আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাটক ও চলচ্চিত্রে শুদ্ধ-অশুদ্ধ বাংলা

ফ্লোরা সরকার • অনেকদিন আগে বিটিভির স্বনামধন্য নাট্য-পরিচালক আতিকুল হক চৌধুরীর একুশে ফেব্রুয়ারির ওপর একটি বিশেষ নাটকে একটি কিশোরের মুখে সংলাপ শোনা যায় এরকম – ‘‘আমাড় ভাইয়েড় ড়ক্তে ড়াঙানো, একুশে ফেব্রুয়াড়ি, আমি কি ভুলিতে পাড়ি। ’’ সংলাপটি ইচ্ছাকৃতভাবে ‘র’-এর স্থলে ‘ড়’ করা হয়। নাটকে দেখা যায় সেই কিশোর চরিত্রের ছেলেটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে লেখাপড়া করার কারণে ভালো করে বাংলা উচ্চারণ করতে পারে না। এদিকে একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে তার বাবা-মা তাকে একুশের এই বিখ্যাত গানের লাইনটি তাকে শেখাবার প্রাণান্তকর চেষ্টা (অপচেষ্টা) করছেন। কিন্তু ছেলেটি কিছুতেই ‘ড়’-এর স্থলে ‘র’ উচ্চারণ করতে পারছে না।

এটা সেই সময়ের নাটক যখন ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলো মাত্র তাদের পাখা মেলতে শুরু করেছে, ‘ও’ লেভেল-‘এ’ লেভেল নামক খাঁটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোর পাখা তখনো মেলতে শুরু করেনি। খাঁটি শিল্পীরা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হয়ে থাকেন। আতিকুল হক চৌধুরী সেই দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নির্মাতাদের একজন। সেই কিশোরের সংলাপটি আজও ভুলতে পারিনি। পারিনি কারণ এখন আমাদের নাটক-সিনেমায় বিশেষত টিভি নাটক, সাক্ষাৎকার, উপস্থাপনাসহ প্রায় অনুষ্ঠানে বাংলা উচ্চারণের শুধু বিকৃতিই ঘটছে না, ইংরেজির সঙ্গে বাংলার মিশেলে এক ধরনের মিশ্র ভাষা, প্রমিত বা শুদ্ধ উচ্চারণের সঙ্গে অশুদ্ধ (অশুদ্ধ বলতে এখানে যা শ্রুতিমধুর নয় তাকে বোঝানো হচ্ছে) উচ্চারণের মিশেলে আরেক ধরনের মিশ্র ভাষার এক উদ্ভট বাংলা ভাষার ব্যবহার ও প্রচলন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ার এক ধরনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

যে কোনো ভাষা তা সে ইংরেজি, জার্মান, জাপানি, ফরাসি, চীনা, আরবি, উর্দু, হিন্দী যে কোনো ভাষাই হোক না কেন এবং তা বোধগম্য হোক বা না হোক শুদ্ধ উচ্চারণের এক ধরনের মিষ্টতা থাকে। অন্যভাষী যে কোনো লোকের কানে তা শ্রুতিমধুর লাগে। কোনো ইংরেজ যদি ইংরেজির সঙ্গে কিছু ফরাসি মিলিয়ে কথা বলে তা যেমন শুনতে ভালো লাগবে না, বাংলা ভাষার ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনই। যদিও কোনো ইংরেজ বা ফ্রেঞ্চকে আমরা কখনো এই ধরনের মিশ্র ভাষায় কথা বলতে দেখি না, কিন্তু আমরা তা অবলীলায় বলে যাই। কেন বলে যাই তার একটা ঐতিহাসিক কারণও বিদ্যমান।

এখন আমরা আমাদের নাটক এবং সিনেমার সংলাপ অর্থাৎ যে ভাষায় তারা সংলাপ বলে থাকেন তার কিছু নমুনা দেখতে পারি। সিনেমা বা নাটকে প্রধান যে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তার কাহিনী গড়ে ওঠে তা হলো সংলাপ। উপন্যাস বা গল্পের ক্ষেত্রে যেমন শব্দ বা বাক্যের বুনন দিয়ে কাহিনী গড়ে ওঠে, সিনেমা বা নাটকের ক্ষেত্রে তেমনি সংলাপের বুনন দিয়ে তার কাহিনী গড়ে ওঠে। তবে সিনেমা এবং নাটকের ক্ষেত্রে একটি সূক্ষ্ম পার্থক্য থাকে। সিনেমা বা ছবির ক্ষেত্রে ইমেজ বা দৃশ্য কাব্য যতটা জরুরি নাটকের ক্ষেত্রে ততটা জরুরি নয়।

তবু কম-বেশি সংলাপের ওপরেই উভয় মাধ্যমের কাহিনী গড়ে ওঠে। সিনেমা বা নাটকে এই সংলাপ বা ভাষার দুটো ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক. যে ভাষায় বা যে সংলাপ উচ্চারণের মাধ্যমে চরিত্ররা কথা বলে তার অন্তর্নিহিত অর্থ। দুই. যে সংলাপ তারা উচ্চারণ করেন তার উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য। প্রথম ক্ষেত্রে আমরা দেখি খুব সহজ ভাষায় চরিত্ররা কথা বললেও আপাত নিরীহ সংলাপের অন্তর্নিহিত অর্থ অশ্লীলতায় থাকে পূর্ণ।

যেমন বাংলা সিনেমার একটি ছবিতে নায়ক (রাজু) এবং নায়িকার (আলো) কিছু সংলাপ নিচে তুলে ধরা হলো। রাজু, আলোর দোকানে দুধ কিনতে আসে - আলো : কি চান? রাজু : একটা দুধ দিন। মিল্কভিটা। (সংলাপের ফাঁকে দোকানের প্রকৃত মালিক আলোর মামা আসে। আলো দোকান ছেড়ে যেতে যেতে বলে)- আলো : … দুধ নিতে এসেছে মামা।

দুধের সঙ্গে একটা ফিডারও দিয়ে দিন চুষে চুষে খাবে। (বলে নায়িকা বেনী দুলিয়ে হাসতে হাসতে বের হয়ে যায়)। এবার টিভি সিরিয়ালের একটি দৃশ্যের সংলাপ লক্ষ্য করা যাক। একটি তরুণী বাড়ির ছাদে এক মধ্যবয়সী লোকের সঙ্গে কথা বলছে- তরুণী : তোমার মতো বাবার বয়সী একটা লোকের সঙ্গে প্রেম করছি এই তো বেশি। লোক : কি বলছো? বাবার মতো কেন? আমার মতো মনীষী কোথায় পাবে? তরুণী : তোমার জন্য বাবা-মার কাছে কতগুলো বিয়ের proposal deny করতে করতে অস্থির হয়ে গেলাম।

… তরুণী : তুমি যে বিয়ে করবা তোমার income কি? লোক : … আমার মতো মনীষী type লোকের সঙ্গে প্রেম করতাছ এই তো বেশি। টাকার দরকার কি? উল্লেখিত সিনেমায় আপাত নিরীহ সংলাপের অন্তরালে অনায়াসে অশ্লীলতা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। নাটকের সংলাপের অংশে শুধু অশ্লীলতা নয় (বাবার বয়সী কোনো লোকের সঙ্গে কোনো তরুণীর প্রেম পর্ব) সেই সঙ্গে মিশ্র ভাষার চিত্রও পাওয়া যায়। ইংরেজির সঙ্গে বাংলার মিশেলে কথা বলা ছাড়াও শুদ্ধ উচ্চারণের সঙ্গে অশুদ্ধের মিশ্রণ। এভাবে আমাদের বর্তমান সিনেমা এবং টিভি নাটকগুলোতে কাহিনী দূরে থাক, সংলাপগুলো ঠিকমতো উচ্চারিত এবং ব্যবহৃত হতে দেখা যায় না।

সংলাপের পর সংলাপ সাজালেই যেমন নাটক বা সিনেমা হয় না, হাত-পা নেড়ে অশুদ্ধ আর মিশ্র বাংলায় উচ্চারিত শব্দ বা বাক্যও তেমনি সংলাপ তৈরি করে না। মোটামুটি নববইয়ের দশকের পর থেকে আমাদের সিনেমা এবং বিশেষত টিভি নাটকগুলোতে বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে এক অদ্ভুত মিশ্র ভাষার উৎপত্তি লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ বিশেষ কিছু নাট্যকারদের হাতে এই মিশ্র ভাষার উদ্ভব ঘটেছে, যারা দাবি করেন সমাজে প্রচলিত ভাষাই তারা নাটকে নিয়ে আসছেন। সমাজ বলতে তারা রাজধানী ঢাকার তরুণ-তরুণীদের মুখের ভাষাকেই বুঝিয়ে থাকেন, বৃহত্তর বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের ভাষা কিন্তু নয়। এসব তরুণ-তরুণী এই ভাষায় কথা বলে দেখে নাটকেও তার বাস্তব প্রতিফলন ঘটানো উচিত বলে তারা মনে করেন।

খুব ভালো কথা। কিন্তু এই নাট্যকারের নাটকের কাহিনীর বাস্তবতা নিয়ে যত না ভাবেন, তার চেয়ে অনেক বেশি চিন্তা করেন ভাষার বাস্তবতা নিয়ে। ফলে উদ্ভট কাহিনী দিয়ে তৈরি উদ্ভট সংলাপের প্রতিফলন আমরা আমাদের নাটক-সিনেমায় দেখতে পাই। বরেণ্য অভিনেতা আবুল হায়াতকে একবার এসব উদ্ভট ভাষায় সংলাপ বলতে দেওয়া হলে তিনি সরাসরি তা নাকচ করে দেন। এখন প্রশ্ন হলো রাজধানী শহরের এই ভাষার উৎপত্তি ঘটলো কীভাবে? উত্তরটি খুব সহজ।

রাজধানীতে বিভিন্ন জেলার মানুষের বসবাস। ফলে বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষা একত্রিত হয়ে এক ধরনের মিশ্র বাংলা ভাষার উৎপত্তি ঘটেছে দীর্ঘদিন থেকে। যেখানে শুদ্ধ-অশুদ্ধ এবং ইংরেজি মিশেলে কথা বলা হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো- যা শোভন নয়, যা শুনতে ভালো লাগে না সেই ভালো না লাগার কোনো বিষয়কে কি প্রশ্রয় দেওয়া উচিত? সমাজে এমন অনেক কিছুর প্রচলন হতে পারে যা অনেক সময় না জেনে, না বুঝে বা ভবিষ্যৎ চিন্তা ছাড়া তার প্রচলন ঘটে যায়। প্রচলিত হলেই তা দীর্ঘতর বা প্রসারিত হওয়া উচিত কিনা সেই বিষয়ে সচেতন হওয়া প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য।

তাছাড়া ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রচার এবং প্রসারের কারণে দর্শকের চোখ-কান সেদিকে তাকিয়ে থাকে। দর্শক সেখানে যা দেখবে, যা শুনবে অবচেতনে তার সেসব শেখা হবে। যেমন হিন্দী সিরিয়াল আর ছবির দৌরাত্ম্যে বর্তমানে অনেক শিশু অদ্ভুত ধরনের হিন্দী শিখছে। সমাজে সর্বসাধারণের বোধগম্য একটি বিশেষ সাধারণ ভাষা থাকা প্রয়োজন যে ভাষা প্রত্যেকের কাছে শুধু গ্রহণযোগ্যতাই পাবে না, সেই সঙ্গে সবার কাছে সেই ভাষা অনায়াসে পৌঁছাতে পারবে। তাকে আমরা প্রমিত ভাষা বা শুদ্ধ ভাষা যে নামেই আখ্যায়িত করি না কেন।

শুদ্ধ ভাষার সঙ্গে অশুদ্ধের মিশ্রণে, শ্রোতা বা দর্শক ক্ষণিকের আনন্দ পেলেও শেষ পর্যন্ত সেই ভাষা নিজেই ভেঙে পড়ে, কোন স্থায়িত্ব পায় না। দ্বিতীয়ত, ইংরেজির সঙ্গে বাংলার যে বহুল ব্যবহার আমরা লক্ষ্য করি সিনেমা-নাটক এবং আমাদের সামাজিক কথোপকথনে, তার একটি বিশেষ ঐতিহাসিক কারণ নিহিত আছে। রাজা চলে যায়, রাজত্ব থেকে যায়। যে ইংরেজ ঔপনিবেশিক দুঃশাসন থেকে আমরা একসময় মুক্ত হয়েছিলাম সেই শাসন না থাকলেও শোষণের প্রচলন গতি আজও আমাদের সমাজে বিদ্যমান। ঔপনিবেশিক মন খুব সহজে মুক্ত বা স্বাধীন হতে চায় না।

আর তাই আজও আমরা বাংলা ভাষার ভেতর দু’-চারটা ইংরেজি শব্দ ব্যবহারে গ্লানি নয়, গৌরব বোধ করি। সাম্প্রতিক সময়ে একটি বিজ্ঞাপনে গ্রামের একটি শিশু একটা ইংরেজি শব্দ বোঝা এবং বলাতে বাবার অহঙ্কার আমাদের মুগ্ধ নয় বিস্মিত করে। শুদ্ধ উচ্চারণ এবং শুদ্ধ বানানে যে জাতি আজও তার নিজের মাতৃভাষার চর্চায় অপারগ সে কী করে ভিন্ন ভাষার মাত্র একটি বা দুটি শব্দ বলা এবং বোঝার ক্ষেত্রে এত গৌরব বোধ করতে পারে? এই গৌরব বা অহং বোধের জন্যেই কি সালাম-বরকতেরা আমাদের মাতৃভাষার জন্যে প্রাণ দিয়েছিলেন? যে কোনো ভাষা তা মাতৃভাষাই হোক বা ভিন্ন ভাষাই হোক, ভাসা ভাসা শিখলে সেই ভাষার ওপর কোনো ভালো সাহিত্য, চলচ্চিত্র বা নাটক গড়ে ওঠে না। মাতৃভাষার পাশাপাশি অন্য আরো অনেক ভাষাও আমরা শিখতে পারি। কিন্তু আমরা যা করছি তাতে না বাংলা না ইংরেজি, না অন্য কোনো ভাষা ঠিকভাবে বলা বা লেখা কোনোটাই করতে পারছি না।

আর কে না জানে নিজের ভাষা ভালো করে জানা হলেই না অন্য ভাষা ভালোভাবে জানা হয়। নিজেকে চিনলেই না অপরকে চেনা যায়। এই চেনার কাজটা কঠিন বলেই উদ্ভট ভাষায় উদ্ভট কাহিনী রচিত হয় এবং হচ্ছে। আঞ্চলিক ভাষায় বেশ ক’ বছর থেকে বেশকিছু নাটক রচিত হচ্ছে। উদ্যোগটা মন্দ নয়।

তবে শুধু আঞ্চলিক ভাষা থাকলেই হয় না, যে অঞ্চলের ভাষায় সংলাপ বলা হচ্ছে সেই অঞ্চলের বাস্তব কোনো কাহিনী কি নাট্যকার বা নির্মাতারা তুলে ধরতে পারছেন? বেশিরভাগ আঞ্চলিক ভাষার নাটক দেখলে মনে হয় সেই অঞ্চলের মানুষজনরা শুধু ঠাট্টা-মস্করা করে বেড়ান। মানুষ যেভাবে ভাবে, কথায় বা লেখায় তার প্রতিফলন সেভাবে ঘটে। কাজেই ভাবনার জায়গাটা পরিচ্ছন্ন না হলে, কথা বা লেখার জায়গাটা অপরিচ্ছন্ন হতে বাধ্য। এবারের বইমেলায় কোনো একটি বই ‘মা, মাটি ও দেশ’কে নিয়ে লেখা হলেও, বইয়ের প্রথম পাতায় ঠাঁই পায় বিদেশী মা ও মেয়ের ছবি এবং শেষের পাতায় বাংলার গ্রামের ছবি। আমরা যতটা আবেগী ঠিক ততটাই বাস্তব বিমুখ।

প্রতি বছর পায়জামা-পাঞ্জাবি বা সাদার ওপর কালো পাড়ের শাড়ি পরে, নগ্ন পদে, হাতে ফুল নিয়ে শহীদ মিনারে যাওয়া যতটা সহজ, ঠিক ততটাই কঠিন শহীদ মিনারের অ, আ, ই, ক ইত্যাদি বর্ণমালাকে শ্রদ্ধার আসনে বসানো। ভাষার শুদ্ধতা, পবিত্রতা, স্থায়িত্ব, উন্নততর সংস্করণ একদিনে গড়ে ওঠে না। তার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘদিনের অবিরাম গবেষণা, পরিশ্রম এবং চর্চা। যে চর্চা আমরা আমাদের নাটক-সিনেমায় হতে দেখি না। বরং অশুদ্ধ উচ্চারণ আর মিশ্র উচ্চারণের এক ভয়াবহ ভাষার ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কোনো এক চ্যানেলে একটি ব্যান্ড দলের গানের পরিবেশনা দেখানো হচ্ছিলো। স্টেজের পেছনে লেখা ‘Say, No violence against women’, খুব ভালো কথা। কিন্তু যেভাবে মাইক মাথায় নিয়ে আর সমস্ত স্টেজে দৌড়-ঝাঁপ দিয়ে গান পরিবেশনা হচ্ছিলো তাতে করে সেই ভায়োলেন্সেই দর্শক কুপোকাৎ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। যদিও তরুণ সেই দর্শকদের তা হতে দেখা যায়নি। কারণ তারা এই ভায়োলেন্সে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।

ঠিক যেভাবে মিশ্র ভাষায় আমরা ক্রমে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এই অভ্যস্ততায় নারীর প্রতি পুরুষের ভায়োলেন্সও যেমন কমবে না তেমনি শুদ্ধ হবে না আমাদের অশুদ্ধ বাংলা। কাজেই বিষয়টি নিয়ে আমাদের এখনই ভাবার প্রয়োজন। আমরা কীভাবে কথা বলবো, ইংরেজি উচ্চারণে বাংলা? অশুদ্ধ উচ্চারণে বাংলা? ইংরেজি-বাংলা মিশেলে বাংলা? নাকি বিশুদ্ধ বাংলায় বাংলা উচ্চারণ? এসব প্রশ্নের মীমাংসাটা জরুরি হয়ে পড়েছে। অনেকদিন আগে বিটিভির স্বনামধন্য নাট্য-পরিচালক আতিকুল হক চৌধুরীর একুশে ফেব্রুয়ারির ওপর একটি বিশেষ নাটকে একটি কিশোরের মুখে সংলাপ শোনা যায় এরকম – ‘‘আমাড় ভাইয়েড় ড়ক্তে ড়াঙানো, একুশে ফেব্রুয়াড়ি, আমি কি ভুলিতে পাড়ি।

’’ সংলাপটি ইচ্ছাকৃতভাবে ‘র’-এর স্থলে ‘ড়’ করা হয়। নাটকে দেখা যায় সেই কিশোর চরিত্রের ছেলেটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে লেখাপড়া করার কারণে ভালো করে বাংলা উচ্চারণ করতে পারে না। এদিকে একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে তার বাবা-মা তাকে একুশের এই বিখ্যাত গানের লাইনটি তাকে শেখাবার প্রাণান্তকর চেষ্টা (অপচেষ্টা) করছেন। কিন্তু ছেলেটি কিছুতেই ‘ড়’-এর স্থলে ‘র’ উচ্চারণ করতে পারছে না। এটা সেই সময়ের নাটক যখন ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলো মাত্র তাদের পাখা মেলতে শুরু করেছে, ‘ও’ লেভেল-‘এ’ লেভেল নামক খাঁটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোর পাখা তখনো মেলতে শুরু করেনি।

খাঁটি শিল্পীরা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হয়ে থাকেন। আতিকুল হক চৌধুরী সেই দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নির্মাতাদের একজন। সেই কিশোরের সংলাপটি আজও ভুলতে পারিনি। পারিনি কারণ এখন আমাদের নাটক-সিনেমায় বিশেষত টিভি নাটক, সাক্ষাৎকার, উপস্থাপনাসহ প্রায় অনুষ্ঠানে বাংলা উচ্চারণের শুধু বিকৃতিই ঘটছে না, ইংরেজির সঙ্গে বাংলার মিশেলে এক ধরনের মিশ্র ভাষা, প্রমিত বা শুদ্ধ উচ্চারণের সঙ্গে অশুদ্ধ (অশুদ্ধ বলতে এখানে যা শ্রুতিমধুর নয় তাকে বোঝানো হচ্ছে) উচ্চারণের মিশেলে আরেক ধরনের মিশ্র ভাষার এক উদ্ভট বাংলা ভাষার ব্যবহার ও প্রচলন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ার এক ধরনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যে কোনো ভাষা তা সে ইংরেজি, জার্মান, জাপানি, ফরাসি, চীনা, আরবি, উর্দু, হিন্দী যে কোনো ভাষাই হোক না কেন এবং তা বোধগম্য হোক বা না হোক শুদ্ধ উচ্চারণের এক ধরনের মিষ্টতা থাকে।

অন্যভাষী যে কোনো লোকের কানে তা শ্রুতিমধুর লাগে। কোনো ইংরেজ যদি ইংরেজির সঙ্গে কিছু ফরাসি মিলিয়ে কথা বলে তা যেমন শুনতে ভালো লাগবে না, বাংলা ভাষার ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনই। যদিও কোনো ইংরেজ বা ফ্রেঞ্চকে আমরা কখনো এই ধরনের মিশ্র ভাষায় কথা বলতে দেখি না, কিন্তু আমরা তা অবলীলায় বলে যাই। কেন বলে যাই তার একটা ঐতিহাসিক কারণও বিদ্যমান। এখন আমরা আমাদের নাটক এবং সিনেমার সংলাপ অর্থাৎ যে ভাষায় তারা সংলাপ বলে থাকেন তার কিছু নমুনা দেখতে পারি।

সিনেমা বা নাটকে প্রধান যে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তার কাহিনী গড়ে ওঠে তা হলো সংলাপ। উপন্যাস বা গল্পের ক্ষেত্রে যেমন শব্দ বা বাক্যের বুনন দিয়ে কাহিনী গড়ে ওঠে, সিনেমা বা নাটকের ক্ষেত্রে তেমনি সংলাপের বুনন দিয়ে তার কাহিনী গড়ে ওঠে। তবে সিনেমা এবং নাটকের ক্ষেত্রে একটি সূক্ষ্ম পার্থক্য থাকে। সিনেমা বা ছবির ক্ষেত্রে ইমেজ বা দৃশ্য কাব্য যতটা জরুরি নাটকের ক্ষেত্রে ততটা জরুরি নয়। তবু কম-বেশি সংলাপের ওপরেই উভয় মাধ্যমের কাহিনী গড়ে ওঠে।

সিনেমা বা নাটকে এই সংলাপ বা ভাষার দুটো ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক. যে ভাষায় বা যে সংলাপ উচ্চারণের মাধ্যমে চরিত্ররা কথা বলে তার অন্তর্নিহিত অর্থ। দুই. যে সংলাপ তারা উচ্চারণ করেন তার উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য। প্রথম ক্ষেত্রে আমরা দেখি খুব সহজ ভাষায় চরিত্ররা কথা বললেও আপাত নিরীহ সংলাপের অন্তর্নিহিত অর্থ অশ্লীলতায় থাকে পূর্ণ। যেমন বাংলা সিনেমার একটি ছবিতে নায়ক (রাজু) এবং নায়িকার (আলো) কিছু সংলাপ নিচে তুলে ধরা হলো।

রাজু, আলোর দোকানে দুধ কিনতে আসে - আলো : কি চান? রাজু : একটা দুধ দিন। মিল্কভিটা। (সংলাপের ফাঁকে দোকানের প্রকৃত মালিক আলোর মামা আসে। আলো দোকান ছেড়ে যেতে যেতে বলে)- আলো : … দুধ নিতে এসেছে মামা। দুধের সঙ্গে একটা ফিডারও দিয়ে দিন চুষে চুষে খাবে।

(বলে নায়িকা বেনী দুলিয়ে হাসতে হাসতে বের হয়ে যায়)। এবার টিভি সিরিয়ালের একটি দৃশ্যের সংলাপ লক্ষ্য করা যাক। একটি তরুণী বাড়ির ছাদে এক মধ্যবয়সী লোকের সঙ্গে কথা বলছে- তরুণী : তোমার মতো বাবার বয়সী একটা লোকের সঙ্গে প্রেম করছি এই তো বেশি। লোক : কি বলছো? বাবার মতো কেন? আমার মতো মনীষী কোথায় পাবে? তরুণী : তোমার জন্য বাবা-মার কাছে কতগুলো বিয়ের proposal deny করতে করতে অস্থির হয়ে গেলাম। … তরুণী : তুমি যে বিয়ে করবা তোমার income কি? লোক : … আমার মতো মনীষী type লোকের সঙ্গে প্রেম করতাছ এই তো বেশি।

টাকার দরকার কি? উল্লেখিত সিনেমায় আপাত নিরীহ সংলাপের অন্তরালে অনায়াসে অশ্লীলতা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। নাটকের সংলাপের অংশে শুধু অশ্লীলতা নয় (বাবার বয়সী কোনো লোকের সঙ্গে কোনো তরুণীর প্রেম পর্ব) সেই সঙ্গে মিশ্র ভাষার চিত্রও পাওয়া যায়। ইংরেজির সঙ্গে বাংলার মিশেলে কথা বলা ছাড়াও শুদ্ধ উচ্চারণের সঙ্গে অশুদ্ধের মিশ্রণ। এভাবে আমাদের বর্তমান সিনেমা এবং টিভি নাটকগুলোতে কাহিনী দূরে থাক, সংলাপগুলো ঠিকমতো উচ্চারিত এবং ব্যবহৃত হতে দেখা যায় না। সংলাপের পর সংলাপ সাজালেই যেমন নাটক বা সিনেমা হয় না, হাত-পা নেড়ে অশুদ্ধ আর মিশ্র বাংলায় উচ্চারিত শব্দ বা বাক্যও তেমনি সংলাপ তৈরি করে না।

মোটামুটি নববইয়ের দশকের পর থেকে আমাদের সিনেমা এবং বিশেষত টিভি নাটকগুলোতে বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে এক অদ্ভুত মিশ্র ভাষার উৎপত্তি লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ বিশেষ কিছু নাট্যকারদের হাতে এই মিশ্র ভাষার উদ্ভব ঘটেছে, যারা দাবি করেন সমাজে প্রচলিত ভাষাই তারা নাটকে নিয়ে আসছেন। সমাজ বলতে তারা রাজধানী ঢাকার তরুণ-তরুণীদের মুখের ভাষাকেই বুঝিয়ে থাকেন, বৃহত্তর বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের ভাষা কিন্তু নয়। এসব তরুণ-তরুণী এই ভাষায় কথা বলে দেখে নাটকেও তার বাস্তব প্রতিফলন ঘটানো উচিত বলে তারা মনে করেন। খুব ভালো কথা।

কিন্তু এই নাট্যকারের নাটকের কাহিনীর বাস্তবতা নিয়ে যত না ভাবেন, তার চেয়ে অনেক বেশি চিন্তা করেন ভাষার বাস্তবতা নিয়ে। ফলে উদ্ভট কাহিনী দিয়ে তৈরি উদ্ভট সংলাপের প্রতিফলন আমরা আমাদের নাটক-সিনেমায় দেখতে পাই। বরেণ্য অভিনেতা আবুল হায়াতকে একবার এসব উদ্ভট ভাষায় সংলাপ বলতে দেওয়া হলে তিনি সরাসরি তা নাকচ করে দেন। এখন প্রশ্ন হলো রাজধানী শহরের এই ভাষার উৎপত্তি ঘটলো কীভাবে? উত্তরটি খুব সহজ। রাজধানীতে বিভিন্ন জেলার মানুষের বসবাস।

ফলে বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষা একত্রিত হয়ে এক ধরনের মিশ্র বাংলা ভাষার উৎপত্তি ঘটেছে দীর্ঘদিন থেকে। যেখানে শুদ্ধ-অশুদ্ধ এবং ইংরেজি মিশেলে কথা বলা হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো- যা শোভন নয়, যা শুনতে ভালো লাগে না সেই ভালো না লাগার কোনো বিষয়কে কি প্রশ্রয় দেওয়া উচিত? সমাজে এমন অনেক কিছুর প্রচলন হতে পারে যা অনেক সময় না জেনে, না বুঝে বা ভবিষ্যৎ চিন্তা ছাড়া তার প্রচলন ঘটে যায়। প্রচলিত হলেই তা দীর্ঘতর বা প্রসারিত হওয়া উচিত কিনা সেই বিষয়ে সচেতন হওয়া প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। তাছাড়া ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রচার এবং প্রসারের কারণে দর্শকের চোখ-কান সেদিকে তাকিয়ে থাকে।

দর্শক সেখানে যা দেখবে, যা শুনবে অবচেতনে তার সেসব শেখা হবে। যেমন হিন্দী সিরিয়াল আর ছবির দৌরাত্ম্যে বর্তমানে অনেক শিশু অদ্ভুত ধরনের হিন্দী শিখছে। সমাজে সর্বসাধারণের বোধগম্য একটি বিশেষ সাধারণ ভাষা থাকা প্রয়োজন যে ভাষা প্রত্যেকের কাছে শুধু গ্রহণযোগ্যতাই পাবে না, সেই সঙ্গে সবার কাছে সেই ভাষা অনায়াসে পৌঁছাতে পারবে। তাকে আমরা প্রমিত ভাষা বা শুদ্ধ ভাষা যে নামেই আখ্যায়িত করি না কেন। শুদ্ধ ভাষার সঙ্গে অশুদ্ধের মিশ্রণে, শ্রোতা বা দর্শক ক্ষণিকের আনন্দ পেলেও শেষ পর্যন্ত সেই ভাষা নিজেই ভেঙে পড়ে, কোন স্থায়িত্ব পায় না।

দ্বিতীয়ত, ইংরেজির সঙ্গে বাংলার যে বহুল ব্যবহার আমরা লক্ষ্য করি সিনেমা-নাটক এবং আমাদের সামাজিক কথোপকথনে, তার একটি বিশেষ ঐতিহাসিক কারণ নিহিত আছে। রাজা চলে যায়, রাজত্ব থেকে যায়। যে ইংরেজ ঔপনিবেশিক দুঃশাসন থেকে আমরা একসময় মুক্ত হয়েছিলাম সেই শাসন না থাকলেও শোষণের প্রচলন গতি আজও আমাদের সমাজে বিদ্যমান। ঔপনিবেশিক মন খুব সহজে মুক্ত বা স্বাধীন হতে চায় না। আর তাই আজও আমরা বাংলা ভাষার ভেতর দু’-চারটা ইংরেজি শব্দ ব্যবহারে গ্লানি নয়, গৌরব বোধ করি।

সাম্প্রতিক সময়ে একটি বিজ্ঞাপনে গ্রামের একটি শিশু একটা ইংরেজি শব্দ বোঝা এবং বলাতে বাবার অহঙ্কার আমাদের মুগ্ধ নয় বিস্মিত করে। শুদ্ধ উচ্চারণ এবং শুদ্ধ বানানে যে জাতি আজও তার নিজের মাতৃভাষার চর্চায় অপারগ সে কী করে ভিন্ন ভাষার মাত্র একটি বা দুটি শব্দ বলা এবং বোঝার ক্ষেত্রে এত গৌরব বোধ করতে পারে? এই গৌরব বা অহং বোধের জন্যেই কি সালাম-বরকতেরা আমাদের মাতৃভাষার জন্যে প্রাণ দিয়েছিলেন? যে কোনো ভাষা তা মাতৃভাষাই হোক বা ভিন্ন ভাষাই হোক, ভাসা ভাসা শিখলে সেই ভাষার ওপর কোনো ভালো সাহিত্য, চলচ্চিত্র বা নাটক গড়ে ওঠে না। মাতৃভাষার পাশাপাশি অন্য আরো অনেক ভাষাও আমরা শিখতে পারি। কিন্তু আমরা যা করছি তাতে না বাংলা না ইংরেজি, না অন্য কোনো ভাষা ঠিকভাবে বলা বা লেখা কোনোটাই করতে পারছি না। আর কে না জানে নিজের ভাষা ভালো করে জানা হলেই না অন্য ভাষা ভালোভাবে জানা হয়।

নিজেকে চিনলেই না অপরকে চেনা যায়। এই চেনার কাজটা কঠিন বলেই উদ্ভট ভাষায় উদ্ভট কাহিনী রচিত হয় এবং হচ্ছে। আঞ্চলিক ভাষায় বেশ ক’ বছর থেকে বেশকিছু নাটক রচিত হচ্ছে। উদ্যোগটা মন্দ নয়। তবে শুধু আঞ্চলিক ভাষা থাকলেই হয় না, যে অঞ্চলের ভাষায় সংলাপ বলা হচ্ছে সেই অঞ্চলের বাস্তব কোনো কাহিনী কি নাট্যকার বা নির্মাতারা তুলে ধরতে পারছেন? বেশিরভাগ আঞ্চলিক ভাষার নাটক দেখলে মনে হয় সেই অঞ্চলের মানুষজনরা শুধু ঠাট্টা-মস্করা করে বেড়ান।

মানুষ যেভাবে ভাবে, কথায় বা লেখায় তার প্রতিফলন সেভাবে ঘটে। কাজেই ভাবনার জায়গাটা পরিচ্ছন্ন না হলে, কথা বা লেখার জায়গাটা অপরিচ্ছন্ন হতে বাধ্য। এবারের বইমেলায় কোনো একটি বই ‘মা, মাটি ও দেশ’কে নিয়ে লেখা হলেও, বইয়ের প্রথম পাতায় ঠাঁই পায় বিদেশী মা ও মেয়ের ছবি এবং শেষের পাতায় বাংলার গ্রামের ছবি। আমরা যতটা আবেগী ঠিক ততটাই বাস্তব বিমুখ। প্রতি বছর পায়জামা-পাঞ্জাবি বা সাদার ওপর কালো পাড়ের শাড়ি পরে, নগ্ন পদে, হাতে ফুল নিয়ে শহীদ মিনারে যাওয়া যতটা সহজ, ঠিক ততটাই কঠিন শহীদ মিনারের অ, আ, ই, ক ইত্যাদি বর্ণমালাকে শ্রদ্ধার আসনে বসানো।

ভাষার শুদ্ধতা, পবিত্রতা, স্থায়িত্ব, উন্নততর সংস্করণ একদিনে গড়ে ওঠে না। তার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘদিনের অবিরাম গবেষণা, পরিশ্রম এবং চর্চা। যে চর্চা আমরা আমাদের নাটক-সিনেমায় হতে দেখি না। বরং অশুদ্ধ উচ্চারণ আর মিশ্র উচ্চারণের এক ভয়াবহ ভাষার ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনো এক চ্যানেলে একটি ব্যান্ড দলের গানের পরিবেশনা দেখানো হচ্ছিলো।

স্টেজের পেছনে লেখা ‘Say, No violence against women’, খুব ভালো কথা। কিন্তু যেভাবে মাইক মাথায় নিয়ে আর সমস্ত স্টেজে দৌড়-ঝাঁপ দিয়ে গান পরিবেশনা হচ্ছিলো তাতে করে সেই ভায়োলেন্সেই দর্শক কুপোকাৎ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। যদিও তরুণ সেই দর্শকদের তা হতে দেখা যায়নি। কারণ তারা এই ভায়োলেন্সে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। ঠিক যেভাবে মিশ্র ভাষায় আমরা ক্রমে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি।

কিন্তু এই অভ্যস্ততায় নারীর প্রতি পুরুষের ভায়োলেন্সও যেমন কমবে না তেমনি শুদ্ধ হবে না আমাদের অশুদ্ধ বাংলা। কাজেই বিষয়টি নিয়ে আমাদের এখনই ভাবার প্রয়োজন। আমরা কীভাবে কথা বলবো, ইংরেজি উচ্চারণে বাংলা? অশুদ্ধ উচ্চারণে বাংলা? ইংরেজি-বাংলা মিশেলে বাংলা? নাকি বিশুদ্ধ বাংলায় বাংলা উচ্চারণ? এসব প্রশ্নের মীমাংসাটা জরুরি হয়ে পড়েছে। তথ্যসূত্র: সাপ্তাহিক বুধবার ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.