যে জানেনা এবং জানে যে সে জানেনা সে সরল, তাকে শেখাও। যে জানেনা এবং জানেনা যে সে জানে না, সে বোকা-তাকে পরিত্যাগ কর। আজ প্রথম আলো পত্রিকার চতুর্থ পৃষ্ঠায় বিশাল বাংলা পাতায় 'নেতা এখন বানিয়ে দেওয়া হয়' শিরোনামে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদের একটি বক্তব্য ছাপা হয়েছে।
গতকাল শনিবার (২৬/০২/২০১২) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আলী আহম্মদ চুনকা স্মারকগ্রন্থের প্রকাশনা ও মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তোফায়েল আহমেদ এসব কথা বলেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে তিনি নিশ্চয়ই আরও অনেক কথা বলেছেন।
সব কথা পত্রিকায় আসে না। তবে নেতা বানানো সম্পর্কে তিনি যে কথা বলেছেন সে কথাটুকু উদ্বৃত্ত করি-
'নেতা হতে চাইলে এখন আর তৃণমূল থেকে উঠে আসার প্রয়োজন নেই। নেতা এখন বানিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে রাজনীতিতে অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। '
বাংলাদেশের রাজনীতিতে কতটুকু অবক্ষয় দেখা দিয়েছে তা নিয়ে আমার বেশি কিছু বলার নেই।
আমরা যারা ব্লগিং করি, প্রতিনিয়ত ব্লগে চোখ রাখি- রাজনীতির অবক্ষয় সংক্রান্ত অনেক কিছুই প্রতিনিয়ত অবলোকন করি। আমাদের দৌড় এই অবলোকন করা পর্যন্তই। বেশি হলে ব্লগেই রাজনৈতিক নেতাদের ঘৃণা জানাই, শাপ-শাপান্ত করি।
একটি বিষয় ভেবে দেখার মতো যে, আমরা রাজনীতি দ্বারাই প্রতিনিয়ত নিয়ন্ত্রিত হচ্ছি। কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের হাতে দেশের শাসনভার ন্যস্ত থাকে।
এই রাজনৈতিক দল বিভিন্ন নীতি নির্ধারণ করে। তাদের নীতি এবং দেশ পরিচালনার নিয়ম-কানুনের উপরই আমাদের রুটি-রুজি এবং জীবনমান নির্ভর করে। তাদের নীতির উপরই দেশের কর্মসংস্থান নির্ভর করে।
একটা উদাহরণ দেই। প্রতি বছর সরকারি চাকরিতে কিছু লোক নিয়োজিত করা হয়।
সাধারণত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমেই এই নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু দেখা যায় একটি দলের নীতির কারণে এই নিয়োগ স্বচ্ছ হয় না। রাজনৈতিক চাপ এবং দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারণে মেধাবীরা সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ পায় না। অদক্ষ এবং অযোগ্য লোকেরা ঘুষ কিংবা স্বজনপ্রীতির দ্বারস্থ হয়ে কর্মসংস্থান বাগিয়ে নেয়। হাল আমলে যুক্ত হয়েছে দুর্নীতি করে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে নিজস্ব লোক নিয়োগ দেওয়া।
ফলে কর্মে নিয়োজিত হয়ে তারাই ঘুষ এবং দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে।
নীতি নির্ধারণের সর্বশীর্ষ থেকে বানানো নেতারাই এই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত থাকে। ফলে দেশ সুযোগ্য মেধাবীদের সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। আর এই বানানো নেতারা সাধারণত তেলবাজ নেতা হয়ে থাকে। যে যত বেশি তেল দিতে পারে তার অবস্থান তত পাকাপোক্ত থাকে।
আর অবস্থান পাকাপোক্ত হয়ে গেলে দুর্নীতি করে প্রচুর বিত্ত-বৈভব অর্জন করে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা যায় সবসময়।
বর্তমান রাজনীতিতে হাইব্রীড নেতাদের প্রাধান্যও বেশি। অশিক্ষিত কিংবা অর্ধশিক্ষিত এই হাইব্রীড নেতারা আরও বেশি ভয়ংকর। বানানো নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে এই হাইব্রীড নেতারা প্রশাসন সহ সর্বস্তরে দাপটের সাথে চলাফেরা করে। বড় দলের কোনো নেতার নামে নাম সর্বস্ব একটা সংগঠন গড়ে তোলে সেই সংগঠনের নামে চলে তাদের দুর্নীতি।
বঙ্গবন্ধু বা জিয়াউর রহমানের নামে একটা সংগঠন দাঁড় করিয়ে তাতে সম্পৃক্ত করা হয় কিছু নামী-দামী লোক। তারপর সেই নাম ভাঙ্গিয়ে চলে তাদের রমরমা ঘুষ বাণিজ্য, কমিশন বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য প্রভৃতি।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে এই হাইব্রীড নেতারা থাকে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে। সরকারের পরিবর্তন হলেও হাইব্রীড নেতাদের অবস্থানের পরিবর্তন হয় না। কারণ তারা কখনো আওয়ামী লীগ কখনো বিএনপি।
যেদিকে বৃষ্টি সেদিকে ছাতা ধরার মানসিকতায় এই হাইব্রীড নেতাদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ অবিরত চলতে থাকে। আশ্চর্য লাগে যখন এই হাইব্রীড নেতাদের খপ্পরে দেশের প্রতিথযশা লোকজনও জড়িয়ে যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরাও এই হাইব্রীড নেতাদের খপ্পরে আছেন।
কলেজ ভার্সিটিতে যারা পড়াশুনা করে এসেছেন, আমার মনে হয় তাদের সবাই রাজনীতি সচেতন। কেউ কেউ সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ ও করেছিলেন।
পেশাগত জীবনে জড়িয়ে পড়ে কেউ নোংরা রাজনীতির ধারে কাছেও থাকতে চাচ্ছেন না। কিন্তু এই নোংরা রাজনীতি যখন আপনার পেশাকে কলুষিত করে তখন রাজনীতিকে গালমন্দ না করে উপায় নেই। কিন্তু রাজনৈতিক শক্ত অবস্থান না থাকলে আপনাকে বঞ্চিত হতে হবে পদে পদে। রাজনীতির এই দুষ্টচক্রে পড়ে হা-পিত্যেশ করা ছাড়া আর কি কোনো উপায় নেই?
রাজনীতিতে এই বানানো নেতা আর হাইব্রীড নেতাদের কাছে আমরা আমজনতা আর কতকাল অসহায় হয়ে থাকবো? রাজনীতিতে মেধাবীদের আগমন এখন বড় প্রয়োজন। কিন্তু রাজনীতি নাম শুনেই নাক সিঁটকিয়ে তা থেকে দূরে থাকার প্রবণতা আমাদের নষ্ট রাজনীতিকেই উৎসাহিত করবে।
ধীরে ধীরে সবকিছু নষ্টদের অধিকারেই চলে যাবে। বানানো নেতা আর হাইব্রীড নেতাদের এই দুষ্টচক্র থেকে বের করে আনার মতো প্রতিভাবান নেতা কি আমাদের দেশে নেই? আর থাকলেও তারা কেনো সংগঠিত করতে পারছেন না মেধাবীদের?
বাংলাদেশের বর্তমান শাসনতান্ত্রিক কাঠামোয় রাজনীতি একটি অপরিহার্য অঙ্গ। সংসদ সদস্য হিসেবে যারা নির্বাচিত হয়ে আসেন তারা রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম থেকেই উঠে আসেন। কালো টাকার দাপটে অধিকাংশ অশিক্ষিত মাস্তান টাইপের লোকেরা নির্বাচিত হয়ে আসছেন দেশের আইন প্রণয়নের কর্ণধার হিসেবে। ভালো যে ক'জন রাজনীতিক উঠে আসছেন দুষ্টদের দাপটে তারা হয়ে থাকেন কোনঠাসা।
এই দুষ্ট চক্র থেকে বের করে আনার মতো কোনো মেধাবী নেতা কি আমরা পাবো না? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।