২০১১-১২ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তবে গত বছর একই সময়ের চেয়ে এবার রফতানি বেড়েছে ১৪ দশমিক ২৮ শতাংশ। গত বছর অর্থাৎ ২০১০-১১ অর্থবছরে জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ৭ মাসে ১ হাজার ২১৮ কোটি ৪১ লাখ ডলারের রফতানি আয় হয়েছিল। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৯২ কোটি ৪৪ লাখ ডলার; কিন্তু এ সময় রফতানি আয়ের লক্ষ্যামাত্রা ছিল ১ হাজার ৪৫৭ কোটি ডলার। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রফতানি আয় ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ কম হয়েছে।
এসব তথ্য সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়েছে, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রফতানি আয় বেড়েছে_ ওভেন পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, কৃষিজাত পণ্য, কাট ফ্লাওয়ার, রাসায়নিক পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, পাদুকা, আসবাবপত্র প্রভৃতি খাতে। তবে নিট পোশাক, হিমায়িত মাছ, শাকসবজি, শুকনো খাবার, পাটের ব্যাগ, চামড়াজাত পণ্য, বাই সাইকেল, হোম টেক্সটাইল প্রভৃতি পণ্যের রফতানি আয় গত বছরের চেয়ে বৃদ্ধি পেলেও এবারের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কমেছে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে পাট ও পাটজাত পণ্য, কাঁচা পাট, কার্পেট, তৈরি টাওয়াল, কাঠ ও কাঠজাত পণ্য, লোহা-স্টিল প্রভৃতি পণ্যের রফতানি লক্ষ্যমাত্রার পাশাপাশি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে।
এ বছর রফতানি আয়ের শীর্ষে রয়েছে নিট পোশাকজাত পণ্য, দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে ওভেন পোশাকজাত পণ্য।
নিট পোশাকজাত পণ্য থেকে এ বছর প্রথম ৭ মাসে রফতানি আয় হয়েছে ৫৫৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার, ওভেন পোশাকে ৫৩৮ কোটি ৭৭ লাখ ডলার, পাট ও পাটজাত পণ্যে ৫৩ কোটি ২৪ লাখ ডলার কৃষিজাত পণ্যে ২৩ কোটি ৩৩ লাখ ডলার, পাদুকার ২২ কোটি ২৪ লাখ ডলার, চামড়ায় ১৮ কোটি ২৮ লাখ ডলার, তৈরি টাওয়াল ৫ কোটি ৪১ লাখ ডলার, চামড়াজাত পণ্যে ৪ কোটি ১৫ লাখ ডলার এবং বাইসাইকেল ৫ কোটি ৪৭ লাখ ডলার।
প্রকাশিত তথ্যগুলোতে রফতানি আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ভালো দেখালেও এ বছর লক্ষ্য পূরণের ব্যর্থতার কারণগুলো খবরে উল্লেখ করা হয়নি। সে যাক, রফতানি বাণিজ্যে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এটাই খুশির কথা। এ অগ্রযাত্রাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তার জন্য আমাদের একটা সুষ্ঠু পরিকল্পনা মাফিক জায়গায় এগুতে হবে।
দেখা যাচ্ছে, প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশে আমাদের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও আমরা পণ্য রফতানিতে অধিক জোর দিয়ে থাকি পশ্চিমা বিশ্বে; কিন্তু গত বছর বিশ্বে যে দুটি দেশ রফতানি বাণিজ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় হয়েছে অর্থাৎ চীন ও ভারত তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে তেমন কোনো যান্ত্রিকতা নেই। তারা দূরের ও কাছের বাজারগুলোকে সমান গুরুত্ব দিয়ে আসছে। সে কারণেই এশিয়ার বাজারগুলো ধীরে ধীরে এ দুটো দেশের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। ইউরোপ আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশের বাজারগুলোও বলতে গেলে এখন তাদের নিয়ন্ত্রণেই। বিশেষ করে ভারতের রফতানি বাজার যেভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে রফতানি বাণিজ্যে তারা বিশ্বের শীর্ষে চলে যাবে।
প্রশ্ন হলো এ পর্যায়ে স্বাধীনতার ৪০ বছর পরেও আমরা এত পেছনে পড়ে আছি কেন? এখনো আমরা শিল্প বিকাশের দিকে জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছি না ফলে ব্যাপকভাবে মাঝারি ও বড় ধরনের শিল্প গড়ে উঠছে না। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের দিকেও আমাদের তেমন দৃষ্টি নেই। দৃষ্টি শুধু শ্রমশক্তি রফতানির দিকে। তাও ভালোভাবে করতে পারছি না। বিদেশে আমাদের শ্রমিক জেল খাটছে।
কাজ পাচ্ছে না অনেকেই। বেতন-ভাতাও কম পাচ্ছে। বিদেশে গিয়ে প্রতারিত হয়ে দেশে ফিরে আসছে। দেশে তো প্রতারিত হচ্ছেই। এসব কিছু আমাদের সবারই জানা।
এভাবে চললে আমরা কিভাবে এগিয়ে যাব? প্রশ্ন হলো সেটাই।
আমাদের গার্মেন্টস শিল্প এখন সমস্যার কবলে পতিত। অনেক গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের পাশে দাঁড়ালে হয়তো এভাবে কারখানাগুলো বন্ধ হতো না। পাটশিল্প ধ্বংসস্তূপ থেকে যেন উঠে আসছে।
সরকার বন্ধ পাটকলগুলো চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। পাটকলগুলো চালু হলে হয়তো বিদেশের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য রফতানি আরো বাড়ানো যাবে। আমাদের পাটজাত পণ্য রফতানি বৃদ্ধির বড় অন্তরায় হলো, আমরা বিদেশিদের চাহিদা অনুযায়ী সময়মতো পণ্য রফতানি করতে পারি না। বিদেশি একটি কোম্পানি যদি আমাদের কাছে এক কোটি পাটের ব্যাগ চায়, আমরা যদি তা নির্দিষ্ট সময়ে তাকে না দিতে পারি, তাহলে সে বসে থাকবে না। তার পণ্য প্যাকেট করার জন্য সে অন্যদের ব্যাগ নিয়ে নেবে।
এ পর্যায়ে বিশ্বে চাহিবামাত্র জোগানদারো রয়েছে। কাজেই পাটজাত পণ্য রফতানির ক্ষেত্র আমাদের এমনভাবে তৈরি থাকতে হবে, যাতে চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে জোগান দিতে পারি। এ ধরনের সমস্যা রয়েছে অন্যান্য কৃষিজাত পণ্যসহ বেশ কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে। ভারতের সেভেন সিস্টার কান্ট্রিসহ পার্শ্ববর্তী অন্যান্য প্রদেশ, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, মালদ্বীপ প্রভৃতি বাজারে আমাদের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এগুলোতে পণ্য সরবরাহ করা যায় অধিকতর কম খরচে।
এক্ষেত্রে পণ্য রফতানিতে আমাদের জোর দিতে হবে। অন্যদিকে এশিয়ার অন্যান্য রাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের জন্য রফতানির ক্ষেত্রে আমাদের পুরনো সিস্টেম পাল্টাতে হবে। দেখা যাচ্ছে বাঙালিদের অনেকেই এখন পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোতে স্থায়ী বাসিন্দা। তাদের মাধ্যমে ওই দেশগুলোতে বাংলাদেশের বাজার সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নিতে পারে সরকার তাদের সহযোগিতা করলে পশ্চিমা দেশগুলোতে বাঙালি প্রবাসীরা বছরে বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী মেলার আয়োজন করতে পারেন। বিদেশি মিডিয়ায় সরকার বিজ্ঞাপনও প্রচার করতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যে রফতানি বাজার সম্প্রসারণেও একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে সরকার। এক কথায় এ সরকারকে রফতানি বাজার সম্প্রসারণে আরো উদ্যোগী হতে হবে। দেশের পণ্য যাতে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের দেশে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রক যন্ত্রপাতির ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। বিএসটিআইর কাছেও তা তেমন নেই।
এ অবস্থায় আমাদের পণ্য বিদেশের বাজারে মার খাচ্ছে। আমাদের চা ভারতের তথা অন্যান্য দেশের চায়ের চেয়ে উন্নতমানের হওয়া সত্ত্বেও আমরা এ পর্যায়ে মার খাচ্ছি। এ সমস্যার ত্বরিত সমাধান করতে হবে? আমাদের পণ্যের লেবেলে লেখা থাকবে আন্তর্জাতিক মানের সব তথ্য উপাত্ত। এগুলো বিদেশিরা পরীক্ষা করেও ঠিক পাবেন। এভাবে আমাদের পণ্য বিদেশিদের কাছে আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের পণ্যের রফতানি বাজার আরো সম্প্রসারিত হোক, পাশাপাশি, দেশের বাজারের চাহিদা দেশের পণ্যে মেটাক এটাই সময়ের দাবি।
View this link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।