সিঁড়ি বেয়ে নামছেন নানী নুরুন্নাহার মির্জা। তার বাম কাঁধে মাথা রেখে শান্ত মনে চুপটি করে আছে মেঘ। চোখে –মুখে কোন ভাবলেশ নেই। দেখে যে কারোরই মনে হবে এই মাত্রই বোধহয় ঘুম থেকে উঠেছে সে। তার সামনে রয়েছে অনেক মানুষ।
যাদের মধ্যে রয়েছেন তার বাবা-মার অনেক সহকর্মী, রয়েছেন পুলিশ, সামনে টেলিভিশনের অনেকগুলো ক্যামেরা তাক করা।
কিন্তু কোন কিছুতেই তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। অথচ সাড়ে পাঁচ বছরের এই শিশুটি তার জন্মদাতা এবং গর্ভধারীনিকে হারিয়ে এখন অথই সমুদ্রের বাসিন্দা। মাত্র একদিন আগে এতটুকুন বয়সে নিজ চোখেই তাকে দেখতে হয়েছে বাবা-মায়ের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ। হয়তো একারণেই তার চোখ অনুভূতি প্রকাশের কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।
রোববার সকালে মেঘের দীর্ঘ দিনের পরিচিত ৫৮/এ/২ পশ্চিম রাজাবাজারে বাড়িটির নিচের তলায় এভাবেই দেখা গেল সন্ত্রাসীদের নির্মম খুনের শিকার সাংবাদিক সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি দম্পতির একমাত্র সন্তান মাহির সরওয়ার মেঘকে।
হত্যাকাণ্ডের পর থেকে মেঘ তেমন কিছুই খায়নি। কথাও বলছে না কারো সাথে ঠিকমত। শনিবার রাতের একটি অংশ পর্যন্ত মা-বাবার জন্য কান্নাকাটি করলেও এরপর থেকে নিথর হয়ে গেছে মেঘ। যেন তার চোখের সব জলই বাবা-মার শোকে শুকিয়ে গেছে।
বাসার নিচে দাঁড়িয়ে এভাবেই কথাগুলো জানালেন তার মামা নওশের অলম রোমান।
তিনি জানান, যে মেঘ টিভিতে কার্টুন দেখার জন্য অস্থির থাকত সে মেঘই গতকাল থেকে আর কোন কার্টুন দেখার জন্য বায়না ধরেনি। কিছুক্ষণ পরপরই বলে উঠছে, আব্বু-আম্মুকে ওরা মেরে ফেলেছে। টিভিতে তার বাবা-মার হত্যাকাণ্ডের খবরটি প্রচারের সময় সেদিকে তাকিয়ে থাকত অপলক দৃষ্টিতে। কিন্তু এ মেঘ কি জানে যে বাবা-মার কণ্ঠের সংবাদ সে আর শুনবে না বা দেখবে না কোনদিন।
অথচ মায়ের কণ্ঠে সংবাদ শুনলে নানুবাড়ির লোকজনদের উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলত, ‘দেখ এটা আমার আম্মু, এটা আমার আব্বু’।
সবার এখন একটাই প্রত্যাশা, নিষ্ঠুর এ পৃথিবীর ধ্বংসযজ্ঞের মাঝে মাথা উঁচু করে এ সমাজে জায়গা করে নেবে সাংবাদিক দম্পতির রেখে যাওয়া স্মৃতি মেঘ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।