আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিবর্তনের সত্যাসত্য................

আমি অতি সাধারন.... বিংশ শতাব্দীর সাড়াজাগানো বিষয় বিবর্তনবাদ যা মুলত বস্তুবাদী মতাদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত, বিজ্ঞান নামে চালিত এক প্রকারের অপবিজ্ঞান। প্রাচীন গ্রীক যুগ থেকেই এ ধরনের চিন্তাচেতনা কিছু দার্শনিকের দ্বারা প্রকাশিত হলেও মুলত উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে ডারউইনের বই the origin of species by means of natural selection এর মাধ্যমে পূর্ন বিকশিত হওয়ার সুযোগ লাভ করে। ডারউইন বিবর্তনবাদের main factor হিসেবে natural selection বা প্রাকৃতিক নির্বাচনকে দেখান। এটা এমন নয় যে ডারউইন ই প্রথমে প্রাকৃতিক নির্বাচনের কন্সেপ্ট দেন। ডারউইনের আগেই জীববিজ্ঞানীরা এ প্রাকৃতিক নির্বাচন সম্পর্কে জানত।

তারা এটিকে প্রজাতির ধ্বংস হওয়া থেকে বাঁচিয়ে প্রজাতির স্থিতি রক্ষার factor হিসেবেই মনে করত। তবে ডারউইনই একে প্রথমে বিবর্তনের মেকানিজম হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। অবশ্য ডারউইনের সমসাময়িক বিজ্ঞানী রাসেল ওয়ালেস ও এ প্রাকৃতিক নির্বাচন দিয়ে বিবর্তনবাদকে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস চালান। তবে যেহেতু ডারউইনই প্রথম এটি নিয়ে বিশদ লেখালেখি করেন তাই তাকেই এর কৃতিত্ব দেয়া হয়। কিন্তু পরে যখন বিবর্তনাবাদীরা এ প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তবাদকে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করতে পারছিলেন না তখন তারা নতুন আরেকটি কন্সেপ্ট এর সাথে যুক্ত করলেন যাকে বলে মিউটেশন।

আর এর নাম দেন new Darwinism বা নব্য ডারউইনবাদ। বিজ্ঞানী মায়ার,ডবজানাস্কি ও জুলিয়ান হাক্সলি এ নব্য ডারউইনবাদের প্রতিষ্ঠাতা। আমাদের দেশের পাতি নাস্তিক ও বিবর্তনবাদীরা কথায় কথায় এ প্রাকৃতিক নির্বাচনের লেবু কচলায়। তারা অত্যন্ত বিজ্ঞোচিত ও চটকদার ভংগিতে এ প্রাকৃতিক নির্বাচনের কথা বলে বিবর্তনবাদকে প্রমান করতে চায়। এ প্রাকৃতিক নির্বাচন আসলে কি?তথাকথিত বিবর্তনের ক্ষেত্রে এর ভূমিকা আসলে কতটুকু?আমি আগেই বলে নিচ্ছি আমি কোন বিজ্ঞানী বা গবেষক নই।

শখের পাঠক হিসেবে পড়তে পড়তে যতটুকু জেনেছি সে জিনিসটাই লেখার চেষ্টা করব। আমি আমার কথা নয় বরং চেষ্টা করব স্বনামধন্য বিজ্ঞানীদের উদ্ধৃতি রেফারেন্সসহ তুলে ধরতে। এর দ্বারা আমি পাঠককে শুধু এ জিনিসটি বুঝাতে চাই যারা ডারউইনের দেয়া বিবর্তনের ব্যাখ্যা স্বরূপ প্রাকৃতিক নির্বাচনকে ওহী হিসেবে নিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছে তাদের এ ঢেঁকুর গ্যাস্ট্রিকের আলামত। চলুন দেখি, যার ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে প্রকৃতিক নির্বাচনকে বিবর্তনের ভিত্তি হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয় সে ডারউইন এ প্রাকৃতিক নির্বাচন নিয়ে কি বলেন? “এটা কি সম্ভব যে,একটি বাদুড়ের গঠন ও অভ্যাসবিশিষ্ট প্রানী গঠিত হয়েছে কিছু বিস্তর অভ্যাস ও গঠনের পার্থক্যবিশিষ্ট প্রানীর পরিবর্তিত হওয়া থেকে?এটা কি আমরা বিশ্বাস করতে পারি যে প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফলেই একদিকে জিরাফের লেজের মত কম গুরুতবপূর্ন অঙ্গের সৃষ্টি হয়েছে অপরদিকে চোখের মত সুন্দর অংগের সৃষ্টি হয়েছে”। (১) ডারউইন তার এক চিঠিতে এও স্বীকার করে নিয়েছেন যে এ প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তনবাদ ব্যাখ্যায় অনেক ভুল আছে।

তিনি লিখেছেন “এতে অনেক ভুল প্রায় নিশ্চিত,যদিও আমি তা ধরতে পাচ্ছি না” (২) প্রাকৃতিক নির্বাচন আসলে কি? শক্তিশালী জীব কোন একটি পরিবেশে বেশি টিকে থাকতে পারে,বেশি খাপ খাওয়াতে পারে এ থেকেই প্রাকৃতিক নির্বাচনের ধারনা আসে। survival of the fittest তত্ত্ব অনুযায়ী যোগ্যতমরাই টিকে থাকবে,যোগ্যতমদেরই প্রকৃতি টিকিয়ে রাখবে এরকম চিন্তাধারার থেকেই প্রকৃতিক নির্বাচনে নামক টার্ম আসে। উদাহরনসবরুপ বলা যায়,একটি জেব্রার দল,যারা প্রতি নিয়ত সিংহের সম্মুখীন হয়। সিংহের শিকার হতে প্রানে বাঁচার জন্য তারা দৌড়ে বাঁচতে চায়। এখন জেব্রার দলে সে সকল জেব্রাই বেঁচে থাকবে যারা ভাল দৌড়াতে পারে।

আর যারা ভাল দৌড়াতে পারে না তারা সিংহের আহারে পরিনত হয়। আরেকটি উদাহরন লক্ষ্য করি,একটি এলাকায় দুই ধরনের কুকুর আছে। এক ধরনের কুকুরের লোম বড় আরেকটির লোম ছোট। ওই এলাকায় প্রচন্ড শীত পড়লে ছোট লোমের কুকুর মারা যেতে যাবে অপরদিকে বড় লোমের কুকুর জীবিত থাকবে ফলে আস্তে আস্তে বড় লোমের কুকুরের অনুপাত এলাকায় বেড়ে যাবে। একটা পর্যায়ে ছোট লোমের কুকুর হয় গরম কোন এলাকায় পাড়ি জমাবে নয়তো পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

অন্য কথায় বলা যায় প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফলে বড় লোমওয়ালা কুকুররা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে। লক্ষ্য করুন এখানে কোন নতুন প্রজাতির প্রানীর আবির্ভাব ঘটে নি। দুই প্রজাতির কুকুর অলরেডী সেখানে ছিল। তার মধ্যে এক প্রজাতির কুকুর প্রাকৃতির নির্বাচনের জন্য সুবিধা পেয়ে যায়। এটা তো এমন নয় যে প্রাকৃতিক নির্বাচনের জন্য বড় লোমের কুকুরের আবির্ভাব ঘটেছে,কিংবা ছোট লোমের কুকুর বড় লোমের কুকুরে পরিনত হয়ে গেছে।

এতে কি এক প্রজাতির প্রানী আরেক প্রজাতির প্রানীতে পরিনত হয়ে গেছে? অতএব বলা যায়,প্রাকৃতিক নির্বাচনে ফলে কোন নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয় না বা নতুন কোন বৈশিষ্ট্যের সৃষ্টি হয় না। তাই প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তনবাদ ব্যাখ্যা দেয়া যায় না। ডারউইন নিজেই এ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন- “যতক্ষন পর্যন্ত সুবিধাজনক পার্থক্য ও ভেরিয়েশন না থাকে ততক্ষন পর্যন্ত প্রাকৃতিক নির্বাচন কিছুই করতে পারেনা”। (৩) প্রাকৃতিক নির্বাচন কোন নতুন কিছু সৃষ্টি করে না। বরং যে সকল জীব আগে থেকেই ছিল তাদের মধ্যে কিছু প্রজাতি ধ্বংস করতে সহায়তা করে।

বিশিষ্ট জীববিজ্ঞানী D’Arcy Wentworth Thompson এর ভাষায়- “আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রাকৃতিক নির্বাচন সৃষ্টির জন্য নয় বরং ধবংসের জন্য-উপড়িয়ে ফেলার জন্য,ছেঁটে ফেলার জন্য,কেটে ফেলার জন্য এবং আগুনে নিক্ষেপ করার জন্য” (৪) প্রাকৃতিক নির্বাচনকে কেউ অস্বীকার করছে না। আমি আগেই বলেছি ডারউইনের আগেই যারা সৃষ্টিতে বিশ্বাসী ছিল তারাও মুলত এ জিনিসটি জানত। এখনো সবাই একে মানে তবে বিবর্তনবাদের কারন হিসেবে নয়। যারা বিবর্তনবাদ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেন তারা বিশিষ্ট বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানী স্টিফেন জে গোল্ডের নাম শুনে থাকবেন। তিনি প্রাকৃতিক নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিবর্তনের ভূমিকা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে খুব সুন্দর একটি কথা বলেছেন।

তিনি বলেছেন- “ডারউইনবাদের মূলতত্ত্ব একটা ছোট শব্দের মধ্যে সীমাবদ্ধঃপ্রাকৃতিক নির্বাচনই বিবর্তনীয় পরিবর্তনের মূল চালিকা শক্তি। প্রাকৃতিক নির্বাচন যে অক্ষমদের দূরীকরনে নাবোধক ভুমিকা পালন করে এটা কেউ অস্বীকার করেনা। ডারউইনিয়ান থিউরীর যা দরকার তা হল এটা সবলদের ও একই সাথে সৃষ্টি করে”। (৫) স্বনামধন্য জীবাশ্মবিজ্ঞানী Dr. Colin Patterson যিনি British Museum of Natural History এ সিনিয়র বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করেছেন প্রাকৃতিক নির্বাচন সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন- “এখন পর্যন্ত কেউ প্রাকৃতিক নির্বাচনের মেকানিজম দ্বারা নতুন কোন প্রজাতি দেখাতে পারে নি। এমন কি কাছাকাছি ও যায় নি,যদিও বেশিরভাই নব্য ডারউইনবাদীদের যুক্তি তর্কই এটি নিয়ে” (৬) পি পি গ্রাসে,রজার লিওইন,আর হাল্ডেন এর মত প্রচুর বিজ্ঞানী এ প্রাকৃতিক নির্বাচন কিভাবে বিবর্তনবাদ ঘটাতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে গেছেন।

তাই হালের যারা প্রাকৃতিক নির্বাচন দিয়ে বিবর্তনবাদ ব্যাখ্যা করতে পারছে না তারা শুধুমাত্র নব্য ডারউইনবাদের নতুন তত্ত্ব মিউটেশন নিয়েই কথা বলতে বেশি পছন্দ করেন। আস্তে আস্তে তারা তাদের আশ্রয় মিউটেশনে খুঁজে নিয়েছেন। যদিও সে আশ্রয় ও মাকড়শার জালের ন্যায় দূর্বল। বিজ্ঞানের দূর্দান্ত গতির কাছে টিকতে পারছে না। footnotes: ১,Charles Darwin, The Origin of Species, Chapter VI, “Difficulties of the Theory. ২, Francis Darwin, The Life and Letters of Charles Darwin, Vol. II, p. 10 ৩, Charles Darwin, The Origin of Species by Means of Natural Selection, New York: The Modern Library, p. 127 ৪, Lee M. Spetner, Not By Chance, Shattering the Modern Theory of Evolution, The Judaica Press Inc., 1997, p. 175 ৫, Stephen Jay Gould, “The Return of Hopeful Monsters,” Natural History, Vol. 86, July-August 1977, p. 28 ৬, Colin Patterson, “Cladistics,” BBC, Interview with Brian, Peter Franz, 4 March 1982 আজ(১-৯-২০১১) সকালে সময় টিভিতে একটি সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে জাফর ইকবাল স্যারকে একজন প্রশ্ন করেছিল “বাংলাদেশের নাইন টেনের পাঠ্যবইগুলোতে কেন ডারউইনের মতবাদ পড়ানো হয় না?” উত্তরে তিনি বলেছেন তিনি জানেনা বিষয়টা তবে তিনি মনে করেন এ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ন তাই এ বিষয়টি পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভূক্ত করা উচিত।

স্যার বাংলদেশের একজন স্বনামধন্য লেখক তাই অনেকের কাছে উনি আইকন। অনেকে উনার কথাটি সাথে সাথে লুফে নেবেন, কিন্তু আমার মনে হয় ব্যাপারটিকে ওভাবে নিশ্চিত সত্য ধরে না নিয়ে আসলে এটার বিপক্ষে ও যে কিছু কথা থাকতে পারে তাও আমাদের জানা উচিত। স্যার জীববিজ্ঞানের সাথে সংশ্লিষ্ট না তাই বিবর্তন নিয়ে ওনার কথা তেমন একটা গুরুত্বপূর্ন না হলেও অনেকে না বুঝে ব্যাপারটিকে খাঁটি সত্য ধরে নেবেন এ বিষয়তা নিশ্চিত। একজন লয়ার হয়ত ‘ল এর অনেক বিষয় জানেন কিন্তু তিনি ডাক্তারী পেশার কিছুই জানেনা। তাই আমি ওনার কাছ থেকে ডাক্তারী বিষয়ক কিছু নেব না।

স্যার আমারও খুব প্রিয় একজন লেখক কিন্তু কিছু বিষয়ে যে কারো কাছ থেকে কিছু নেয়ার সময় আমাদের মনে হয় একটু সতর্ক হওয়া উচিত। আপনি আমাকে বলতে পারেন “তুমি কোন ফিল্ডের যে তোমার কথা নেব”?আমি আগেই বলেছি আমি গবেষক নই। আমি শখের পাঠক। বিবর্তনের পক্ষে বিপক্ষে কিছু বইপত্র পড়তে গিয়ে আমি অনেক কিছু পেয়েছি যা আমাদের একটু চিন্তা করা দরকার। আমি আমার কোন কথা বলব না বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের কথা রেফারেন্সসহ কোট করার চেষ্টা করব।

আমি এ সিরিজের আগে একটি লেখা দিয়েছিলাম। মূলত স্যারের এ কথা দ্বারা বুঝলাম আসলে অনেকের বিবর্তনবাদ নিয়ে কিছু সংশয় আছে তাই আমি চেষ্টা করব আমার নোটগুলোকে সামনে এগিয়ে নিয়ে এসকল সংশয় দূর করার। (ইনশাল্লাহ) মুলত ডারউইনের বিবর্তনের মুলমন্ত্র মুল চালিকা শক্তি প্রাকৃতিক নির্বাচন যখন বিবর্তনবাদ ব্যাখ্যা করতে অসমর্থ হয় তখন বিজ্ঞানী মায়ার,ডবজানাস্কি ও জুলিয়ান হাক্সলি নব্য ডারউইনবাদ বা neo Darwinism এর কন্সেপ্ট নিয়ে আসেন। এ তত্ত্ব অনুযায়ী বিবর্তনের দুটি চালিকা শক্তি। মিউটেশন এবং প্রাকৃতিক নির্বাচন।

আমার পূর্বের নোটে আমি প্রকৃতিক নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছি। এ নোটে আমি মিউটেশন নিয়ে আলোচনা করব। আমার আলোচনার উদ্দেশ্য এতটুকুই মানুষ আসলে বিবর্তনকে যেমন ওহির মত সত্য ধরে নিচ্ছে ব্যাপারটা মোটেই তেমন নয়। মিউটেশন আসলে কি? কোষের DNA মলিকুলের ভাংগন বা স্থান পরিবর্তনকে মিউটেশন বলে। মিউটেশনের ফলেই DNA সিকোয়েন্স ভেংগে যায়।

কোন কোন সময় এর নিঊক্লিওটাইডগুলো এক স্থান হতে অপরস্থানে সরে গিয়ে মিঊটেশন ঘটায়। এ ভাংগন মুলত বাহ্যিক কারন যেমন রেডিয়েশন অথবা রাসায়নিক কারনেই হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন বেশিরভাগ মিউটেশনই প্রানীদেহের জন্য খারাপ। এটা বিজ্ঞানে একটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে মিউটেশন প্রানীদেহের ক্ষতিসাধন করে। প্রখ্যাত জীববিজ্ঞানী B.G.Ranganathan মিউটেশন সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন- “প্রথমত,প্রকৃত মিউটেশন প্রকৃতিতে দুর্লভ।

বেশিরভাগ মিঊটেশনই ক্ষতিকর কারন জিনের গঠনের সাজানো পরিবর্তনের বদলে এতে এলোমেলো পরিবর্তন দেখা যায়। এলোমেলো যে কোন পরিবর্তনই কোন সাজানো সিস্টেমকে ভালোর বদলে খারাপের দিকেই নিয়ে যায়। উদাহরনস্বরুপ ভূমিকম্প যদি কোন সাজানো বিল্ডিংয়ে আঘাত হানে তখন এর ভালো কিছু হওয়ার কোন সম্ভাবনাই থাকে না” । (১) ওয়ারেন ওয়েবার মিউটেশন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেছেন- “অনেকে শুনে আশ্চার্য হবেন যে বাস্তবতঃ সকল mutant জিনই ক্ষতিকর। মিউটেশন বিবর্তন প্রক্রিয়ার একটি প্রয়োজনীয় অংশ।

বাস্তবতায় যেখানে মিঊটেশন ক্ষতিকর সেখানে এটি কিভাবে উচ্চশ্রেনীর প্রানীদের বিবর্তনে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে?”(২) বিবর্তনবাদীরা মিঊটেশনকে একটি জাদুর যন্ত্র হিসেবে দেখায়। তারা মিউটেশনের কারনে যে কোন অলৌকিক কিছু সম্ভব বলে বিশ্বাস করে। Celal Sengor দাবি করেছেন যে মিউটেশনের অলৌকিক প্রভাব রয়েছে তিনি আরো বলেছেন-“মিউটেশনের মাধ্যমে আইনস্টাইন ও তৈরি কর সম্ভব”। বিবর্তনবাদীরা এ পর্যন্ত উপকারী মিউটেশন ঘটানোর জন্য কম চেষ্টা করে নি। তারা কয়েক দশক ধরে এটা নিয়ে প্রচুর গবেষনা করেছে।

মিঊটেশনের মাধ্যমে বিবর্তনবাদ প্রমান করার জন্য fruit fly এর উপর চালানো পরীক্ষাটি খুবই প্রসিদ্ধ। এ পরীক্ষার মাধ্যমে তারা প্রমান করতে চেয়েছেন মিউটেশন বিবর্তনবাদ ঘটানোর জন্য দায়ী। কিন্তু একটাও প্রয়োজনীয় মিউটেশন ঘটাতে তারা সক্ষম হননি। এ সম্পর্কে বলতে গিয়ে ডারউইনবাদী Gordon Rattray Taylor বলেছেন- “এটা খুবই চমকলাগানো কিন্তু খুব একটা প্রকাশিত ঘটনা না। প্রজনন বিদেরা ৬০ বছর যাবৎ ল্যবরেটরীতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে fruit fly উৎপন্ন করার জন্য চেষ্টা করেছেন কিন্তু তারা তো নতুন কোন প্রজাতি উৎপন্ন করতে পারে নি,এমন কি নতুন কোন উপকারী এনজাইম ও তৈরি করতে পারে নি।

যদিও এ সকল fruit fly রা প্রতি ১১ দিনে নতুন বংশধারার জন্ম দেয়”(৩) বিবর্তনবাদীরা যে fruit fly নিয়ে কাজ করছিল সেটির একজোড়া নতুন পাখনা সৃষ্টি করে কিন্তু প্রানীটি চিরতরে ঊড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। অন্য কথায় বলা যায় এ মিউটেশন প্রানীটির ক্ষতি সাধন করেছে এবং প্রানীটিকে প্রতিবন্ধী করে দিয়েছে। এটা DNA তে নতুন কোন তথ্যের সংযুক্তি ঘটায় না। তাই অনেক বিজ্ঞানী বলেছেন মিউটেশন প্রানীদেহের যদি অল্পস্বল্প উপকার করেও থাকে কিন্তু নতুন কোন তথ্যের সংযুক্তি ঘটায় না বলে এ মিঊটেশনের বিবর্তন প্রক্রিয়ায় কোন ভুমিকা নেই। বিবর্তনবাদীরা উপকারী মিউটেশনের উদাহরন হিসেবে sikle cell anemia রোগটির কথা উল্লেখ করে।

এ রোগের কারনে রক্তের হিমোগ্লোবিনের গঠনগত কিছু পরিবর্তন ঘটে। এ হিমোগ্লোবিনই রক্তের মধ্য দিয়ে অক্সিজেন বহনে সহায়তা করে। গঠনগত পরিবর্তনের ফলে এর অক্সিজেন বহন ক্ষমতা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ রোগাক্রান্ত মানুষ শ্বাস সংক্রান্ত জটিলতায়ও ভোগে। কিন্তু তারপরো এটাকে উপকারী মিউটেশন হিসেবে উল্লেখ করা হয় কারন এ রোগ কিছুটা ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।

তাই এটা বিবর্তনের উপহার হিসেবেই বিবর্তনবাদীরা মনে করে। ব্যাপারটা যেন এমন যে কেঊ প্যারালাইজড অবস্থায় জন্ম গ্রহন করার ফলে আমাদের খুশি হয়ে যাওয়া। যাক বাবা সে কখনো কোথাও উষ্ঠা খেয়ে পড়বে না,কারন সে তো হাঁটতেই পারে না। অনেকে বর্তমানে রিচার্ড ডকিন্সকে বিবর্তনবাদের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞানী হিসেবে মনে করে। হাক্সলীকে যেমন বিবর্তনের ঘোর সমর্থক ও প্রচারক হওয়ার কারনে “darwin’s bulldog” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল তেমনি ডকিন্সকেও অনেকে “Darwin’s 2nd bulldog” বলে থাকেন।

তাকে এক ইন্টারভিউতে উপকারী মিউটেশন হয়েছে এমন প্রানীর উদাহরন দিতে বললে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেন নি,বরং তিনি কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছিলেন বিবর্তনের পক্ষে কোন সদুত্তর না দিতে পারার কারনে। (৪) ফ্রান্সের প্রখ্যাত জীববিজ্ঞানী এবং ফ্রান্স বিজ্ঞান একাডেমীর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট Pierre-Paul Grassé বলেছেন- “মিউটেশন কোনরকম বিবর্তন ঘটায় না”(৫) যারা বিবর্তনবাদ নিয়ে পড়াশোনা করেন তারা প্রখ্যাত বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানী Stephen jay gould এর নাম শুনে থাকবেন। মিউটেশন বিবর্তনে কতটুকু ভূমিকা রাখে এ সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন- You don’t make new species by mutat-ing the species… A mutation is not the cause of evolutionary change.(6) Pleiotropic Effect জেনেটিক কোডিং প্রক্রিয়া বিবর্তনবাদীদের কপালে নতুনভাবে ভাঁজ ফেলে দিয়েছে। পূর্ন গঠনের কোন প্রানীর একটি জিন একের অধিক তথ্য ধারন করে । উদাহরনস্বরুপ বলা যায় একটি জিন একইসাথে লম্বা হওয়া এবং চোখের রং এর তথ্য ধারন করে।

মাইকেল ডেন্টনের মতে উচ্চশ্রেনীর প্রানীদের প্রায় সকল জিনই একের অধিক অংগের তথ্য বহন করে। প্রানীদেহে জেনেটিক গঠনের এমন বৈশিষ্ট্যের কারনে, মিউটেশনের কারনের যে কোন জিনের DNA পরিবর্তনই একের অধিক অংগকে আক্রান্ত করে। তাই মিঊটেশনের প্রভাব দেহের এক জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে না বরং অনেক অংগকেই তার ধ্বংসকারী প্রভাবে প্রভাবিত করে। তাই মিঊটেশনের ফলে আপাত দৃষ্টিতে কিছু দৈব সুবিধা পেয়েছে বলে মনে হলেও অন্যান্য অংশে তা যে ক্ষতির চিহ্ন রেখে যায় তা লাভজনক বা সুবিধাজনক অংগের লাভ বা সুবিধাকে ছাড়িয়ে যায়। ফলে মিঊটেশন মোটের উপর ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনা।

মিউটেশন কেন বিবর্তনবাদকে সমর্থন যোগায় না তা দিয়ে গবেষনা করতে গিয়ে তিনটি বিষয় উঠে আসে ১,মিঊটেশন সবসময় ক্ষতিকর। যেহেতু এটি দৈবভাবে ঘটে ,এটি সবসময় প্রানীর ক্ষতিই করে। কোন নিঁখুত জটিল গঠনের মধ্যে অবচেতন হস্তক্ষেপ ক্ষতি বৈ উপকার করে না। ২,DNAতে কোন নতুন তথ্য সংযুক্ত হয় না। DNA এর জেনেটিক তথ্যের উপাদানের অপসারন, ধ্বংস কিংবা স্থান পরিবর্তন হয় তারপরো মিউটেশন কখনোই জীবিত প্রানীর নতুন কোন অংগের বা বৈশিষ্ট্যের সৃষ্টি করে না।

৩,মিঊটেশনের ফলাফলকে তার পরবর্তী বংশধারায় যেতে হলে মিঊটেশনটি অবশ্যই reproductive cell এ ঘটতে হবে। দেহের অন্য কোন অংগের কোষে এ মিউটেশন ঘটলে তা বংশ পরম্পরায় পরবর্তী প্রানীতে যাবে না। উদাহরণস্বরূপ মানুষের চোখে যদি রেডিয়েশনের কারনের DNA উপাদানে পরিবর্তন আসে তাহলে তা তার পরবর্তী অংশে যাবে না। উপরোক্ত তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি মিউটেশন কোন নতুন প্রজাতির জন্ম দেয় না। হিরোশিমা,নাগাসাকি আর চরনবিলে মানুষ যে রকম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে মিউটেশন ও তেমনি সমস্যার সৃষ্টি করে।

তাই আজ নব্য ডারউইনবাদ এক কঠিন হুমকির সম্মুখীন। বিজ্ঞানের আগামীর আবিষ্কারগুলো হয়ত মানুষকে আরো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে যে মানুষ কত ভুল একটি থিউরীকে এতদিন লালন করেছে। Footnotes: ১,B. G. Ranganathan, Origins?,Pennsylvania: The Banner Of Truth Trust,1988. (emphasis added) ২,20 Warren Weaver et al., “Genetic Effects of Atomic Radiation”, Science, vol. 123, June 29, 1956, p. 1159. ৩,Gordon R. Taylor, The Great Evolution Mystery, New York: Harper & Row, 1983, p.48 ৪,”Biological Evidence of Creation:From a Fog to a Prince,” Keziah,American Portrait Films, Cleveland,OH,1998. ৫,Pierre-Paul Grassé, Evolution of Living Organisms, p-88 ৬,Stephen J. Gould, speech at Hobart College, February 1414,1980 -MuZahid Rasel ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.