আশরাফুলের ব্যাটিং দেখে অনেকেই বলে যে এর চেয়ে আমিই ভালো খেলতে পারি। এসব কথা সবসময়ই আমার কাছে বাড়াবাড়ি মনে হয়। কিন্তু আমার বন্ধু রাশেদ দেখে গতকাল মনে হল এই অভিনেতাদের চেয়ে আমি অভিনয় করলেই ভালো করতাম। এটা মোটেই বাড়িয়ে বলছি না।
আমার বন্ধু রাশেদ আমাকে হতাশ করবে জানতাম।
কারণ আমার প্রিয় ১০ টা বইয়ের তালিকা করলে সেখানে থাকবে আমার বন্ধু রাশেদ। প্রথম বইটা পড়েছিলাম ক্লাস এইটে থাকতে। এর পরে আর ৩/৪ বার পড়েছি। আমার নিজের একটা কল্পনার জগত ছিল রাশেদকে ঘিরে। সেই কল্পনার সাথে সিনেমা মিলবে না তা অনুমিতই ছিল।
কিন্তু এইরকম ভাবে হতাশ করবে, ভাবিনি।
পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম। দিপু নাম্বার টু তিনিই পরিচালনা করেছিলেন। তাই একটু আশা ছিল। তার উপর প্রথম আলোতে মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছিলেন ছবিটা নাকি ভালো হয়েছে।
সবশেষ আমার কয়েকজন সহপাঠী এই ছবি দেখে উচ্ছ্বসিত স্ট্যাটাস দেয়ায় ছবিটা দেখার প্রতি আগ্রহ জন্মায়।
অবশেষে দেখতে বসলাম আমার বন্ধু রাশেদ। ছবির শুরুতেই বিরক্তির সূচনা। ‘বড় ইবু’ ও ‘বড় ইবুর ছেলে’ – এই দুটি চরিত্র তৈরি করা হয়েছে ছবিতে, যেটা মূল বইয়ে নেই। বড় ইবুর (রাইসুল ইসলাম আসাদ) টাক মাথা ঢাকার জন্য যে পরচুলা ব্যবহার করেছেন, সেটা টাক না ঢেকে বরং চিৎকার করে টাকটা দেখিয়ে দিচ্ছিল।
মূলত সেটাই বিরক্তিকর ঠেকেছে। ইবুর মাথায় টাক থাকলে কী এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত?
ইবুর ছেলেও একখান মাশাল্লাহ। মুখস্ত ডায়লগ বলে গেছে সারা ছবি জুড়ে।
অন্যান্য ছোট চরিত্রগুলোও একইরকম মুখস্ত বলে গেছে। ছোট ইবু, জয়ন্ত, ফজলু- সবাই।
কাদেরকে দেখে বিস্মিত হয়েছি। একটা মোটাসোটা ছেলেকে দাঁড় করিয়ে দিলেই সে কাদের চরিত্রে অভিনয় করে ফেলবে? পরিচালক কি আরেকটু কষ্ট করতে পারতেন না অভিনেতা নির্বাচনের ব্যাপারে।
সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি স্বভাবতই রাশেদকে দেখে। এ কী করেছেন পরিচালক? রাশেদের মত দুরন্ত, দস্যি ছেলেকে তিনি রীতিমতো গম্ভীর, দেশ নিয়ে মহাচিন্তিত একজন ব্যক্তিতে পরিণত করেছেন। রাশেদের দস্যিপনার বিন্দুমাত্র সেখানে অনুপস্থিত।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল কখনোই এই রাশেদ তৈরি করেননি। পরিচালক মূল বইয়ের বেশ কয়েকটা ছোট ছোট অংশ ছবিতে বাদ দিয়েছেন, যেটা আমার মত রাশেদ ভক্তকুলকে আঘাত করেছে। সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি যখন দেখেছি আমার সবচেয়ে প্রিয় ডায়লগ, “কড়া লিকার, ফ্রেশ পাত্তি”র কোন অস্তিত্বই ছবিতে নেই।
আমার কল্পনার রাশেদ এর চেয়ে হাজার গুন ভালো ছিল। সেই কল্পনাটুকু মোরশেদুল ইসলাম নষ্ট করে দিয়েছেন।
রাশেদের কথা কল্পনা করতে গেলেই এখন মনে পড়ে এই ছবির অভিনেতাদের হাস্যকর অভিনয়ের কথা। এই রকম একটা অসাধারণ বইকে, রাশেদের মত অসাধারণ চরিত্রকে অপমান করার জন্য তাকে আমি কখনোই ক্ষমা করব না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।