আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের কওমী মাদরাসাগুলোর জন্য মাইলফলক জামিআ সিদ্দিকিয়া......শাহ নজরুল ইসলাম

আমার বাংলা বর্ণলিপি পাঠ এভাবেই শুরু। একুশের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। সৈয়দা মারহামা মাওলানা শাহ নজরুল বলেছেন-মেধা ও যোগ্যতার কোন বিকল্প নেই। মেধাশীল যোগ্য নেতৃত্ব তৈরীর প্রত্যয়ে প্রতিষ্ঠিত জামিআ সিদ্দিকিয়া প্রতি বছরের মতো এ বছরও যে অবদান রেখেছে, তা সত্যি আমাদেরকে আশার আলো দেখিয়েছে। কওমী মাদরাসার পূর্ণাঙ্গ বৈশিষ্ট্য বহাল রেখে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় একটি বৃত্তি, ২জন জিপি-৫, ৫ জন অ, ১ জন অ-, ৩জন ই+ গ্রেডে উত্তীর্ণ এবং অন্যদিকে হিফজুল কুরআন পরিক্ষায় তিনটি বৃত্তি লাভ একটি মাদরাসার জন্য কম কথা নয়।

তারা প্রমাণ করেছেন কওমী মাদরাসার সেলেবাসের পাশাপশি জাতীয় শিক্ষা বোর্ডের সেলেবাস পড়িয়ে সফলতা অর্জন করা সম্ভব। জামিআ সিদ্দিকিয়ার এই সফলতা বাংলাদেশের কওমী মাদরাসাগুলোর জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে। শুধু পরীক্ষার ফলাফলে সফলতা নয়, জামিআ সিদ্দিকিয়া বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপন এবং ছাত্রদের মেধা বিকাশের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ আর খেলাধুলা আয়োজন করে কওমী মাদরাসা সম্পর্কে মানুষের যে ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়ে আছে তা ভেঙে দিয়েছে। আমরা অনেকেই কওমী মাদরাসার সংস্কারের কথা বলি, কিন্তু সৈয়দ মবনু ও তাঁর সাথীরা তা বাস্তবায়িত করে দেখিয়েছেন সংস্কার কোন পদ্ধতিতে কীভাবে করতে হবে। আমাদের বিশ্বাস, বাংলাদেশের কওমী মাদরাসাগুলো একদিন এই পদ্ধতিতে এগিয়ে এসে সফলতা পথে এগিয়ে যাবেন।

ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি সিলেটের সহকারী পরিচালক মাওলানা শাহ নজরুল ইসলাম গত ২১ শে ফেব্রুয়ারী সিলেট শহরের বালুচরস্থ জামিআ সিদ্দিকিয়ায় ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও কৃতি সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ২০১২’-তে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথাগুলো বলেন। জামিআর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সৈয়দ মবনু’র সভাপতিত্বে ও উপ-পরিচালক মাওলানা রেজাউল হকের পরিচালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন ছাত্র ইসমাঈল আলী এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জামিআর পরিচালক মাওলানা এনামুল হক নোমান। বিশেষ অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের বিভাগীয় প্রধান ডা. শিব্বির আহমদ শিবলী, ইংলেন্ডের আল-আমীন প্রাইমারি স্কুলের সেক্রেটারী মাওলানা মঈন উদ্দিন, ইংল্যান্ডের দারুসসুন্নাহ একাডেমির প্রিন্সিপাল মুফতি তাজুল ইসলাম, ইংল্যান্ডের আল-আমীন ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি এনামুল হাসান সাবির, বার্মিংহামের বিশিষ্ট্য আলেম মাওলানা আব্দুল মতিন, জামিআ সিদ্দিকিয়ার ম্যানেজিং কমিটির সদস্য শেখ গয়াছ মিয়া, সিলেট ইসলামী একাডেমীর পরিচালক অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান, বালুচর ২ নং জামে মসজিদের খতীব মাওলানা শিহাবুদ্দীন, সিলকো সিটি প্রাইভেট লি. এর ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হাফিজ মাওলানা তাজুল ইসলাম হাসান, দৈনিক সবুজ সিলেটের ষ্টাফ রিপোটার নোমান বিন আরমান, দৈনিক সংলাপের ষ্টাফ রিপোটার ইকবাল হাসান জাহিদ প্রমূখ। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডা. শিবলী বলেন-আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনা সভায় জামিআ সিদ্দিকিয়া তাদের কৃতী ছাত্রদেরকে সম্বর্ধনা দিয়ে বিষয়ের মধ্যে কিছুটা নতুনত্ব নিয়ে এসেছে। এতে এই ছাত্রদের মনে মাতৃভাষার প্রতি অনেক শ্রদ্ধা জেগে উঠবে।

এই ছাত্রদেরকে সংবর্ধনা দিতে এসে মনে হচ্ছে যেনো ভাষা শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার প্রমূখদেরকে সম্মান জানাচ্ছি। আমাদের বিশ্বাস জামিআ সিদ্দিকিয়ার এই ছাত্ররা একদিন বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে। বিশেষ অতিথি মাওলানা মইন উদ্দিন বলেন-আমরা আজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছি। এই পরিবর্তনের স্বপ্ন আমাদেরকে মূলত দেখিয়েছেন শায়খুল ইসলাম মাওলানা সৈয়দ হোসেন আহমদ মাদানী (র.)। তিনি সেলেবাস সম্পর্কিত যে বই লিখেছিলেন তা অনুসরণ করলে আমাদের কওমী মাদরাসাগুলোতে আজ আর সংস্কারের আলোচনাই আসতো না।

দুঃখজনক হলেও সত্য, এই সেলেবাসকে আজও তেমন একটা অনুসরণ করা হচ্ছে না। আমার বিশ্বাস, জামিআ সিদ্দিকিয়া কিছুটা চেষ্টা করছে মাওলানা মাদানী (র.)-এর চিন্তাকে ধারণ করে এগিয়ে যেতে। বিশেষ অতিথি এনামুল হাসান সাবির বলেন-জামিআ সিদ্দিকিয়া সত্যি আদর্শ স্থাপন করেছে বাংলা, আরবী এবং ইংরেজি ভাষার উপর সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে। আজ যে বাংলাদেশে শুধু ইংরেজির উপর গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠছে তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই-বর্তমানেও চীন, স্পেন সহ বিশ্বের অনেক দেশে ইংরেজি শিক্ষাকে কোন গুরুত্বই দেওয়া হচ্ছে না। তবু তারা সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে আছে।

বাংলাদেশে শুধু শুধু একদল মানুষ ইংরেজির পিছনে ছুটছে। আমাদের উচিত প্রথমে মাতৃভাষাকে গুরুত্ব দান। অতপর মুসলমান হিসেবে আরবী ভাষাকে। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিদের কাছ থেকে কৃতি শিক্ষার্থী শরিফ মিয়া, ইসমাইল আলী, মনসুর হাসান জুনাইদ, মাহি হাসান, নাজমুল ইসলাম সাইম, মিছবাহ আহমদ রুকন, জামিল আহমদ, আব্দুল্লাহ আল হোসাইন মাসুম, নাহি হাসান, আসাদুজ্জামান, আমিনুল ইসলাম নাঈম, কামাল মিয়া ও সৈয়দা ফৌজিয়া মাইমুনা ক্রেস্ট গ্রহণ করেন। সবশেষে জামিআর সিনিয়র শিক্ষক মুফতি মনসুরুল হক জামিআর সকল ছাত্র, শিক্ষকসহ, ভাষা শহিদ এবং গোটা বিশ্বের মানুষের মঙ্গল কামনা করো দোয়া পরিচালনা করেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.