আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বন্ধু, নেশা ও ভালবাসা- (বন্ধু ছিলে তুমি আমার, প্রেয়সী নয়!)

একলা মানুষ মাতৃ গর্ভে একলা মানুষ চিতায় একলা পুরুষ কর্তব্যে একলা পুরুষ পিতায় আর, মধ্যে খানে বাকিটা সময় একলা না থাকার অভিনয় মম ফোন কল দিয়ে ছিল, সোহেল রিসিভ করেনি। সোহেল ভাবছে, কোন মানে হয়? এত গুল বছর কেটে গেল কোন কথা নেই। আজ বিয়ে, বলে কিনা চলো পালাই? আমি কি ১৫-১৬র কোন কিশোর ছেলে একটি কিশোরী নিয়ে পালিয়ে গেলাম? মম কি কাঁদছে? কাঁদুক বিয়ের সময় একটু কাঁদলে কিছু হয়না। দুএকটি দিন হাসব্যান্ড এর সাথে কাটালে ঠিক হয়ে যাবে। সোহেল গান ছেড়ে ঘর অন্ধকার করে শুয়ে পরলো।

সারা রাত শুধু একটা গানই শুনবে "আজকে রাতে তুমি অন্যের হবে ভাবতেই জলে চোখ ভিজে যায়....। " গানটা তার সব সময় ফানি মনে হোতো। এমনটা ভেবেই মন হালকা করতে চেয়েছিল সে। কিন্তু না "হাসানের" গানের চিত্কার গুল আজ তারই আর্তনাদ হয়ে বুক চিরে বের হতে লাগল। নিজের কাছে নিজে বিব্রত হয়ে সারারাত শুধু কাঁদল।

ভোরের আল ফুটতেই সোহেল নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে নিলো। আরো দুজন বন্ধু মিলে ওরা মিরপুরের এই ফ্ল্যাটটা ভাড়া নিয়েছে। রাসেলের সাথে একটা ব্যাবসা করছে। সেই সাথে মালটিমিডিয়া প্রোগ্রাম শিখছে । বাবা একটা NGO তে চাকরি করেন।

বেতন যা পান তাতে আহামরি কিছু না হলেও ভালই চলে যায়। সোহেলের বড় ভাই ভবঘুরে টাইপ। তাকে দিয়ে আর কোন আশা নেই। একমাত্র বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। পরিবারের সবার দৃষ্টি এখন তার দিকে।

তাই সে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ কোন ছেলে মানুষি নয়। সোহেল সময় মত কলেজে গেল। স্বাভাবিক প্রতি দিনের মত। কেও কিছুই জানতে চাইল না সবাই ব্যাপারটা এরিয়ে গেল। সবকিছুই আগের মত চলতে লাগল...... একদিন প্রিন্সিপল স্যার মাঠের কোনে এসে দাড়িয়ে পুরাতন ভবনের পার্শ্বে আরেকটা নব নির্মিত ভবন মনযোগ দিয়ে দেখছিলেন।

সোহেলের মনে দুষ্টুমি খেলে গেল। রাসেলকে বলল, ইঞ্জিনিয়ার বেটা মিষ্টি খাওয়ার টাকা দিল না, না? ওর চুদুরবুদুর আজকে বের করবো। বলেই প্রিন্সিপ্যাল স্যারের দিকে হাটা দিল। সোহেল ছালাম দিয়ে বলল, - স্যার ভাল আছেন? - না কই? দেখছিস না কত ঝামেলায় আছি? কলেজও দেখতে হয় রাজ মিস্ত্রির কাজও দেখতে হয়। - স্যার একটা কথা বলি? - বল।

- ইঞ্জিনিয়ার একটা বিশাল বাটপারি করেছে। - মানে? কি করেছে, রড বিক্রি? - না স্যার। আরো বড় কিছু। - খুলে বল। - স্যার পুরাতন ভবনটা তিন তলা ।

নতুনটাও তিন তলা । ডিজাইনও দুইটা একই রকম। তা হইলে নতুনটা পুরাতনটার থিকা প্রায় তিন ফুট খাট কেন? এক নিশ্বাসে কথা গুল বলে স্যারের প্রতিক্রিয়া দেখার রিক্স না নিয়ে, "স্যার আসি স্লামালাইকুম", বলেই এক রকম দৌড়ে পালাল। বোমা ফাটান হয়েছে এখন নিরাপদ দূরত্বে থেকে শুধু মজা দেখার পালা। ইঞ্জিনিয়ার কে ডাকা হল।

নকশা আনান হল। গজ ফিতা দিয়ে মাপা হল। অতঃপর, ইঞ্জিনিয়ার বেটার বাকি পেমেন্ট ফ্রিজ হয়ে গেল। এভাবেই হাসি আনন্দের মদ্যে কেটে গেল কয়েকটা মাস । শুধু লোক চক্ষুর অন্তরালেই রয়ে গেল ভেতরের দীর্ঘশ্বাস।

তারপর একদিন মমর সাথে একটু কথা বলার ব্যাকুলতা সোহেল আর ধরে রাখতে পারল না। ফোন দিলো। - হ্যাল? ...হ্যাল? (মমর কণ্ঠ) সোহেল ভেবেছিল মমর "হ্যাল" শুনেই রেখে দিবে। পারলো না। ফোন কানে নিয়ে কিছুটা সময় বসে রইল।

- তুমি কেমন আছ সোহেল? - তুমি কেমন আছ ? আমার জীবন তো আগের জায়গাতেই আছে। - আর আমি আছি ভুল ঠিকানায়। - মম প্লিজ। বি প্র্যাকটিক্যাল। - হ্যা ঠিকই বলেছ সব পরীক্ষাই শেষ বাকি শুধু প্র্যাকটিক্যাল।

- তোমার হাসব্যান্ড কোথায়? - হসপিটালে ডিউটিতে। - বাসায় কখন আসে? - কোন ঠিক নেই। ডাক্তার মানুষ মানবতা প্রথম স্ত্রী পরে। (ভাবলেশহীন কণ্ঠে) - মম রাখি। - রাখো।

সোহেল লাইনটা কেটে দিল। হারিয়ে গেল গহিন শূন্যতায়...... সোহেল আগের মতো স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে কিন্তু পাড়ছে না। মমর কথা বার বার হৃদয়ে প্রতিধ্বনি তুলছে, "আর আমি আছি ভুল ঠিকানায়................" সোহেল ভাবছে, মমর সাথে সরাসরি কথা বলতে হবে। ওকে বোঝাতে হবে। আমরা কথা দিয়েছিলাম বন্ধু হিসেবেই থাকবো চির কাল।

ওর হাজব্যান্ডের সাথেও কথা বলার দরকার। কিন্তু ওনার সাথে দেখা করা যায় কি করে? হ্যা মমর থেকে ঠিকানা নিয়ে অফিসে যাওয়া যায়। আরও কয়েকটা দিন চলে গেল মমর সাথে কথা বলার সাহস সঞ্চয় করতে। সংসদ ভবনের মাঠে বসে আছে সে। আজ একা।

এখন একা থাকতেই তার ভাল লাগে। প্রচুর নেশা করেছে। ইদানিং সিগারেটের থেকে গাজাই বেশি খাওয়া হচ্ছে। কিন্তু কেন? সে তো মমকে পার্বতী হিসেবে দেখেনি কখনও তাহলে এই বিরহ কেন? কেন সে নেশায় বুদ হয়ে থাকে দেবদাসের মত । নিজের কাছে প্রশ্ন করে উত্তর পায়না সোহেল।

রাসেল কে বলেছিল মমর সাথে ফোনে কথা বলার বিষয়টা। রাসেল ব্যাপারটাকে ভাল চোখে দেখেনি। বলেছে কাজটা ভাল করিসনি। তাই বন্ধুদের থেকে চোখ লুকিয়ে চলতে হচ্ছে তাকে। মমর বিষণ্নতা কিছুতেই মেনে নিতে পাড়ছে না সে।

একটা কিছু আমাকে করতেই হবে। ভাবতে ভাবতে মমকে আবার কল দিল। - হ্যালো মম? - বলো। - ভাই সাহেব বাসায় আছেন? - না। কেন? - ওনার নাম্বার টা কি দিবে আমাকে? - কেন? - পরিচয় হওয়ার জন্য আর কিছু নয়।

- আমার জন্য তোমার অনেক মায়া তাইনা সোহেল? তুমি ওনাকে ফোন করে বলবে, ভাই আপনি আপনার বৌকে সময় দেন না কেন? এটাতো ঠিক না। মম সারাদিন একা একা থাকে ওর বুঝি খারাপ লাগে না? তার পর সে তোমাকে সরি বলবে আর সারাদিন বাসায় থাকবে তাইনা? রাবিস। - রেগে যাচ্ছ কেন। আমি কি প্রথম দিনই তাকে এসব কথা বলব নাকি? আশ্চর্য! - সোহেল আমার সমস্যা নিয়ে আমাকে থাকতে দাও। প্লিজ।

- তোমার বাসার ঠিকানা দাও। - ১১ ইকবাল হোসেন রোড। দিলাম দেখি তোমার দৌড় কত দূর। কাওয়ার্ড। মম লাইন কেটে দিল।

সোহেল এখন ইকবাল হোসেন রোডে। মমর বাসার সামনে। চারতলা বাড়ি। প্রতি ফ্লোরের বেলকনি দেখা যাচ্ছে। সে এসেছে মমকে জানানোর কোন ইচ্ছে তার নেই শুধু এক পলক দেখার ইচ্ছে।

সোহেল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। মম তিন তলার বারান্দায়। কাও কে যেন খুঁজছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই চোখে চোখ পড়ে গেল। অপলক দৃষ্টিতে ওরা একে ওপরের দিকে তাকিয়ে রইল।

পড়ন্ত বিকেলের সোনালি আভায় মমর চোখের পানি চিকচিক করে উঠল। সোহেল ঘুড়ে দাঁড়ালো। আর দাড়িয়ে থাকা ঠিক হবে না। চোখ মুছতে মুছতে হাটতে লাগলো, কোন এক নির্জন প্রান্তরের দিশায়..... বন্ধু ছিলে তুমি আমার, প্রেয়সী নয়! ভাল লাগা ছিল মোদের, ভালবাসা নয়। মেনে নেয়া পরিণতি, প্রণয় খেলার ছলে ধরিনি আচল, গাথিনি মালা খোপায় বাঁধবে বলে।

দিন চলে যায় মাস চলে যায় বসন্ত গিয়েছে কত প্রভাতে দীপ্ত, প্রহরে নম, কুণ্ঠিত "প্রিয় তম"। মিথ্যেবাদী ছলনাময়ী নিয়ে ছলনার আশ্রয় বলনি তব , বলেছ কেন রক্তিম শাজ বেলায়। গিয়েছ চলে ভুল ঠিকানায় আপন হয়েছে বর বন্ধু থাকা হলোনা মোদের আজ হয়েছ পর। নওক তুমি আমার আর, হবে না কোন কালে, "হিয়ার মাঝে লুকিয়ে আছ" নয়ন ভাষে জলে। বিঃদ্রঃ ১।

ডাক্তার ভাই/বোনদের প্রতি ক্ষমা প্রার্থনাঃ এই গল্পটিতে যে বিষয় নিয়ে একজন ডাক্তারের চরিত্র রুপায়ন করা হয়েছে বা হবে তা আপনাদের মানবতা ও মহানুভবতার(অতি সম্প্রতি সাভার ট্রাজেডি তার উজ্জল দৃষ্টান্ত। সেলুট আপনাদের। ) তুলনায় অতি তুচ্ছ। তাই গল্পের খাতিরে ডাক্তারের এই চরিত্রটাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন দয়া করে ২। গল্পে মমর ঠিকানাটি কাল্পনিক কোন দৃশ্যমান ঠিকানার সাথে মিলে গেলে তা অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র।

৩। কবিতাঃ ক) "হিয়ার মাঝে লুকিয়ে আছ" কবিগুরুর এই চরণটি, গানটাকে মনে করিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার দুঃসাহস দেখিয়েছি। এটা আমার লেখা তৃতীয় কবিতা তাই ব্যপারটা শোভনীয় হয়েছে কিনা বুঝতে পাড়ছি না। দয়া করে আপনার মন্তব্য জানাবেন। খ) কবিতাটি ব্লগের এমন কাও কে উৎসর্গ করতে চাই যার জীবনের সাথে মিলে যায়।

সৎসাহস থাকলে নিজে বলতে পারেন । অথবা কাও কে রেফার করতে পারেন। প্রথম পর্বঃ বন্ধু, নেশা ও ভালবাসা এই পর্বঃ বন্ধু, নেশা ও ভালবাসা- (বন্ধু ছিলে তুমি আমার, প্রেয়সী নয়!) আগামি পর্বঃ বন্ধু, নেশা ও ভালবাসা - (উথালী-পাথালি মন তরঙ্গ লহর)  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.