জলপথ ব্যবহারের প্রথম দিকে মানুষ বিভিন্ন গাছের গুঁড়ি কাজে লাগিয়েছে। গবেষকদের ধারণা, খ্রিস্টপূর্ব ৪ হাজার বছর আগেও গাছের ডাল এবং গুঁড়ি একত্রে বেঁধে পানিতে ভাসার সাফল্য মানুষ পেয়েছিল। তারপর বাঁশের ভেলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন গাছের গুঁড়ির ভেতরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে তৈরি হয় ক্যানো। জলে চলার জন্য এসব জলযানের নির্দিষ্ট কোনো নকশা না থাকলেও প্রমাণ মেলে যে হাজার হাজার বছর আগে এ ধরনের জলযান ব্যবহার করত মানুষ। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে সম্পূর্ণ কোনো নৌকার ফ্রেম গড়তে বেশ সময় লেগেছে।
তবে লম্বা লাঠি দিয়ে জলতলে ধাক্কা দিয়ে এ ধরনের জলযান দূরত্ব অতিক্রম করতে পারত। বড় নদী বা জলাশয়ে এ ধরনের গাছের খোলের তৈরি নৌকা অল্প দূরত্বে ব্যবহার হতো। পরে ক্যানোগুলোর রূপ হয়েছে ভেলা। ভেলায় করে ভেসে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলাচলের জন্য প্রয়োজন পড়ে উন্নত নকশার। প্রয়োজেনের তাগিদেই তাই জলযানের বিবর্তন হয়।
অল্প সময়ে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করার চেয়ে তখন মজবুত কাঠামোর জলযান নির্মাণের দিকে ঝুঁকে মানুষ। সবচেয়ে বড় বাধা ছিল ওজন ও টেকসই উপাদান। কাঠের ব্যবহারের ফলে নকশার ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই কাঠ ছিল মুখ্য। পরবর্তীতে যদিও সে জায়গাটা করে নেয় লোহা, ইস্পাত থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংকর ধাতু। তবে সময়ের পালা বদলে বিজ্ঞানের উন্নয়ন হয়েছে কল্পনাতীত।
মাত্র ১০০ বছর আগেও জলযানের আদল পরিবর্তনে যে গতি ছিল, সে তুলনায় গত কয়েক দশকেই এসেছে জলযানের অভাবনীয় উন্নয়ন। উনিশ শতকে শুরুর দিকেই আধুনিক জলযান সমুদ্রে ভাসানো সম্ভব হয়। যদিও এর আগেই সমুদ্রে জলযানের রাজত্ব করেছিল মানুষ। তারপরও বাষ্পচালিত জলযান, লোহা-কাঠের মজবুত কাঠামোর পাশাপাশি জলযান মানুষ পরিবহন ও ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহৃত হতে থাকে। সর্বশেষ নিউক্লিয়ার সাবমেরিন, উড়ুক্কু সাবমেরিন যোগ করেছে জলযানের ইতিহাসে নতুনমাত্রা।
এসবের পাশাপাশি সূর্যের তাপ ব্যবহার করে যন্ত্রচালিত সোলার-বোট সর্বাধুনিক প্রযুক্তি যোগ করেছে। নিউক্লিয়ার শক্তিচালিত জলযানগুলো এখন বিশেষভাবে আলোচনা ও গবেষণার কেন্দ্রে রয়েছে। এ প্রযুক্তিতে খুব অল্প ব্যয়ে সবচেয়ে বেশি সময় পানির ওপর রাজত্ব করতে পারবে জলযানগুলো।
সামরিক কাজে জলযানের ব্যবহার বাড়ার কারণে এখন সমুদ্রের বুকে জলযানগুলোকে যোগ করা হচ্ছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সর্বশেষ সংযোজনের সমাহার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।