জীবনটা এইরকমই ছোট একটা কুঁড়েঘর। ঘর থেকে আবছা আলো বাইরে এসে পড়ছে। আমি সেই ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে। ঘর থেকে খানিকটা দুরে একটি নদী। আকাশে ভাঙা চাঁদ।
নদী এবং নদীর পাড়ে সেই ডিঙ্গি নৌকার মত চাঁদটা নিজের আলো উজার করে দিয়েছে। নদীর ঠিক পাড়েই একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে। মেয়েটি শাড়ী পরে নদীর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে কিন্তু শাড়ির রঙ এই অন্ধকার আলো-ছায়ায় বোঝার উপায় নেই। মেয়েটি নদীর দিকে হেঁটে যেতে থাকে। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ দাঁড়িয়ে যায় এবং মুখটি ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকাই।
আমিও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি তার দিকে। কিন্তু এই আলোর ধোঁকাবাজিতে আমি তার মুখটি দেখতে পাইনা। মেয়েটি আবার মুখ ঘুরিয়ে নদীর দিকে হেঁটে যেতে থাকে। আর আমি তাকিয়ে থাকি,তাকিয়ে থাকি,তাকিয়ে থাকি।
তারপর।
তারপর ঘুমটা ভেঙ্গে যাই।
স্বপ্নটা আমার এক বন্ধুর দেখা। এই স্বপ্নটার একটা বিশেষত্ব আছে। আমার বন্ধুর কথামতে, সে তার জীবনে এই একটা মাত্রই স্বপ্ন দেখে এবং প্রায় সময়ই দেখে। আমার কাছে সে এই স্বপ্নটা দেখার কারণ জানতে চাই।
আমি তাকে বলি – ভালোতো, আমরা আমাদের স্বপ্নে মেয়ে দেখতে চাই আর তুই ফ্রী ফ্রীতে মেয়ে দেখার সুযোগ পাস। আমি এই বলে জোরে জোরে হাসি। সেও আমার সাথে হাসতে থাকে। তারপর আবার জিজ্ঞেস করে, কারণটা কি বল? আমি বলি, এই এক স্বপ্নই কেন দেখোস তা একমাত্র আল্লাহ-ই বলতে পারবে কিন্তু এতোটুকু বলতে পারি যে তুই এটা কখনোই চাসনা স্বপ্নটা দেখা তোর বন্ধ হয়ে যাক। স্বপ্নটা তুই লালন করছিস মনে মনে এবং প্রায় রাতেই ঘুমানোর আগে তুই এই স্বপ্নটার কথা ভেবে ঘুমাস।
আমার সেই বন্ধু আমার কথাগুলো শুনে একদম চুপ হয়ে যায়। তারপর, কিছুক্ষণ পর বলে, যা বললি ঠিক বললি এবং আমি কখনোই চাইনা আমার এই স্বপ্নটা দেখা বন্ধ হয়ে যাক।
এইবার আসি যে কারণে উপরের কথাগুলো বলা সে কারণের মূলে। বাস্তবতা আর মিথ্যা কল্পনা, আমাদের যদি এই দুটোর একটি পথে হাটতে বলা হয় আমরা বুঝি কিংবা না বুঝি কিন্তু মিথ্যা কল্পনার দিকেই হাঁটা শুরু করব। উপরের স্বপ্নের কথাটা বলা শুধু স্বপ্ন হলেও আমরা আসলে আমাদের বাস্তব জীবনে তা-ই করে থাকি।
বাস্তবতা সহজে মেনে নেওয়ার চাইতে মিথ্যা কল্পনাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে পছন্দ করি। আমরা জানি আমাদের একটি জিনিস ক্ষতি করছে তবুও আমরা সেই জিনিসকে ছেড়ে দিইনা। একটি ছোট অঙ্কের উদাহরণ দিই –
1 + (-2) = 3
আমরা আমাদের জীবনে দূর থেকে যা সঠিক মনে হয় তা সবসময়ই যোগ দিতে ভালবাসি, আমরা ভাবতে ভালবাসি যে আমাদের জীবনে নতুন কিছু যোগ হচ্ছে। কিন্তু আসলে কি তাই? সত্য হল - মিথ্যা কল্পনার ফলে বাস্তবে যা হয় - আমরা পিছিয়ে পড়তে থাকি, হারিয়ে যেতে থাকি ধীরে ধীরে, লক্ষ পরিবর্তন হতে থাকে। একটা প্রশ্নের উত্তর আমারও জানা নেই – কেন আমরা এই মিথ্যা কল্পনাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে ভালবাসি।
তবে একটা কথা বলতে পারি – What is never meant to be ours, will never be ours – যা আমাদের কখনোই পাওয়ার নয়, তা আমরা কখনোই পাবো না। বাস্তবতা বা সত্যকে মেনে নিলে কি লাভ-ক্ষতি তার ব্যাখ্যা আমি দিতে চাই না। কিন্তু বাস্তবতা বা সত্যকে সহজে মেনে নিলে তা জীবনে অন্তত একটা উপকার তো বয়ে আনবে – রাতের ঘুমটা ভালো হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।