অলৌকিক কিছু না হলে বর্তমান সরকারের আমলে পদ্মা সেতু কাজ শুরু বা শেষ এর কোনটাই হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে । নির্বাচনী কৌশল বা সরকারে আসার চটকাদার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে মুল ফোকাস ছিল বহু প্রতীক্ষিত " পদ্মা সেতু " । এএ
এ লক্ষে বাস্তবায়নের নিরিখে সরকার বাংলাদেশের ছোট বড় প্রায় ৩৪ টি উন্নয়ন কাজের সহযোগী বিশ্ব ব্যাংক এর সাথে চুক্তি সম্পাদিত করল । বলা বাহুল্য শুধু মাত্র বিশ্ব ব্যাংক এ নয় এছাড়া ও এডিবি , জাইকা ও আইডিবি এর সাথেও ১১৫ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা । বাদ বাকি ৫৫ ডলার সরকারের নিজস্ব উৎস এবং বিশ্ব ব্যাংক থেকে ২৯০ কোটি ডলার নিয়ে এ সেতুটি বাস্তবায়ন করার কথা ।
এবার দেখা যাক লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে কি ছিল , বলা হয়েছিল পদ্মা ও কর্ণফুলী সেতু নির্মাণ করা হবে , টানেল হবে, চার লেনে উন্নীত হবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহাসড়ক ইত্যাদি । কিন্তু মেয়াদের প্রায় সাড়ে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও বাস্তবায়িত হয় নি অনেক কিছুই । অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্পের কাজ শুরুই করা যায় নি । যেমন পদ্মা সেতু । পদ্মা সেতু নিয়ে সরকারের বাহাস এখন তাদের গায়ে এসে শেলের মত বিঁধছে ! পদ্মা সেতুর জন্য চুক্তিকৃত টাকা ছাড়ে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক , অভিযোগ তুলল দুর্নীতির , বিশ্ব ব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল এর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনয়ন পূর্বক অর্থ ছাড় স্তগিত করল এবং মন্ত্রীর পারিবারিক ফার্ম " সাঁকো ইন্টারন্যাশনাল " কাজ পাওয়ার মধ্যে মন্ত্রী মহোদয় লাভবান হবেন বলে উল্লেখ রয়েছে ।
বিশ্ব ব্যাংক থেকে বলা হচ্ছে অভিযোগের সত্ততা পাওয়া আর না পাওয়ার মধ্যে নির্ভর করছে টাকা ছাড় হবে কি না । এখানে আরও একটি কথা উল্লেখ্য যে বিশ্ব ব্যাংক এর সাথে সাথে অন্যান্য সংস্থা গুলু ও চুক্তির টাকা স্তগিত রাখল ।
বিশ্ব ব্যাংক এর এ বিপরীতমুখিতা নিয়ে অনেক কথায় এখন আলোচনা হচ্ছে , এর মধ্যে একটি হচ্ছে ডঃ ইউনুস , কিন্তু এত প্রসঙ্গ থাকতে ইউনুস কেন ? বিশ্ব ব্যাংক এর সাথে উনার কি সম্পর্ক ? কি এমন সম্পর্কের জের ধরে বিশ্ব ব্যাংক তাদের অন্যতম ঋণ গ্রহীতার এর সাথে চুক্তি স্তগিত করলো ?
যতটুকু জানি আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এর পারিবারিক বন্ধু আমাদের ইউনুস । ক্লিনটন পরিবারের অন্দর মহলের সব খবর জানা আছে উনার । কিন্তু কথা হচ্ছে ক্লিনটন তো আর বিশ্ব ব্যাংক এর প্রেসিডেন্ট নন , কিন্তু তাতে কি হিলারি ক্লিনটন আছেন যিনি শুধু মাত্র আমেরিকার নীতি নির্ধারক ই নন আমাদের মত তৃতীয় অনেক দেশের ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বটে ।
ডঃ ইউনুস যিনি ২০০৬ সালে দারিদ্র দূরীকরণের মাধ্যমে দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠানোর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রমের ও যোগ্যতার স্বীকৃতি স্বরুপ " নোবেল শান্তি " পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন । জোবরা গ্রাম থেকে শুরু হওয়া অভিযান আজ দেশ ছাড়িয়ে বিশ্ব পরিমণ্ডলে বিস্তৃত । যার ক্ষুদ্র ঋণের মডেল সারা বিশ্বে সমাদৃত হচ্ছে ঠিক তখনি বাংলাদেশের সরকারের রোষানলে পতিত হলেন এ বিশ্ব বরেণ্য মানুষটি । এশিয়ার মধ্যে তিনিই প্রথম নোবেল শান্তিতে ভূষিত হয়েছেন । কিন্তু সেই মানুষটিকে জোর করে এক প্রকারের অধচন্দ্র দিয়ে নিজের কর্মক্ষেত্র থেকে বের করে দিল সরকার ।
যেটি আবার ইউনুস এর সাথে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিল । আইনের গ্যাঁড়াকলে ফেলে উনাকে অপদস্থ করা হল । কিন্তু কেন এ ধরনের গর্হিত কাজ করল সরকার __ থলের বেড়াল থেকে এখন অনেক তথ্য বেরিয়ে আসছে । হতে পারে প্রধানমন্ত্রীর নোবেল না পাওয়া ( আধো যোগ্য কি না তা নিজের ভেবে দেখা উচিত ), হতে পারে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ , হতে পারে হাসিনার চাইতে বেশি পরিচিত লাভ করেছেন উনি ( বাস্তবতা হল ইউনুস এর সাথে কোন দিকেই যোগ্য নন হাসিনা উনার এমন কোন কারিশমা নেই ) তাছাড়া আরও অনেক কারন থাকতে পারে । তাই হয়তোবা প্রথমেই উনাকে প্রশান্তির জোয়ারে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন উনি ।
কিন্তু পরে পরে মন্ত্রিসভার কিছু ভাঁড়কে নিয়ে উনার বিরুদ্ধে বিষেদাগার শুরু করলেন । কিন্তু দিন পাল্টানোর ধারাই উনিও পাল্টে গেলেন । উনার মুখে এখন ভুতের মুখে রাম রাম এর মত অবস্থা । এখন তো পারতেছেন না যে সাংবাদিক সম্মেলন করে নৈশভোজের দাওয়াত দিয়ে ইউনুস এর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে । কিন্তু এই ইউনুস এক সময় উনার সাথে দেখা করার জন্য শিডিউল চেয়েও পান নি ।
আমি / আমরা ধরে নিলাম উনার শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে যার ফলশ্রুতিতে উনাকে বিশ্ব ব্যাংক এর প্রধান করার প্রস্তাব রেখেছেন, কিন্তু বাস্তব সত্য যে বিশ্ব ব্যাংকের নিয়ম বলি অথবা রীতি বলি আমেরিকার বাইরের কেও এটির প্রেসিডেন্ট হতে পারেন না । এ সোজা কথাটি সবাই জানেন শুধু হাসিনা ছাড়া !
আসল কথা হচ্ছে ইউনুস নিয়ে উনার দৃষ্টি ভঙ্গি পাল্টানোর ক্ষেত্রে বড় ভুমিকা " পদ্মা সেতু " । জেই
যেই টাকা আটকে দিল সে মাত্রই সরকারের কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙ্গল । প্রথমেই সরকার বুজতে না পারলেও এখন বুজতে পেরেছে যে বিশ্ব ব্যাংক এর সাথে হয় চুক্তি বাতিল করতে হবে , নয়তুবা অন্য কারও সাথে কাজ করা যাবে না । দ্বিতীয়ত বিশ্ব ব্যাংককে যেখানে সুদে আসলে ( ৪০ বছরে ) ৩০০ কোটি ডলার এর মধ্যে , আবার প্রথম ১০ বছর কোন অর্থ শোধ করতে হবে না সেখানে মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রে ২৩০ কোটি ডলার রক্ষণাবেক্ষণের খরচ সহ ৫৫০ কোটি ডলার দাঁড়াবে ১৫০০ কোটি ডলারে ( ৫০ বছর ) যাবত ।
তা ছাড়া সমুদয় অর্থ শোধ করতে হবে ডলারে কিন্তু টোল আদায় হবে টাকাই । এক্ষেত্রে টাকার অবমূল্যায়ন ছাড়াও টোল এর পরিমান বাড়াতে হবে আর না হলে সরকারকে প্রণোদনা দিয়ে যেতে হবে । আশা করি সরকার এর কোনটায় করবে না । এত কিছুর পরেও যদি সরকার মালয়েশিয়ার প্রস্তাবে রাজি হয় তাহলে বিশ্ব ব্যাংক তো হাতে চুরি পরে বসে থাকবে না কারন বর্তমানে বাংলাদেশের সাথে প্রায় ৩৪ টি প্রকল্প বিদ্যমান , যদি এর কোন একটি থেকে সরে আসে তখন সরকারের অবস্থা যে কি হবে তা সহজেই অনুমান করা যায় । আশা করি শুভ বুদ্ধির পরিচয় দিয়ে এমন কোন সিদান্ত্বে উপনীত হবে না ।
এখন ধরে নিলাম পদ্মা সেতু না হওয়ার পেছনে ইউনুস এর হাত থাকতে পারে সরকার ইউনুস কে এ ভেবে আবার সম্মান দিতে চাচ্ছেন তাহলে বলি উনার কর্মক্ষেত্রে আগে ফিরেয়ে আনুন । সরকারের পক্ষ থেকে হাসিনা ক্ষমা চাক উনার কাছে । তারপরেও যে পদ্মা সেতু হবে তার নিশ্চয়তা কোথায় ?
যদিও বা গুজব আছে বিল ক্লিনটন বিশ্ব ব্যাংক এর পরবর্তী প্রধান হচ্ছেন আর উনার ভাল বন্ধু ইউনুস তখন উনি হয়তুবা সুপারিশ করবেন , সরকারের ভাবনা এ রকম হলে সাধুবাদ জানায় ।
আমরা আশা করব সরকার গুণীজনদের কদর করবে , এবং ছেড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখবে না । আর ডঃ ইউনুস যিনি আমাদের কে জাতি হিসেবে অনেক উপরে নিয়ে গেছেন , যিনি দারিদ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সারা বিশ্বের মানুষদের শান্তি আনয়নে কাজ করে যাচ্ছেন উনাকে উনার প্রাপ্য সম্মান দিতে না পারলে জাতি হিসেবে আমরা যেমন ছোট হব আবার বহির্বিশ্বে আমরা হাসির খোরাকে পরিনত হব ।
আশা করি রাষ্ট্রযন্ত্র এ দিকটি ভেবে দেখবেন ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।