জীবন কিন্তু একটাই স্কুলে থাকতে ভেবেছে কলেজে উঠে প্রেম করবে,কলেজে উঠে ভেবেছে নাহ এখন নয়,ভার্সিটিতে গিয়ে প্রেম করবেই করবে...এখন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে এসে রাজুর মনে হতাশা। তার দোস্ত মুকিমের একহালি মেয়েবন্ধু...বাইকের পিছনে নিয়ে হাওয়া খেয়ে বেড়ায়,ক্লাসের সবচেয়ে হাবলা ছেলে জহিরেরও একটা গার্লফ্রেন্ড আছে...তার কেন নেই?সে মুকিমকে জিজ্ঞেস করে,
দোস্ত একটা গার্লফ্রেন্ড জোগাড় করে দে
মুকিম-ফেসবুকে আইডি খুল...লেগে যাবে
রাজু দি গ্রেট নামে আইডি খুলে রাজু।
মুকিমের লাল বাইকের পাশে দাঁড়িয়ে ,বাইকে বসে কয়েকটা ছবি তুলে এলবাম বানায়,এলবামের নাম দেয় “me and my bike”
এলবামে কমেন্টস পড়ে... “ফারিয়াঃ এটা ত মুকিমের বাইক...”
ফারিয়া রাজুর ক্লাসমেট,ওর নিকনেম ক্লিওপেট্রা...ক্লিওপেট্রার মত সুন্দর না হলেও ফারিয়া অনেক ফর্সা,ক্লাসের ছেলেগুলা বেশিরভাগ সময়ে ওর চেহারা এবং চেহারার পাশাপাশি অনেককিছুর দিকে তাকিয়ে থাকে।
ফারিয়ার এই কমেন্টের জবাব রাজু কী দেবে বুঝে পায়না,তখন দেখে অতিথি পাখি নামে একটা মেয়ে তাতে লাইক দিয়েছে...কমেন্ট করেছে, “বাইকের পিছনে খালি থাকলে ভাল দেখায় না”
রাজু কমেন্ট করে “তুমি এসে বসো”
ফারিয়া বলে “লজ্জা নেই? পরের ধনে পোদ্দারী”
রাজু মনে মনে ফারিয়া গাল দেয়...
*
অতিথি পাখির সাথে এখন চ্যাটে কথা হয় রাজুর
রাজু-পাখি,তোমার নাম কি?
অতিথি পাখি-শায়লা
রাজু-তোমাকে যে দেখতে ইচ্ছে করে
অতিথি পাখি-চোখ থাকলেই দেখতে পাবে
রাজু-ধুর,সামনাসামনি দেখতে চাই
অতিথি পাখি-তোমার নম্বর দাও...আমি তোমাকে গান শোনাব
রাজু মুগ্ধ হয়ে শায়লার গান শোনে,মাঝে মাঝে রাজুও শোনায়...কবিতা মেসেজ করে পাঠায়,সবই চলতে থাকে,কিন্তু শায়লা দেখা করতে রাজী হয়না।
ফারিয়া কফিতে চুমুক দিতে দিতে বলে, “রাজু,তুমি ত সুন্দর হয়ে যাচ্ছ”
মুকিম-ওর এখন বসন্ত,সুন্দর ত হবেই
ফারিয়া-মানে?
মুকিম-অতিথি পাখি এখন আর অতিথি নাই,পিরিতের পাখি হইয়া গ্যাছে
রাজু বিরক্ত বোধ করে,মুকিমকে ধাক্কা দেয়
মুকিম-সত্য কথা কইতে দে!
ফারিয়া কফি শেষ করে হনহন করে চলে যায়।
রাজু ,মুকিম দু’জনেই খুব অবাক হয়। সেদিন রাতে রাজুর মোবাইলে মেসেজ আসে...ফারিয়া পাঠিয়েছে, “রাজু আমি তোমাকে ভালোবাসি”
রাজু এর মাথা-মুন্ডু কিছুই বুঝে না...ফেসবুকে লগইন করে
অতিথি পাখি-কাল তোমার জন্মদিন...
রাজু-হ্যাঁ
অতিথি পাখি-জন্মদিনে আমার কাছ থেকে কী চাও?
রাজু-তোমাকে দেখতে চাই...
কিছুক্ষণ পর অতিথি পাখি লিখল, “ঠিক আছে,কাল দেখা করব,তোমার জন্মদিনে এটা আমার তরফ থেকে উপহার”
তবু রাজুর ভাল লাগেনা,সে ফারিয়ার ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করছে,মেয়েটা ফাজলামী করল না তো!কিন্তু ওইদিন শায়লার কথা শুনে এভাবে চলে গেল... নাহ কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।
**
ধানমন্ডি লেকের পাড়ে “ডিঙি” তে রাজু আর শায়লা মুখোমুখি বসে আছে
শায়লা-আমি জানতাম আমাকে দেখে তোমার ভাল লাগবে না
রাজু-আমি ত কিছু বলিনি
শায়লা-হুম,কিন্তু আমি জানি...গান শুনবে?
রাজু অস্বস্তি বোধ করে...স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে
শায়লা-থাক তোমাকে আর কষ্ট করে এখানে বসে থাকতে হবেনা
রাজু-না,না,কি বল এইসব?
শায়লা-দেখ রাজু,আমার কপালটা খারাপ,আমি এটা মেনে নিয়েছি...তোমার কোন দোষ নেই,আমার নিজের বাবাই আমি কালো বলে দেখতে পারে না
রাজু দেখে মেয়েটার চোখে পানি জমে আছে...পড়ছে না,মেয়েটা সামলে নিয়েছে,রাজু কি বলবে ভেবে পায়না,তার আর এখানে থাকতে ইচ্ছা করছে না।
মুকিম-হাহাহা...লাগাইলি শেষমেশ একটা কালা মাইয়া
রাজু-আচ্ছা,দোস্ত,মেয়েটা এত্ত সুন্দর সুন্দর কথা কয়...এত ভাল গানের গলা...মেয়েটা এত কালা ...কিছুই মিলতাছে না
মুকিম-কালো মাইয়াগুলার এক্সট্রাকারিকুলার এক্টিভিটিস ভাল হয়...আমার এক ফুফাত বোন আছে,পুরাই পাতিলের তলার মত কালা,রেডীওর আরজে...
রাজু-মেজাজটাই খারাপ হইয়া গেল। কালোর একটা লিমিট থাকলেও হইত
মুকিম- এখন কী করবি?
রাজু-কি করব মানে?বাদ,বাদ,কালা-ফালা মাইয়া...বাদ
মুকিম-ধলা মাইয়া কই পাবি,ক দেহি?
রাজু-তামশা করিছ না
রাজুর ভাল লাগেনা,ফেসবুকে বসে,অতিথি পাখি অনলাইনে নেই... দেখে রাজু স্বস্তি পায়,কিছুক্ষণ ভেবে ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে ডিলিট করে দেয়,ভালই হল,ফারিয়ার মত এত সুন্দর একটা মেয়ে তাকে প্রপোজ করেছে,এখন আর চিন্তা কী?ক্লাসের সবেচেয়ে সুন্দর মেয়ে হবে তার গার্লফ্রেন্ড...রাজু ফারিয়াকে ফোন করে ফারিয়ার সাথে কথা বলে...আজকে রাজু ফারিয়াকে বলে দিবে সেও ফারিয়াকে ভালোবাসে।
শায়লার সাথে রাজুর আর কোন যোগাযোগ নেই,যেদিন দেখা হয়েছিল তার বেশকিছুদিন পর রাজু ফারিয়া একসাথে বসে ছিল,শায়লা তখন একটা মেসেজ পাঠায়“রাজু,আমার দুঃখ আমার কাছে,তোমার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই,এটা আমার নিয়তি...তুমি ভাল থেকো”...রাজু,ফারিয়ার হাত ধরে থেকে মেসেজটা পড়ে,পড়ে শোনায় ফারিয়াকে...তারপর দুজন মিলে হাসতে থাকে। হাসতে হাসতে রাজু ফারিয়াকে দেখে,ফারিয়া মেয়েটা আসলেই অনেক সুন্দর।
***
মুকিম-কি লাভার বয়?ভিত্রে আমু?
রাজু-আয়...
মুকিম-হাসপাতালে আসলে আমার মাথা ঘুরায়,বেশিক্ষণ বসুম না
রাজু শুকনা হাসে
মুকিম-ফারিয়া জানে?
রাজু-জানি না
মুকিম-বিষের টেস্ট কেমন রে দোস্ত?
রাজু-দোস্ত তখন মাথা একদম ঠিক আছিল না,পরে যখন খারাপ লাগা শুরু হইল,তখন মনে হইল,এই কাম ক্যান করলাম?একটা বজ্জাত মাইয়ার লাইগা...
মুকিম-ফারিয়া এখন কই?
রাজু-ওর এনগেজমেন্ট হইছে,বিয়ের পর লন্ডন যাবে...এটুকু জানি
মুকিম-যাইতে দে,তুই এসব ভুইলা যা ...চীয়ার আপ ম্যান...
***
অনেক বছর পরের কথা-
রাজুর স্ত্রী শায়লা প্রেগন্যান্ট,আজকে আল্ট্রাসনোগাফীতে ধরা পড়েছে ওদের মেয়ে হবে...
শায়লা-তুমি খুশি হওনি?
রাজু-হুম...হয়েছি
শায়লা-আমার দিকে তাকিয়ে কী ভাবছ...?
রাজু কিছু বলে না,শায়লার দিকে তাকিয়ে ভাবে,মেয়েটা কেমন হবে?ফর্সা না কালো? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।