Good বাউন্ডুলে দিনের কড়চা
মনসুর আজিজ
তোমার চোখের নদীতে রঙিন হাঁসের মতো খেলা করতো আমাদের সম্ভাবনা। চাইতে, পুঁইডগার মতো আমরাও লকলকিয়ে বেড়ে উঠি। আমাদের মগজে যাতে মেধার খই ফোটেÑ তাও ছিলো তোমার কামনা। আমাদের মুখের ব্যাস বড়ো হতে থাকলেও তোমার রোজগারের বৃত্ত ক্রমশঃ হচ্ছিলো ছোটো। টরে কাপড়ের পানজাবির বদলে গায়ে উঠছিলো খদ্দর।
শরীরের লোমগুলো কাশ্মিরী শালের আদর থেকে হচ্ছিলো বঞ্চিত। কিন্তু আমরা যখন গ্রামের অশিক্ষিত নারীর স্বামীর পাঠানো দুবাইয়ের চিঠি পড়ে শোনাতাম। অবলা এই নারীর চোখে থাকতো অশ্রু; কিন্তু তোমার রোপকূপে সাঁতার কাটতো আনন্দের খলশে পুঁটি। আমরা যখন মাদুর পেতে এগারো ঘরের নামতা পড়তাম, তোমার প্রিয় ফোর ব্যান্ড রেড়িওতে তখন চলতো বিবিসির সন্ধ্যার খবর। প্রিয় খবর ছেড়ে তোমার কান দুটো উৎসুক হতো নামতায়; অবচেতনে উলটো ঘুরতো ভলিউমের নব।
এক একটি বসন্ত শেষে আমরা হয়ে উঠছিলাম বাউন্ডুলে। ডানপিঠে ছেলেদের তান্ডবে পাড়া ছিলো অতিষ্ট। মাচার নিচে হ্যাজাক লাইটের মেন্ডেলের মতো ঝুলে থাকা শশাগুলো খেতাম এক কামড় করে। কাঠবিড়ালির মতো গাছে উঠে পেয়ারা খেতাম অর্ধেক। বিষা ডাকতারের মাথায় ফেলে দিতাম পাকা আতাফল।
গাছের ডাল বেয়ে গাছবদলে আমরা হয়ে উঠছিলাম কিশোর গেরিলা। কখনো বা বইখাতা গাছের কোঠরে রেখে লঞ্চঘাটে কুড়াতাম সিগারেটের প্যাকেট। লাল-নীল-হলুদ... কতো রঙ! দুপাশ আলাদা করে শুরু হতো বাহাদুরি। এগুলো এখন আর সিগারেটের প্যাকেট নয়; ডলার, দিনারের চেয়ে দামি ‘লাকার’। মাটির শরা ভেঙে শুরু হতো খালপারে নইমারি খেলা।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। মায়ের উৎকণ্ঠা রূপ নিতো কান্নায়। ভাতের থালার মাছি তাড়াতে তাড়াতে মায়ের দুগালে গড়াতো লবণের নদী। স্টেশনের কুলির মতো চেহারা নিয়ে ফিরতাম সন্ধ্যায়। মুখের অবস্থা চুপসানো বেলুনের মতো।
ক্রোধের বহ্নিশিখা নির্বাপিত হতো দুগালে চড় খেয়ে। ডিম থেকে সদ্য ফোটা মুরগীর বাচ্চার মতো পেতাম মায়ের আদর। সারারাত মায়ের বুকে মুখ রেখে স্বপ্নের ফড়িঙের মতো উড়তাম একগাছ থেকে অন্য গাছে, খাল থেকে নদীতে, স্কুল থেকে বাজারে, বাজার থেকে সিনেমা হল; তারপর, তারপর...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।