এক। । এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে ভো্র বেলা। উঠন্ত সূর্যের আলোয় ঝক ঝক করছে সদ্য ধুয়ে মুছে যাওয়া আকাশটা। জানালায় দাঁড়িয়ে মৃদুলা।
গলার ওড়নাটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছে সে।
মা আজও তার সাথে কথা না বলে অফিসে চলে গেল। বুকের ভিতর জমে থাকা অভিমানহীন হতাশা, নাম না জানা ক্রোধ অপমানের সাথে মাখামাখি করে তার মুখটাকে সাদাটে পান্ডুর করে দেয়। হঠাত করেই জানালা গলে ঢুকে পড়ে এক টুকরো বাতাস। ছড়িয়ে পড়ে চোখে মুখে বুকে।
যেন মায়ের আদরমাখা হাত। হু হু করে কেদে ওঠে মৃদুলা। তিন দিন আগে দেখা মায়ের শক্ত মুখটা চোখের উপর ভেসে ওঠে বার বার। দৌড়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে সে। সবাইকে যে কষ্ট দিয়েছে সে তার প্রায়শ্চিত্ত সে নিজেই করবে।
ধনী মান্যিগণ্যি বাবামায়ের একমাত্র তনয়া মৃদুলা। শহরের বেশ নামকরা স্কুলের নবম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী। ক্লাশেরই আরেক ছাত্র রুহানের সাথে গড়ে ওঠে ভালোবাসার সম্পর্ক। কেউ একজন তাদের দুজনের অন্তরংগ মুহূর্তের ছবি তুলে তা নেটে ছড়িয়ে দিয়েছে। প্রিন্সিপ্যাল স্যার মৃদুলার বাবামাকে ডেকে নিয়ে তাদের সামনে তার বিচার করে।
তাদের মুখে চুনকালি দিয়েছে বলে তারা তার সাথে আর কথা বলছেন না। রুহানের সাথেও আর যোগাযোগ করতে পারছেনা মোবাইল বন্ধ। তাই এই অপমান জর্জরিত পৃথিবী থেকে নিজেকে বিদায় জানানোই তার এখন একমাত্র কর্তব্য। ।
দুই।
। খুব জেদী আর সুন্দরী মেয়ে প্রীতি। কোন অন্যায়েই হার না মানা যার স্বভাব। তার এই হার না মানা স্বভাবকে পাড়ার ছেলেদের কাছে ঔদ্ধ্ত্য লাগে। একদিন তাই কয়েকজন মিলে তাকে বড্ড অপমান করে।
বাসায় এসে সে কথা বললে উলটা সবাই তাকেই বকাঝকা করে। সমাজের এই বৈপরীত্য আচরণের কাছে সে হারতে চায়না তাই হাতে তুলে নেয় ঘরের কোণে পড়ে থাকা ইদুর মারার ঔষধ। জুড়িয়ে দিতে চায় সকল জ্বালা। ।
তিন।
। ছোট্ট রাইয়ানের খুব শখ হয়েছে একটা ল্যাপটপের। বায়না ধরেছে বাবার কাছে। কিন্তু বাবা দিচ্ছেনা। খুব কষ্ট লাগে তার।
তার কেন যেন মনে হয় তাকে কেউ তাকে ভালোবাসেনা। সবাই তাকে অবহেলা করে তাইত কিছু চাইলে সে পায়না। টিভিতে দেখেছে কিভাবে মরে যেতে হয়। তাই ভালোবাসাহীন পৃথিবীতে থাকার চেয়ে মারা গেলেইত হয়। তাই খুজে নেয় বাবার কড়া পাওয়ারের ঘুমের ঔষধগুলো।
।
খবরের কাগজ খুললেই এসব ঘটনা যেন সস্তা দরে পাওয়া যায়। আত্মহত্যার প্রবণতা চলে আসছে সেই অতীত কাল থেকে। যদিও কোরআন,বাইবেল সব ধর্মগ্রন্থেই আত্মহত্যাকে মহাপাপ বলা হয়েছে। ১৯৬১সালের আগ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে আত্মহত্যার চেষ্টা করাকেই শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হত।
আর ১৮৩০ সাল নাগাদতো আইনই ছিল কেউ আত্মহত্যার চেষ্টা করলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান ছিল।
তারপরও কেন মানুষ আত্মহত্যা করে?কেন বেছে নেয় আত্মহননের পথ??
মানুষের ক্রোধ যখন তার ভিতরটাকে কুড়ে কুড়ে খায় তখনই সে সাধারণত আত্মহননের পথ বেছে নেয়। তবে এই সময় তার পেছনে আশাহীনতা, হতাশা,অপরাধবোধ,অপমান,প্রতিশোধ স্পৃহা ইত্যাদি সক্রিয় থাকে। তখন সে জীবনটাকে অর্থহীন মনে করে তাই সে পেতে চায় জীবন থেকে মুক্তি। তবে অনেক মনোবিজ্ঞানী এর পিছনে bipolar disorderকে দায়ী করেন।
তাদের মতে যারা বিষন্নতা এবং একই সাথে হর্ষোম্মতায় পালাক্রমে ভোগেন তাদের মধ্যেই এই প্রবণতা অধিক হারে দেখা যায়।
Neurochemistদের মতে serotonin (যা বিপাক ক্রিয়ার একটি উপজাত)এর সাথে আত্মহত্যার সম্পর্ক রয়েছে। যারা আত্মহত্যা করেছে তাদের ব্রেইনে অস্ত্রোপাচার করে এই সেরোটনিনের ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে।
কিছু সংখ্যক গবেষণায় দেখা গেছে যারা আত্মহত্যা করতে চেষ্টা করতে চায় তারা সাধারণত সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে অন্যান্যদের চেয়ে বেশি rigid এবং চিন্তাধারায় তারা কম নমনীয়। ফলে তারা সমাধানের বিকল্প অপশনগুলো সহজে তাদের চোখে পড়েনা।
আত্মহত্যার বৈশিষ্ট্যঃ
১। মানসিক কষ্ট বা যন্ত্রণা
২। আশাহীনতা,অসহায়ত্ব
৩। সমস্যার সমাধান করা
৪। নিজের প্রতি ক্রোধ
৫।
অন্য কাউকে কথায় কথায় আত্মহত্যার ইচ্ছের কথা জানানো।
তাই একটু লক্ষ্য করলেই আপনি বুঝতে পারবেন আপনার প্রিয়জন কি বিপদ ঘটাতে যাচ্ছে।
আত্মহত্যা প্রতিরোধ করণঃ
তাই আপনি যদি আপনার প্রিয়জনের মধ্যে হতাশা বা বিষন্নতা লক্ষ্য করেন একটু সহানুভুতির হাত বাড়ান।
১। তার তীব্র মানসিক বেদনা ও কষ্ট হ্রাস করার চেষ্টা করেন।
২। তার সমস্যা সমাধানের বিকল্প পথ গুলো দেখাতে সাহায্য করেন।
৩। আত্মবিধংসী কাজ থেকে সামান্যতম সময়ের জন্যে হলেও তাকে অন্য দিকে উতসাহিত কর। একটা মুহুর্ত পেরিয়ে গেলে সে হয়ত আর সেই ভয়ংকর পথে পা বাড়াবেনা।
৪। প্রয়োজনে সাইক্রিয়াটিস্টের পরামর্শ ্নিতে সাহায্য করুন।
আত্মহত্যা সংক্রান্ত কিছু মজার তথ্য
১। মেয়েরা পুরুষদের চেয়ে তিনগুন আত্মহত্যার চেষ্টা করে কিন্তু মরেনা।
আর আত্মহত্যার হার মেয়েদের চেয়ে পুরুষদের মধ্যে বেশি(তবে বর্তমানে মেয়েদের সংখ্যা করমশ বেড়ে যাচ্ছে)
২।
যারা একবার আত্মহত্যা করে তারা সাধারণত দ্বিতীয়বার আর সে মুখী হয়না।
৩। যুবক বয়সে মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা বেশি করে কিন্তু সফল বেশি হয় বয়ষ্করা।
৪। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বিশ মিনিটে একজন আত্মহত্যআ করে।
কিন্তু তারপরও দেখা যায় তারা প্রতি দুইশ জনে একজন সফল হয়।
৫। বসন্ত ও শীতকালে আত্মহত্যার হার বেড়ে যায়।
৬। আত্মহত্যার আগে যারা দার্শনিক কথা লিখে যায় তারা মূলত মরেনা কিন্তু যারা স্বাভাবিক খবর লিখে যায় তারা মরে।
৭। গণমাধ্যমে প্রকাশিত আত্মহত্যার বিবিরণী মানুষকে আত্মহত্যার জন্যে প্ররোচিত করে। বর্তমানে আমাদের সমাজে এই ট্রেন্ড খুব বেশি দেখা যাচ্ছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।