আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নায়ক হন্তারক জাতি এবং ক্রিকেট

এরকমই, আমি এরকমই আমরা, বাংলাদেশিরা আসলে নায়ক হন্তারক একটা জাতি। রাজনীতির মাঠে যাব না, আমার ইন্টারেস্ট যেখানে বেশি, সেই ক্রিকেটকে ক্ষেত্র হিসাবে দেখে এই উপলব্ধিই হল। নানা কারনে, বিশেষ করে সিস্টেমের চেয়ে ব্যক্তির ওপর দায় চাপানোর অবচেতন প্রক্রিয়া থেকেই সম্ভবত, সব সময়ই জাতীয় ক্রিকেট দলে আমাদের একজন খলনায়কের প্রয়োজন হয়। মুল সমস্যা এটা নয়। সমস্যা হল, আমাদের এই ভিলেন বেশিরভাগ সময় হয় আমাদের একেবারে সাম্প্রতিক অতীতের নায়কটিই।

শুরুটা খালেদ মাহমুদকে দিয়ে হয়েছিল, ২০০৫ পর্যন্ত সর্বশেষ হয়ে থাকা আন্তর্জাতিক ম্যাচ জয়ের মহানায়ক, ২০০৬ এ জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টেস্ট জয়ের আগ পর্যন্ত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য টেস্টটির (পাকিস্তানের বিপক্ষে মুলতানে, ২০০৩) অধিনায়ককে আমরা আম-দর্শকরা প্রথম দুয়ো দেবার লক্ষ্য হিসাবে সাব্যস্ত করি। মাহমুদের বিদায়ের পর, বিশেষ করে ২০০৭ এর বিশ্বকাপের পর, হাবিবুল বাশারকে আমরা গালির লক্ষ্য হিসাবে ঠিক করে ফেলি, কারন তার ফর্ম তখন পড়তির দিকে। তখন পর্যন্ত (এমনকি এখন পর্যন্তও) বাংলাদেশের টেস্ট যুগের সবচেয়ে সফল ক্রিকেটার তো বটেই সবচেয়ে সফল অধিনায়কও ছিলেন তিনি। ২০০৭ এর অধিনায়ক হিসাবে সফল বিশ্বকাপের সময় থেকেই ব্যাটিং এ তার ফর্মের পতনের আর আমাদের গালাগালির মাত্রা পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকল। বাশার অবসর নিয়ে চলে গেলেন আইসিএল এ, সাথে কয়েকজন দর্শকপ্রিয় খেলোয়ারও গেলেন।

সবেধন নীলমনি হয়ে রইলেন আশরাফুল, সাকিব তখনও মহাতারকা নন, মাশরাফি অনিয়মিত। কারও কারও আইসিএল এ যাবার পিছনে আশরাফুলের ইন্ধনও আমরা আবিষ্কার করলাম (আমরা সবসময়ই নিজেদের চরিত্র অন্যের মাঝে দেখার চেষ্টা করি), তবু সবেধনটিকে বেশিদিন নায়ক করে রাখতে আমাদের মন চাইলো না, সাকিব, তামিমরা তখন ভাল খেলতে শুরু করেছেন, আশরাফুলও চিরায়তভাবেই ধারাবাহিকতাহীন সুতরাং দর্শকদের মনে হতে থাকল যে আশরাফুলকে বাতিলের খাতায় ফেলা যায়, শুরু হল তাকে গালাগালি যেটা এখনও চলছে। এরপর? সাকিবের ফর্ম কখনও অতটা খারাপ যায় নি, সোজাসাপ্টা ছেলেটা শুধু তার মন্তব্যের ক্ষেত্রে কারও ধার ধারে না বলেই মনে হয়। সুতরাং দেশের এযাবতকালের সবচেয়ে সফল খেলোয়ারটিকেও বিশ্বকাপের সময় ও পরে আমাদের গালি খেতে হল ব্লগে, ফেসবুকে। সাকিব অধিনায়ক নেই এখন, কথাবার্তা কম শোনা যায়, খেলছেন তার মতই।

তাহলে? কাউকে তো লাগবে, না? চিন্তা কী? তামিম তো আছে। গত দুটো সিরিজ তামিম তামিমের মত খেলতে পারে নি (ইমরুল কায়েস বা মাহমুদুল্লাহ এর চেয়ে ভাল খেলছে তো কি হইছে?), তাছাড়া পত্রিকায় তো পড়িই যে ছেলেটা উদ্ধত। সুতরাং তামিমই এখন আমাদের নতুন ক্রিকেট ভিলেন। মাহমুদ-বাশারদের গালি খেতে দেখছি টিভি সেটের সামনে বসে, ভার্সিটি হলে খেলা দেখার সময়, বাকিদের অনলাইনে। দুর্ভাগা আশরাফুলকে দুজায়গাতেই।

এতদিনের নায়কটিকে ভিলেন বানিয়ে ফেলার আমাদের এই মনোভাবের কারন কি জানতে মন চায় খুব। নায়কদেরকে কেন আমরা সারাক্ষণ নায়কোচিতই দেখতে চাই, নায়কেরা সাধারনের কাতারে নামলে কেন আমরা তাকে ভিলেন বানিয়ে ফেলতে চাই? কাউকে উপরে উঠতে দেখলে, কোনভাবে তার পায়ের নাগাল পেলে আমরা কেন টেনে নামানোর চেষ্টা করি! লোটাস কামাল - আকরাম বিরোধ নয়, এই নিউজগুলোর নিচে পাঠকদের করা মন্তব্যে তামিমের প্রতি বিষোদ্গারগুলো দুঃখ দিচ্ছে বেশি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।