যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি
নাস্তিক নিয়ে লেখার কাজটা খুবই কঠিন। কারন বাস্তবজীবনে প্রকৃত নাস্তিক খুঁজে পাওয়া কঠিন। একজন মানুষ মনে আনন্দে কোন ধর্মগোষ্ঠীকে গালাগালি করে নিজেকে যদি নাস্তিক হিসাবে পরিচিত করতে চায় - আমি সেখানে তাকে নাস্তিক বলতে দ্বিধান্বিত। কারন একটা বিশেষ ধর্মের নির্দিষ্ট অনুসারীর বাইরে সবাই সেই ধর্মের বিষয়ে অমত করবে - এইটাই স্বাভাবিক। ইন্টারনেটে একটু ঢু মারলেই দেখা যাবে বিভিন্ন ধর্মগোষ্ঠী বিপক্ষ দলকে কিভাবে হেনেস্তা করে।
অনেকে সেই ধর্মের পরিচয় নিয়ে ধর্মের সমালোচনা করে ক্যামোফ্লেজ করে। এইটা কোন সমস্যা না। আর এই কারনেই ধর্মকে গালাগালি করে একটা ধর্মের অনুসারীদের উত্যক্ত করা নাস্তিকতার একমাত্র পরিচয় হতে পারে না।
বাস্তব জীবনে নাস্তিক খুঁজে পাওয়া কঠিন- কথা আগেই বলেছি। মুখে মুখে নাস্তিকতার বুলি কপচানো অনেক যুবককে দেখা যায় বিয়ের আসরে ঠিকঠাক হুজুরের সাথে কলেমা পড়ে বা মিলাদের দাওয়াতে ফিনফিনে পাঞ্জাবী পড়ে হাজির হয়।
আবার বিয়ের আগের কঠিন নাস্তিককেও দেখেছি বিয়ের পর শুক্রবারে পাঞ্জাবী পড়ে নামাজের জন্যে সকাল থেকেই তৈরী হয়ে বসে থাকে। তাই সুনির্দিষ্ঠ ভাবে নাস্তিকদের আলাদা করা কঠিন। আর নর্থ আমেরিকায় শুধু বিয়ার খাওয়া জায়েজ করার জন্যে নিজেকে নাস্তিক পরিচয় দেওয়া মানুষের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়।
অনেক কথা বলে ফেললাম। এবার আসি আসল কথায়।
আমার জীবনে কয়েকজন কঠিন নাস্তিক দেখেছি - তারমধ্যে আমার বাবার বন্ধু ছিলেন একজন। সংগত কারনেই নামটা বলছি না। উনি চার মেয়ে আর দুই পুত্র সন্তানের জনক ছিলেন। চাকুরী খুব একটা বড় করতে না - কিন্তু দেখতাম প্রচুর বই পড়তেন। আর ইসলাম ধর্মের গুরুরহস্য নিয়ে কঠিন আলোচনা করে আসরের সবাইকে চমকে দিতেন।
জ্ঞানী নাস্তিক হিসাবে আমি বরাবরই উনাকে শ্রদ্ধা করতাম।
ভদ্রলোকের মেয়েগুলো দেখতে বেশ সুন্দর ছিলো। তাই অল্প বয়সেই ওদের বিয়ে হয়ে যেতে থাকে। উনিও দ্রুত কন্যার দায় থেকে মুক্তি পেয়ে আনন্দিত ছিলেন।
এর মধ্যে ভদ্রলোক একটা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বদলি হয়ে যান।
ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার সুবিধার জন্যে উনি পরিবারকে বড় শহরেই রেখে দেন। একাই প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা শুরু করেন। একদিন শুনা গেল উনি সেখানে আরেকটা বিয়ে করেছেন। কথাটা আমরা বিশ্বাস করিনি। কিন্তু যেদিন ভদ্রলোকের বড় মেয়ে এসে আব্বার কাছে কেঁদে পড়লো - কারন ওর বিয়ে হয়েছিলো সৈয়দ বাড়ীতে - আর সেই বাড়ীর লোকজন তাকে বলেছে যে যদি ওর বাবার দ্বিতীয় বিয়ের কথা সত্য হয় তাকে তালাক দেওয়া হবে।
ভদ্রলোকের গিন্নীর অনুরোধে আমার বাবা আমাকে সংগী করে ভদ্রলোকের কর্মস্থলে গেলেন। দিনে এটাই মাত্র ট্রেন যেত সেখানে - আর রাতে ফেরার ট্রেন। সুতরাং আমাদের দুইজনের সারাদিন সেখানে থাকতে হবে। আমরা দুপুরের মধ্যেই উনার বাসায় পৌছলাম। উনি বাবাকে দেখে খুবই খুশী - আনন্দে ডাকা শুরু করলেন - ময়না, ময়না, কই গেলাগো ছোট বৌ, দেখো কে এসেছে।
শুনে বাবার মুখে কালো ছায়া নেমে এলো। আর কিছু বলার দরকার ছিলো না। কিন্তু নাস্তিক ভদ্রলোক এরপর যা বললেন তা শুনে আমরা দুইজনই বাকরুদ্ধ।
উনি বলা শুরু করলেন - মানুষ হিসাবে উনি নিজেকে আবিষ্কার করতে পেড়েছেন নতুন ভাবে। তাই এখন উনি আবার ইসলাম অনুসরন করছেন।
আর রসুলের সুন্নাত মেনেই ময়নাকে বিয়ে করেছেন। বাবাকে দেখলাম শুধু চুপ করে শুনছেন।
দুপুরের খাবার সময় ময়নাকেও দেখলাম - অল্প বয়সী একটা ফুটফুটে সুন্দর মেয়ে - গরীব বাবা-মা নিম্চয় এইঁ বিয়ে দিয়ে নিজেদের ভারমুক্ত করেছেন।
রাতের ট্রেনে উঠার পর বাবাকে জিজ্ঞাসা করলাম - উনি কেন এমনটা বলছেন? উনি তো নাস্তিক।
বাবার উত্তর ছিলো - মানুষের মন পরিবর্তনশীল - আর পরিবর্তন কখন কিভাবে কোথায় কি প্রেক্ষিতে হবে তা বোধ হয় ইশ্বরও জানেন না।
অনেকদিন পর যখন দেখি বিরাট বিরাট নাস্তিকরা হঠাত জামাতি হয়ে যায় - তখন বাবার কথাগুলো মনে পড়ে - আর তাই অবাক হই না। কারন এরাওতো মানুষ।
(আমার ব্লগে প্রকাশিত)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।