মানুষ সব পারে কিন্তু একজন মানুষ সব পারেনা । প্রথমেই বলে নিচ্ছি আমি খুব ভাল নাটক লিখতে পারিনা। তারপরও অনেকেই জানতে চান কিভাবে নাটক লিখতে হয়? মানে নাটক লেখার ফরম্যাটটা কি? ফরম্যাটটা খুবই সহজ এবং এটা একেকজন এককরকম করে লিখে থাকে। আমার এই "মেঘ ডেকে যায় বেলায় বেলায়" নাটকটি চ্যানেল আইতে সম্প্রচারিত হয়। পরিচালনায় ছিলেন নাসিম সাহনিক।
এটা ছিল আমার লেখা প্রথম নাটক। নাটকে অভিনয় করেছিলেন সাদিয়া ইসলাম মৌ, কল্যাণ কোরাইয়া ও রাহা। ফরম্যাটটি শুধুমাত্র তাদের জন্য যারা নাটক লিখতে চান কিন্তু কিভাবে লিখবেন তা জানেন না বলে লিখতে পারছেন না।
দৃশ্য ঃ এক
সময় ঃ বিকাল
স্থান ঃ রোমেলের বাসা
শিল্পী ঃ রোমেল
ক্যামেরা একটা সাজানো গোছানো রুমকে ফলো করবে । একে একে দেওয়ালে টাঙ্গানো বিখ্যাত উপন্যাসিক রোদেলা শবনমের ছবি, বুক সেলফে তার কিছু বই, কিছু পেপার কাটিং ।
এরপর বিছানায় দুটি পা হয়ে ধীরে ধীরে একটা শরীর দেখা যাবে । এরপর দেখব রোমেল নামের একটি ছেলে একটা বই হাতে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ছে । বইয়ের নাম “পথ বেঁকে যায়” । মোবাইলে কল আসবে। প্রথমে মঈন ও সেরু র কল আসবে, এরপর আসবে তমার কল কিন্তু রোমেল একটা কল ও রিসিভ করবেনা ।
আমরা এখানে রোমেলের বন্ধুদের পরিচয় পাবো ।
দৃশ্য ঃ দুই
সময় ঃ বিকাল
স্থান ঃ শিল্পকলা
শিল্পী ঃ তমা, মঈন, সেরু
এখানে আমরা শেষের কলটা শেষ হবার সাথে সাথে দেখব যে তমা প্রচন্ড ক্ষেপে গিয়ে মোবাইলটা ছুঁড়ে ফেলতে চায় । মঈন বাঁধা দেয় ।
মঈন ঃ এটা কি করছিস ? একটা ইরেসপনসিবলের জন্যে মোবাইলটা নষ্ট করবি কেন ?
সেরু ঃ ধুর বোকা । এরকম কয়েকটা মোবাইল নষ্ট করলেও ওর কিছু যাবে আসবে বলে মনে হয়না ।
তমা ঃ ওকে যদি কাছে পেতাম তাহলে ওর মাথায় আমি এই মোবাইলটা ভেঙ্গে ফেলতাম ।
সেরু ঃ তা তো এখন হচ্ছেনা । দ্যাখ ও ঠিকই মোবাইল সাইলেন্ট করে রোদেলা শবনম এর বই পড়ছে ।
মঈন ঃ পড়ছে না পড়ছেনা বল গিলছে ।
তমা ঃ ওকে রোদেলার বই গেলাচ্ছি ।
ওর সব বই যদি আমি না পুড়ে ফেলি তাহলে আমার নাম তমা না ।
সেরু ঃ তাহলে তোর একটা নতুন নাম খুঁজি । ও তো জীবন থাকতে তোকে রোদেলা শবনম এর বই পুড়তে দেবেনা ।
তমা ঃ ও দেবেনা ওর বাপ দিবে ।
সেরু ঃ হ্যাঁ তা ঠিক ।
ওর বাপ দিতে পারে ।
মঈন ঃ আহ্ তোরা এসব বাদ দেতো । ও তো আগেও এরকম করেছে । এরচেয়ে বরং আমরা ওকে ছাড়াই শো টা দেখে আসি চল ।
সেরু ঃ হুম তাই চল ।
আচ্ছা ওর টিকেটটা কি করব বলতো ?
তমা টিকেটটা হাতে নিয়ে টুকরো করে ছিড়ে ফেলে । এরপর হন হন করে হেঁটে চলে যায় । সেরু , মঈন ডাকাডাকি করেও কোন লাভ হয়না ।
দৃশ্য ঃ তিন
সময় ঃ সন্ধ্যা
স্থান ঃ রোমেলের বাড়ি
শিল্পী ঃ রোমেল, রোমেলের মা ।
মা ঃ রোমেল রোমেল ।
এই সন্ধ্যা বেলায় ঘরে শুয়ে শুয়ে বই পড়ার মানে কি ? যা বাইরে যা । একটু ঘুরে আয়।
রোমেল ঃ না মা । আর একটু । এটুকু শেষ হলেই ব্যাস নাটকের শো দেখতে যাবো ।
মা ঃ কোথায় ?
রোমেল ঃ শিল্পকলায় ।
মা ঃ শো কয়টায় ?
রোমেল ঃ সাড়ে ছ’টায় মা ।
মা ঃ এখন কটা বাজে ?
রোমেল দেয়ালে ঘড়ির দিকে তাকায় ।
রোমেল ঃ ও মাই গড । সাড়ে সাতটা ? এখন কি হবে ? ওরা তো আমাকে মেরেই ফেলবে ।
(মোবাইল হাতে নেয়) শিট ! এতগুলো কল দিল আর আমি কিছুই শুনতে পেলাম না ।
মা ঃ মোবাইল সাইলেন্ট করে রাখলে শুনবি কি করে ? সারাদিন রোদেলা না কি তার বই নিয়ে পড়ে থাকা । কোথায় কি হচ্ছে তা নিয়ে কোন চিন্তা নেই । আমার হয়েছে যত জ্বালা । (বির বির করতে করতে চলে যায়)
রোমেল প্রথমে তমাকে ফোন করে তমা কল কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখে ।
এরপর মঈনকে ফোন করে মঈন ও ফোন বন্ধ করে রাখে । এরপর সেরুকে ফোন দেয়, সেরু ওয়েটিং ।
দৃশ্য ঃ চার
সময় ঃ দিন
স্থান ঃ ক্যাম্পাস
শিল্পী ঃ রোমেল।
রোমেল তমাকে ফোন করে । ক্যাম্পাসের দুটি লোকেশনে দুজন ।
রোমেল ঃ ১০ সেকেন্ডের জন্যে আমার কথা শোন । কলটা কেটে দিস না । প্লিজ প্লিজ........
তমা ঃ বল কি বলবি । সরি বলার দরকার নাই । তোর মত একটা ক্যালাসের কাছ থেকে সরি শুনতে শুনতে আমি বিরক্ত ।
রোমেল ঃ ওকে । সরি বলবনা । তুই চোখ বন্ধ কর ।
তমা ঃ পারবনা ।
রোমেল ঃ প্লিজ, প্লিজ ।
তমা ঃ ঠিক আছে বন্ধ করলাম । এখন বল ।
রোমেল ঃ তোর ব্যাগের চেইন টা খোল । হাত দিয়ে দেখ । একদম শুরুতেই ।
হ্যা পেয়েছিস ?
তমা ব্যাগের ভিতর হাত দিয়ে দেখে একটা ছোট্ট পুতুল পায় । পুতুলটা দেখতে অনেক সুন্দর । তমা দেখল যে পুতুলটার পেটের মধ্যে সরি লেখা ।
তমা ঃ রোমেল ?
রোমেল ঃ কি ?
তমা ঃ আবার ?
রোমেল ঃ আবার কি ?
তমা ঃ আবার সরি !!!
রোমেল ঃ ভুল হয়ে গেছে বাবা, সরি ।
তমা ঃ আবার ? (হেসে ফেলে)
রোমেল ঃ যাই হোক তোর তাহলে রাগটা ভেঙ্গেছে ।
শোন তুই এখুনি মেহের চত্বরে চলে আয় ।
তমা ঃ জ্বি না । আমার রাগ ভাঙ্গেনি । আর আমি তোর কাছে যেতে পারবনা ।
রোমেল ঃ ওকে ।
তাহলে একটা গিফট মিস করলি ।
তমা ঃ তোর এই সরি মার্কা গিফট আমার দরকার নেই ।
রোমেল ঃ না । সরি মার্কা না । না আসলে সত্যিই মিস করবি ।
তমা ঃ থাক তোর গিফট লাগবেনা । আমি এমনিতেই আসছি ।
দৃশ্য ঃ পাঁচ
সময় ঃ দুপুর
স্থান ঃ রেস্টুরেন্ট
শিল্পী ঃ রোমেল, তমা।
রোমেল ঃ আমার যে কি আনন্দ লাগছে তা তোকে বলে বোঝাতে পারবোনা তমা ।
তমা ঃ আমাকে বোঝাতে হবেনা ।
আগে বল আমাকে পেতিœ বলেছিস ক্যান ? আমি কি দেখতে পেতিœর মত ?
রোমেল ঃ আচ্ছা তুই কি জানিস পেতিœ কয় প্রকার ?
তমা ঃ জানিনা । জানতেও চাই না ।
রোমেল ঃ আরে বাবা জেনে রাখ । জেনে রাখা ভালো । শোন, পেতিœ হল দুই প্রকার ।
এক: সুন্দর পেতিœ, দুই : অসুন্দর পেতিœ । তুই হলি নাম্বার ওয়ান । মানে তুই হলি সুন্দর পেতিœ ।
তমা অট্র হাসিতে ফেটে পড়ে ।
তমা ঃ তুই ও না পারিস ।
রোমেল ঃ শোন, তোকে দেখে এখন রোদেলা শবনমের একটা লেখার কথা মনে পড়ে গেল ।
তমা ঃ আল্লাহর দোহাই লাগে অন্তত আমাকে রোদেলা শবনম এর কোন কথা শুনতে বাধ্য করিস না ।
রোমেল ঃ আরে শোন না । রোদেলা শবনম তার লেখায় পরিস্কার করে বলেছেন যে মেয়েরা যখন রাগ করে তখন তার রুপের প্রশংসা করতে হয় । তাহলে মেয়েদের রাগ কমে যায় ।
তমা ঃ তুই তাহলে আমার রাগ ভাঙ্গার জন্যে আমাকে সুন্দর পেতিœ বলেছিস ?
রোমেল ঃ আরে না বাবা । শোন, তিনি এর ব্যাখ্যা ও দিয়েছেন ।
তমা ঃ কি ব্যাখ্যা শুনি ।
রোমেল ঃ মেয়েরা দেশের কোন সমস্যার চেয়ে তার সৌন্দর্যের একটা কিছু হলে সেটাকেই বেশি প্রাধান্য দেয় । মানে পৃথিবীতে মেয়েদের চিন্তা শুধুই সৌন্দর্য নিয়ে ।
তমা ঃ রোদেলা শবনম বললেন আর সেটা বেদ বাক্য হয়ে গেল ? আর তুই দেশ নিয়ে কি ভাবিস তা আমাকে বল । সারাদিনতো পড়ে থাকিস রোদেলা শবনমের বই নিয়ে । আর এত যে মেয়ে মানুষ মেয়ে মানুষ করছিস, তোর প্রিয় রাইটার রোদেলা চৌধুরী ও তো মেয়ে মানুষ, তাইনা ?
রোমেল ঃ আরে বাবা আমি মেয়ে মানুষকে পজিটিভলি দেখছি । আর কোথায় রোদেলা চৌধুরী আর কোথায় তুই ?
এবার তমা রাগ করে উঠে চলে যায় । রোমেল আটকানোর চেষ্ঠাও করে না ।
রোমেল ঃ (এদিক ওদিক তাকিয়ে) বাড়ি পৌছে ফোন দিস ।
দৃশ্য ঃ ছয়
সময় ঃ সকাল/দুপুর/ সন্ধ্যা
স্থান ঃ রোদেলার বাসা
শিল্পী ঃ রোমেল ।
রোমেল ধানমন্ডিতে রোদেলা যে বাসায় উঠবে তার সামনে গিয়ে পায়চারী করতে থাকে । দড়জা দিয়ে ভেতরে উকি দেয় । কাউকে দেখতে পায়না ।
অপেক্ষা করতে থাকে । মাঝে মাঝে দাড়োয়ানকে জিজ্ঞেস করবে, রাস্তার গাড়িগুলোর দিকে তাকাবে কোনটায় রোদেলা আছে । এই দৃশ্যে রোমেলকে বিভিন্নভাবে অপেক্ষা করতে দেখা যাবে । বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হবে । একটা কার এসে থামে বাড়ির সামনে ।
রোমেল দৌড়ে যায় কারের কাছে । রোদেলা চৌধুরী বেড়িয়ে আসবে কার থেকে ।
রোমেল ঃ ধুরো এত দেরি করে কেউ আসে ? আমি সেই সকাল থেকে আপনার জন্যে অপেক্ষা করছি । আর আপনি কিনা এত দেরি করলেন ।
রোদেলা ঃ ( রোদেলা খুব অবাক হয়ে যায়, অপরিচিত একজন ছেলে এভাবে কেন বলছে ।
) দেরি করলাম ?
আর তোমার কি এখানে অপেক্ষা করার কথা ছিল ?
রোমেল ঃ আমার অপেক্ষা করার কথা ছিল কি না তার চেয়েও জরুরী রাস্তায় আপনার কোন সমস্যা হয়েছিল কি না সেটা জানা । আমিতো চিন্তায় চিন্তায় অস্থির হয়ে যাচ্ছিলাম ।
রোদেলা ঃ (রোদেলাএবার প্রচন্ড মজা পেয়ে যায়, ছেলেটাতো অনেক মজার কথা বলে ) তা এত চিন্তা না করলেই হত । এইতো আমি দিব্যি সহিসালামতে চলে এসেছি । কি বলবে বল।
রোমেল ঃ (রোদেলার উপন্যাস থেকে ) একবার পাহাড়ের চূড়ায় উঠেছিলাম মেঘ স্পর্শ করবো বলে, সেবার সূর্যের কিরণে ধরতে পারিনি । প্রচন্ড তাপে আমি নিজেই নেমে এসেছিলাম মাটিতে । মাটিতে এসে উপলব্ধি হল, আমি আসলে ভীত ছিলাম, আমি হেরে গেছি । পরেরবার স্থির করলাম সূর্য্যকেই স্পর্শ করবো । যখন পাহাড়ের ঠিক চূড়ায় উঠেছি সূর্য্যই পালিয়ে গেল মেঘের আড়ালে ।
সেই সন্ধ্যায় আমি জয়ী হয়েছিলাম । আজ সন্ধ্যায় আমি আবার জয়ী হলাম ।
রোদেলা প্রচন্ড অবাক হয়ে যায় । ছেলেটা কি চমৎকারভাবে তার উপন্যাস থেকে হুবহু বলছে । রোদেলা বাড়ির ভিতর ঢুকে যায়।
রোমেল পাশাপাশি হেঁটে যায় রোদেলার সাথে ।
দৃশ্য ঃ সাত
সময় ঃ রাত
স্থান ঃ রোদেলার বাসা
শিল্পী ঃ রোমেল, রোদেলা ।
রোদেলা ঃ তাহলে আমার জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করার মত কেউ আছে এখানে ?
রোমেল ঃ সকাল থেকে রাত ! আমিতো জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আপনার জন্যে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি ।
রোদেলা ঃ তাই ? কিন্তু কেন ?
রোমেল ঃ কেন তা বলতে পারবনা । তবে আজ যখন আপনার জন্যে অপেক্ষা করছিলাম তখন একটা ভালোলাগা কাজ করছিল ।
মনে হচ্ছিল আরও হাজার প্রহর অপেক্ষা বরতে পারব ।
রোদেলা ঃ আমার প্রহর বেলা উপন্যাসটি পড়েছো ? ঐ যে, সব প্রহরে তোমার হাতে হাত/ সব প্রহরে তুমি আমার চন্দ্রমুখী রাত ।
রোমেল ঃ প্রহরগুলো মিথ্যে হত/ স্বপ্নগুলো নিভেই যেত/ রোগে শোকে তপ্ত খড়ায়/ মানুষগুলো কান্না জড়ায়/ তোমার মত আসলে তুমি/ এবার হবে বেলাভুমি/ তপ্ত রোদের মানুষগুলো/ করবে এবার স্বপ্নচুমি ।
রোদেলা ঃ প্রহরবেলায় ক্লান্ত আমি/ তোমায় দেখে ভ্রান্ত আমি/ শেষ বেলাতে তোমায় দেখে/ ক্লান্তিগুলো যাচ্ছে ঢেকে ।
রোমেল ঃ বেশ তাহলে উঠছি আজ/ হাতে আমার অনেক কাজ ।
রোদেলাঃ আজকে তবে এসো/ আমায় ভালোবাসার ছলে/ জোৎস্না ভালোবেসো ।
রোমেল ও রোদেলা দুজনেই হেসে ওঠে ।
রোদেলাঃ চমৎকার ! তুমিতো আশ্চর্য রকমের ছেলে । আমার সব লেখা মুখস্ত করে রেখেছো । শোন ছেলে, তোমাকে আমার ভীষন ভালো লেগেছে ।
কি নাম তোমার ?
দৃশ্য ঃ আট
সময় ঃ দিন
স্থান ঃ ক্যাম্পাস
শিল্পী ঃ রোমেল, তমা, মঈন, সেরু ।
এটা একটা ফ্ল্যাসব্যাকে দেখানো হবে ।
ক্যাম্পাসে মজা করছে রোমেল, সেরু, তমা, মঈন । রোমেল তমার প্রেমিক সেজে আর সেরু তমার বাবা সেজে অভিনয় করছে ।
রোমেল ঃ রোমেল ।
আমার নাম রোমেল ।
সেরু ঃ তা কি করা হয় শুনি ?
রোমেল ঃ জ্বি মানে ! মানে !
সেরু ঃ কি মানে মানে করছো ?
রোমেল ঃ মানে আমি আসলে বেকার ।
সেরু ঃ বেকার ? এর চেয়ে তো হকার হলেও ভালো করতে । কাজ না করে তুমি আমার মেয়ের পিছু নিয়েছো ?
রোমেল ঃ না মানে ! তাহলে আমি কি আপনার মেয়েকে পাবোনা আংকেল ?
সেরু ঃ না । কখনোই না ।
আমি বেঁচে থাকতে একটা বেকারের হাতে আমার মেয়েকে কিছুতেই তুলে দেবনা ।
রোমেল ঃ হুরররে । কে চাইছে আপনার এই পেতিœ মাইয়ারে ? নিয়া যান এই খান থাইকা আমি বেঁচে যাবো ।
এতক্ষন সব কিছু চুপচাপ দেখছিল তমা । এবার রেগে গিয়ে ধাওয়া করে রোমেল কে ।
রোমেল দৌড়ে পালায় । রোমেল পড়ে যায় । রোমেল বলে ডাক দেয় তমা।
আমরা দেখবো যে তমা এতক্ষন এটা ভাবছিল ।
দৃশ্য ঃ নয়
সময় ঃ রাত
স্থান ঃ রোদেলার বাসা
শিল্পী ঃ রোমেল, রোদেলা ।
রোমেল ঃ আচ্ছা আপনার প্রিয় রং কি ?
রোদেলা ঃ কেন ?
রোমেল ঃ আমি জানি, আপনার প্রিয় রং সাদা । ঠিক বলেছি না ?
রোদেলা ঃ হুম ! কিভাবে জানলে ?
রোমেল ঃ আপনার প্রিয় ফুল কাশফুল ।
রোদেলা ঃ প্রিয় ফুল কাশফুল হলেই যে প্রিয় রং সাদা হতে হবে এমন কোন কথা নেই । আমারতো লাল শাপলাও অনেক ভালো লাগে ।
রোমেল ঃ (রোদেলার উপন্যাস থেকে চমৎকার কিছু কথা বলবে রোমেল ) ।
“ মেঘমুক্ত আকাশে শত তারার খনি । একটি তারা খসে পড়লে হয়তো আকাশের কিছু ক্ষতি হবে না । কিন্তু প্রেয়ন্তীর অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে, কারন ঐ খসে পড়া তারাটিই যদি হয় তার প্রিয় ভালোবাসার শুভ্র তারাটি । প্রেয়ন্তী আকাশের পানে চেয়ে থাকে । কখন শুভ্র এসে তাকে নিয়ে যাবে সাদা আকাশে ।
কখন প্রেয়ন্তী নিজেই হয়ে যাবে সাদা আকাশের একটা তারা । সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই প্রেয়ন্তী লাফিয়ে পড়ে ছাদ থেকে । সবাই হুরমুর করে নিচে নামে । কিন্তু ততক্ষনে প্রেয়ন্তী শুভ্রের কাছে চলে গেছে সাদা আকাশের তারা হয়ে । ”
রোদেলা ঃ কাশফুল ফুটেছিল শুভ্র হয়ে আর ঝরে পড়া শুকনো পাতার অভিবাদন সময়ে সময়ে ।
চৈত্র তখন আনমনে বিদায়ের পথে, প্রেয়ন্তির ভালোবাসা শরতে । শুভ্র তার শরতেই আসবে, আবার কোন এক চৈত্রকে ফাঁকি দিয়ে ।
রোমেল ঃ মৃত প্রেয়ন্তির রক্তাক্ত মুখমন্ডলে একটা দুঃচিন্তা ছিল, শরতের আগমনের । শুভ্র তাকে জানিয়েছিল, শরতেই আসবে, কাশফুল হয়ে । ছোট্র অনুরোধ ছিল পৃথিবীর কাছে, ভিক্ষে দাও হে অনন্তযৌবনা পৃথিবী, আমি প্রেয়ন্তির কাছে থাকতে চাই ঐ কাক ডাকা ভোর থেকে গোধূলী পর্যন্ত, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ।
রোদেলা ঃ রোদ ভীষন রোদ । নিজের জগতে তখন কোন সম্ভাবনা নেই । শুকনো পাতাগুলো ঝরে পড়ছে নিজের অনিচ্ছাতেই । ঝরে পড়ছে প্রেয়ন্তির স্বপ্ন। নতুন নতুন পাতা উকি দিচ্ছে ।
প্রেয়ন্তির নতুন স্বপ্ন উকি
দেয়না । প্রকৃতির খেয়ালে শুভ্রের আগমন অনিশ্চিত । গুমোট অন্ধকার মেঘে মেঘে আর মনে মনে । দিনগুলো ছুটিতে, আর বছর, মাস আর সময়গুলোও । প্রেয়ন্তির সব ভালোবাসা আজ শুকনো পাতা ।
রোমেল ঃ কিন্তু রাত ভোর হয় । আবার জন্ম নেই নতুন স্বপ্ন নতুন পাতার সাথে । আসে শরত, আসে শুভ্র, আসে নতুন এক প্রেয়ন্তি সাদা মেঘে নতুন এক শুভ্রের কাছে ।
রোদেলা ঃ তারপর ?
রোদেলা ও রোমেল (কোরাস)ঃ মেঘ ডেকে যায় বেলায় বেলায় ।
রোদেলা ঃ তুমি তো আমার সব লেখাই মুখস্ত করে রেখেছে ।
রোমেল ঃ না । সব লেখা না । আপনি নতুন যে বইটার মোড়ক উন্মোচন করবেন সেটা এখনো মুখস্থ হয়নি ।
রোমেল ঃ ধুর বোকা । ওটা তো এখনো পাঠকের হাতেই পৌছায়নি ।
রোমেল ঃ আমিতো আপনার বইয়ের পাঠক না ।
রোদেলা ঃ পাঠক না ?
রোমেল ঃ সবাই বলে আমি হলাম খাদক । মানে আমি আপনার বই শুধু পড়ি না গিলেও খাই ।
রোদেলা ঃ হুম । বই খেকো বালক, সারাদিন আমার বই পড়লে চলবে, জীবনে কি কোন স্বপ্ন নেই তোমার ?
রোমেল ঃ জীবন যদি স্বপ্ন ছাড়া হত/ মেঘের মনে বৃষ্টি কি আর হত ?
রোদেলাঃ স্বপ্ন যদি নিজেই জীবন পেত/ বৃষ্টি দিয়ে স্বপ্ন কি আর হত ?
রোমেল ঃ মেঘের কোনে মেঘ জমেছে স্বপ্ন গেল কই / জীবন মেঘে স্বপ্ন জমে বৃষ্টি জমে কই ?
রোদেলা ঃ অল্প সময় চলছে হেলায় / মেঘ ডেকেছে বৃষ্টি বেলায় / চুপটি করে রই !
দুজনেই হেসে ওঠে ।
দৃশ্য ঃ দশ
সময় ঃ রাত
স্থান ঃ রোদেলার /তমার বাসা
শিল্পী ঃ রোমেল, তমা ।
রোদেলা ঘুমিয়ে পড়ে । রোমেল অনেক্ষন পায়চারি করে । ঘুম আসে না । ফোন করে তমাকে ।
তমা ঃ এই তুই কোথায় রে ?
রোমেল ঃ আরে তুই ভাবতেও পারবি না আমি কোথায় ! বলতো আমি কোথায় ?
তমা ঃ এমন ভাবে বলছিস যেন তুই রোদেলা শবনমের কোলে শুয়ে আছিস !
রোমেল ঃ হ্যাঁ ঠিক তাই !
তমা ঃ মানে ?
রোমেল ঃ না মানে কোলে না । আমি এখন রোদেলার বাসায় ।
তমা ঃ ও মাই গড ! তুই ? এত রাতে কি করিস ?
রোমেল ঃ সে অনেক কথা । পরে বলব । থাক ঘুমা ।
আমি এখন আর কথা বলতে পারবোনা । বাই ।
রোমেল কল কেটে দেয়। ঘুমিয়ে পড়ে অনেক আনন্দ নিয়ে ।
দৃশ্য ঃ এগারো
সময় ঃ রাত
স্থান ঃ রোদেলার বাসা
শিল্পী ঃ রোমেল, রোদেলা ।
রোদেলা ঃ কে ফোন দিচ্ছে বারবার ? বাসা থেকে ?
রোমেল ঃ না ।
রোদেলা ঃ তাহলে কে ? তোমার প্রেমিকা ?
রোমেল ঃ না । আমারতো কোন প্রেমিকা নেই ।
রোদেলা ঃ বাববা । কোনো প্রেমিকা নেই ।
রোমেল ঃ না নেই ।
রোদেলা ঃ আমি বাইরে যাবো । তুমি যাবে আমার সাথে ?
রোমেল ঃ হ্যা যাবো ।
রোদেলা ঃ তাহলে এক কাজ করো, আজ আমার বিশেষ কোন কাজ নেই । তুমি আমাকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যাও যে জায়গার সাথে আমার লেখা কোন উপন্যাসের মিল আছে এবং যেখানে আমি যাইনি কখনো ।
রোমেল এক মুহুর্ত চিন্তা করে । তারপর বলে .............
রোমেল ঃ চলুন । আপনাকে এমন জায়গায় নিয়ে যাবো যেখানে আপনি কখনোই যাননি । আমার অসম্ভব প্রিয় একটা জায়গা ।
রোদেলা ঃ চল দেখি ।
দৃশ্য ঃ বার
সময় ঃ সকাল
স্থান ঃ ক্যাম্পাস
শিল্পী ঃ তমা, সেরু , মঈন ।
ক্যাম্পাসের কোন একটা জায়গায় বসে আছে তিনজন ।
তমা ঃ রোমেলের আম্মু ফোন দিয়েছিল । রোমেলের জন্যে অনেক চিন্তা করছে ।
মঈন ঃ চিন্তার কি আছে ? রোমেল তো আর কচি খোকা না ।
সেরু ঃ হুম । এখনতো কচি খোকাই হয়ে গেছে ।
মঈন ঃ মানে ?
সেরু ঃ মানে হল গিয়ে রোমেল আমাকে ফোন করেছিল । বলল রোদেলা চৌধুরী নাকি ওকে অসম্ভব পছন্দ করে ফেলেছে । যেখানে যাচ্ছে সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছে ।
তমা ঃ পছন্দ না ছাই । যখন সময় হবে তখন তো ঠিকই চলে যাবে ।
মঈন ঃ ধুরো । ভাল্লাগেনা এই ঘ্যান ঘ্যান । ও শালা যেমন আমাদের ভুলে আছে, আমাদের ও উচিৎ ওকে ভুলে থাকা ।
তমা ঃ ঠিক বলেছিস । বারবার কেন যে ওর বিষয়ে কথা বলছিস ।
সেরু ঃ বারে । আমি কখন ওর বিষয়ে কথা বললাম ? তুই তো ওর কথা তুললি ।
তমা ঃ আমি ? (সবাই চুপ হয়ে যায় ।
একটু পর তমা কথা বলে) । এই মঈন রোমেলকে একটা ফোন দে না । (সবাই তমার দিকে তাকায়, মায়া লাগে । মঈন রোমেলকে ফোন করে । )
মঈন ঃ শালাতো ফোন ধরে না ।
সেরু ঃ রোদেলাকে পেয়ে ফোন ধরা ভুলে গেছে ।
মঈন ঃ শালা মনে হয় মজা মারছে । আসুক, ওর মজা আমি যদি না ছুটাই ।
দৃশ্য ঃ তের
সময় ঃ সকাল
স্থান ঃ নদীর ধারে
শিল্পী ঃ রোমেল,রোদেলা।
রোমেল রোদেলাকে নিয়ে নদীর ধারে কাশফুল দেখে ।
অসম্ভব সুন্দর একটা জায়গা । রোদেলা মুগ্ধ হয়ে যায় । রোমেল অপলক দৃষ্টিতে রোদেলাকে দেখে ।
রোদেলা ঃ সত্যিই অনেক সুন্দর একটি জায়গা । এর আগে এখানে আসিনি ।
ধন্যবাদ রোমেল ।
রোমেল ঃ এই শাড়িতে আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে । একদম নদীর মত ।
রোদেলা ঃ নদীর মত ?
রোমেল ঃ আরে আপনার উপন্যাসের নদীর মত ।
রোদেলা ঃ অনন্ত যৌবনা প্রকৃতি খুঁজে নেয় কাব্যকে ।
কাব্যের ঘরে আজ প্রকৃতির উৎসব । যৌবনের দামে আমি প্রকৃতির হলাম । প্রকৃতির ভালোবাসায় আমি যৌবনদীপ্ত হলাম । প্রকৃতি আর আমি । যৌবন আর কাশফুল ।
¯িœগ্ধতা আজ আমার শাড়ীর আঁচলে আর তোমার চোখের ভাজে । আমি তোমাকে ভালোবাসি হে অনন্ত যৌবনা প্রকৃতি ।
রোমেল ঃ সঙ্গীত খুঁজে নেয় জীবনকে । জীবন খুঁজে নেয় সঙ্গীকে । প্রকৃতি তখন সহায়ক হয়ে জীবনের অর্থ বের করে ।
আমি সঙ্গীত চেয়েছিলাম, সঙ্গী পেয়েছি । আমি তোমাকে ভালোবাসি হে অনন্ত যৌবনা প্রকৃতি ।
রোদেলা ঃ আচ্ছা রোমেল, তুমি কাকে ভালোবাসো আমার লেখাকে না আমাকে ?
রোমেল ঃ (চিন্তা করে) আপনাকে দেখার আগে শুধু আপনার লেখা ভালোবাসতাম, আর আপনাকে দেখার পড়ে আপনাকেও ভালোবাসি ।
রোদেলা ঃ কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তুমি শুধু আমার লেখাকেই ভালোবাসো ।
রোমেল ঃ না ।
আমার মনে হচ্ছে আমি দিনকে দিন আপনার লেখাকে ছেড়ে শুধু আপনাকেই ভালোবাসছি ।
রোদেলা ঃ তাহলে আমাকে কাশফুল এনে দাও রোমেল। আমার কাশফুল চাই ।
রোমেল কাশফুল এনে দেয় রোদেলাকে । তারপর দুজনেই হেঁটে যায় সামনের দিকে ।
হাঁটু পানিতে নামে । আকাশের দিকে চেয়ে থাকে । রোদেলা এগিয়ে যায় । কাঁধে হাত রাখে । রোমেল রোদেলার দিকে তাকায় ।
( রবীন্দ্র সঙ্গীত নেপথ্যে)
দৃশ্য ঃ চোদ্দ
সময় ঃ সকাল
স্থান ঃ রোমেলের বাসা
শিল্পী ঃ রোমেলের মা, তমা, মঈন ।
তমা ঃ ও ভালো আছে আন্টি ।
মা ঃ ভালো তো আছে । কিন্তু এভাবে দিনের পর দিন একটা মানুষের বাসায় গিয়ে পড়ে থাকলে হবে ? এদিকে আমি একলা মানুষ । সব ঝামেলা এখন আমার ।
আর ঐ মহিলাই বা কেমন ? একটা ছেলে নিজের বাড়িতে না থেকে ওখানে পরে আছে আর উনি কিছুই বলছেন না ।
মঈন ঃ আন্টি আমি কাল ওনার বাসায় গিয়েছিলাম । উনিতো বাসায় নেই, রোমেল ও নেই । রোমেলকে নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন ।
তমা ঃ যখন রোদেলাচলে যাবে তখন কি হবে ? তখন দেখব কার কাছে যায় ।
মা ঃ তোমাদের বন্ধু তোমরা একটু দেখ কিভাবে ওকে বাড়িতে আনা যায় ।
মঈন ঃ জ্বি আন্টি দেখছি ।
মা ঃ তোমরা বোসো । আমি খাবার দিচ্ছি ।
তমা ঃ না আন্টি আমরা খেয়ে এসেছি ।
দৃশ্য ঃ পনের
সময় ঃ বিকাল
স্থান ঃ নদীতে
শিল্পী ঃ রোমেল,রোদেলা।
রোমেল আর রোদেলা নৌকায় ।
রোমেল ঃ আপনার নতুন বইয়ের কাহিনীটা কি নিয়ে ?
রোদেলা ঃ তা তো বলা যাবেনা । ওটা তো এখনো পাবলিশ হয়নি । পাবলিশ হলে পড়ে নিও ।
জেনে যাবে ।
রোমেল ঃ আচ্ছা ঠিক আছে ।
রোদেলা ঃ আচ্ছা রোমেল তুমি যে আমাকে ভালোবাসো, তা তুমি আমার সম্পর্কে কতটা জানো ? মানে আমার লেখালেখির বাইরেও যে একটা জীবন আছে ওটা সম্পর্কে কতটা জানো ।
রোমেল ঃ একবার রূপরেখা কাজলকে বলেছিল, আমার বাবা অনেক বদ মেজাজী । বাবার সামনে গেলে বাবা তোমাকে ঘাড় মটকে দেবে ।
কাজল মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলেছিল, তোমার বাবাকে নয় তোমাকে জানতে চাই ।
রোদেলা ঃ রূপরেখার বাবা কিন্তু কাজলকে শেষ পর্যন্ত মানতে পারেনি ।
রোমেল ঃ রূপরেখা কিন্তু কাজলকে ঠিকই পেয়েছিল ।
রোদেলা ঃ না বাবা তোমার সাথে পেরে ওঠা মুস্কিল ।
রোমেল ঃ মুস্কিল হবে কেন আমিতো আপনার উপন্যাস থেকেই কথা বলছি ।
রোদেলা ঃ আচ্ছা বাদ দাও এসব । তুমি আমাকে তিনটি শব্দ বল । যে তিনটি শব্দ তুমি আমার বইতে সবচেয়ে বেশি পেয়েছো । দেখি তুমি আমার বই সম্পর্কে কতটা জানো ।
রোমেল ঃ কাশফুল, মেঘ আর ভালোবাসা ।
রোদেলা ঃ হুম । (অন্যদিকে তাকিয়ে আকাশ, পানি ইত্যাদি দেখতে থাকে । নৌকা দুরে অনেক দুরে চলে যায় )
দৃশ্য ঃ ষোল
সময় ঃ সকাল
স্থান ঃ রোমেলের বাসা
শিল্পী ঃ রোমেলের মা, রোমেল ।
(রোমেলের মা কথা বলছে আর রোমেল তারাহুরো করে তৈরি হচ্ছে বাইরে যাওয়ার জন্যে । )
মা ঃ সবকিছুর একটা সীমা আছে রোমেল ।
এভাবে ঘর ছেড়ে অন্য কোথাও থাকা ঠিক নয় । এখন কোথায় যাবি? রোমেল আমার কথার উত্তর দে ।
রোমেল ঃ আমি গেলাম ।
মা ঃ রোমেল শোন ।
রোমেল চলে যায় ।
দৃশ্য ঃ সতের
সময় ঃ দিন
স্থান ঃ শাহবাগ
শিল্পী ঃ রোমেল ।
রোমেল রাস্তা পার হয়ে হেঁটে সামনে চলে যায় । শাহবাগের ফুলের দোকান থেকে কিছু লাল শাপলা নেয় । তারপর ছবির হাটের দিকে যায় ।
দৃশ্য ঃ আঠারো
সময় ঃ দিন
স্থান ঃ শাহবাগ
শিল্পী ঃ রোমেল ও রোদেলা।
রোমেল ও রোদেলা হাঁটতে থাকে । শিখা অনির্বান হয়ে ছবির হাঁটের দিকে ।
রোমেল ঃ আপনার জন্য লাল শাপলা ।
রোদেলা ঃ বাহ্ । অনেক সুন্দরতো ।
ধন্যবাদ রোমেল ।
রোমেল ঃ এর আগে এদিকটায় এসেছিলেন ?
রোদেলা ঃ না । ঠিক মনে করতে পারছি না । জায়গাটা সুন্দর ।
রোমেল ঃ আপনার লেখায় কিন্তু এ জায়গাটার বর্ননা আছে ।
রোদেলা ঃ কোন লেখায় বলতো ।
রোমেল ঃ ঐ যে মহুয়া আর তারেক দুজনে হাঁটতে থাকে একসাথে । মহুয়ার হাতে লাল শাপলা, গায়ে বাসন্তি রঙের শাড়ি ।
(রোদেলা নিজের দিকে তাকায় । তার হাতেও লাল শাপলা আর গায়ে বাসন্তি রঙের শাড়ি ।
)
রোমেল ঃ আপনাকে একদম মহুয়ার মত লাগছে ।
রোদেলা ঃ কিন্তু তোমাকে মোটেও তারেকের মত লাগছেনা ।
দুজনেই হেসে ওঠে । তারপর সামনের দিকে এগিয়ে যায় ।
রোদেলা ঃ কাল আমার নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, মনে আছে ?
রোমেল ঃ ও শিট ।
আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম ।
রোদেলা ঃ তুমি কিন্তু আমাকে পেয়ে আমার লেখা লেখির খবর ভুলেই গেছো ।
রোমেল ঃ আরে না । তা কি করে হয় । দেখবেন কাল সবার আগে আমিই গিয়ে হাজির হব ।
রোদেলা ঃ সে কাল দেখা যাবে । আজ চল ।
রোমেল ঃ চলুন ।
দৃশ্য ঃ উনিশ
সময় ঃ সকাল
স্থান ঃ রোমেলের বাসা
শিল্পী ঃ রোমেল ।
রোমেল সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে রোদেলার কাছে যাবার জন্যে তৈরি হতে থাকে ।
রোমেলের মা ঢোকে রোমেলের রুমে ।
মা ঃ রোমেল কোথায় যাস ?
রোমেল ঃ মা তুমি আজকে আমাকে আর কোন কিছু জিজ্ঞেস করবেনা প্লিজ । আজ আমার একটা বিশেষ দিন ।
মা ঃ আরে বাবা তুই কি ভেবেছিস আমি ভুলে গেছি ? তুই ভুলতে পারিস কিন্তু আমি না ।
রোমেল ঃ ওকে মা থ্যাংক ইউ ।
রোমেল বেড়িয়ে যায় ।
মা ঃ আরে কোথায় যাস ? আমি সবাইকে বাসায় আসতে বলেছি ।
দৃশ্য ঃ বিশ
সময় ঃ সকাল
স্থান ঃ তমার বাসা
শিল্পী ঃ রোমেল, মঈন, তমা, সেরু ।
রোমেলকে ফোন করে মঈন । রোমেল ফোন কেটে দেয় ।
আবারো ফোন করে মঈন । এবার রিসিভ করে ।
রোমেল ঃ কি হয়েছে বল ।
মঈন ঃ তমা এ্যাক্সিডেন্ট করেছে তারাতারি আয় ।
রোমেল ঃ কোথায় ? কখন ? কিভাবে ?
মঈন ঃ এতকিছু বলার সময় নেই ।
তারাতারি তমাদের বাড়িতে আয় ।
রোমেল ফিরে যায় তমাদের বাড়ির দিকে ।
দৃশ্য ঃ একুশ
সময় ঃ সকাল
স্থান ঃ তমার বাসা
শিল্পী ঃ রোমেল, তমা, মঈন, সেরু ।
সেরু ঃ কাজটা কি ঠিক হল ?
তমা ঃ অবশ্যই ঠিক হল । ওকে কিভাবে সোজা করি দেখ ।
( রোমেল সি এন জিতে করে আসছে )
মঈন ঃ আমারও মনে হয়না কাজটা ঠিক হল ।
তমা ঃ তোরা এত ভাবছিস কেন ? আমি এই প্ল্যান করেছি আমি এর দায়ভার নিলাম তোরা চুপচাপ থাক ।
সেরু ঃ আমারতো মনে হয় ও আসবেনা ।
তমা ঃ না এসে উপায় নেই । ও আসবে ।
( রোমেল সি এন জিতে করে আসছে )
সেরু ঃ এত শিওর হবার দরকার নেই । রোদেলাকে ছেড়ে ও যে এখানে আসবে তার নিশ্চয়তা তুই দিতে পারিস না ।
রোমেল তমার ঘরে ঢোকে । তমার দিকে তাকায়, আস্তে আস্তে সেরু , মঈন দুজনের দিকে তাকায় । তারপর চিৎকার করে ।
রোমেল ঃ স্টুপিড । সবকিছুর একটা সীমা আছে । তুই জানিস এখন রোদেলার নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হচ্ছে । তোদের এই ফাজলামির জন্যে আমি এটা মিস করছি । স্টুপিড সব ।
রোমেল বের হয়ে চলে যায় । তমা প্রচন্ড জোড়ে কেঁদে ফেলে । তারপর টেবিলে রাখা কেকটা ফেলে দেয় । আজ আসলে রোমেলের জন্মদিন ।
দৃশ্য ঃ বাইশ
সময় ঃ দুপুর
স্থান ঃ রোদেলার বাসা
শিল্পী ঃ রোমেল, রোদেলা ।
রোমেল তারাহুরো করে রোদেলার বাড়িতে ঢুকতে থাকে । দেখে রোদেলা বেড়িয়ে যাচ্ছে । হাতে একটা লাগেজ । রোমেল বুঝতে পারে রোদেলা চলে যাচ্ছে ।
রোমেল ঃ আমি আসলে কিভাবে বলব জানিনা ।
আমি আসলে একটা কাজে আটকে পড়েছিলাম ।
রোদেলা ঃ ঠিক আছে রোমেল । এটা কোনো বিষয় না । আমি কিছু মনে করিনি ।
রোমেল ঃ কিন্তু আপনি কোথায় যাচ্ছেন ? এসব হাতে কেন ?
রোদেলা ঃ আমি চলে যাচ্ছি ।
আমারতো কাজ শেষ হয়েছে রোমেল । আর আমিতো এখানে থাকতে আসিনি ।
রোমেল ঃ কিন্তু এটা কি করে সম্ভব ? আপনি আমাকে ছেড়ে যেতে পারেননা।
রোদেলা ঃ কেন যেতে পারি না ?
রোমের ঃ আমি আপনাকে ভালোবাসি । আর আপনিও বলেছিলেন যে আপনিও আমাকে ভালোবাসেন ।
রোদেলা ঃ হ্যা রোমেল ঠিক আছে আমি ও তোমাকে ভালোবাসি । তাই বলে আমাকে এখানে থেকে যেতে হবে কেন ? দেখ রোমেল এই কয়দিন আমরা এক সাথে ছিলাম । ঘুরে বেড়িয়েছি, খেয়েছি অনেক ভালো সময় কেটেছে । তার মানে এটা নয় যে আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে পারব না ।
রোমেল ঃ ভালো সময় কেটেছে ? ব্যাস এতটুকুই ?
রোদেলা ঃ হ্যা এতটুকুই ।
রোমেল ঃ মধ্য গগনে সূর্যের ক্ষরতাপে ভালোবাসার হাজার বর্ষপূর্তি । আমি সূর্যের সাথে যেতে ও রাজি আছি । আপনার উপন্যাসের রজনীর মত আমি আপনার সাথে যেতে চাই ।
রোদেলাঃ না তুমি আমার সাথে যেতে পারো না । ওটা উপন্যাস এটা বাস্তবতা ।
রোমেল ঃ তাহলে আপনার উপন্যাস কি বাস্তবসম্মত নয় ? আপনি যে এত এত চরিত্র তৈরি করেছেন, চরিত্রের ইমোশন দেখিয়েছেন সেসব কি ?
রোদেলা ঃ ওহ । তুমি কেন বুঝতে পারছনা যে ওটা উপন্যাসের প্রয়োজনে লিখেছিলাম । শোন, আমি জানি তোমার খারাপ লাগছে । কদিন বাদেই ঠিক হয়ে যাবে ।
রোমেল ঃ না ঠিক হবেনা ।
আপনি বুঝতে পারছেন না যে আমি আপনাকে ভালোবাসি । আমার ভালোবাসা প্রেয়ন্তির জন্যে শুভ্রের ভালোবাসা, মেঘের জন্যে আকাশের ভালোবাসা, অপরাজিতার জন্যে নীলের ভালোবাসা কিংবা স্নিগ্ধার জন্যে কাব্যের ভালোবাসার চেয়ে কোন অংশে কম নয় ।
রোদেলা ঃ তুমি বোকার মত কথা বলছো । ওগুলো আমার উপন্যাসের চরিত্র । ওগুলোর কোন বাস্তবিক রুপ নেই, সব কল্পনা ।
আর আমি বাস্তব ।
রোমেল ঃ আমি বাস্তব কল্পনা বুঝিনা । আমি আপনাকে ভালোবাসি । আমি আপনাকে যেতে দিতে দেবনা ।
রোদেলা ঃ ভালোবাসতেই পারো ।
তোমার মত হাজার হাজার ভক্ত আমাকে ভালোবাসে । আমিও তাদের ভালোবাসি । তাই বলে সবার জন্যে আমি তাদের সাথে সব সময় থাকতে পারিনা ।
রোমেল ঃ আমিও কি অন্য সবার মত ?রোদেলাকিছু বলেনা সামনের দিকে এগিয়ে যায় । রোমেল অনেক অনুরোধ করেও রোদেলাকে আটকাতে পারেনা ।
রোদেলাচলে যায়, রোমেল তাকিয়ে চোখের পানি ফেলে )
দৃশ্য ঃ তেইশ
সময় ঃ দিন
স্থান ঃ আউটডোর
শিল্পী ঃ রোমেল ।
প্রায় বিশ বছর পর এই দৃশ্যে কথা বলতে দেখবো সেরু, মঈন এবং তমাকে । তমা, সেরু ও মঈনের চেহারায় পরিবর্তন । তারা একে একে রোমেল সম্পর্কে বলবে ।
সেরু ঃ রোমেলের জীবনটা অনেক আলোকিত হতে পারত ।
হয়তো রোমেল নিজেই তা চায়নি । কিংবা কিছু ছায়া তাকে তাড়া করেছিল । আমি বন্ধু হয়েও সেই ছায়া ঢাকতে পারিনি ।
মঈন ঃ রোমেল, ও আমার বন্ধু । আমি ওকে সবসময় মিস করি ।
ওর দুষ্টুমিগুলো আবার দেখতে ইচ্ছে করে । নাহ্ । চাইলেই সব হয়না । আমি চাইলেই আর রোমেলের দুষ্টুমি দেখতে পাবোনা ।
তমা ঃ রোমেলের চঞ্চলতা কখন যে ওর প্রতি দুর্বল করেছিল তা বোঝাতে পারবোনা ।
অসম্ভব প্রিয় আমার এ বন্ধুটিকে নিজের অজান্তেই ভালোবেসেফেলেছিলাম । তাই সম্পর্কটা বন্ধুত্বের চেয়ে বেশি কিছু হতে পারতো, শুধু রোমেল চাইলেই । এখনো রোমেলকেই ভাবি । আমার এ ভাবনার গন্ডি এখনো বন্ধুত্বকে ছাড়িয়ে যায় । রোমেল এখন শুধুই তাঁর নিজের জগতে ।
আমার ভাবনার জগত বরাবরের মতই অপরিচিত রোমেলের কাছে ।
দৃশ্য ঃ চব্বিশ
সময় ঃ দিন
স্থান ঃ রোমেলের বাসা
শিল্পী ঃ রোমেল ।
ক্যামেরা একটা অগোছালো রুমকে ফলো করবে । সব কিছুতেই কেমন যেন মাকড়শার জাল, ময়লা লেগে আছে । একে একে দেওয়ালে টাঙ্গানো বিখ্যাত উপন্যাসিক রোদেলা শবনমের ছবি, বুক সেলফে তার কিছু বই এলোমেলো, কিছু পেপার কাটিং ।
এরপর বিছানায় দুটি পা হয়ে ধীরে ধীরে একটা অগোছালো শরীর দেখা যাবে । এরপর দেখব রোমেল একটা বই হাতে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ছে । বইটার নাম “অদ্ভুত সেই ছেলেটি” । রোমেলের মুখে বড় বড় দাঁড়ি, গোঁফ । রোমেলকে দেখে বোঝা যাচ্ছে সে এখন একটা মানষিক প্রতিবন্ধী ।
বি.দ্র: কেউ নাটকটি দেখতে চাইলে নাটক ডট কম থেকে ডাউনলোড করে দেখতে পারেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।