আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংস্কারের তিন নায়ক

ওয়ান ইলেভেনকালে সংস্কার নিয়ে ব্যাপক তর্ক-বিতর্কের ঝড় উঠেছিল বাংলাদেশের রাজনীতিপাড়ায়। তখন বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে যারা সংস্কারপন্থী ছিলেন, তাদের বেশিরভাগই আজ নিজ-নিজ দলে অনাদৃত। কেউ-কেউ মূলধারার রাজনীতি থেকেই বিচ্ছিন্ন। তথাকথিত সংস্কারপন্থীরা যা পারেননি, স্বাধীনতার ৩৬ বছরেও বাংলাদেশ যা দেখেনি, পরবর্তী পাঁচ বছরে এমন অনেক কিছুই করে দেখিয়েছেন ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন। শুরু ৪ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে।

সবকিছু নিয়মমাফিক ঘটলে শেষ নবগঠিত কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে। আর সেই সঙ্গে ৫ বছর মেয়াদকাল পূর্ণকরে আগামী ফেব্র“য়ারিতে বিদায় নেবে বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতোমধ্যেই এই ইসির সফলতা-ব্যর্থতার মূল্যায়ন শুরু হয়েছে বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক মহলে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন এই ইসির মেয়াদকালে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নির্বাচন, সিদ্ধান্ত ও বক্তব্য নিয়ে কোনও কোনও মহলে অল্প-স্বল্প কিংবা ক্ষেত্রবিশেষ বেশি বিতর্ক হলেও নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করে তা বাস্তবায়ন, সুষ্ঠুভাবে জাতীয় সংসদ, উপজেলা, ইউপি ও পৌরসভা নির্বাচন সম্পন্ন করা, ছবিসহ ভোটারতালিকা তৈরি, স্বচ্ছ ব্যালটবাক্স ব্যবহার, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণসহ ভোটগ্রহণে ইভিএম’র ব্যবহার চালুকরণের মাধ্যমে নিজেদের সফল হিসেবেই প্রমাণ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও তার দুই কমিশানার। এক এগারোর ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে দায়িত্ব নেওয়ার পর নির্বাচিতমহাজোট সরকারের আমলে ইসিকে অনেক জটিল পরিস্থিতিও সামাল দিতে হয়েছে তাদের।

সময়ের প্রয়োজনে কখনও বিরোধীদল আবার কখনওবা সরকারি দলের তীর্যক সমালোচনা উপেক্ষা করে অনেক সাহসী পদক্ষেপও নিতে হয়েছে। কিছু কিছু পদক্ষেপের কারণে রাজনৈতিকমহলে সমালোচিত হলেও সামগ্রিকভাবে প্রশংসিতই হয়েছে এই ইসি। ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে এবং দেশের রাজনৈতিক সংকটকালে ২০০৭ সালের ৪ ফেব্র“য়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পান ড. এটিএম শামসুল হুদা। যোগদানের দিনই সিইসির ঘোষণা ছিলÑ ‘ইসিকে এমন একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চাই, যা নিয়ে জাতি গর্ব করতে পারে। কথা নয়, কাজে বিশ্বাস করি আমি।

পাঁচ বছর পর আমার মেয়াদশেষে যেন জাতি একটি ভালো প্রতিষ্ঠান পায়। ’ শুরুতেই তিনি ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ঘোষণা করেন ৫ দফার রোডম্যাপ। ওই রোডম্যাপে স্থান পেয়েছিল ইসি পুনর্গঠন, নির্বাচনি আইন সংস্কার, ছবিসহ নতুন ভোটার তালিকা তৈরি, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ ও জাতীয় ও স্থানীয় সরকার পর্যায়ের সবগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠান শেষ করা। ৫ বছর পর দেখা যাচ্ছে, সিইসি তার রোডম্যাপের বাস্তবায়ন সফলভাবেই করেছেন। রোডম্যাপ অনুযায়ী ছবিসহ ভোটারতালিকা, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, ২০০৮-এর ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান, আরপিও সংশোধন, সংসদ নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার, স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন শেষ করে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি।

এরমধ্যে ২০০৭ সালে দেশে প্রথমবারের মতো ছবিসহ ভোটারতালিকা প্রণয়ন, রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে সংলাপ এবং রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া, স্বচ্ছ ব্যালটবাক্স সংগ্রহের কাজ ও সম্পন্ন করে ইসি। এ সময় শতাধিক দল ইসির নিবন্ধন চেয়ে আবেদন করলেও ৩৯টি দল নিবন্ধিত হয়। তবে জামায়াতকে নিবন্ধন দেওয়ায় সমালোচনায়রও মুখোমুখি হতে হয় ইসিকে। এরপর নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের একপর্যায়ে বিএনপিকে ভাঙনের মুখে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগও ওঠে। এই ইসির সবচেয়ে বড় সাফল্যÑ নবম সংসদ নির্বাচনের আগে সাড়ে আট কোটি ভোটারকে ছবিসহ তালিকাভুক্ত করা।

৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগেই ২০০৮ সালের আগস্টে ৪ সিটি ও ৯ পৌর নির্বাচন সফলভাবে শেষ করে ইসি। তারপর ২৯ ডিসেম্বরে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে নন্দিত হয়। সংসদ নির্বাচনের পর নতুন সরকারগঠন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনসহ সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচনও সফলভাবে শেষ করে প্রতিষ্ঠানটি। পরবর্তি কালে একমাত্র ঢাকা ছাড়া সব সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও সারাদেশে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ইউপি নির্বাচন শেষ করে ইসি। সর্বশেষ সাফল্যÑ সরকারের কাছে সেনাবাহিনী চেয়ে না পাওয়ার পরও গত ৩০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা।

এছাড়াও দেশে ৭টি উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এই ইসির আমলে। একমাত্র ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচন ছাড়া বাকি নির্বাচনগুলোর সুষ্ঠুতা ও নিরপেক্ষতার কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। ৫ বছরের সফলতা-ব্যর্থতার মূল্যায়ন নিয়ে আমাদের সময়-এর সঙ্গে কথা হয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদার। ড. হুদা বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আমরা দায়িত্ব নিই। দায়িত্ব পাওয়ার পর ঘোষণা করি রোডম্যাপ আর তা বাস্তবায়নে দেশবাসীর কাছে সময় চেয়েছিলাম ২ বছর।

’ এ সময় রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও মিডিয়াসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘রোডম্যাপ অনুযায়ী আমরা সবই করেছি। ’ নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বলেন, ‘কমিশনের মেয়াদকালের শেষ পর্যায়ে এসে বলতে চাই আমরা সার্বিকভাবে সফল হয়েছি। কিছু কিছু কাজ করা যায়নি। অসমাপ্ত ওই কাজগুলো করতে আরও সময় দরকার। সে কাজ পরবর্তী কমিশনের জন্য রেখে যাচ্ছি।

তবে এরআগে যত কমিশন এসেছে তাদের চেয়ে বর্তমান কমিশন ব্যতিক্রমী কিছু কাজ করেছে। এরমধ্যে কমিশনকে সরকার থেকে আলাদা করা, নতুন লোকবল বাড়ানো, সচিবালয়ের কমকর্তাদের আচরণবিধি, বদলিসহ আর্থিক স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। ’ নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘পুরোনো জঞ্জাল সরিয়ে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পেরেছে এ কমিশন। আমাদের কারণে রাজনৈতিক সংস্কৃতিও বদলেছে। ছবিসহ ভোটারতালিকায় ভোটারদের দেওয়া তথ্য সংরক্ষণে সকল উপজেলায় নতুন করে সার্ভার স্টেশন নির্মাণ করেছি আমরা।

এ কাজের প্রায় ৯০ভাগ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ইসির নিজস্ব নতুন ভবনের নকশাও তৈরি হয়েছে। আশা করি নতুন কমিশন এসে নিজস্ব ভবনের কাজ সম্পন্ন করবে। ’ সবশেষে তিনি বলেন, ‘শতভাগ না হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা সফল। ’ Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.