হাল ধরেছি জীবনের , স্বপ্ন এখন আকাশ ছোঁবে রুখবে আমায় কে পাহাড় ঘেরা জীবন আমার
ঢাল বেয়ে নেমে পরা জীবন । ফুলের বাগানে জন্ম আমার। আমার মা বাবা ছিল অরন্যে।
শুরু টা ছিল পাহাড়ের কোলে। মাঠে মাঠে,আঙিনায়, সবুজের প্রতি শিরায়।
আকাশের সাথে অভূতপূর্ব সন্ধি ছিল আমার। ভাবতাম, যা কিছু অনন্ত তাই আকাশ। একেই জয় করতে হবে; আমি অনন্ত হতে চেয়েছিলাম।
আশ্তে আস্তে হয়ে গেলাম ছোট্ট চড়ুই পাখি;দুষ্ট প্রাণী চড়ুই। প্রতিদিন তার গাদা গাদা বন্ধু,গাদা গাদা দুষ্টামি।
নানান কিছু শেখা;অনেক ভাললাগা। আকাশ ছেড়ে বিশ্ব জয়ের অনাহুতি।
চড়ুই পাখি বড় হয় .। .। কিন্তু বড় হয়ে সে হয়ে যায় লজ্জাবতী লতা।
আকাশের দিকে তাকাতে ভয়,চারিদিকে ভিড়ে লজ্জায় রাঙ্গা।
একদিন লজ্জাবতির সবুজে লাল,কমলা, হলুদ........। রঙ আর রঙ । লজ্জাবতী নিজেই অবাক। কবে হল এমন!! দেখে একটা কাল শালিক তার অপেক্ষায়, আর পরিনত লজ্জাবতী তাতেই ব্যাকুল।
লজ্জাবতী দেখে শালিক কে, ওর দুনিয়াটা আবার আকাশের দিগন্তে মিলিয়ে যেতে চায়। লজ্জাবতী আবার চড়ুই হতে চায়।
শালিক বলে, "তোমায় আমি দিলাম আকাশের বিশালতা, শূন্য কঠোরতা। আর ভালবাসা ভালবাসা " ।
লজ্জাবতী চড়ুই হয়ে গেল।
গোধূলির সময় ওর সবচেয়ে ভাল লাগতো। লাল রঙা টিপ আর লাল চুড়ি হাতে রাঙ্গা বউ সাজত। র ডানা ভরতি লাল , হলুদ , কমলা , বেগুনি , গোলাপি । শালিক আসতো না যদিও,তবুও দূর থেকে ছুঁড়ে দিত গোলাপ। চড়ুই তাতেই খুশি।
বৃষ্টি তে চড়ুই হয়ে যেত মেঘবরণ কন্যা । ছপছপ জল আর গুড় গুড় মেঘ। চড়ুই ওর ছোট ছোট পায়ে জল কাটতো, ডানা র রঙ মুছত। তাতে লাগাত মেঘের পরে সূর্যের আবীর আর ওর সবচেয়ে প্রিয় ভেজা মাটির গন্ধ।
শালিক কেও চাইত গন্ধ মাখাতে, বৃষ্টিতে নাইতে।
শালিক অবশ্য থাকতো না। সে আপন ঘরে টুকিটাকি করত। আর বৃষ্টি তার ভাল লাগেনা।
বসন্ত ছিল শুধু গানের সময়,নাচের সময়। চড়ুই পাখি নেচে নেচে গাইত বসন্ত বন্দনা।
নতুন সবুজের সাথে করত মিতালি। সবচেয়ে প্রিয় ফুল ছিল পলাশ। ওর শরীরে তখন বাসন্তী রঙের ছটা। চড়ুই এর তখন শুধু অপেক্ষা কখন শালিক আসবে।
না ।
কিন্তু শালিক তো গেছে দূরদেশে; আপন খেয়ালে।
চড়ুই আর অপেক্ষা করেনা। নিজেকে লুকায় অনতিগহবরে । তারপর বসন্তের দিনেও ঝরায় বর্ষা।
চড়ুই প্রান্তরে যায়,গাছের ডালে বেড়ায়, শালিকের দেখা মিলে একদিন ,আবার বহুদিন মেলেনা।
চড়ুই বলে, "তুমি কই?"
শালিক বলে, "এইতো আমি আছি তোমার পাশে । "
চড়ুই বলে, "আমি তো দেখিনা। আমি তো পাইনা। "
শালিক বলে, "কেন ? ভালবাসনা আমায়? "
চড়ুই আকাশ ছেড়ে মাটিতে নেমে আসে। আকাশ এর বিশালতা আর টানেনা ছোট্ট চড়ুই এর মন।
কিচ্ছু ভাল্লাগেনা ওর। ফুলের বাগান, রাতের তারা, কিচিরমিচির,ঝালমুড়ি, খেলার আসর,অলকানন্দা,রক্তজবা,নয়নতারা, আমের মুকুল ,জামের মুকুল ,কিচ্ছু না। শালিকের কাছে যেতে চায় মন। কিন্তু কেমন বদলে গেছে ও । ভালবাসার গান গায় কিন্তু দেখা দেয়না।
চড়ুই পাখির সাথে তাল মিলেনা। ওর সাথে অলকানন্দার রুপ দেখেনা, চাঁদের গলে পড়া জোৎস্না দেখেনা,ছপছপ করে বিলের জলে পা ভেজায়না। শালিক যেন কেমন। খালি নিজের টুকিটাকি।
চড়ুই আকাশে উড়তে চায় আবার, অরন্যে ফিরতে চায়।
কিন্তু শালিক যে মাটিতেই। কেমন করে ফেলে যায় সে। চড়ুই এর আর মন টিকেনা। ওর ডানার লাল,কমলা,হলুদ,বেগুনি রঙ মুছে গেছে। এখন শুধু নীল,গাঢ় নীল রঙ।
চড়ুই কাঁদে। ওর চোখের জলেও অই নীল রঙ মুছেনা। চড়ুই গায়না,হাটেনা,দৌড়ায়না। শালিকের অপেক্ষা করে। শালিক এই দেখা দেয়,এই দেয়না।
কিন্তু সুতা ধরে রাখে যেতে দেয়না।
চড়ুই হয়ে যেতে থাকে ক্যাকটাস । সারাদিন উড়লেও তার শান্তি হয়না। তাই আজকাল ঝিম মেরে পরে থাকে। শান্তি কই পাবে,কই পাবে।
শালিকের কাছেই তো শান্তি,ভালবাসা।
চড়ুই বলে, "ও শালিক, শান্তি এনে দাও না। "
শালিক বলে, "কেন? তুমি আমাকে ভালবাসনা ? "
একদিন বর্ষা সন্ধায়, শালিক ব্যষ্ত টুকিটাকিতে। চড়ুই পাখি সুতা টা ছিঁড়ে ফেলে একটানে। তারপর দেয় উড়াল।
শালিক পিছন থেকে বলে ,"আমি জানতাম তুমি চলে যাবে। তুমি এমনই অহঙ্কারি চড়ুই পাখি"।
চড়ুই পাখি সাড়া দেয় , "হ্যাঁ, আমি চলে গেলাম। আমিও যে জানি তুমি আমাকে ফিরাবেনা" ।
চড়ুই পাখি চলে যায় ওই পাহাড়ের ঢলে,সবুজের কোলে।
আবার মিতালি করে আকাশের সাথে,আর এখনও সে ভালবাসে তার শালিককে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।