এরি মধ্যে বেশ কটি দিন পেরিয়ে গেল। বিলেত থেকে বড় মামা এলেন সপরিবারে। মামা মামী এসেছেন এই নিয়ে তিনবার । কিন্তু মিশু যাওয়ার পর এই প্রথম এল। ও আমার যদিওবা বছর দুয়ের বড় তথাপি ভাইয়া বলা হয়না।
সম্পর্কটা তুইতেই চলছে আজো। প্রায় ছবছর পর দেখা। আধো আধো ইতস্থতায় ঠিকই একজন আর একজনকে চিনে নিয়েছিলাম।
এ কবছরে আমাদের চেহারা ছবিতে বিস্তর পরিবর্তন এসেছে। ওতো গোঁফ রেখে একেবারে
যবরদস্ত একজন পুরুষ হয়ে ফিরেছে।
সারাদিন তারা রেস্ট নিয়ে জার্নির ধকল সামলে সন্ধ্যায় উঠেছেন ,দিবানিদ্রা শেষকরে। এরি মধ্যে মা মাছের মুড়ো দিয়ে মুড়িঘণ্ট রেঁধেছেন,পিঠা বানালেন। জাম আলু দিয়ে মুরগীর বাচ্চার তরকারী রাঁধলেন,চ্যাঁপা শুটকির ভর্তা করলেন। বড় মামা টেবিলে বাড়া সব রান্না তরকারী গুলো ঢাকনা উঠিয়ে উঠিয়ে দেখলেন।
-ভাইজান !তুমি আগের মতনই আছ দেখছি।
সবেতো সন্ধ্যা হলো ,চা বানাতে গেলাম আমি। তোমরা ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খাও।
আমাকে উদ্দেশ্য করে
-ওদের কি লাগে একটু খেয়াল রাখ।
-"ভাগ্নী আমার বড় হয়েছে তোমার বলা লাগবে না"
আমার দিকে চেয়ে মামার উত্তর।
আমি সলজ্জ একগাল হাসি দিয়ে তাদেরকে বসার ঘরে নিয়ে গেলাম।
মিশুকে অনেক বার লক্ষ্য করলাম ও সুযোগ পেলেই আমার দিকে অপলক চেয়ে থাকে। এতো মহা যন্ত্রনায় পড়া গেল। ওর ভেতরে কি কথা খেলে যাচ্ছে এমন যে কারনে প্রায়শই অন্যমনস্ক লাগছে ওকে।
পরদিন সকালে বাবার সাথে বৈঠক চলছে মামা মামীর। এদিকে আমার ভিতরে আগুন জ্বলছে মনে হলো।
যদি তারা সবাই একমত হয় এ বিয়ের ব্যাপারে ! তো আমার কিচ্ছু করার থাকবে না। মনে মনে দোয়া দরূদ পড়ছি যেন এমনটি না ঘটে। তবে বাবাকে নিয়ে চিন্তা হলো, আমাকে আদর করেন নিঃশ্বন্দেহে কিনতু কোনকিছুর ডিসিশন নিতে গিয়ে মাকে না করেন যেন আমাকে জিগেস করা নাহয়।
তার আভিজাত্যে বাঁধে হয়তবা। এখনো মেয়েকে মেয়ে মানে অবলা ভাবা হয়।
সেজন্যেই বাবা তাইতেই থাকছেন বোধকরি। বাবা কি অন্য পুরূষদের থেকে আলাদা হবেন?আমাদেরকে মানুষ যে কবে ভাববেন তথাকথিত পুরূষ সম্প্রদায় আমার জানা নাই। যাক সেই গুরূগম্ভীরতা বাদ রেখে আসল বিষয়ে ঢোকা যাক।
বৈঠক শেষে এই সিদ্ধান্তে সকলেই একমত হলেন যে ঐ পাকিস্তানী যুবকই হবে কণ্যার বর। আমি শুনে বিমর্ষপ্রায়।
মামী- মা দুজনই আমাকে বুঝাচ্ছেন। এদেশ ওদেশ বলে কিছু ভাবতে নেই । সবটাকে এক ধরেই তারা নাকি এগুচ্ছেন!তাহলে মুজিবরকে কেন এত কিছু সহ্য করতে হচ্ছে ?বাবা নিজেওতো তার আদর্শে উদ্দীপ্ত। সব কি তাহলে নিছক লোক দেখাবার প্রহসন।
আমার ভেতরে ঝড়ের মাতম চলছে।
কি যে দুঃসহ লাগছে তা তখনকার আমি ছাড়া কারো বুঝা সম্ভব নয়। ঠিক তখনি মনে হলো মিশুর কথা। ও যদি কোন ভাবে সাহায্য করতে পারে।
ও শুয়ে আছে। ওকে দেখতে চিন্তিত মনে হচ্ছে যদিও তবু সাহায্যের আশায় ওর ঘরে ঢোকা।
-কিরে !শরীর খারাপ,অবেলায় শুয়ে?
-এমনিতেই শুয়ে,তোকেওতো বিদ্ধস্ত মনে হচ্ছে,কি হয়েছে?
-সে জন্যই আসা। আমি কি করব এখন?
-সব ছেড়ে তুই শুধু আমার হতে পারিস না!
শুনে আমার আরো মেজাজ সপ্তমে চড়ার দশা। একি বলছে ও। বিলেতি ছেলের বৌ করবে আমাকে ওর মা মানে আমার মামী। অসম্ভব! কস্মিন কালেও সম্ভব নয় তা।
-তোর মাকে বল। সে কি মানবে?
-চল আমরা পালিয়ে যাই।
ঠাস্ করে ওর বাঁ গালে একটা চড় বসিয়ে প্রায় চিৎকার করেই বললাম
-কাপুরূষ কোথাকার। তুই আমাকে এতটা নীচ প্রকৃতির ভাবলি কি করে?
আমার আত্মসম্মান বোধ এতটা ঠুনকো নয়।
আমি ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার পথেই মামীর চোখে চোখ পড়ল।
মামী কিছুটা ইতস্তত।
যাক, তবে আমি নিশ্চিত ছিলাম যে মামী সব বুঝেও কাউকে কিচ্ছু বুঝতে দিবে না। কারন মামা সম্পর্কটা তাহলে সেভাবেই গড়তে চাবে যেহেতু তার ছেলের পছন্দ। তিনি চান না বলেই কাউকেই বুঝতে দিবেন না। এমনকি তার ছেলের সাথেও অভিনয় করবেন ।
যেন কোন কিছুই উনি দেখেন নি , বুঝেননি।
আমার বিয়ের দিন মিশু ওর খালার বাড়ি চলে যায়। মামা ওকে অনেক বার থাকতে বললেন তবু থাকল না। আমার ভীষণ খারাপ লাগছিল ওর জন্য। বারবার মনে হচ্ছিল নিজের মতামতের কথা ওতো বলতেই পারে
আমাকে ,তাই বলে অমন আঁচড়ন করা ঠিক হয়নি আমার।
ওকেতো আমারও ভাল লাগত কিন্তু পালিয়ে বিয়ে করার কথা বলায় আমি ঠিক থাকতে পারিনি। মাঝে মাঝে মনে হয় বাকী জীবনটা আমার অমন হয়েছে হয়ত ওরি অভিশাপে।
চলবে..................
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।