aurnabarc.wordpress.com
(১২ই ফেব্রুয়ারি, ১৮০৯ – ১৯শে এপ্রিল, ১৮৮২)
আজ থেকে প্রায় ২শ বছর আগের কথা। এইদিনেই পৃথিবীতে এসেছিলেন চার্লস ডারউইন। কখনো প্রকৃতিবিদ, কখনো ভূ-তাত্ত্বিক, কখনো বা সাধারণ একজন জীববিজ্ঞানী এভাবেই কেটেছে ডারউইনের জীবন। জীবদ্দশাতে কোনো নির্দিষ্ট পরিমণ্ডলের ছকে আটকে থাকতে পারেননি তিনি। একের পর এক মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন তাকেঁ জীবনের অন্যরকম এক অর্থ খুঁজে নিতে সুযোগ করে দিয়েছিল।
ডারউইনকে কেউ কেউ বানরও বানিয়েছে
তিনি নিজের মধ্যে থেকে অনন্য কিছু করে দেখাতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। তাই দুশো বছর পেরিয়ে গেলেও মানুষ তাকে স্মরণ করে, কেউ তাকে অন্ধের মতো অনুকরণ করে, কেউ তাকে নিয়ে সমালোচনা করে কেউবা গালি দেয়। তবুও মানুষ যে তাকে নিয়ে আলোচনা করে এটাই তার কৃতিত্ব। তিনিই প্রথম দেখিয়েছিলেন কতগুলো সাধারণ প্রজাতিগত বৈশিষ্ট্য ধারণ করেই মানুষ উৎপত্তি লাভ করেছে। তিনি এগুলোকে থিউরি অব ন্যাচারাল সিলেকশন বা প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেন।
এই আবিষ্কার ও তাত্ত্বিক অবস্থান জীবদ্দশাতেই বিজ্ঞানী সমাজ ও অধিকাংশ সাধারণ মানুষের কাছে ডারউইনকে ব্যপকভাবে পরিচিত করে। তিনি স্বীকৃতি লাভ করেন একটি প্রতিষ্ঠিত জীববিজ্ঞানী হিসেবে। ১৯৩০ থেকে ১৯৫০ সালের দিকে আধুনিক বিববর্তনগত সিনথেসিস প্রতিষ্ঠার পর প্রাকৃতিক নির্বাচন নতুন করে গুরুত্ব পায়। এই দিক থেকে বিশ্লেষণ করা পূর্ণরূপে অনুধাবন করা সম্ভব হয়। পরিবর্তিত রূপে ডারউইনের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ছিল জীববিজ্ঞানের একত্রীকরণ তত্ত্ব, যা জীববৈচিত্রের ব্যাখ্যা প্রদান করে।
এর পর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
কেউবা তাকে গাছেও চড়িয়েছে
বিশেষ করে মধ্যযুগে ইউরোপের সর্বগ্রাসী পোপতন্ত্র মানুষকে বিরক্ত, হতাশ ও সমস্যার সম্মুখীন করেছিল। ডারাউইনের তত্ত্ব প্রাকৃতিক নির্বাচনের যে তাত্ত্বিক ভিত্তি রচনা করেছিল তার মূলে গলদ থাকলেও অন্তত সে সে সময়ের ইউরোপের জন্য তা ছিল একান্তই নতুন কিছু। সে সময় মানুষ যখন নতুনত্বের খোজে নিরন্তর দিশেহারা ছিল যে মূহুর্তে এই চিন্তাধারা মানুষকে ভাবনার খোরাক দেয়। মানুষ নিজের ও তার চারপাশের জগৎ সম্পর্কে ভাববার সুযোগ পায়।
ডারউইন তাঁর বিখ্যাত অরিজিন অব স্পিপিস বইটির শেষ অধ্যায়ে এই কথাই বলেছিলেন।
বানরের সাথে যার সখ্যতা লোকমুখে আজো প্রচলিত
কর্মজীবনে একজন চিকিৎসক হলেও প্রকৃতির প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞান অধ্যয়নে ডারউইনকে ধরে রাখতে পারেনি। তিনি এই সময়েই সামুদ্রিক অমেরুদন্ডী প্রাণি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ডারউইনের অন্তস্থিত প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের আগ্রহের আগুনে বারুদ ঢালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন। তিনি নতুন করে আবিষ্কার করেন নিজেকে।
এরপর এইচ এম এস বিগলে পাঁচ বছরব্যাপী ভ্রমণ তাকে অন্যরকম অবস্থানে উপনীত করে। তিনি এসময় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন একজন ভূতাত্ত্বিক ও জীবাশ্মবিজ্ঞানী হিসেবে। পাশাপাশি বিগলের এই ভ্রমণকাহিনী প্রকাশিত হলে জনপ্রিয় লেখকের খ্যাতি এসে যায় ডারউইনের পাশে।
আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস
(8 January 1823 – 7 November 1913)
বিউগালে ভ্রমণকালে সংগৃহীত বন্যপ্রাণির দেহাবশেষ ও ফসিলের ভৌগোলিক বন্টন দেখে কৌতুহলী হয়ে উঠেছিলেন ডারউইন। তিনি প্রজাতির ট্রান্সমিউটেশান নিয়ে অনুসন্ধানের চেষ্টা করেন।
তিনি ভাবনাকে নতুন করে সাজানো পথ খুঁজে পান। এরপর ১৮৩৮ সালে তার প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদটি আস্তে আস্তে প্রতিষ্ঠা পেতে শুরু করে। তবে তিনি এ ধারণাটি নিয়ে কিছু প্রকৃতিবিদের সাথে আলোচনার চেষ্টাও করেন বলে জানা যায়। তবুও ভূতত্ত্ব নিয়েও কাজের চাপে এই কাজ বিলম্বিত হয়। তিনি ১৮৫৮ সালে যখন এই তত্ত্বটি স্পষ্টভাবে গ্রন্থিত করার কাজে ব্যস্ত তখন পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নেয়।
বন্ধুবর রাসেল ওয়ালেস তাকে একই ধরণের চিন্তাভাবনা সম্বলিত একটি প্রবন্ধ পাঠান। এই প্রবন্ধ ডারউইনের কাজ আরো সহজ করে দেয়। তাদের চিন্তাধারা এবার মিলিতভাবে প্রকাশিত হয়।
এরপর ১৮৭১ সালে তিনি মানব বিবর্তন এবং যৌন নির্বাচন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। এই জন্য তাঁকে বিস্তর পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হয়।
এখানে মানুষের ক্রমনোন্নয়ন ও অবস্থানতাত্ত্বিক দিক গুরুত্ব পায়। তিনি অন্যান্য প্রাণীতে অনুভূতির প্রকাশকেও গভীর পর্যবেক্ষণে রাখেন। বিভিন্ন ধরণের বৃক্ষ নিয়েও তিনি গবেষণা করেন। কেঁচো এবং মাটির ওপর এদের প্রভাব নিয়েও গবেষণাপ্রবন্ধ প্রকাশ করেন তিনি।
গবেষক হিসেবে নিজেকে অন্যরকম এক উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন।
তাই ১৯ শতকের মাত্র পাঁচজন রাজপরিবারবহির্ভুত ব্যক্তিদের একজন হিসেবে তিনি মৃত্যুর পর যারা রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সম্মান লাভ করেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ডারউইনকে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে সমাহিত করা হয়িছিল। ঠিক তাঁর পাশাপাশি বিজ্ঞানী জন হার্শেল ও আইজ্যাক নিউটনের সমাধির অবস্থিত। শুভ জন্মদিন বিজ্ঞানী। আপনি যাই করেন আর নাই করেন মানুষকে অন্তত নতুন কিছু চিন্তার সুযোগ দিয়েছিলেন।
এই বা মন্দ কী ?
এক নজরে চার্লস ডারউইন........
জন্ম: ফেব্রুয়ারি ১২, ১৮০৯,মাউন্ট হাউজ, শ্রুসবেরি, শ্রপশায়ার, ইংল্যান্ড।
মৃত্যু:১৯ এপ্রিল, ১৮৮২ (৭৩ বছর),ডাউন হাউজ, ডাউনি, কেন্ট, ইংল্যান্ড।
বাসস্থান: ইংল্যান্ড
নাগরিকত্ব: ব্রিটিশ নাগরিক
জাতীয়তা: ব্রিটিশ
ক্ষেত্র: প্রকৃতিবিদ
কর্মক্ষেত্র: রয়েল জিওগ্রাফিকাল সোসাইটি
শিক্ষাজীবন: ইউনিভার্সিটি অফ এডিনবার্গ,ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজ
সহকর্মী ও উপদেষ্টাগণ: জন স্টিভেন্স হেনশ্লো,অ্যাডাম সেজউইক।
বিখ্যাত হলেন: বিগলের সমুদ্রযাত্রা, প্রজাতির উৎপত্তি সম্পর্কে প্রাকৃতিক নির্বাচন।
প্রভাবিত: চার্লস লায়েল, জোসেফ ডাল্টন হুকার
অনুসারী: থমাস হেনরি হাক্সলি, জর্জ জন রোমানেস, আর্নস্ট মায়ার
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: রয়েল মেডেল (১৮৫৩), ওলাস্টন মেডেল (১৮৫৯),
কপলে মেডেল (১৮৬৪)
তথ্যসূত্র:
১. ডারউইন অ্যাভেঞ্চার
২. উইকিপিডিয়া
৩. Glass, Bentley, Forerunners of Darwin, Johns Hopkins University Press, Baltimore, MD, 1959.
৪. Bowler, Peter J. (2003). Evolution: The History of an Idea (3rd ed.). University of California Press.
৫.Browne, E. Janet (2002). Charles Darwin: vol. 2 The Power of Place. London: Jonathan Cape.
৬.Desmond, Adrian; Moore, James (1991). Darwin. London: Michael Joseph, Penguin Group.
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।