গল্প ০১:
ছোটবেলায় একটা গল্প পডেছিলাম। শিক্ষক আর ছাত্রের গল্প। গল্পটা পুরোটা ঠিক মনে নেই তার পরও যা মনে আছে তা এরকমঃ একদিন সম্রাট আলমগিরের ছেলেকে শিক্ষক তার পায়ে পানি ঢেলে দিতে বললেন। পানি ঢালার সময় সম্রাট আলমগির তা দেখে ফেলেন এবং শিক্ষক এবং ছাত্র উভয়কে তার মজলিসে আসতে বললেন। শিক্ষক ভাবলো সম্রাট বোধহয় রাগ করেছেন।
কিন্তু প্রকারন্তরে দেখা গেল সম্রাট তার সন্তানকে উল্টো তিরস্কার করছেন কেন সে শিক্ষকের পা হাত দিয়ে মুছে দেয়নি। শিক্ষকদের সন্মান ছিল কারন তাদের যেটা দায়িত্ব তা তার ভালো ভাবে পালন করতেন। সময় বদলিয়েছে। এখন আর সম্রাটের যুগ নেই। সেই শিক্ষকও নেই।
এখন আমাদের শিক্ষকরা তার ছাত্র-ছাত্রীদের ছাত্র-ছাত্রী ভাবছে না। ভাবছে ব্যাবসায়ীক পন্য হিসাবে। কখোনো কখোনো নিজের পন্য হিসাবে। পরিমল জয়ধর বলে একজন ছিল যাকে তার ছাত্রীরা শিক্ষক হিসাবেই জানত। আসলেই কি সে শিক্ষক ছিল?
একটা ভিডিও শেয়ার করলাম।
দেখুন ভাবুন। এরা কি শিক্ষক? না আমার মনেহয় প্রশ্নটা হওয়া উচিত এরা কি মানুষ? ভিডিওটা দেখার পরে প্রথম ভেবেছিলাম হয়ত কোনো অপরাধি তার গুরুতর অপরাধের সাজা পাচ্ছে। এই ছাত্রটার অপরাধ ছিল সে পিকনিক বাসে সিট পরিবর্তন করে বসে ছিল। মানুষের নৈতিক আবক্ষয় কোথায় গেলে একজন ছাত্রকে শিক্ষক এভাবে পিটাতে পারে।
ভিডিও লিঙ্কঃ http://www.youtube.com/watch?v=Gc8efihQ9Tg
গল্প ০২:
বনানী, গুলশান, বারিধারা এগুলা হল উচ্চবিত্তদের জায়গা।
এখানে যদি কিছু অসামঞ্জস্য মনে হয় তবে তা আপনি আধুনিকতা বলে চালিয়ে দিতে পারেন। আমাকে হরহামেশা এই আধুনিকতার মুখোমুখি হতে হয়। আমাদের মনস্তাত্তিক পরিসরে আমরা ধরেই নিয়েছি রাস্তায় দাডিয়ে চুমু খাওয়া আধুনিকতা। বিশেষকরে উচ্চবিত্তদের এরিয়াতে। আমাকে সেকেলে বলতে পারেন।
হয়ত আমি তা কিন্তু আমার সামাজিক পরিসরে আমি যা শিখেছি তা হল “ভালবাসা বাডিতে, গাডিতে বা রাস্তায় নয়”
যা হোক মুল গল্পে আসি। উচ্চবিত্তদের এই আধুনিকতায় আমি মাঝে মাঝে বিব্রত হই। গতকাল আমার এক সহকর্মী গাডিতে করে বাসায় আসছিলেন, প্রতিদিনে মত। কিন্তু সমস্যা বাধালো উনার পিছনের গাডিটা। উঠতি বয়সের এক জুটি তাদের গাডিতে নাকি যা বাসায় করার কথা তা করে চলছেন।
আমি হলে পাশকাটিয়ে চোখ বন্ধ করে ঝিমুতাম। কিন্তু তিনি তা পারেননি কারন স্বস্ত্রীক কেউই এ ঘটনা হজম করতে পারবেন না। উনি যে রাস্তার কথা বলেছেন তা এমন এক রাস্তা যেখানে যানজট সাধারন ঘটনা। এই যানজটে বসে কেউ নিশ্চয় চাইবেনা তার বাচ্চারা বডদের এই আধুনিকতা দেখে শিখুক।
জৈবিক চাহিদা একটা সাধারন ঘটনা।
কিন্তু জৈবিক চাহিদা আমাদের কি পশু করে দিচ্ছে কিনা তা আবশ্যই ভেবে দেখা উচিত। ঘটনাটা যদি এমন হয় যে ওই গাডির পাশের গাডিতে আপনার ৫ বছরের ছোট বোনটা আছে এবং সে দেখছে আপনি কিভাবে পশুর ন্যায় আচরন করছেন তাহলে ভাই হিসাবে নিশ্চয়ই আপনার ভালো লাগবেনা। তারপরও যদি আপনি এটাকে আধুনিকতা বলে চালিয়ে দেন তবে ভাই আমি সেকেলে হিসাবেই বাচতে চাই। গাডির নাম্বারটা দিলাম। কেউ যদি ওই ভদ্রলোককে চিনেন তবে দয়াকরে উনাকে বিষয়টা জানাবেন।
গাডির নাম্বারঃ ঢাকা গ – ২৭৪৫২১
গল্প ০৩:
বাংলা ভাষার ইতিহাস শুধু ফেব্রুয়ারী মাসেই মনে হয় মনে পডে। চারপাশের এত্ত আয়োজন। ভাষার জন্য কত দরদ। বুদ্ধিজীবিরা বছরের বাকি ১১ মাস মনেহয় ভাষা আন্দোলন নিয়ে চিন্তা করেন আর ফেব্রুয়ারী মাসে তা প্রকাশ করেন। অনেক মহৎ চিন্তা।
আমি সাধারন ভাবেই চিন্তা করতেই পছন্দ করি। কিন্তু বেশ কিছুদিন স্বাভাবিক ভাবে চিন্তা করতে পারছিনা। হাইকোর্ট নাকি রুল দিয়েছে। এখন থেকে সব বাংলা। কিন্তু কিছু কিছু শব্দের বাংলা আমি খুজে পাচ্ছিনা বা বুঝতে পারছিনা বাংলাটা ব্যাবহার করা ঠিক হবে কিনা।
মোবাইলকে মুঠোফোন বলতে আমার জডতা আসে।
মীরজাফরের কিছু রক্ত আমাদের মানে বাঙ্গালিদের শরীরে এখনো আছে। আমরা স্বার্থের জন্য যা তা করতে পারি। রাস্তায় প্রচুর জট, গাডির জট। সৌভাগ্যক্রমে আপনি যদি একটি হোন্ডার (এটার বাংলা আমি জানিনা) মালিক হন তবে আপনার মীরজাফরিয় অংশ জেগে উঠবে।
আপনি ফুটপাতে উঠবেন, মানুষের গায়ে উঠবেন, রিকশার বাম্পারে গুতো দিবেন এবং আপনার স্বার্থের জন্য প্রয়োজনে রাস্তার উল্টো চলা শুরু করবেন।
টিআরপি বলে একটা জিনিস নিয়ে হর হামেশা আমাদের নাস্তানাবুদ হতে হয়। যারা জানেন তারা বুঝেনও জিনিসটা কত বিরক্তিকর। যাইহোক যেখানে আমাদের চ্যানেলগুলো (এটারও বাংলা আমি জানিনা) টিআরপির জন্য হাপিত্যেশ করছে তখন ভারতীয় চ্যানেলগুলো এমন এমন টিআরপি তুলছে যা আমাদের জন্য অস্বস্তিকর। এই টিআরপিটা হচ্ছে কোন চ্যানেল আমাদের দেশের মানুষ কত সময় এবং কতজন একটা চ্যানেল দেখেন তার একটা পরিমাপক।
আমার বাসার একটা উদহারন দিচ্ছি আমার বউ কোনো চ্যানেল দেখলে তা হয় হিন্দি চ্যানেল বা ইংরেজি চ্যানেল। বাধ্যহয়ে আমাকে আরেকটা টিভি কিনতে হয়েছে। তাও আমি আবাক হই যখন বুঝি আমাকে ক্রমান্বয়ে হিন্দি সিরিয়াল নামের এই অখাদ্যটাই গিলতে হচ্ছে। আমার ছোট ভাগ্নে আমাকে বলে রুখ যাও। আমি সাথে সাথে বুঝি আমাকে থামতে বলছে।
সাইকোলজিস্টরা এটাকে “ডোরেমন ইফেক্ট” বলতে পারেন। বডরা ফিল্মফেয়ার নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়, হিন্দিতে স্ট্যাটাস দেয় - আমি দেখি।
উর্দুর সাথে হিন্দির উচ্চারনগত খুববেশী অমিল নেই। রফিক, জব্বার, সালাম ও বরকতরা উর্দুর বিরুদ্ধে লডেছিল। তারা তাদের যথার্থতা প্রমান করেছিলেন।
আগেই বলেছি আমরা মীরজাফরের রক্তনিয়ে আছি তাই আমরা হিন্দিকে আমাদের দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে অনায়াসে গিলে নিচ্ছি। আমাদের নিজের সুবিধার জন্য আমরা তা করছি আর ভাগ্যকে সাধুবাদ দিচ্ছি। “ভাগ্যিস বডভাইরা উর্দুর বিরুদ্ধে লডেছিলেন, হিন্দির বিরুদ্ধে যদি কিছু হতো তাহলে আমরা এখন কি করতাম” ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।