প্রিয়ম
বাউন্ডুলে অনুকাব্য
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে সারা বিছানা জুড়ে আড়মোড়া ভাঙ তুমি। রোদ উঠে গাছে অনেক আগেই। একটা কাক তোমার জানালার পাশে বসে থাকে। অলস চোখে তাকিয়ে থাক তুমি। তাকিয়ে থাকে কাকটাও।
তোমাদের দু’জনের মাঝে অনেক মিল। কারো জীবনেরই কোন স্বাদ নেই। নেই কোন চিন্তা। অতীত, বর্তমান কিংবা ভবিষ্যৎ- কখনই ছিলনা এবং নেইও। হয়তো অতীত ছিল।
তুমি সেই অতীতকে ভুলে যেতে চাও। অতীত ভোলে না তোমায়। মাথার ভেতর লুকিয়ে থাকা হাজার হাজার নিউরনের মাঝে তার প্রাসাদ গড়ে সে বসে আছে। প্রতিটি মুহূর্তে জানিয়ে দেয় তার অস্তিত্ব। কাকটি উড়ে যায়।
তুমিও উড়ে যেতে চাও। তোমার ডানা নেই। উড়ে যাওয়ার যায়গাও নেই। নিজের চারপাশে অদৃশ্য খাঁচাটি তুমি নিজেই সৃষ্টি করেছ। তবু জীবন তোমার কাছে অনেক মধুর মনে হয়।
হয়তো জীবন নয়, বেঁচে থাকাটা মধুর। আবোল তাবোল চিন্তাগুলো তোমার মাথায় খেলতে থাকে। কাকটি আবার এসে বসে তোমার জানালায়। সে ক্ষুধার্ত। তুমিও ক্ষুধার্ত।
কাকের ক্ষুধা পেটে। তোমার ক্ষুধা মনে। দুটি ক্ষুধার্ত প্রাণী একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে। অনুভূতিহীন দৃষ্টি বোধয় একেই বলে। ক্ষণিকের জন্য ভুলে যাও তোমার নিজের স্বত্বাকে।
পরক্ষনেই সেই কাকের সুমধুর ‘কা’ শব্দে ফিরে আস বাস্তবে। তুমি একজন ভবিষ্যৎ ইঞ্জিনিয়ার। ভার্সিটিতে তোমার অনেক সুনাম। তুমি অনেক ফেমাস। এক নামে তোমাকে সবাই চেনে।
বাবা মা-র তোমাকে নিয়ে অনেক আশা। তবুও জানালার পাশে বসে থাকা কাক আর তোমার মাঝে কোন পার্থক্য দেখতে পাওনা তুমি। ৯টার ক্লাসটা করার ইচ্ছা মন থেকে অবলীলায় মুছে যায়। তুমি শুয়ে থাক। কানে বাজে জাফর ইকবাল সারের কথাগুলো, “তুমি রিকশাওয়ালার টাকায় পড়ালেখা কর, তুমি দিনমজুরদের টাকায় পড়ালেখা কর, ফাঁকিবাজি করার অধিকার তোমার নেই”।
রিকশাওয়ালা কিংবা দিনমজুরদের পেটে লাথি মারতে তোমার মনে বাধে না। তুমি আলস্য উপভোগ করতে থাক। চিন্তাহীন জীবনের আনন্দ তোমার মনে এক নৈসর্গিক ভাল লাগা সৃষ্ট করে। জীবন স্রোতে তুমি গা ভাসিয়ে দাও। যা হবার তা-ই হবে।
মানুষ স্রষ্টার খেলার পুতুল। তুমি স্রষ্টার খেলা উপভোগ করতে থাক।
কড়া রোদে দাড়িয়ে দু’টাকা দামের আইসক্রিম খেতে খেতে নিজেকে আরো সুখী মনে হয়। নিজেকে এক সময় হিমু হিমু লাগতে থাকে। জুতা খুলে হাঁটার চেষ্টা কর তুমি।
কড়া রোদে উত্তপ্ত পিচ তোমার বিরুদ্ধাচরণ করে। সকালে নাস্তা করা হয়নি। বৈশাখের রোদ এত কড়া হয় তোমার জানা ছিল না। ক্ষুধা আর রোদের তীব্রতা তোমার ভাল লাগার পরিমাণ বাড়াতে থাকে। নিজেকে অনেক স্বাধীন মনে হয় তোমার।
আজ তোমার অনেক দূরে যেতে ইচ্ছে করছে। যেখানে নেই কোন সৃষ্টিকর্তা। কিছুদিনের কিংবা কিছুক্ষণের জন্য তুমি স্বাধীন হতে চাও।
তোমার মনে পড়ে সেই ছেলেটির কথা, সামান্য ঘটনায় এক বড় ভাই যার বুকে ব্লেড দিয়ে গ্রাফ পেপারের গ্রিড এঁকে দিয়েছিল। তুমি দেখেছিলে তার রক্তাক্ত বুক।
এম্বুলেন্স এসে নিয়ে যায় তাকে। তোমার মনে একটিবারের জন্যও খারাপ লাগেনা। ঘাসের উপর মৃত প্রজাপতি দেখেও তোমার কষ্ট লাগেনা। কষ্ট পাওয়ার অনুভূতিগুলো এখন তোমার নষ্ট হয়ে গেছে। সাধুতার খোলসে ঢাকা মানুষগুলোকে তুমি সহাস্যে বলে যাও “আমি একটা খারাপ মানুষ”।
কথাটি বলতে বিন্দুমাত্র কষ্ট হয়না তোমার। নিজেকে খারাপ ভাবার আনন্দে তোমার চোখ ছল-ছল করে। সেই ছলছলানি কেউ দেখতে পায়না।
এক কিলোর মাঝামাঝিতে গাছের নিচে বসে বসে ড্রপ কোর্সের হিসাব মেলাও তুমি। সর্বনিম্ন কত ক্রেডিট কমপ্লিট করে পাস করা যায় ভাবতে থাক।
একটি কুকুর এসে তোমার পাশের গাছটির নিচে আড়মোড়া ভেঙে ঘুমিয়ে পরে। ভাসিটির কুকুরগুলো খুবই অলস। কুকুরটা লেজ নাড়ায়, হাই তুলে। তুমিও হাই তুল। আবারও মনের ভেতর এক অদ্ভুত ভাল লাগা সৃষ্টি হয় তোমার।
“পাশ না করলে কি আর হবে”। লিলুয়া বাতাসে চোখ বন্ধ হয়ে যায় তোমার।
বাউন্ডুলে অনুকাব্য
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।