্থানে মোতায়েন থাকবে বলে জানা গেছে। যে কোনো স্থানেই কোনো বিস্ফোরণের খরব পেলে বা সন্দেহ দেখা দিলে তারা যাতে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারে সেজন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

৩০ হাজার পুলিশ ও গোয়েন্দা নিয়োগ : ১২ মার্চ সামনে রেখে রাজধানীর সবক’টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। এজন্য পুলিশ, র্যাব, এপিবিএন, ডিবিপুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রায় ৩০ হাজার নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ১২ মার্চের মহাসমাবেশে ২০ লাখ নেতাকর্মী ঢাকায় জড়ো করার লক্ষ্য নিয়েছে। এর এক চতুর্থাংশ মানুষও কর্মসূচিতে যোগ দেয় তবে ওইদিন গোটা ঢাকা অচল হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর এ অচলাবস্থার মাঝে কেউ জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুরসহ কোনো ধরনের নাশকতামূলক তত্পরতা চালালে তা মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

ওই রকম পরিস্থিতি হলে পুলিশকে অনেকটা বাধ্য হয়েই ঢালাও ধর-পাকড়, লাঠিচার্জ বা রাবার বুলেট নিক্ষেপসহ যে কোনো ধরনের অ্যাকশনে যেতে হবে। আর এ সময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে গোটা ঢাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই থানা পুলিশ ছাড়াও এপিবিএন, র্যাব ও গোয়েন্দাদের নিয়োজিত করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন রেঞ্জ থেকেও পুলিশ সদস্যদের ঢাকায় আনা হয়েছে। এছাড়াও রাজপথে থাকবে গোয়েন্দা ওয়াচ ম্যান ও স্টিল ক্যামেরা ম্যান।

তারা ছদ্মবেশে সমাবেশ পর্যবেক্ষণ করবে। সতর্ক ফায়ার সার্ভিসও : মহাসমাবেশের দিন অগ্নিকান্ড বা বড় দুর্ঘটনা পরিস্থিতি জরুরিভাবে মোকাবিলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকায় মোতায়েন থাকবে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় অফিসকে যে কোনো সময় যে কোনো স্থানে যাওয়ার জন্য সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। পুলিশের বক্তব্য : ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও ডিসি ডিবি মনিরুল ইসলাম বলেন, ১২ মার্চ সর্বোচ্চ সহনশীলতার পরিচয় দেবে পুলিশ।

আন্দোলনকারীদের কোনো ধরনের উস্কানির ফাঁদে কেউ যাতে ধরা না দেয় এজন্য আগাম সতর্ক করা হবে। তবে নগরবাসীর জান-মালের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে। আন্দোলনকারীরা যানবাহন ভাংচুর, চলাচলে বাধা, অগ্নিসংযোগ বা বোমাবাজিসহ কোনো ধরনের নাশকতার চেষ্টা করলে কঠোর হাতে পুলিশ তা দমন করবে। আবাসিক হোটেল, কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া না দেয়া, খাবারের দোকান বন্ধ রাখা সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। এছাড়া পুলিশের আরও কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

সারাদেশে গণগ্রেফতার চলছে : বিএনপি মহাসচিব এক বিবৃতিতে সারাদেশে গণগ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, সারাদেশে তাদের শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মহাসমাবেশে বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের আসতে বাধা দেয়ার উদ্দেশে বিভিন্ন যানবাহন তথা বাস, ট্রাক লঞ্চ মালিকদের ভয় ভীতি দেখানো হচ্ছে। ঢাকাসহ সারাদেশে বাসায় বাসায়, হোটেল ও কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে তল্লাশি এবং জনমনে ভীতির সঞ্চার করতে বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিনি। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, গতকাল পর্যন্ত গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, ভৈরব থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো. ফজলুর রহমানসহ ৩ জন, কামরাঙ্গীরচর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মো. রিপন মোল্লা, মো. জামাল হোসেন, শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলা বিএনপি সভাপতি কাঞ্চন আলী এবং শ্রমিক দল সভাপতি ছালাম পেয়াদা, সবুজবাগ থানা বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর, সুমন, জালাল, সূত্রাপুর থানা বিএনপি নেতা মাহফুজুর রহমান মনা, মো. নাদিম, মানিকগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক নেতা মো. আসলাম সাদি, বাগেরহাট জেলার চিতলমারী থানা ছাত্রদল নেতা জাকারিয়া, বেলাল কাজী, নেয়ামত খান, মানিকগঞ্জে পোস্টার লাগানোর সময় তিনজন বিএনপি নেতা, নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানা ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি হারুন মিয়াজী, রূপগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা আবু, মিন্টু গ্রেফতার, তাছাড়া রূপগঞ্জে আজ সকালে গ্রেফতারের প্রতিবাদে মিছিল বের হলে পুলিশ আরও ১০-১৫ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। যশোর, বরগুনা, সাতক্ষীরাসহ সারাদেশে আজও বাসায় বাসায় তল্লাশি এবং পুলিশি ধর-পাকড় অব্যাহত আছে।

ঢাকা মহানগরীর আদাবর থানা বিএনপি নেতা আবুল হাশেম, নায়ায়ণগঞ্জ জেলা সোনারগাঁ পৌরসভার স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক তরিকুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক টিপু, রুবেল, জামান, নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সালাহ উদ্দিন সালু, সোনারগাঁ থানা স্বেচ্ছাসেবক দল যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সিদ্দিক মোল্লা, হাজী রুহুল আমিন, মানিকগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবং কেন্দ্রীয় সদস্য আসলাম হোসেন সাদি, শ্রমিক দল নেতা স্বরূপ ও মনোয়ার পোস্টার লাগানোর সময় গ্রেফতার, বরিশাল বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপি নেতা বাবুল গোমস্তা, সুলতান ফকির, ছাত্রদল নেতা সোহেল খান, পিরোজপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন মন্টু এবং সদস্য নূর আলম, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জুয়েলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়াও আমাদের সারাদেশের ব্যুরো অফিস ও প্রতিনিধিরা গণগ্রেফতারের খবর পাঠিয়েছেন। খুলনায় গণগ্রেফতার : খুলনায় পুলিশ গণগ্রেফতার শুরু করেছে। খুলনা মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিরোধীদলের শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাইদুর রহমানসহ বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের ২৭ নেতাকর্মী রয়েছে ।

বরিশালের ৫৯ বিরুদ্ধে মামলা গ্রেফতার ৩ : লিফলেট বিতরণে নিষেধ করায় বানারীপাড়ায় ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যার হুমকির অভিযোগে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ৫৯ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ইউনিয়ন বিএনপি’র সম্পাদক ও ইউপি মেম্বরসহ তিন নেতাকর্মীকে। যশোরে চলছে গ্রেফতার : কোনো ধরনের পূর্বঘোষণা ছাড়াই ১০ মার্চ রাত থেকে দু’দিনের জন্য গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে সোহাগ পরিবহন। অন্যান্য পরিবহন কর্তৃপক্ষও একই পদক্ষেপ নিতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। পাবনায় এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ গ্রেফতার ৭৫ : পাবনার বিভিন্ন উপজেলায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৭৫ জন নেতাকর্মী গ্রেফতার করা হয়েছে ।

রাতে ঘরে ঘরে তল্লাশি চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সাতক্ষীরায় গ্রেফতার ১৫ : বিএনপি জোটের ১২ মার্চের মহাসমাবেশের দিন নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে এমন অভিযোগে সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ১৫ জন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। নোয়াখালীতে গ্রেফতার ৪০ : বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে বিএনপি’র ৪০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। কুষ্টিয়ায় গ্রেফতার ৩২ : জেলায় বিএনপির ৩২ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সৌজন্যেঃ দৈনিক আমার দেশ।

 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.