বিবর্তন শব্দের অর্থ হচ্ছে সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়ে নতুন রূপ ধারণ। সবকিছুই বিবর্তিত হয়। ভাষা, সমাজ, রাষ্ট্র সবকিছুই ক্রমাগত বিবর্তিত হয়ে চলেছে। জীববিজ্ঞানীরা যে ধরণের বিবর্তন নিয়ে কাজ করে সেটা হচ্ছে জৈববিবর্তন।
এককথায় জৈববিবর্তন: জৈববিবর্তন হচ্ছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে জীবদেহের জেনেটিক কোডে পরিবর্তন।
জিন কি?: আমাদের বৈশিষ্ট্যসমূহকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, অর্জিত এবং উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত। অর্জিত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সেগুলো যেটা জন্মের পর আমরা আমাদের পরিবেশ থেকে দেখে-শুনে শিখে অর্জন করি। আর উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্যগুলো আমরা পেয়ে থাকি বাবা-মার কাছ থেকে আমাদের জন্মের পূর্বেই, ভ্রুণগঠনের সময়। আর বাবা-মার এই বৈশিষ্ট্যগুলো আমাদের কাছে বয়ে নিয়ে আসে জিন। জিন হচ্ছে জীবকোষের ক্রোমোসোমে অবস্থিত ডিএনএ নামক একটি বিশেষ অনুর অভ্যন্তরস্থ একটি বিশেষ কোড।
অকোষীয় জীবের ক্ষেত্রে ক্রোমোসোমের বাইরেও জিনবাহী ডিএনএ থাকে।
*আমরা জানি, ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবো-নিউক্লিক-এসিড) হচ্ছে একটি জটিল যৌগ যা নিউক্লিয়াসে অবস্থিত ক্রোমোসোমের অভ্যন্তরে রয়েছে।
*ডিএনএ হচ্ছে একটি লম্বা অণু যা চারধরণের উপাদান (এটিসিজি) দিয়ে গঠিত। এই উপাদানগুলোর ক্রমবিন্যাসকেই জিন-সিকোয়েন্স বলে।
* কোষবিভাজনের সময় যখন ক্রোমোসোম বিভাজন হয়, তখন ডিএনএ অণু অনুরুপ অণু সৃষ্টি করে।
একে রেপ্লিকেশন বলে।
* এই ডিএনএ মায়ের ডিম্বানু এবং বাবার শুক্রানুর মাধ্যমে ভ্রুণে সঞ্চারিত হয়।
* জিন-সিকোয়েন্স হচ্ছে একধরণের কোড, যা জীবদের জন্মগত বৈশিষ্ট্যসমূহ নির্ধারণ করে।
মিউটেশন কী?:
ডিএনএ রেপ্লিকেশন পদ্ধতিতে প্রায় সকল ক্ষেত্রেই অবিকল প্রতিকৃতি তৈরী হয়। কিন্তু কোন প্রকৃতিতে কোন জটিল প্রক্রিয়াই নির্ভুল নয়।
ভুল ঘটে এবং জীবের জিন পরিবর্তিত হয়। আর এই পরিবর্তিত জিন প্রজন্মান্তরে বাহিত হয়। এই প্রক্রিয়ার নামই মিউটেশন। মিউটেশন প্রক্রিয়ার কারণে উত্তরসূরী প্রজন্ম পূর্বসূরীদের চেয়ে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যধারী জিন বাহক হতে পারে।
প্রাকৃতিক নির্বাচন কী?:
মিউটেশন একটি ড়্যান্ডম প্রক্রিয়া।
জিন এ মিউটেশনের কারণে এ, বি, সি ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকরণ তৈরী করতে পারে। আর কিছু কিছু জিনের প্রকরণ জীবটির বৈশিষ্ট্যেও বড় পরিবর্তন আনতে পারে। সেক্ষেত্রে মিউটেশনের কারণে একই প্রজাতির তিনটি প্রকরণ তৈরী হবে। এর মধ্যে কিছু প্রকরণ থাকবে প্রকৃতির সাথে খাপ খাওয়ানোর উপযোগী, আর কিছু থাকবে অনুপযুক্ত। অনুপযুক্ত জীবগুলো সন্তান রেখে যেতে ব্যর্থ হবে, যার কারণে তার জিনগুলো হারিয়ে যাবে।
আর বিভিন্ন প্রকরণগুলো নতুন স্থানে মাইগ্রেশন করেও টিকে থাকার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে।
বিবর্তনের ফলে নতুন প্রজাতির উৎপত্তি:
ভৌগোলিক ভাবে বিচ্ছিন্ন একই প্রজাতির দুটি পপুলেশনের মধ্যে মিউটেশন এবং প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে পার্থক্য ক্রমশ বেড়েই চলে। এভাবে একসময় তারা বিশাল পার্থক্যের কারণে দুই গ্রুপের মধ্যে প্রজননের মাধ্যমে প্রজননক্ষম সন্তান ধারণে অক্ষম হয়ে পরে। এভাবেই নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয়।
[চলবে.......]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।