blog_id: 85969 আজকের (৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২) গুগল পেজটি দেখুনঃ
লেখা হয়ে গেলো প্রথম গল্পটি, অবশ্যই লুকিয়ে লুকিয়ে; পাছে কেউ জেনে গিয়ে যদি এই লেখা নিয়ে হাসাহাসি করে! এখন দেখা দিলো নতুন সমস্যা; ছাপানো যাবে কিভাবে, কারণ সম্পাদকের যদি লেখাটি পছন্দ না হয়! এজন্য লেখক বেছে নিলেন রাত্রি বেলাকে; চুপিচুপি গিয়ে লেখাটি ডাক বাক্সে ফেলে এলেন পত্রিকা অফিসের ঠিকানা লেখে। এবার শুরু হলো অপেক্ষার পালা; লেখাটি কি প্রকাশিত হবে! অবশেষে একদিন সত্যি সত্যি লেখাটি পত্রিকায় ছাপা হলো। আর লেখক? তিনি পত্রিকাটি হাতে নিয়ে খুশিতে নাচতে নাচতে তিনি রাস্তায় নেমে এলেন; আর তারপর খুশিতে দৌড়াতে শুরু করলেন, রাস্তার এক মাথা থেকে অন্য মাথা পর্যন্ত!
--- পরবর্তীকালে বিখ্যাত হয়ে ওঠা এই লেখকের নাম চার্লস জন হাফম্যান ডিকেন্স; চার্লস ডিকেন্স নামে যিনি ইংরেজী সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন। অমর হয়ে আছেন তার কালজয়ী সব সৃষ্টির জন্য, যার বেশীরভাগই এখন ক্লাসিকের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত।
জন্মঃ
আজ হতে ঠিক ২০০ বছর আগে, ১৮১২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে ইংল্যান্ডের পোর্টসমাউথ শহরের পোর্টসির ল্যান্ডপোর্ট এলাকায় জন্ম হয় তাঁর।
বাবা জন ডিকেন্স আর মা এলিজাবেথ নিবারো ডিকেন্স-এর আট সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।
শৈশবঃ
চার্লসের জন্মের অল্পকিছুদিন পরই ব্লুমসবারির নরফোক স্ট্রিটে চলে যায় পরিবারটি; এর কিছুদিন পর যায় কেন্টের চাতাম-এ। চাতাম-এ-ই কাটে চার্লসের শৈশব; এখানকার উইলিয়াম গিলস স্কুলে তিনি লেখাপড়াও করেন।
এরপর তারা চলে যান কেন্টের ক্যামডেন-এ।
জীবনের সবচেয়ে দুঃসময়ঃ
চার্লসের বাবা ছিলেন নৌ বিভাগের নিম্ন-বেতনভূক্ত একজন কেরানি; সংসারে অভাব-অনটন তাই লেগেই থাকত।
এই অভাবের কারণে প্রচুর দেনা করেন তিনি, যার দায়ে ১৮২৪ সালে যেতে হয় মার্শালসি জেলখানায়। ফলে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হয় চার্লসকে; কাজ নেন হাঙ্গারফোর্ড স্টেয়ারে অবস্থিত ওয়ারেন ব্ল্যাকিং ওয়্যারহাউস নামের এক জুতা পলিশের কারখানায়। প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা কাজ করে জুতা পলিশের বোতলে লেবেল লাগানো কাজ শুরু করেন তিনি, বিনিময়ে সপ্তাহের শেষে পেতেন ছয় সিলিং করে! কারখানাটি চ্যারিং ক্রস রেলস্টেশনের কাছেই রাস্তার একদশ শেষ মাথার খুব পুরনো একটা বাড়িতে ছিলো; যার মেঝের কাঠ পঁচে গিয়েছিল আর তাতে নির্বিবাদে ঘুরে বেড়াতো ইঁদুরের দল। কারখানার এই কঠোর পরিশ্রম আর অনাদর-নির্মম ব্যবহার গভীর প্রভাব ফেলে তার মনে, যার পরিচয় আমরা পাই পরবর্তী জীবনে তার লেখা উপন্যাসগুলোতে; তবে কিভাবে অত অল্প বয়সেই সহজেই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলেন এটা ভেবে নিজেই তিনি খুব অবাক হতেন অনেকগুলো বছর পর!
জীবনে আলোর ঝলকানিঃ
এসময়ের একটি মৃত্যুর ঘটনা বদলে দেয় তার জীবনকে, মুক্তি পান কারখানার কঠোর শ্রমিক-জীবন থেকে। তার বাবা জন ডিকেন্সের দাদি মারা যাবার সময় দিয়ে যান ৪৫০ পাউন্ড, যা থেকে দেনা শোধ করে বাবা জন ডিকেন্স মুক্তি পান জেলখানা হতে; ফলে ওয়েলিংটন হাউস একাডেমী স্কুলে আবার ভর্তি হলেন চার্লস।
কিন্তু স্কুলের নিয়মানুবর্তিতা আর শিক্ষকেদের, বিশেষতঃ প্রধান শিক্ষকের নির্মম আচরণ আর কঠিন শাস্তি জন্য ছেড়ে দিলেন এটি।
জীবন যুদ্ধেঃ
১৮২৭ সালের মে মাসে হলবর্ন কোর্টে জুনিয়র কেরানি হিসেবে চাকরি নিলেও পরের বছরের নভেম্বরে ছেড়ে দেন; শুরু করেন সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা, নেন প্রশিক্ষণ। ১৮৩৪ সাল থেকে মর্নিং ক্রনিকল পত্রিকার মাধ্যমে শুরু করেন সাংবাদিকতার চাকুরী, পরবর্তীতে “হাউস হোল্ড ওয়ার্ড” পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হন। ১৮৩৬ সালে চার্লস ক্যাথেরিন থমসন হগার্থকে বিয়ে করেন।
সাহিত্যে হাতে খড়িঃ
মায়ের কাছেই লেখাপড়ায় প্রথম হাতে-খড়ি তার, তারপর মাত্র ৯ বছর বয়সের মধ্যেই পড়ে ফেলেন ইংরেজি সাহিত্যের বিখ্যাত সব-লেখকদের বই আর এরাবিয়ান নাইটস্; যেগুলো তার বাবার সংগ্রহে ছিলো।
এখান থেকেই তার সাহিত্যের প্রতি অনুরাগের জন্ম।
সাহিত্যিক জীবনঃ
১৮৩৩ সালে প্রথম গল্প লিখলেন চার্লস ডিকেন্স, “আ ডিনার এট পপলার ওয়াক” শিরোনামে, যা হয় লন্ডনের মান্থলি ম্যাগাজিনে। ১৮৩৬ সালের মার্চ থেকে শুরু করেন ধারাবাহিক উপন্যাস “দ্যা পিকউইক পেপারস” লেখা, যা তাকে এনে দেয় সাহিত্যিক স্বীকৃতি। এরপর ধীরে ধিরে লিখেন এ টেল অব টু সিটিজ, দ্যা গ্রেট এক্সপেকটেশন, অলিভার টুইস্ট, ডেভিড কপারফিল্ড, ব্ল্যাক হাউস, লিটল ডরিট, হার্ড টাইমস, নিকোলাস নিকলবি, এ ক্রিসমাস ক্যারল প্রভৃতি।
মৃত্যুঃ
১৮৭০ সালের ৯ জুন চার্লস ডিকেন্স মৃত্যুবরণ করেন।
চার্লস ডিকেন্স ছিলেন ভিক্টোরীয় যুগের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রধানতম ঔপন্যাসিক এবং অন্যতম সমাজ সংস্কারক; তাকে ইংরেজি ভাষার শ্রেষ্ঠ কথা-সাহিত্যিকদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। সে-যুগের পাঠক-সমালোচকরা তার গদ্যশৈলী, চরিত্রাঙ্কণের ক্ষমতা ও শক্তিশালী সামাজিক মূল্যবোধ-কে অত্যন্ত পছন্দ করতেন-প্রশংসা করতেন। অনেক সমালোকের দৃষ্টিতে তিনি ভিক্টোরিয়ান যুগের “সর্বশ্রেষ্ঠ লেখক” হিসেবে স্বীকৃত।
আজ তার দ্বি-শততম জন্মদিনে...
রইলো...
গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি...
>>> ... >>> ... >>> ...
পুনঞ্চ...
চার্লস ডিকেন্সকে নিয়ে দুটি মজার ঘটনা...
মুক্তোর খোঁজে
চার্লস তখন “হাউস হোল্ড ওয়ার্ড” পত্রিকার সহকারী সম্পাদক, এক তরুণ কবি তাঁর কাছে “প্রাচ্যের মুক্তো খুশি মনে গাঁথা” শিরোনামে এক দীর্ঘ কবিতা লিখে পাঠালেন। ডিকেন্স কবিতাটি পড়লেন, তারপর কবির কাছে সেটি ফেরত পাঠিয়ে দিলেন; তবে সঙ্গে একটি চিরকুটে লিখলেনঃ
প্রিয় কবি,
কবিতাটি ছাপতে পারলাম না বলে দুঃখিত।
কেননা, তোমার কবিতায় বড় বেশি সুতা; সেখানে মুক্তো খুঁজে পেলাম না!
নামজাদা লোক
একদিন চার্লস ডিকেন্স এক অভিজাত হোটেলে ডিনার করতে গেছেন; এ-সময় তাঁকে দেখে দুই ওয়েটারের কথোপকথনঃ
: ওই যে লোকটা ডিনার করতে এসেছে চিনিস?
: না তো!
: খুব নামকরা লোক; নাম চার্লস ডিকেন্স।
: তাই নাকি! তা কী কারণে তিনি এত বিখ্যাত হলেন?
: আরে সেটাই তো জানি না!
.
প্রভাষক-এর লেখা থেকে... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।